চোখের পলকে চুরি বাইক বিক্রি পাহাড় দ্বীপাঞ্চলে
২৬ মার্চ ২০২৩, ১০:১৭ পিএম | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:৩৩ এএম
লক ভাঙতে ১০ সেকেন্ড। আর ১০ সেকেন্ডে চাবির তার ছিঁড়ে জোড়া দিতেই গাড়ি চালু। এরপর দ্রুত হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া। এভাবে চোখের পলকে মাত্র ২০ সেকেন্ডেই মোটরসাইকেল চুরি করে তারা। মোটরসাইকেল চোর চক্রের পাঁচজনকে পাকড়াও করার পর গতকাল রোববার এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের ভাষ্য চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে চুরি করা এসব মোটরসাইকেল বিক্রি করা হয় সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, হাতিয়াসহ বিভিন্ন দ্বীপাঞ্চল এবং রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায়। মূলত যেসব এলাকায় ট্রাফিক বা থানা পুলিশের তৎপরতা কম সেসব এলাকায় বিক্রি হয় এসব মোটরসাইকেল। দামে সস্তা হওয়ায় বিক্রিও হয় খুব দ্রুত।
ওই চোর চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে ২৪টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। চক্রটি গত কয়েক মাসে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক বাইক চুরি করে। আর চক্রের মূল হোতা মিঠন ধর একাই চুরি করেছেন ৫০টি। চুরির পর এসব মোটরসাইকেল চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে দ্রুত পার করে দেয়া হয় নির্দিষ্ট এলাকায়। সেখান থেকে বিক্রি হয় এসব মোটরসাইকেল। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এ চক্রটির মত মহানগরীতে অসংখ্য চোরের দল তৎপর রয়েছে। যারা মোটরসাইকলে চুরি করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে।
সম্প্রতি মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেল চুরির হার বেড়ে যায়। গত কয়েকদিনে নগরীর কোতোয়ালী থানা এলাকার জামালখান, স্টেডিয়াম ও আশপাশের এলাকা থেকে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগ আসে পুলিশের কাছে। দুইজন সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন বাইক মালিক থানায় চুরির মামলা করেন। অসংখ্য সিসিটিভি ফুটেজে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা প্রত্যক্ষ করে পুলিশ। এ অবস্থায় চোরচক্রের সদস্যদের ধরতে মাঠে নামে কোতোয়ালী থানা পুলিশের একটি টিম।
শনিবার নগরীর পুরাতন স্টেশন রোড থেকে চক্রের হোতা মিঠন ধর ও তার সহযোগী মো. বাবর ওরফে বাবুলকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি চোরাই মোটরসাইকেল (হিরো হোন্ডা স্প্যান্ডলার) জব্দ করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যমতে, জেলার দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ থেকে তাদের সহযোগী মো. শাহেদ ও মো. রিপনকে গ্রেফতার করা হয়। সেখান থেকে তাদের হেফাজতে থাকা ২৩টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
অভিযানের সময় চক্রের দুই সদস্য মো. দিদার হোসেন ও মো. নজরুল ইসলাম ওরফে তাহের পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে মিঠন ধরের দেয়া তথ্যে মো. খোরশেদ আলম নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়। মিঠন ধর জানায়, মো. শাহেদ, মো. রিপন, মো. খোরশেদ আলম, মো. দিদার হোসেন, মো. নজরুল ইসলাম ওরফে তাহেরদের সহযোগিতায় মহানগরী ও আশপাশের এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরি করা হয়। এরপর এসব চোরাই মোটরসাইকেল জেলার সন্দ্বীপ এবং কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ দেশের বিভিন্ন দ্বীপাঞ্চলে বিক্রি করা হয়।
চোরচক্রের সদস্যদের জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, মহানগরীর যেসব এলাকায় মোটরসাইকেল পার্কিং করা হয় সেসব এলাকায় ওৎপেতে থাকে চক্রের সদস্যরা। একজন মোটরসাইকেলের কাছে যায় অপরজন দূর থেকে পাহারা দেয়। চোখের পলকে মোটরসাইকেলের তালা ভেঙে সেটি চালু করে কিছুদূর নেওয়ার পর অপরজন মোটরসাইকেলে তার পেছনে উঠে যায়।
এভাবে দ্রুত মোটরসাইকেল চুরি করে তারা তাদের আস্তানায় নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে বিভিন্ন মালামালের সাথে বস্তায় ভরে সড়ক অথবা নৌপথে এসব মোটরসাইকেল দ্বীপ ও পাহাড়ি এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা দামের এসব মোটরসাইকেল ৫০ থেকে ৭৫ টাকার মধ্যে বিক্রি করা হয়। কমদাম হওয়ায় এসব মোটরসাইকেলের চাহিদাও খুব বেশি। আর এ কারণে নগরীতে চুরির ঘটনাও বাড়ছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুল কবির বলেন, মিঠন ধরের নেতৃত্বে এ চোরচক্রে সাতজন সদস্য রয়েছে। যারা সরাসরি মোটরসাইকেল চুরির সাথে জড়িত। তাদের বাকি সহযোগীরা এসব মোটরসাইকেল গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া ও বিক্রির কাজ করে। এরা খুবই দক্ষতার সাথে চুরি করে। মোটরসাইকেল চুরির জন্য এরা মাস্টার কী ব্যবহার করে। এর পাশাপাশি লক ভেঙে চাবির তার ছিঁড়ে তাতে জোড়া লাগিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেল স্টার্ট করতে পারে তারা। চুরিতে তাদের সময় লাগে মাত্র কয়েক সেকেন্ড।
জামালখান সড়কে প্রেসক্লাব চত্বর থেকে এ চক্রের সদস্যরা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল চুরির কথা স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। তাদের মধ্যে মিঠন ধরের বিরুদ্ধে জেলার লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া থানায় তিনটি চুরির মামলা আছে। মো. বাবর ওরফে বাবুলের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম কোতোয়ালী ও খুলশী থানায় দুইটি মোটরসাইকেল চুরির মামলা আছে। এছাড়া মো. খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে একই অপরাধে বাঁশখালী থানায় একটি চুরির মামলা হয়।
উল্লেখ্য, এর আগেও মহানগরীতে মোটরসাইকেল চোরচক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। চুরির মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর খুব দ্রুত সময়ে তারা জামিনে বের হয়ে আসে। এরপর দলবল নিয়ে ফের মোটরসাইকেল চুরিতে নেমে পড়ে। প্রভাবশালী কারও মোটরসাইকেল চুরি হলে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। শুরু হয় অভিযান, ধরা পড়ে কিছু চোর। এবারও দুইজন সাংবাদিকের মোটরসাইকেল চুরির পর পুলিশ তৎপর হয়েছে। ধরা পড়েছে চোরচক্রের ওই পাঁচ সদস্য।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতে শঙ্করাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে হস্তক্ষেপ চাইলেন একদল বাংলাদেশি হিন্দু
অবশেষে সচিবালয়ে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে
হাসিনাকে ভারত কি ফেরত পাঠাবে, আলজাজিরার প্রতিবেদন কি বলছে
সচিবালয়ে সেনাবাহিনী-বিজিবি মোতায়েন
কানু দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে, দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি
বাংলাদেশ থেকে নথি না আসাতেই জামিন পিকে হালদারের?
সময় টিভির সাংবাদিক বরখাস্ত: এএফপির প্রতিবেদন নিয়ে যা বললেন হাসনাত
আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট ও নয়তলা
লক্ষ্মীপুরে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিলো স্থানীয়রা
গাজীপুরে ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ গ্রেফতার
সচিবালয়ের আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি, কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস
ফ্যাসিবাদের সময় উত্তরবঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে: নীলফামারীতে উপদেষ্টা আসিফ
সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় নিহত ফায়ার ফাইটার সোহানুর
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২০ ইউনিট
গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা
বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই
দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ
সিদ্দিরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই শ্রমিকের মৃত্যু
নাচোলে পিয়ারাবাগানে এক গৃহবধূ খুন
৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু