কেউ শুনছে না নদীর কান্না হুমকিতে কৃষি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য :: স্বাধীনতার পর ১৭ হাজার কিলোমিটার নদীপথ কমেছে, পাল্টে যাচ্ছে জেলে-মাঝিদের জীবনধারা ষ নদী রক্ষা ছাড়া দেশকে বাঁচানো যাবে না : ড. আইনুন নিশাত

মরুকরণের পথে দেশ

Daily Inqilab ইনকিলাব রিপোর্ট

০২ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:২১ পিএম

এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মা আজ পানিশূন্য। বিস্তীর্ণ পদ্মার বুক ফসলের মাঠ। যমুনার বুকে পড়ছে চর। তিস্তার বুকে চিকচিক করছে ধু-ধু বালু। ব্রহ্মপুত্র, সুরমা, কুশিয়ারা, ধলেশ্বরীসহ দেশের প্রায় সব নদ-নদীই আজ পানিশূন্য। পানি হচ্ছে নদীর প্রাণ। সেই পানির জন্য হাহাকার করছে দেশের প্রতিটি নদী। অথচ কেউ শুনছে না নদীর এই কান্না। নদীকে জীবন্তসত্তা ঘোষণা করে নদীর প্রাণ ফিরিয়ে দিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। দখলে-দূষণে মরছে নদী। অপর দিকে ভারতের ফারাক্কা ও গজল ডোবায় বাঁধ দিয়ে এবং উজানে তৈরি করা ৪০টি ড্যাম ও ব্যারাজ পানির গতি পরিবর্তন করে এদেশের নদীগুলোকে কার্যত হত্যা করা হয়েছে। ভারত এখন নতুন করে আবারও ফারাক্কার উজানে আরও দুটি খাল খনন করে পানি অন্যত্র নিয়ে যেতে চাচ্ছে। এতে তিস্তা একেবারেই পানিশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার ছাড়া নানা ধরনের শিল্প বর্জ্যরে দূষণে নদীর প্রাণবৈচিত্র্যও এখন হুমকির মুখে। পাশাপাশি নদীরপাড় দখল করে, কিংবা নদীর বুকেই চলছে অবৈধ নির্মাণ। সব মিলিয়ে দেশের বেশির ভাগ নদীর বুকে ধু-ধু বালু চর। আর এসব চর এখন ফসলের বিস্তীর্ণ মাঠ। নদী মরে যাওয়ায় নদীকেন্দ্রিক জীবন-জীবিকাও মারাত্মক হুমকির মুখে। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় হুমকিতে মৎস্যসম্পদ। সেই সাথে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে কৃষি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের উপর।

ভারতের ফারাক্কা বাঁধের পর থেকেই দেশের প্রধান নদীগুলো তার যৌবন হারাচ্ছে। শাখা নদী, উপনদীগুলো মরে বিলীন হয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যানেই নদ-নদীর সংখ্যা ৭০০ থেকে কমে এখন ৪০০ এ নেমেছে। বেসরকারি পরিসংখ্যানে দেশের নদীর সংখ্যা ১৫০০-এর বেশি। এর মধ্যে এখন এ সংখ্যা ২৩০ থেকে ২৫০ তে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক দশকে হারিয়ে গেছে প্রায় ৫৫০টি নদী। বর্তমানের ২৩০টির মধ্যে ৫৯টি আন্তর্জাতিক নদী। এগুলোর মধ্যে ৫৪টি ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে ভারতের ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে পানিপ্রবাহ অন্যদিকে নেয়ায় এই চার দশকে ১৭ হাজার কিলোমিটার নদীপথ কমে গেছে। স্বাধীনতার পর বিআইডাব্লিউটিএ’র এক জরিপের তথ্যমতে বাংলাদেশে নদীপথের মোট দৈর্ঘ্য ছিল ২৪০০০ কিলোমিটার। কিন্তু এখন সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ৭০০০ কিলোমিটার। পরিবেশবাদীরা বলছেন, বাংলাদেশে গত প্রায় চার দশকে ৫০ থেকে ৮০টা নদী, শাখা নদী এবং উপ-নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে। নদী পানিশূন্য হয়ে পড়ায় জেলেরা এখন আর মাছ ধরতে পারছেন না। এতে তারা বাধ্য হয়ে পেশা বদল করছেন।

ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকা- আর দখল রাজত্ব নদীকে তিলে তিলে মারছে। নদীর সঙ্গে মরছে নদীর ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশও। কৃষিপ্রধান উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ দেখা দিয়েছে, সেচ চাহিদা মেটাতে হচ্ছে মাটির নিচের পানি তুলে। তাতে বিপদ আরও বাড়ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে, মাটির গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটছে। নদীভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। নদীর মাছ হয়ে উঠছে অমূল্য পণ্য। নদীতে মাছ ধরা, নৌকায় নদী পারাপার করা জেলে-মাঝিদের জীবনধারা বাস্তব থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ কথাটার অর্থ আমরা বুঝতে পারছি না। নদী থেকে যে দেশের জন্ম, সেখানে নদী যদি না থাকে, তাহলে তার অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। তাই দেশের নদী বাঁচাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। ফারাক্কার যে বিশাল বিরূপ প্রভাব পড়েছে তা থেকে রক্ষা পেতে গঙ্গা ব্যারাজের বিকল্প নেই। আমাদের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, বৃহত্তর যশোরের জেলাগুলো, খুলনার তিনটা জেলা, এমনকি ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ এগুলোর ভাগ্য সরাসরি গঙ্গার ওপর নির্ভরশীল। শীতকালে মধুমতী লবণাক্ত হয়ে যাচ্ছে। কারণ উজান থেকে পানি কমে যাওয়ার কারণে সমুদ্রের পানি ভেতরে ঢুকছে। ইকোসিস্টেম বদলে যাচ্ছে। ৫০ বছর পর সুন্দরবনে একটা সুন্দরীগাছও থাকবে না। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট ও বরগুনা থেকে মানুষ দেশান্তরি হতে থাকবে। কৃষি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ধান হবে না। চিংড়ির উৎপাদন কমে যাবে। তাই নদী রক্ষা ছাড়া দেশকে বাঁচানো যাবে না।

ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে পদ্মায় পানি কমে গেছে। এতে বরেন্দ্র অঞ্চলে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ধান চাষ হুমকির মুখে। ফারাক্কা বাঁধের ফলে তিস্তার বুকে ধু-ধু বালু চর। এতে উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম তিস্তা সেচ প্রকল্পও বন্ধ হয়ে গেছে। নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষবাদ হচ্ছে না। নদ-নদীতে পানি না থাকায় উত্তারাঞ্চল মরুকরণের দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে। ফারাক্কার মরণ ছোবলে দেশের ভাটি অঞ্চলও এখন পানি শূন্য। বৃহত্তর সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদী মৃত্যুর মুখে। সিলেটের হাওরে পানি নেই। মিঠা পানির মাছ কমে যাচ্ছে। ওই অঞ্চলের কৃষিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পানির অভাবে দেশে লতার মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নদী হারিয়ে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে দেশের ভূপ্রকৃতির চিত্র। বাংলাদেশের সর্বত্রই নদীর বুকে এখন ধু-ধু বালুচর। কোথাও কোথাও নদীর বুকে হচ্ছে ফসলের চাষ। এর ফলে বহু নদী বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হয়তো এর মধ্যেই হারিয়ে গেছে, নয়তো কোনো রকমে ধুঁকছে।

সারাদেশের নদ-নদীর বর্তমান মরণ দশা নিয়ে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ রিপোর্ট তৈরী করেছেন রফিক মুহাম্মদ। সারাদেশের নদ-নদীর বর্তমান অবস্থার এ প্রতিবেদন কয়েকটি পর্বে ছাপা হবে। আজ ছাপা হলো এ রিপোর্টের প্রথম পর্ব।

চট্টগ্রাম থেকে শফিউল আলম জানান, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের গ্রীষ্মকাল আসার আগেই শুকিয়ে যাচ্ছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের নদ-নদী, খাল। পানির অভাবে ফেটে চৌচির নদীপাড়ের উঁচু-নিচু টিলাময় বিস্তীর্ণ ফল-ফসলি জমি। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পার্বত্য অববাহিকার নদ-নদীগুলো প্রাচীনকাল থেকেই খরস্রোতা। কিন্তু নদ-নদীর স্বাভাবিক গতিধারা ক্রমেই পাল্টে যাচ্ছে। গত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ৪ মাস দেশে মৌসুমের এ সময়ের স্বাভাবিকের চেয়ে গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ। অর্থাৎ বাস্তবে বৃষ্টিই ঝরেনি। গেল মার্চ মাসেও বৃষ্টিপাত ছিল অপ্রতুল। আবহাওয়া-জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় অনাবৃষ্টি-খরার কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলের নদ-নদীগুলোর উৎসে ও পুরো অববাহিকায় খরস্রোত হারিয়ে গেছে। নদী বইছে ক্ষীণধারায়। পাহাড়ি ঝিরি-ঝরণাগুলো ইতোমধ্যে শুকিয়ে গেছে। কর্ণফুলী, হালদা, ফেনী, মাতামুহুরী, শঙ্খ, ইছামতী, মুহুরী, ডলু, ধুরং, গজারিয়াসহ চট্টগ্রাম অঞ্চলের নদ-নদী, খালগুলো মরণদশার দিকে ধাবিত হচ্ছে। দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের ধারক কর্ণফুলী নদীর ভাটি ও মোহনায় বিভিন্ন স্থানে বর্জ্য-আবর্জনা, প্লাস্টিক-পলিথিন ও পোড়া তেলের দূষণ অব্যাহত রয়েছে। এতে করুণ দশায় রয়েছে কর্ণফুলী।

মূল নদী শুকিয়ে যাওয়ার ফলে খাল-ছরা, বিল-জলাশয় ক্রমেই পানিশূন্য হয়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অর্থাৎ পানির স্টক দ্রুত নিচের দিকেই নামছে। এতে পরিবেশ-প্রতিবেশ হয়ে উঠেছে রুক্ষ। পানির আগাম সঙ্কটে হাজার হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি পড়ে আছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে তিন ফসলা (তিন খোন্দ) চাষ হয় এমন বিস্তীর্ণ জমি চাষ হচ্ছে দো-ফসলা। দো-ফসলা জমিতে শুধুই এক ফসলা ফল-ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে। নদ-নদী-খালের মরণ দশায় কৃষকের মাথায় হাত।

পার্বত্য অববাহিকার নদীগুলোর সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ফল-ফসল উৎপাদন, সেচব্যবস্থা, মৎস্যসম্পদ, পর্যটন, নৌ-পরিবহন, পরিবেশ, প্রাণ-প্রকৃতির ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এশিয়ায় রুই-কাতলা-মৃগেল জাতীয় মিঠাপানির বড় মাছের সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক প্রজনন ও বিচরণক্ষেত্র ‘বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ’ হালদা নদীর ভেতরে উজানের দিকে লবণাক্ততার আগ্রাসন বিস্তৃত হয়েছে বঙ্গোপসাগর উপকূল থেকে। এর পাশাপাশি অব্যাহত আছে দূষণ। এরফলে মৎস্যসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।

রাজশাহী থেকে রেজাউল করিম রাজু জানান, বর্ষার দু’আড়াই মাস পানির নাচন দেখিয়ে এ অঞ্চলের প্রধান নদী পদ্মা ফের ঘুমিয়ে যায়। সাথে ঘুমায় এর শাখা নদ নদী আর বিল। এসব নদনদী বিলে নৌকা কিংবা মাছ নয়। চলে রকমারী ফসলের আবাদের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা। এবারো সেই ভাদ্র মাসে পদ্মা নদীতে টান ধরে। ধীরে ধীরে বিশাল বালিচর জেগে ওঠে। এসব চর আর নদনদীর বুকে যেখানে একটু পলি জমে সেখানে নানামুখী ফসল ফলানোর প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চলে। নদীতে নৌকা নয় চলে লাঙ্গল। এ চিত্র ফি বছর হয়। বৃহত্তর রাজশাহীর প্রধান নদী এছাড়াও রয়েছে আত্রাই মহানন্দা, পুনর র্ভবা, নারদ, বড়াল ইত্যাদি। এ অঞ্চলের নদনদী খাল-বিলগুলো মরণ দশা আর বৈরী আবহাওয়ার জন্য দাযী ভারতের পানি শোষণনীতি। ওপারে গঙ্গা এপারের পদ্মার উৎস্য মুখ থেকে ভারত ফারাক্কাসহ উজানে গঙ্গাকেন্দ্রিক জলাধার, ক্যানেল বাঁধসহ ৩৩টি স্থানে অবকাঠামো করে আর ফারাক্কার পানি আটকে বাংলাদেশের পদ্মাকে হত্যা করেছে। সাথে পদ্মার শাখা নদনদী স্বরমংলা, চিনারকূপ, বারাহি, বড়াল, নারদ, রাইচান, চন্দনা, খলিশাডাঙ্গা, ইছামতি, কমলা, রতœাই এ নদনদীগুলো মৃত্যুর দুয়ারে। এছাড়া বেশ কয়েকটি প্রশাখা দয়া, সন্ধ্যা, মুসাখান, হোজা, মির্জা মাহমুদ, হ্যালেঞ্জার প্রায় বিলুপ্তি ঘটেছে। শুধু নদনদী নয়। পদ্মাকেন্দ্রিক বিলগুলো পড়েছে অস্তিত্ব সঙ্কটে। এক সময়ের পানি থৈ থৈ করা বিলগুলো নদী শুকিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ওগুলো শুকিয়ে যায়। এক সময়ের মৎস্যের ভা-ারগুলোতে চাষ হয় বিভিন্ন ফসলের। বিলগুলোর মধ্যে বিলচলন, বিলগৌরি, ছাতরার বিল, উৎরাইল বিল, বিল হালতি, বিলহিলনা, ফলিয়ার বিল, কুখন্ডির বিল, বিল কুমারী, কান্দার বিল, বিল ডিকসি, মান্দার বিল, রক্তদাহ বিল, বাঁশবাড়িয়া বিল, জবই বিলসহ অসংখ্য খাড়ি। বর্ষা মওসুমে নৌকা চলে আর অন্য সময় বিলের বুকে চলে চাষাবাদ। বিল বছরের বেশি সময় শুকনো থাকায় এ অঞ্চলের মৎস্য সম্পদ বিপন্ন। অসংখ্য প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেছে।

বগুড়া থেকে মহসিন রাজু জানান, উজানে ফারাক্কার বাঁধ আর টানা খরার কারণে বগুড়ার বড় দুটি নদীর পানি কমে গিয়ে স্রোতহীন হয়ে পড়েছে। অপরদিকে ছোট নদীগুলোর বেশিরভাগই এখন পুরোপুরি পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। পানিশূন্য নদনদীতে হচ্ছে ফসলের চাষাবাদ। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছেÑ যমুনা, বাঙালি, করতোয়া, নাগর, গাঙ নৈ, ইছামতীসহ ছোট বড় ১৮টি নদীর প্রবাহ কোনোরকমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। এরমধ্যে নাগর ও গাঙ নৈ নদী পশ্চিম বগুড়ার উঁচু ভূমি এবং বাকিগুলো পূর্ব বগুড়ার পললভূমি দিয়ে দক্ষিণে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ হয়ে বয়ে গেছে। দেড় বা দুই দশক আগেও বগুড়ার নদনদীগুলোতে সারাবছরই পানির প্রবাহ থাকত। চলাচল করত নৌকা। মাঝি নামে জেলে সম্প্রদায়ের লোকেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। তবে এখন নদনদীগুলো একেবারেই যেন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। বগুড়ার সবচেয়ে বৃহত্তম যমুনা নদীকে এখন চিনতেই কষ্ট হয়। এই নদীর পাড়ের মানুষের মনে আশংকা শেষ পর্যন্ত এই নদীর অস্তিত্ব টিকে থাকে কি না।

বরিশাল থেকে নাছিম উল আলম জানান, ভারত অভিন্ন নদ-নদীগুলোর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ফলে বরিশাল অঞ্চলের নদনদী নাব্য সঙ্কটে পড়েছে। এতে নৌ যোগাযোগে বিপর্যয়ে পড়েছে। অন্যদিকে নদীতে পানি কম থাকায় সাগরের জোয়ার ক্রমাগত উঠে আসায় দক্ষিণাঞ্চলের ছোট বড় ১৩২টি নদনদীতে গত কয়েক বছর লবণাক্ততার মাত্রাও অনেক বাড়ছে। এমনকি অব্যাহত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে নদ-নদীগুলোর ধারণ ক্ষমতা হ্রাসের ফলে বর্ষা মৌসুমে উজানের ঢলের পানি সাগরে প্রবাহের সময় বাড়ছে ভাঙনের তীব্রতাও। একাধিক নদী গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, সারা দেশের নদ-নদীগুলোর যে পানি সাগরে পতিত হয়, তার ৭৮ শাতাংশই মেঘনা, তেঁতুলিয়া ও বলেশ্বরসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১৩২টি নদনদী বহন করে থাকে।

মানিকগঞ্জ থেকে শাহীন তারেক জানান, দেশের প্রধান দুইটি নদী পদ্মা, যমুনা ছাড়াও মানিকগঞ্জ জেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে ধলেশ্বরী, কালিগঙ্গা, ইছামতি, কান্তাবর্তী, মনলোকহনী, গাজীখালী, ক্ষীরাই, মন্দা, ভূবনেশ^রীর মতো ৯টি শাথা নদী। এ সব নদীতে এক সময় সারা বছর পানিতে ভরপুর থাকত। জেলা মানুষের ঢাকা রাজধানীর সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল নদী পথ। পণ্যবোঝাই ট্রলার, স্টিমার চলাচল করত। এসব নদী আজ নাব্য সঙ্কটের কারণে অস্তিত্ব হারিয়ে বসেছে। বর্ষার মওসুম ছাড়া বাকি সময় পানি শূন্য হয়ে পড়ে। এতে নদীর বুকে জেগে উঠেছে ধু-ধু বালুচর। আবার কোথাও গো-চারণ ভূমি ও ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

একাত্তরের অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতেই ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান- আসিফ মাহমুদ
জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধান বিচারপতির শ্রদ্ধা
মঙ্গল শোভাযাত্রায় আবু সাঈদের ‘ভাস্কর্য’ চায় না পরিবার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণহত্যা দিবস’ পালিত
জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন
আরও
X

আরও পড়ুন

কাশিয়ানীতে ‘খেলনা দেওয়ার’ কথা বলে শিশুকে ধর্ষণ

কাশিয়ানীতে ‘খেলনা দেওয়ার’ কথা বলে শিশুকে ধর্ষণ

একাত্তরের অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতেই ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান- আসিফ মাহমুদ

একাত্তরের অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতেই ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান- আসিফ মাহমুদ

মানবিক চিকিৎসক আবু সাফিয়াকে বিনা বিচারে আটক, বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়

মানবিক চিকিৎসক আবু সাফিয়াকে বিনা বিচারে আটক, বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়

গাজায় ইসরায়েলি হামলার মধ্যেই ব্যাপক বিক্ষোভ ফিলিস্তিনিদের

গাজায় ইসরায়েলি হামলার মধ্যেই ব্যাপক বিক্ষোভ ফিলিস্তিনিদের

২০২৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশের দায়িত্বে সিমন্স

২০২৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশের দায়িত্বে সিমন্স

জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঢাকা জেলা যুবদলের শ্রদ্ধা নিবেদন

জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঢাকা জেলা যুবদলের শ্রদ্ধা নিবেদন

জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধান বিচারপতির শ্রদ্ধা

জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধান বিচারপতির শ্রদ্ধা

ইসরাইলি সেনাদের হাতে অস্কারজয়ী ফিলিস্তিনি নির্মাতা অপহরণ

ইসরাইলি সেনাদের হাতে অস্কারজয়ী ফিলিস্তিনি নির্মাতা অপহরণ

ঈদের পর হবে ইমরান-বুশরার মামলার শুনানি

ঈদের পর হবে ইমরান-বুশরার মামলার শুনানি

মঙ্গল শোভাযাত্রায় আবু সাঈদের ‘ভাস্কর্য’ চায় না পরিবার

মঙ্গল শোভাযাত্রায় আবু সাঈদের ‘ভাস্কর্য’ চায় না পরিবার

ব্রাজিলকে নিয়ে ছেলেখেলা করল আর্জেন্টিনা

ব্রাজিলকে নিয়ে ছেলেখেলা করল আর্জেন্টিনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণহত্যা দিবস’ পালিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণহত্যা দিবস’ পালিত

যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত পূরণেই সিরিয়ার নিষেধাজ্ঞা শিথিলের সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত পূরণেই সিরিয়ার নিষেধাজ্ঞা শিথিলের সম্ভাবনা

জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন

জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন

সপ্তমবারের মতো বেলারুশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে লুকাশেঙ্কোর শপথ গ্রহণ

সপ্তমবারের মতো বেলারুশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে লুকাশেঙ্কোর শপথ গ্রহণ

হিলিতে মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত

হিলিতে মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত

বাংলাদেশের জনগণকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিনন্দন

বাংলাদেশের জনগণকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিনন্দন

জাবালিয়া ছাড়তে ফিলিস্তিনিদের চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি, হামলার হুমকি ইসরায়েলের

জাবালিয়া ছাড়তে ফিলিস্তিনিদের চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি, হামলার হুমকি ইসরায়েলের

সদরপুরে জামায়াতের ইফতার মাহফিলে আওয়ামীলীগ নেতা! জনমনে কৌতূহল

সদরপুরে জামায়াতের ইফতার মাহফিলে আওয়ামীলীগ নেতা! জনমনে কৌতূহল

রাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেয়ে ঘুষ খাওয়ার চেষ্টা, ঘেরাও করে কাস্টমস কর্মকর্তাকে মারধর

রাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেয়ে ঘুষ খাওয়ার চেষ্টা, ঘেরাও করে কাস্টমস কর্মকর্তাকে মারধর