পাত্র সরকারি দল করে ‘আলহামদু লিল্লাহ’
১০ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:১৯ পিএম
‘পাত্র হিসেবে এখন সরকারি দলের কর্মীদের বাজার ভালো’ মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির দলীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, ‘এখন যদি শোনে, পাত্র সরকারি দল করে তাইলে মেয়ের বাবা-মা কয় আলহামদুলিল্লাহ। এর চেয়ে ভালো পাত্র আর হয় না।’ গতকাল জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১৪৭ বিধিতে উত্থাপন করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবের ওপর বিশেষ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ‘এখন জীবনকে রাতারাতি বদলে দেওয়ার একমাত্র পন্থা হচ্ছে রাজনীতি। এটা একটা পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে রাজনীতি ছিল নেশা, যারা রাজনীতি করতেন, জীবনকে বাজি রেখেই করতেন। সেই নেশা আর নেই, এখন এটাই সবচেয়ে বড় পেশা। পাকিস্তান আমলে দেখা যেতো, পাত্র যদি রাজনীতি করে তাহলে মেয়ের বাবা-মা বিয়ে দিতে চাইতো না। কারণ সে কোনও চাকরি পাবে না, তাহলে মেয়েকে সে খাওয়াবে কী? খাওয়াতে হলে পত্রিকা অফিসে চাকরি করতে হবে, না হলে বটতলার উকিল হতে হবে, না হয় মুদি দোকানদার হতে হবে অথবা এজেবির কেরানিগিরি। কিন্তু এখন যদি শুনে পাত্র সরকারি দল করে, ছাত্রলীগ করে; তাইলে কয় আলহামদু লিল্লাহ। এর চেয়ে ভালো পাত্র আর হয় না। কারণ সে কিছু করতে পারবে।’
জাতীয় সংসদে দেয়া কাজী ফিরোজ রশিদের এই বক্তব্যে সমাজের বাস্তব চিত উঠে এসেছে। এখন সরকারি দল ছাড়া চাকরি, ব্যবসা, টাকা পয়সা যে চোখে দেখা যায় না সেটাই বুঝিয়েছেন। সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন করায় ফরিদপুর ছাত্রলীগের দুই নেতা আড়াই হাজার কোটি টাকা পাচার করে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। ছাত্রলীগের নেতা হলেই বাড়ি-গাড়ি-ফ্লাটের মালিক হচ্ছেন। এমনকি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের হেলিকপ্টারে চড়ে দাওয়াত খেতে যাওয়ার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে। ছাত্রলীগ করলেই চাকরি, যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ করলেই লাইসেন্স-চাকরি নিশ্চিত। ফলে আগে দিনে বিয়ের বাজারে পাত্র হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার মেয়েদের বাবাদের প্রধান পছন্দ এখন বদলে গেছে। এক সময় ‘সেনা কর্মকর্তা’ ‘বিসিএস কর্মকর্তা’ পাত্রের তালিকায় শীর্ষে ছিল। এখন সেই তালিকার শীর্ষে চলে এসেছে সরকারি দলের নেতাকর্মী তথা ছাত্রলীগ-যুবলীগ। কারণ কণের বাবা-মা মনে করেন ছাত্রলীগ মানে কাঁড়িকাঁড়ি টাকার মালিক; ছাত্রলীগ মানেই সরকারি চাকরি নিশ্চিত; যুবলীগ মানেই লাইসেন্স-কন্ট্রাক্টরী নিশ্চিত।
রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুর বক্তব্যের সঠোর সমালোচনা করে ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘দেখলাম আমাদের পাশ থেকে বললো যে সংবিধানে একটা বড় সংশোধনী আনতে হবে। কী সংশোধনী, বিসমিল্লাহ রাখা যাবে না। রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম রাখা যাবে না, এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আরে একটা সেটেল্ড ম্যাটার, মাত্র ৯ মাস বাকি আর নির্বাচনের। এই মুহ‚র্তে আরেকটা নতুন ইস্যু সৃষ্টি করে আপনাদের উদ্দেশ্যটা কী? আপনারা তো সহি সালামতে নৌকায় উঠে বসে আছেন। নৌকার কাÐারী হচ্ছেন শেখ হাসিনা। তাকেই নৌকা পার করতে হবে, নৌকা বহন করতে হবে। কিন্তু আপনারা তো নিশ্চিত হয়ে বসে আছেন, পার হয়ে চলে যাবেন আরো ৫ বছরের জন্য। আমি ছাত্রলীগ-যুবলীগ করেছি, কিন্তু নমিনেশন পাইনি। আমার দোষ ঘর ছেড়েছি, ঘর কী আমি ছাড়ছি? ঘর থেকে আপনারা বের করে দেবেন আর আমি গাছ তলায় বসে থাকব? এই তো আমাদের নিয়তি। ইতিহাস বলেন, ইতিহাস আমিও বলতে পারি। এভাবে দেশ চলবে না। এখনও সতর্ক হন, সামনে কিন্তু বিপদ আসতেছে। আজকে একটা বড় দল তারা নির্বাচনে আসবে না বলে দিয়েছে।’
চলমান সংসদের অনেক অর্জনের সঙ্গে দুর্বলতাও আছে মন্তব্য করেন ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আজ পর্যন্ত একটা কমিশন (বঙ্গবন্ধু হত্যা) গঠন করতে পারছেন না। কারা জড়িত ছিল এই জাতি যদি জানতে না পারে, তাহলে ইতিহাসের ভগ্নাংশ রেখে লাভ নাই। কারণ বঙ্গবন্ধুকে মারা ছিল বিশাল ষড়যন্ত্রের কাজ। ডালিম, ফারুক, রশিদ গিয়ে করলো, তা নয়। এর পেছনে ষড়যন্ত্র ছিল, তা আপনারা বের করলেন না।’
ফিরোজ রশীদ বলেন, বর্তমানে ‘জাতি এখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। দেশে নিরপেক্ষ কোনো মানুষ নেই। শিক্ষক, ডাক্তার, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক সবাই বিভক্ত। পুরো দেশই এখন দুই ভাগে বিভক্ত।’
ক্ষমতাসীন জোটের শরিক বামদলগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে জাপার এ সংসদ সদস্য বলেন, চরম বামপন্থী, চরম দক্ষিণপন্থী তাদের নাম উচ্চারণ করা যাবে না। কারণ সমস্ত নৌকায় উঠে চলে গেছে। কিন্তু আজকে আমরা ঘরের বাইরে যাই না, একটা কাঁচের ঘরে বসে থাকি। যারা আসে, আমাদের লোকরা সব চেয়ে বড় কোরবানির গরুর মতো গলায় মালা দিয়ে নিয়ে আসে। এই যে টাকার বস্তা দিলাম নমিনেশন দিলে পাস করবে আলহামদুলিল্লাহ, তাকে নমিনেশন দেন। ত্যাগি কর্মীদের আপনারা দিচ্ছেন না, এটা হলো আরেকটা বড় দুর্বলতা আপনাদের। ’৭৫ সালে আমরা প্রতিরোধ করতে পারিনি, আমাদের কাছে সব ছিল, রেকর্ডে বলে গেলাম, কিন্তু কোনো ডাক আমরা পাইনি। মাঝে মাঝে প্রত্যেকটা সিটে বলা হয় এবার আর লাঙল দেব না, নৌকা। এই ২৬টা সিট চান কেন, আপনাদের তিনশ সাড়ে তিনশ সিটিই দিয়ে দিয়েছি। আপনারা আমাদের এতো ভয় পান কেন? ভয়ের কোনো কারণ নেই দরকার হয় সব সিট আমরা ছেড়ে দেব, তবু আপনারা শান্তভাবে দেশ চালান। ###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
টেলর সুইফটের পর কমলাকে বিখ্যাত বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সমর্থন নিয়ে বিতর্ক
ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়
কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার
মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার