‘প্লাস্টিক ট্রে’ দিয়ে লবণ উৎপাদন নজর কাড়ছে
২৬ মার্চ ২০২৩, ১০:১৪ পিএম | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:৩৩ এএম
“পলিথিনের বিকল্প প্লাস্টিক ট্রে ব্যবহার করে বে-সী সল্ট উৎপাদন” পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এমন সমাধানসূত্র পেলে বাড়তি মুনাফার সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় আলী আকবর ডেইলে লবণ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এমনই একটি উদ্যোগ নজর কাড়ার মতো।
পলিথিনের বিকল্প হিসাবে ‘প্লাস্টিক ট্রে’ পদ্ধতিতে সাগরের পানি দিয়ে লবণ উৎপাদন করে দেশে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে কুতুবদিয়ার লবণ চাষিরা। কুতুবদিয়া উপজেলার সাগর বেষ্টিত আলী আকবর ডেইলে মিরাজ আহমেদ নামক এক চাষি এক একর জমিতে প্রাথমিকভাবে পলিথিনের বিকল্প হিসাবে প্লাস্টিক ট্রে পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন করছেন। সনাতন ও পলিথিন পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদনের চেয়ে এ নতুন পদ্ধতিতে পরিবেশ বান্ধব প্লাস্টিক ট্রে পদ্ধতিতে অনেক কম খরচে আগের চেয়ে ৩০%-৫০% বেশি লবণ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।
আলী আকবর ডেইলের মোহাম্মদ মিরাজ উদ্দিন জানান, সনাতন ও পলিথিনের বিকল্প হিসাবে পরিবেশ বান্ধব প্লাস্টিকের ট্রে পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন করলে ৩ দিনের মধ্যে লবণ পাওয়া যায়। লবণও হয় ময়লা মুক্ত, দপদপে সাদা ও মোটা দানা। এই লবণ সাধারণ লবণের চেযে তেজস্ক্রিয়তাও বেশী। তাছাড়া লবণ উৎপাদন খরচও হয় অনেক কম।
পলিথিন পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন করলে প্রতি একরে ৩শ মণ পর্যন্ত লবণ উৎপাদন করা যায়। আর প্লাস্টিকের ট্রে সাহায্যে লবণ উৎপাদন করলে প্রতি একরে ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ মণ লবণ পাওয়া যায়। আর প্রতি একর লবণ উৎপাদন পলিথিন পদ্ধতি করলে যেখানে সাড়ে ৪ হাজার টাকা খরচ হয়, সেখানে প্লাস্টিকের ট্রে পদ্ধতিতে লাগে মাত্র ২ হাজার টাকা। ফলে আগামী মৌসুমে এ পদ্ধতিতে ব্যাপকভিত্তিতে লবণ চাষের সম্ভবাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
পলিথিনের বিকল্প পরিবেশ বান্ধব প্লাস্টিক ট্রে দিয়ে আগামীতে দেশে লবণ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য উপকূলজুড়ে এ নতুন পদ্ধতির লবণ চাষকে উৎসাহিত করতে কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন বোর্ড, কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতর ও এনজিও পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র যৌথভাবে কাজ শুরু করছে। পাশাপাশি জ্বালানি খরচ বাঁচাতে লবণ চাষিদের বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে সোলার সিস্টেম। লবণ মাঠে এই সোলার সিস্টেম বসিয়ে নলকূপ থেকে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে সহজে লবণ চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন হলে বাংলাদেশ লবণ উৎপাদনে কেবল স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে না, দেশে নতুন বিপ্লব তৈরি হবে বলে মনে করছেন।
গত মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনের টার্গেট ছিল ২৩ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। আর উৎপাদন হয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ উৎপাদন ঘাটতি ছিল ২১% এর বেশি। আর চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন।
বিসিক সূত্র মতে, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল, মে পর্যন্ত সময়ে কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলীয় জমিতে সামুদ্রিক লবণাক্ত পানি আটকে রেখে এবং তা রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় লবণ। দেশের প্রায় ৬৩ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণের চাষ হয়ে থাকে। এরমধ্যে বাঁশখালীর ৮ হাজার ১৭৬ একর জমি ছাড়া বাকী জমি কক্সবাজারের।
সূত্র মতে, গতবছর কক্সবাজারে ৭ উপজেলার ৫৫ হাজার ১১৪ একর জমিতে লবণের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কুতুবদিয়ার ৬ হাজার ৫৬৩ একর, পেকুয়ার ৯ হাজার ৮শ ৪৫ একর, টেকনাফের ৩ হাজার ৯শ ৪৫ একর, চকরিয়ার ১০ হাজার ৬শ ২০ একর, কঙবাজার সদরের ৩ হাজার ৩শ ৩৮ একর, ঈদগাঁওর ৪ হাজার ৬শ ৯১ একর এবং মহেশখালীর ১৬ হাজার ১৮ একর জমি রয়েছে। এবছরও এসব জমি ছাড়াও আরও নতুন জমিতে লবণ উৎপাদন হবে বলে আশা করছে বিসিক। তবে কঙবাজারের ৯ উপজেলার মধ্যে রামু ও উখিয়াতে লবণ উৎপাদিত হয় না।
গত বছর কুতুবদিয়ায় ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫শ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া মহেশখালীতে ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৭শ মে. টন, পেকুয়ায় ২ লাখ ৭৬ হাজার ৫শ মে. টন, চকরিয়ায় ২ লাখ ৫৮ হাজার ১শ মে. টন, টেকনাফে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫শ মে. টন, ঈদগাঁওতে ১ লাখ ৪১ হাজার ৭শ মে. টন ও কক্সবাজার সদরে ৮৩ হাজার ৬শ ৯০ মে. টন লবণ উৎপাদিত হয়। এছাড়াও কক্সবাজারের পেকুয়া সংলগ্ন চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে উৎপাদিত হয় ২ লাখ ৪৫ হাজার ৮শ ৬০ মে. টন লবণ।
কক্সবাজারস্থ বিসিক লবণ কেন্দ্রের উপ মহাব্যবস্থাপক ড. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র এই অঞ্চলের লবণ চাষী ও লবণ ব্যাবসায়ীদের মানোন্নয়নে কাজ করছে। তারা প্রাথমিকভাবে কুতুবদিয়াতে চাষিদের দিয়ে পরিবেশ বান্ধব প্লাস্টিক ট্রে পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন করা যে সম্ভব তা দেখিয়ে দিয়েছেন। এতে চাষিও অতিরিক্ত সুফল ও পাচ্ছেন। তাদের সাথে পরিবেশ অধিদফতর, বিসিক ও পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের যুগোপৎভাবে কাজ করছে লবণচাষিদের ভাগ্য উন্নয়নে। সম্প্রতি লবণে মাইক্রো-প্লাস্টিকের উপস্থিতি কথা উল্লেখ করে বলেন, প্লাস্টিক মুক্ত লবণ উৎপাদনে চাষিদের উৎসাহি করতে পদক্ষেপ মানবিক মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র কর্তৃক পলিথিন বিহীন লবণ উৎপাদন ও সামুদ্রিক লবণ উৎপাদন প্রক্রিয়ার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এই প্রক্রিয়ায় একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য যেমনি রক্ষা পাবে একইভাবে লবণচাষীরা ব্যবহৃত পলিথিন থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হবে। লবণ উৎপাদনে এ নতুন আবিষ্কার কুতুবদিয়া দ্বীপের প্রান্তিক লবণ চাষিদের পাশাপাশি দেশের লবণ চাষিদের মনে জাগিয়েছে নতুন আশা।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান, পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, পরিবেশ বান্ধব পলিথিনের বিকল্প প্লাস্টিক ট্রে পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন এই রকম একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সত্যিকার অর্থে লবণ শিল্প ও জাতীয় অর্থনীতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এভাবে প্রত্যেক ক্ষেত্রে পরিবেশকে যুক্ত করলে আমাদের জীবনধারায় ইতিবাচক পরিবর্তন নিশ্চিত হবে।
এনজিও পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র সহকারী পরিচালক মনিরুজ্জামান জানান, বৃহত্তর চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চল অর্থাৎ কক্সবাজার ও বাঁশখালীতে বিস্তৃত হয়ে আছে লবণ শিল্প। লবণ শিল্প ও লবণ চাষিদের পাশে দাঁড়িয়ে এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র যেই প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে লবণ উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি ও লবণের মান সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে সকল প্রয়োজনীয় সহায়তায় আশাবাদী। পরিবেশ সংরক্ষণ করে পলিথিন মুক্ত লবণ উৎপাদনের ‘প্লাস্টিক ট্রে’ ব্যবহার করে গভীর সমুদ্রের পানি দিয়ে বে-সী সল্ট (সামুদ্রিক লবণ) উৎপাদন করে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। তাই প্রান্তিক লবণচাষী ও মিল মালিকদের নিয়ে ‘পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে লবণ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও লবণ শিল্প উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী নদীতে নিখোঁজ দুই কিশোরের মরদেহ উদ্বার
পশ্চিম তীরে ইসরাইলের ড্রোন হামলা, নারীসহ ৮ ফিলিস্তিনির মৃত্যু
সরকারকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে জড়িতদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় নয়: আসিফ মাহমুদ
ভারতে শঙ্করাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে হস্তক্ষেপ চাইলেন একদল বাংলাদেশি হিন্দু
অবশেষে সচিবালয়ে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে
হাসিনাকে ভারত কি ফেরত পাঠাবে, আলজাজিরার প্রতিবেদন কি বলছে
সচিবালয়ে সেনাবাহিনী-বিজিবি মোতায়েন
কানু দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে, দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি
বাংলাদেশ থেকে নথি না আসাতেই জামিন পিকে হালদারের?
সময় টিভির সাংবাদিক বরখাস্ত: এএফপির প্রতিবেদন নিয়ে যা বললেন হাসনাত
আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট ও নয়তলা
লক্ষ্মীপুরে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিলো স্থানীয়রা
গাজীপুরে ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ গ্রেফতার
সচিবালয়ের আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি, কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস
ফ্যাসিবাদের সময় উত্তরবঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে: নীলফামারীতে উপদেষ্টা আসিফ
সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় নিহত ফায়ার ফাইটার সোহানুর
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২০ ইউনিট
গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা
বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই