বঞ্চিত সাধারণ যাত্রীরা
১১ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৯ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১০ পিএম
ঈদ যাত্রার ট্রেনের শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে। এতে বিপাকে পড়েন ট্রেনের টিকিট প্রত্যাশী নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষরা। গত ৭ এপ্রিল থেকে ট্রেনের ঈদের টিকিট বিক্রি হলেও অনেকেই পাচ্ছেন না কাঙ্খিত টিকিট। দেখা দিয়েছে সার্ভার জটিলতাও। আর এবছর শতভাগ টিকিট অনলাইনে কিক্রির সিদ্ধান্তকে হটকারী বলেও উল্লেখ করেছেন অনেকে। সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, যারা টিকিট প্রত্যাশী কিন্তু অনলাইনে তেমন পারদর্শী নয় তারা ট্রেনের টিকিট থেকে বঞ্চিত রয়েই যাচ্ছেন। আবার অনেকে বলছেন উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের একটা বিরাট অংশ সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ ও রিকশা চালক। তারা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন না। এসব সাধারণ মানুষরা ব্যবহার করেন বাটন মোবাইল ফোন। তারা কিভাবে অনলাইনে প্রতিযোগিতা করে ট্রেনের টিকিট কিনবেন?
কালোবাজারি বন্ধে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ দেখিয়ে ট্রেনের টিকিট বিক্রিতে যাত্রীদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। অনেকেই না জানার কারণে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বিড়ম্বনার শিকার হয়ে ফিরে গেছেন। অনেক যাত্রী বিষয়টি খুবই জটিল বলে জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, কর্তৃপক্ষ কালোবাজারি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে উল্টো যাত্রীদের নিয়মের মধ্যে ফেলায় তারা রীতিমতো হয়রানির শিকার। যাত্রার সময় এনআইডি নিয়ে চলাচলের বিষয়টিকে বাড়তি বিড়ম্বনা হিসেবে দেখছেন অনেকে।
গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, ট্রেনের টিকিট শতভাগ অনলাইনে দেয়ার পরও অনেকে কমলাপুর রেল স্টেশন এলাকায় ঘুরছেন। তারা বলছেন, আমরা অনলাইন বুঝি না। ট্রেনের সব টিকিট অনলাইনে দিয়ে আমাদের টিকিট কাটা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ট্রেনের টিকিট না পেলে কিভাবে তারা গামের বাড়িতে যাবেন সেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। আবার অনেকে বলছেন টেনের টিকিট না পেলে এবছর ঈদে বাড়ি যাওয়াই হবে না।
এদিকে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পঞ্চম ও শেষ দিনের রেলের আগাম টিকিট পেতে অনলাইনে রীতিমতো যুদ্ধ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। এবার শতভাগ অনলাইনে টিকিট দেয়ায় আগামী ২১ এপ্রিলের টিকিটের জন্য সাইবার-যুদ্ধ চলে প্রত্যাশীদের মধ্যে।
গতকাল মঙ্গলবার ২১ এপ্রিলের ২৬ হাজার টিকিট বিক্রি করা হয়। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায় উত্তরবঙ্গের টিকিট। অনেকে সার্ভার বিড়ম্বনার কথাও তুলে ধরেন। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হলে ৩০ মিনিটের মধ্যে আড়াই কোটি বার হিট হয় অনলাইন সার্ভারে। এদিন দেয়া হয় ২১ তারিখের টিকিট, যার সংখ্যা মাত্র ২৬ হাজার।
যারা আগের দু-তিন দিন টিকিট পাননি তারাই মূলত ২১ এপ্রিলের টিকিটের জন্য মরিয়া ছিলেন। ভোর থেকে ভার্চুয়াল টিকিট-যুদ্ধে অংশ নিতে সব প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন তারা। যাত্রীচাপ থাকায় কিছুটা জটিলতা তৈরি হলেও সার্ভার স্বাভাবিক থাকায় ভোগান্তি ছাড়াই এদিন মিলেছে টিকিট। এদিন প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় উত্তরবঙ্গের প্রায় ১৩ হাজার টিকিট। যারা অনলাইনে টিকিট পাননি, তারা ব্যর্থ হয়ে অভিযোগ জানাতে ছুটে আসেন কমলাপুর স্টেশনে।
এছাড়া ঈদযাত্রার সব টিকিট অনলাইনে দেওয়ায় উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনের টিকিট এখন অনেকটা হয়ে পড়েছে লটারি পাওয়ার মতো। ভাগ্য ভালো হলে মেলে। এ অঞ্চলের ট্রেনের টিকিট ফুরিয়ে যায় মিনিটের মধ্যে। বাকি কিছু গন্তব্যের টিকিট দিনভর মিললেও পড়তে হয়েছে অনলাইন জটিলতায়। তবে সামাজিক যোগাযোগের নানা মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে যাত্রীদের ভোগান্তির খবর। উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলোর আরও বহু যাত্রী একই অভিযোগ জানিয়েছেন। অনেকেই ‘বুক নাউ’ করতে পারলেও সিট সিলেকশন করতে পারেননি। আবার কেউ তা পারলেও পারচেজ অপশন পর্যন্ত গিয়ে টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। তাই টিকিট পাননি।
ভ‚ক্তভুগীরা জানান, সকাল ৮টায় সার্ভার খুলে দেওয়ার পর ল্যাপটপ, মোবাইল দিয়ে চেষ্টা করেও রেলওয়ের সার্ভারে প্রবেশ করতে পারেননি। এসময় ভ‚ক্তভুগীরা প্রশ্ন করেন তাহলে কারা সার্ভারে প্রবেশ করে টিকিট কাটছেন তা জানা দরকার।
সার্ভারে প্রবেশ করতে না পেরে কমলাপুর স্টেশনে চলে আসা টিকিট প্রত্যাশীরা বলছেন, সকাল ৮টায় বিক্রি শুরুর পর ল্যাপটপ ও মোবাইলে টানা চেষ্টা করেও সার্ভারে প্রবেশ করতে পারেননি তারা। তাহলে কারা সার্ভারে প্রবেশ করে টিকিট কাটছে এটা জানতে এসেছেন অনেকে।
আবু হানিফ নামে একজন টিকিট প্রত্যাশী বলেন, ঢাকা-পঞ্চগড় রুটের একতা এক্সপ্রেস, দ্রæতযান এক্সপ্রেস কিংবা পঞ্চগড় এক্সপ্রেস-এর চারটি টিকিটের জন্য চার দিন চেষ্টা করেও পাননি।
ওমর নামে একজন বলেন, সব অঞ্চলের টিকিট একসঙ্গে না ছেড়ে সময় ভাগ করে ছাড়লে সার্ভারের লোড কমানো সম্ভব হতো। তার মতে, সকাল ৮টা থেকে ১০টা উত্তরাঞ্চলের টিকিট, ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সিলেট ও চট্টগ্রাম, ১২ থেকে ২টা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের টিকিট বিক্রির সিডিউল দিলে সার্ভারের জটিলতা কমানো যেত। এখন সব টিকিট একসঙ্গে ছাড়ার কারণে লাখ লাখ মানুষ সার্ভারে হিট করছে। এতে লটারির মতো হয়ে যাচ্ছে। কেউ কোনোরকমে ঢুকতে পারলেই তিনি ভাগ্যবান ব্যক্তি হয়ে যাচ্ছেন। যাত্রীদের হয়রানি কমানোর জন্য যেহেতু এ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, তাই সার্ভারের জটিলতা কীভাবে কমানো যায় তা নিয়ে আগামীতে রেল কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত।
সহজ-সিনোসিস-ভিনসেন্ট জেভির ভাইস প্রেসিডেন্ট যুবায়ের হোসেন বলেন, যে টিকিট একজন যাত্রী বুক করার চেষ্টা করছিলেন, একই সময়ে হয়তো আরও ৫০০ জন একই চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। আগে আসা ৫০০ জনের ক্লিক প্রসেস করার পর তিনি সুযোগ পাবেন। সে কারণেই ‘বুক নাউ’ তার জন্য কার্যকর ছিল না। যিনি আগে আসবেন, তার ক্লিক আগে প্রসেস হবে।
কমলাপুর রেল স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, এবারই প্রথম অনলাইনে সব টিকিটি বিক্রি হচ্ছে। এতে নতুন নতুন সমস্যা সামনে আসছে। এগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সিডিউল করে টিকিট বিক্রির পরামর্শও পেয়েছি। সব বিষয় আমলে নিয়ে পরবর্তীতে বসব। আশা করি, ধীরে ধীরে একটা সমাধানের মধ্যে আসবে।
২৭ হাজার টিকিটের জন্য যখন আড়াই কোটি হিট পড়ে তখন সার্ভারে সমস্যা হবেই। সক্ষমতার চেয়ে শতগুণেরও বেশি হিট পড়ছে অনলাইনে। কারও ভাগ্যে টিকিট জুটছে, কারও নয়। তবে আমরা শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে টিকিট বিক্রি করছি।
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, রেলওয়ে শতভাগ টিকিট অনলাইনে দেয়ার কারণে সমাজের এলিট শ্রেণির মানুষের সুবিধা হয়েছে। যারা স্মার্টফোন ও ল্যাপটপ ব্যবহার করেন তারাই টিকিট কাটার সুযোগ পেয়েছেন। আর সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষরা শতভাগ অনলাইনে দেয়ার কারণে ট্রেনের টিকিট থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কলোবাজরি বন্ধের জন্য এটা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। তবে এটা অংশীজনদের সাথে আলোচনা করে করা হলে আর আরো আগে থেকে করা হলে মানুষ অভ্যস্থ হতো।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, ঈদযাত্রায় যেন রেলের ভাব মর্যাদা ক্ষুন্ন না হয় সেজন্য এবার ঈদুল ফিতরের সব অগ্রিম টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হবে। এবার ঈদে বিভিন্ন রুটে ৯ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালানো হবে। পরে আরও একটি ট্রেন বাড়ানো হতে পারে। এবার যেন কালোবাজারি না হয় সেজন্য রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোনো টিকিট দেয়া হচ্ছে না। বিনা টিকিটের যাত্রী প্রতিরোধ কমলাপুর, বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা ও সব গন্তব্য স্টেশনসহ বড় বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশ এবং র্যাবের সহযোগিতায় টিকিটবিহীন যাত্রী স্টেশনে প্রবেশ প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক প্রহরার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসকদের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
এবি ব্যাংক পিএলসি. এর "বিজনেস রিভিউ মিটিং" অনুষ্ঠিত
উথ এশিয়ান বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেল সোনালী লাইফ
নেতাকর্মীদের রেখে লক্ষণ সেনের মত পালিয়ে গেছে স্বৈরাচার: ব্যারিস্টার সালাম
অভিনেতা অপূর্বকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার
বরিশালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অংশীজন সভায় প্রধান প্রকৌশলী
দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতিতে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস
সংস্কারোত্তর পিআর পদ্ধতিতেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে
‘শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে’
‘রাষ্ট্রের সকল স্তরে ইসলামী সংস্কৃতির অনুশীলন নিশ্চিত করতে হবে’
মেট্রোকে থামিয়ে ফাইনালে রংপুর
৪৩ বছর পর কুয়েতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি, হাসিনার ভরসা ভারতে: দুলু
মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল, কানাডায় কি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন ট্রুডো?
পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য নিয়ে এবার এলো জাহাজ
ভারতের সেবাদাসী হাসিনাকে পুনর্বাসনে এবার জঙ্গি মিশনে তারা!
মাহফুজকে উপদেষ্টা থেকে বাদ দেওয়া উচিত? যা বললেন ড. জাহেদ
৬ বছরের মধ্যেই চীনের হাতে হাজার পরমাণু বোমা! উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের
বিগত সময়ে দলীয় স্বার্থ উদ্ধারে বড় ধরনের অপরাধ করেছে পুলিশ, এ জন্য আমরা লজ্জিত: আইজিপি
ব্রাহ্মণপাড়ায় পাঁচ দিনেও খোঁজ মিলেনি নিখোঁজ সোহাগের
কসবায় পাহাড় কাটার অপরাধে ২ জনের অর্থদণ্ড