ভারতীয় পোশাকের দাপট
১১ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:২৪ পিএম
চট্টগ্রাম বন্দরে ধরা কোলকাতা থেকে আসা কন্টেইনার ভর্তি শাড়ি লেহেঙ্গা থ্রি-পিস
চট্টগ্রামের ঈদবাজারে চলছে ভারতীয় পোশাকের দাপট। মার্কেট, শপিংমল, হাটবাজারে থরে থরে সাজানো ভারতীয় পণ্য। বৈধ-অবৈধ পথে আসা শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রি-পিসসহ হরেক পোশাকের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে দেশি পোশাক। তাতে মার খাচ্ছে দেশি ছোটবড় শিল্প। লোকসান গুণছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা। আবার চোরাপথে পণ্য আসায় মোটা অঙ্কের শুল্ক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
মহানগরীর অভিজাত শপিংমল থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের হাটবাজারেও ভারতীয় পোশাকের ছড়াছড়ি। রঙ আর ডিজাইনে কিছুটা চাকচিক্য থাকলেও গুণগত মানের দিক দিয়ে দেশি পোশাকের কাছাকাছিও নেই ভারতীয় পোশাক। এরফলে এসব পোশাক কিনে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন। এ নিয়ে ক্রেতা সাধারণের মধ্যে অসন্তোষও আছে।
দেশের ঈদ বাজারকে টার্গেট করে সীমান্ত পথে আসছে ভারতীয় পণ্য। র্যাবের অভিযানে প্রতিনিয়ত ধরা পড়ছে ছোট বড় চালান। তবে এবার প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বন্দরে ধরা পড়েছে কন্টেইনার ভর্তি ভারতীয় পোশাক। সরাসরি জাহাজে আনা হলো কন্টেইনার ভর্তি শাড়ি, লেহেঙ্গা আর ত্রি-পিস। ভারতের কলকাতা থেকে সোডা অ্যাশ ঘোষণায় বিপুল সংখ্যক শাড়ি ও লেহেঙ্গা নিয়ে এসেছে ফেনী জেলা সদরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আজিজ এন্টারপ্রাইজ।
মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির মাধ্যমে আমদানিকারক এক কোটি ৪১ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করেছেন। সোমবার রাতে আটক কন্টেইনারের কায়িক পরীক্ষা শেষে বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৪ এপ্রিল কন্টেইনারটি জাহাজে থাকাবস্থায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে চালানটি লক করে এআইআর শাখা। কন্টেইনারটি জাহাজ থেকে নামানোর পর কাস্টম হাউসের অনুরোধে বন্দরের বিশেষ নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়। পরবর্তীতে কন্টেইনারটি ফোর্স কিপ ডাউন করে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়।
কায়িক পরীক্ষায় ১২ হাজার ৫৫০ পিস বেনারসি শাড়ি, এক হাজার ১৩৯ পিস জর্জেট শাড়ি, ৪০৩ পিস লেহেঙ্গা পাওয়া যায়। শাড়ি ও লেহেঙ্গার আনুমানিক শুল্কায়নযোগ্য মূল্য এক কোটি ১১ লাখ টাকা। আমদানিকৃত ভারতীয় শাড়ি ও লেহেঙ্গার উপর উচ্চ শুল্ক হার প্রযোজ্য থাকায় চালানটিতে জড়িত রাজস্বের পরিমাণ এক কোটি ৪১ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ-কমিশনার মো. সাইফুল হক জানান, ঈদুল ফিতরে ভারতীয় শাড়ি ও লেহেঙ্গার চাহিদা বেশি থাকায় শুল্ক ফাঁকির মাধ্যমে বেশি মুনাফার উদ্দেশ্যে চালানটি আনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ চালানে কম শুল্কে সোডা অ্যাশের চালানে উচ্চ শুল্কের শাড়ি ও লেহেঙ্গা আনায় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা মানি লন্ডারিং করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘোষণা ও রাজস্ব ফাঁকির অপচেষ্টার অভিযোগে কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কাস্টম হাউস চট্টগ্রামের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান।
এর আগে চলতি মাসে ফেনী থেকে চট্টগ্রাম আসার পথে ভারতীয় পোশাকের বেশ কয়েকটি চালান আটক করে র্যাব। কুমিল্লা ও ফেনী সীমান্ত হয়ে ভারত থেকে আসছে শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রি-পিসসহ হরেক রকমের পোশাক। চোরাই পথে আসা এসব পণ্য শোভা পাচ্ছে চট্টগ্রামের শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে। ক্রেতারা বলছেন, ঈদ বাজারে বেশি চাহিদা এবং বেশি বিক্রি হয় এমন সব পোশাকই ভারতীয়। ভারতীয় পোশাকের ভিড়ে দেশি পোশাক খুঁজে পাওয়ার উপায় নেই। শাড়ি, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা থেকে শুরু করে মেয়েদের পোশাকের পুরোটাই ভারতীয় পণ্যের দখলে।
ভারত থেকে আসা শাড়ির দাপটে কোণঠাসা জামদানি, কাতানসহ দেশের ঐহিত্যবাহী সব ব্রান্ডের শাড়ি। সুতার শাড়িতেও ভারতের আধিপত্য। নিম্নমানের সুতা ও রংয়ে তৈরি এসব শাড়ি টেকসই নয়। কিন্তু দাম কিছুটা কম হওয়ায় এবং রংয়ে চাকচিক্য থাকায় ক্রেতারা এসব শাড়ি কিনছেন। এতে প্রতারিত হচ্ছেন অনেকে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অর্থনৈতিক মন্দায় এবার এমনিতেই কেনাবেচা তেমন নেই। তার উপর ভারতীয় পোশাকের আধিক্য বাজার পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলেছে। বেশিরভাগ পোশাক চোরা পথে এসেছে। এতে সরকারের ভ্যাট ও ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া হয়েছে। তাতে এসব পোশাকে খরচ কম পড়েছে। অন্যদিকে যারা দেশি পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন তাদের খরচ বেশি হয়েছে। আবার কেনাকাটাও কম হওয়ায় তারা লোকসানের আশঙ্কা করছেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রামের মার্কেট, শপিংমলগুলোতে ক্রেতা মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণির। কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে দেশের অর্থনীতিতে মহামন্দা বিশেষ করে অসহনীয় মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এ কারণে অন্য বছরের তুলনায় এবার ঈদ বাজারে অর্ধেক ক্রেতাও মিলছে না। ঈদের বাকি আর মাত্র ১০ দিন। অথচ নগরীর বেশিরভাগ মার্কেট, বিপণিকেন্দ্র এখনো প্রায় ক্রেতাশূণ্য। জমে উঠেনি ঈদের কেনাকাটা। এ অবস্থায় ভারতীয় পোশাকের আধিপত্যে দীর্ঘশ^াস ফেলছেন ব্যবসায়ীরা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনআইডি : আইন পর্যালোচনায় রোববার বৈঠকে বসছে ইসি
কুমিল্লায় জনসম্মুখে শিশুকে দুগ্ধপান
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত লড়াই
টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর কথা ভাবছেন কিয়ার স্টারমার
আগুনে পুড়ল ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ, চলছে লুটপাট
লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল, প্রবল বাতাসে পরিস্থিতি ভয়াবহ
কাতারের আমিরের উদ্দেশে ফেসবুকে যা লিখলেন তারেক রহমান
গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৭০ ফিলিস্তিনি, মানবিক বিপর্যয় অব্যাহত
নারী শিক্ষার্থীদের ওয়াশরুমে ভিডিও ধারণ, যুবক আটক
শেখ হাসিনার সাথে হত্যা মামলায় জড়িত পটুয়াখালীর ইটবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মোজাম্মেল আটক
বেরোবিতে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ
ঠাকুরগাঁওয়ে ইত্যাদি চিত্রায়ন অনুষ্ঠানে চেয়ার ভাঙচুর-মারামারি, অনুষ্ঠান স্থগিত
কেসিসির সাবেক কাউন্সিলর টিপু কক্সবাজারে খুন
লক্ষ্মীপুরে বিদেশি পিস্তলসহ গৃহবধূ আটক
ফটিকছড়িতে অবৈধ বালু উত্তোলনে বাধা দেয়ায় কৃষককে পিটিয়ে হত্যা!
৭ ডিগ্রিতে নামল পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা
ম্যাচের আগে হঠাৎ বরখাস্ত এভারটন কোচ
চীনের অবিশ্বাস্য সামরিক উত্থানে টনক নড়েছে ভারতের
পারমাণবিক বোমা সজ্জিত নতুন যুদ্ধজাহাজে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন কিম
ধর্ষণের প্রতিশোধে বাবাকে হত্যা, গ্রেফতার ২ কিশোরী