রমজানে তারাবির নেয়ামত
২৪ মার্চ ২০২৩, ১১:৫৭ পিএম | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ০১:৫১ এএম
গ্রীষ্মের দাবদাহে পুড়ে খাক হওয়া পৃথিবীতে প্রাণের শিহরণ জাগাতে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে বর্ষাকালে। শীতের বরফঢাকা পত্রপল্লবশূন্য নিথর নিস্তরঙ্গ প্রকৃতিকে নতুনভাবে সাজাতে আগমন করে ঋতুরাজ বসন্ত। অনুরূপ পাপ পঙ্কিলতার নিমজ্জিত মানুষের জীবনে পবিত্র চেতনা, উন্নত চরিত্র ও মানবীয় গুণাবলীর ছোঁয়া লাগাতে বছর ফিরে রমযান মাসের আগমন হয়। রমযানে মুসলিম উম্মাহর জন্য যত নেয়ামত তার মধ্যে অন্যতম ও প্রধান তারাবিহ নামায। রমযান মাস ছাড়া অন্য সময়ে তারাবি নামাযের বিধান নেই।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘আমিই কুরআন নাযিল করেছি। আর নিশ্চিতভাবে আমিই এই কুরআনের হিফাযতকারী।’ (সূরা হিজর, আয়াত-৯)
প্রশ্ন হল, আল্লাহ পাক কি সরাসরি পৃথিবীতে এসে কুরআনের হেফাযত বা রক্ষণাবেক্ষণ করেন? না। বরং যারা জীবন ভরের সাধনায় ত্রিশ পারা কালামুল্লাহ শরীফ বুকে ধারণ করেন তারাই আল্লাহর পক্ষে এই কাজটি আঞ্জাম দেন। এজন্যে তাদের নাম হেফাযতকারী, হাফেয। চিন্তা করে দেখুন, হাফেযগণ কত বিরাট কাজ করেন এবং আল্লাহর দরবারে তাদের মর্যাদা কতখানি হতে পারে।
বিস্ময়কর তথ্য হল, যারা হাফেয অর্থাৎ কুরআনের হেফাযত করেন তাদের হেফাযতের দায়িত্ব পালন করে তারাবিহ নামায। একটু চিন্তা করুন, রমযানে তারাবিহ নামাযে হাফেযগণ মুখস্ত পুরো কুরআন তেলাওয়াত করেন। এ যেন মুসল্লিদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আল্লাহর সামনে বুকের সিন্দুকে কুরআনের আমানত সংরক্ষিত আছেÑএ কথার প্রমাণ উপস্থিত করা। কোনো কারণে কোনো হাফেয যদি পরপর দুই বা তিন/চার বছর রমযানে খতম তারাবিহ পড়ানো থেকে বঞ্চিত হন, তিনি মুখস্ত কুরআন ভুলে যান। তার জন্য সারা জীবন ধুকে ধুকে অপরাধবোধে জ¦লতে হয়। এবার চিন্তা করুন, তারাবিহ নামায মুসলিম উম্মাহর মাঝে পবিত্র কুরআনের হেফাযতের কতবড় দায়িত্ব পালন করছে।
হযরত নবী করিম সা) প্রতি বছর রমযানে ফেরেশতা জিব্রাঈল (আ)কে পুরো কুরআন পড়ে শোনাতেন, আবার ওহীবাহক ফেরেশতা জিবরাঈলও নবীজিকে কুরআন পড়ে শোনাতেন। যাকে মাদরাসার ভাষায় দউর বলা যায়। এই হাদীসের অনুপ্রেরণায় মুসলিম সমাজে রমযানে তারাবিতে কুরআন খতমের রেওয়াজ চালু হয়েছে হযরত উমর (রা) এর ব্যবস্থাপনায়। তার সেই সিদ্ধান্ত সাহাবায়ে কেরাম সানন্দে গ্রহণ এবং বিশ রাকাত তারাবিহ নামাযে কুরআন খতম করেছেন। দীর্ঘ চৌদ্দশ বছর ধরে এ নিয়ম চলে আসছে। যারা তারাবিহ নামায আট রাকাত বলতে চান, বিতর্কে না গিয়ে তাদের বলব, যদি তারাবিতে এক খতম কুরআন পড়তে ও শুনতে চান তাহলে বিশ রাকাত নামায পড়তে হবে। আট রাকাত পড়লে কুরআন খতম করা সম্ভব হবে না। জোর করে সম্ভব করতে চাইলেও প্রত্যেক রাকাত এতই দীর্ঘ হবে যে, মুসল্লিদের জন্য বিরক্তিকর মনে হবে। অথচ তারাবিহ নামায মানে বিশ্রামের নামায।
কুরআন তেলাওয়াতের সময় দেখবেন, কুরআন পাকের পৃষ্ঠার পাশে আরবিতে আইন চিহ্ণ আছে। তাকে বলা হয় রুকু। প্রত্যকে রাকাতে অতটুকুন তেলাওয়াত করে রুকুতে যাওয়া বুঝাতে রুকু বা রাকাতের চিহ্ণ। পুরো কুরআনে এ ধরনের রুকুর সংখ্যা ৫৪০। যদি তারাবিহ নামাযে বিশ রাকাতে একেকটি রুকু পর্যন্ত তেলাওয়াত করা হয় তবে ২৭ রমযানে কুরআন তেলাওয়াত একবার শেষ হয়ে যাবে। যাকে বলা হয় কুরআন খতম বা খতম তারাবিহ। এই অংক আমার নিজের আবিষ্কার নয়। এই তথ্য লেখা আছে বর্তমান সময়ের সবচে প্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থ মুফতি শফী সাহেবের মাআরিফুল কুরআনের ভূমিকা অংশে।
তারাবির সুবাদে মুসলমান সমাজে নিজস্ব ধর্মগ্রন্থ চর্চার যে রেওয়াজ চালু আছে তার নজির পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্ম বা জাতির মধ্যে নেই। হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বেদ একেত ইশ^রের বাণী নয়, দ্বিতীয়ত এই বাণী নি¤œজাতের হিন্দুরা পড়া বা শ্রবণ করা কতবড় পাপ তার একটি বর্ণনা কবি গোলাম মোস্তফা বিশ^নবীতে দিয়েছেন। বৌদ্ধদের ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক খোদা বা ইশ^রের বাণী বলে বৌদ্ধরাও দাবি করেন না। কারণ, নীতিগতভাবে তারা ইশ^রের অস্তিত্বে বিশ^াসী নয়।
আসমানী গ্রন্থের দাবিদার অপর দুই জাতি ইহুদী ও খ্রিস্টান। ইহুদীদের পয়গাম্বর মূসা (আ) ও খ্রিস্টানদের নবী ঈসা (আ) এর উপর নাযিলকৃত মূল তওরাত ও ইঞ্জিল পৃথিবীর বুকে বিদ্যমান নাই। যেটুকু আছে তা ইংরেজি তরজমা, যার সাথে পরবর্তী ধর্মপ্রচারকদের মতামত ও উপদেশ একাকার হয়ে জগাখিচুড়িতে পরিণত হয়েছে। ফলে তওরাত ও ইঞ্জিলের মূল নাম পরিবর্তিত হয়ে ওল্ড টেস্টামেন্ট ও নিউ টেস্টামেন্ট নাম ধারণ করেছে। এ ক্ষেত্রে কুরআন মজীদ ব্যতিক্রম। আল্লাহর বাণী উর্ধ্বলোকের লৌহে মাহফুযে যেভাবে সংরক্ষিত, চিরবিশ^স্ত ফেরেশতা জিব্রাঈল আমীন যেভাবে আল্লাহর রাসূলের কাছে নিয়ে এসেছেন, হবহু সেই কুরআন, কোনো বাক্য শব্দ, বিন্দু বিসর্গে পরিবর্তন হয়নি দেড় হাজার বছরের দীর্ঘ পরিক্রমায়। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে যান দেখবেন কুরআনের অভিন্ন পাঠ।
আরো একটি বিস্ময়কর তথ্য হল, পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্মগন্থের হাফেয বা মুখস্তকারী নেই। কারণ, এসব ধর্মগ্রন্থ ইশ^র বা অবতারের অবিকৃত বাণী বলে কেউ বিশ^াস করেন না। অথচ ত্রিশ পারা কুরআনের বিশাল গ্রন্থ মুখস্তকারী এক দুইজন নয়, বাংলাদেশেও হাজারো লাখো হাফেজ রয়েছেন যারা বুকের সিন্দুকে কুরআনের আমানত বহন করে চলেছেন আর তার অনুশীলন ও রোমন্থন করেন প্রতি বছর মাহে রমযানে।
বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ ডলার খরচ করে বিদেশে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেকে। তারা জাতির জন্য কতটুকু কী সম্মান বয়ে আনেন সবার জানা। অথচ প্রতিবছর বিশ^দরারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরে বিশ^জয়ের শিরোপা নিয়ে আসেন আমাদের দেশের কুরআনের পাখিরা।
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
‘যে ব্যক্তি রমযানে রাত জেগে ইবাদত (তারাবিহ নামায) আদায় করে তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ (বুখারি-৩৭, মুসলিম-৭৫৯)
সারাদিন রোযা রেখে শ্রান্ত ক্লান্ত শরীরে ইফতারের পর শরীর যখন বিছানায় এলিয়ে পড়তে চায় তখন দীর্ঘ দেঢ় দুই ঘন্টা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যারা পবিত্র অবস্থায় পবিত্র অনুভূতি নিয়ে আল্লাহর কালাম শ্রবণ করে আত্মিক শান্তি লাভ করেন তাদের জন্য এক বছরের গোনাহ মাফ হওয়ার এই পুরষ্কার মোটেও অযৌক্তিক নয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ধামরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম কবিরের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
ঢাকা মহানগর মিশুক চালক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনী সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
খুলনায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে যুবক আহত
কুমিল্লা জজকোর্টের ৩ পিপি-এপিপিকে সংবর্ধনা
চুয়াডাঙ্গার রেলস্টেশন এলাকা থেকে ১৪টি অবৈধ স্বর্ণেরবার উদ্ধার, আটক ৩
জাহাজে ৭ খুনের ঘটনার দ্রুত সুরাহা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
‘ছাত্র-জনতা সংস্কারের মাধ্যমে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন দিয়েছে’
পঞ্চগড়ে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা অনুষ্ঠিত
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনকে মজবুত করতে হবে: পীর সাহেব চরমোনাই
‘ট্রানজিটের নামে দিল্লিকে দেয়া করিডর জনগণ মেনে নেয়নি’
বদলির ৩ মাস পরই পূর্বের কর্মস্থলে ফিরলেন শরীয়তপুরে সদর হাসপাতালের ক্যাশিয়ার বজলুর রশিদ
বগুড়ায় যথাযথ মর্যাদায় বড়দিন পালন
শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক
সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি
রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও
আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০
কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার