ঠেকানো যাচ্ছে না ভিসা জালিয়াত চক্র
১১ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৮ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৯ পিএম
জাল ভিসায় বিদেশ গিয়ে হয়রানির ঘটনা বাড়ছে। বার বার গ্রেফতারের পরও এ চক্রের সদস্যদের দমন করতে ব্যর্থ হচ্ছে আইন-শৃংখলা বাহিনী। সারাদেশে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি ও জাল ভিসা করে মানব পাচার করছে এমন ৩৫টি চক্র সক্রিয় রয়েছে। দীর্ঘদিন জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সঙ্গে জালিয়াতি করে আসা একটি আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের তিনজনকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এ ধরনের জালিয়াতির বিষয়টি বুঝতে পেরে গত মার্চ মাসে গুলশান থানায় একটি মামলা করে। ওই মামলায় তদন্ত করতে গিয়ে সম্প্রতি এই প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- আবুল কাশেম শেখ (৫৫), বখতিয়ার হোসেন (৩৫) ও মো. নজরুল ইসলাম (৪৫)। এদের মধ্যে আবুল কাশেম ভারত থেকে আন্তর্জাতিক কমিউনিকেশনের ওপরে ডিপ্লোমা করেছে। আর বখতিয়ার এস.এস.সি. ও নজরুল ইসলাম বি.এস.এস. পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, একটি পিসি, প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা কথক একাডেমির তিনটি সিল, ১৩টি ইমেইল অ্যাকাউন্ট, একটি ওয়েবসাইট, একটি ভিজিটিং কার্ড ও কথক একাডেমির সিইওর আইডি কার্ড জব্দ করেছে পুলিশ।
এছাড়া আবুল কাশেম শেখের বাসায় অভিযান পরিচালনা করে ৩১টি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার পাসপোর্টগুলো যুক্তরাষ্ট্র, জার্মান, জাপান, ইতালি, দুবাই ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে মানবপাচার ও প্রতারণায় ব্যবহার করা হয়। পাসপোর্ট উদ্ধার করে ভাটারা থানায় পাসপোর্ট আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, চক্রটির উদ্দেশ্যই ছিল জাতিসংঘরে আমন্ত্রণপত্র কাজে লাগিয়ে কথক একাডেমির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী নামধারী ব্যক্তিদের নামে ভিসা ইস্যু করা। প্রকৃতপক্ষে ওই ব্যক্তিরা ছিল তার ক্লায়েন্ট। যাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র পাঠায়। এছাড়া সে প্রতারণা করে তার প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব সুলতান মাহমুদের নাম পরিচয় ও তার স্বাক্ষর জাল করে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে চিঠি পাঠাতো। যাতে করে দূতাবাস থেকে ভিসা পাওয়া সহজ হয়।
তিনি বলেন, চক্রটি সাত ধাপে তাদের প্রতারণার প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করে। প্রথমে তাদের দালালদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দা যারা যুক্তরাষ্ট্র বা উন্নত দেশে যেতে আগ্রহী এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে চুক্তিতে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে। যারা পাসপোর্ট দেয় তাদের কথক একাডেমির স্টাফ হিসাবে বিভিন্ন ডকুমেন্ট তৈরি করে। এরপর জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ইকোনমিক ও সোশ্যাল কাউন্সিলের বিভিন্ন কনফারেন্সে যোগদানের জন্য তাদের সদর দপ্তরে রেজিস্ট্রেশন করে। রেজিস্ট্রেশনের পর যাদের জন্য ভিসা ইস্যু করবে তাদের কথক একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয়ে যোগদানের অনুমতির জন্য ই-মেইল করে। জাতিসংঘের সদরদপ্তর অনুমতি দিলে সব কাগজপত্রসহ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে ভিসার আবেদন করে পাসপোর্ট জমা দেয়। দূতাবাস তাদের সাক্ষাৎকার ও আঙুলের ছাপ নিয়ে তিন মাস মেয়াদি ভিসা দেয়। ভিসা পাওয়ার পর ওই ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যায়।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চক্রের মূলহোতা আবুল কাশেম কথক একাডেমির সিইও পরিচয়ে প্রতারণা ও মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত। তার কথক প্রতিষ্ঠানের কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। ২০০৮ সাল থেকেই কাশেম বিভিন্ন রকম প্রতারণার কাজে জড়িত। ২০১২ সাল থেকে ১০-১২ লাখ টাকার বিনিময়ে ভুয়া তথ্য দিয়ে ভিসা পাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মান, জাপান, ইতালি, দুবাই, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন উন্নত দেশগুলোতে প্রায় ৮০ জনকে পাচার করেছে।
ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ জানায়, এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেই পাঠিয়েছে ২০ জনকে আর বাকি ৬০ জনকে অন্যান্য দেশে পাঠিয়েছে। প্রতারণা করে কাশেম এখন পর্যন্ত ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব টাকা দিয়ে বিলাসী জীবন যাপন করতো। তার সহযোগী বখতিয়ার হোসেন বেকার ছিল। আর নজরুল একটি বেসরকারি হাসপাতালের সহকারী মার্কেটিং ম্যানেজার হিসাবে কাজ করত। আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে শাহবাগ থানা, ২০১৩ সালে পল্লবী থানায় মামলা হয়। গুলশান থানার মামলায় গ্রেফতারের পাশাপাশি পাসপোর্ট আইনেও তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে। আর বখতিয়ার ও নজরুলের নামে এর আগে কোনো মামলা ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের মামলায় একইরকম প্রতারণার দায়ে এর আগে গোলাম কিবরিয়া (৪৩), সাজ্জাদ মো. রিফাত (২৮), শাহনেওয়াজ খান রাফাত (২৫) ও শাহীন আকন (২৭) গ্রেফতার হয়েছিল।
ডিবি সাইবারের কর্মকর্তারা বলেন, আবুল কাশেম শেখ আন্তর্জাতিক মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের মূলহোতা। তিনি কথক একাডেমি নামক নাম সর্বস্ব একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের আড়ালে মানবপাচার করতেন। তার পরিচালিত কথক একাডেমি জাতিসংঘের ইকোনোমিক ও সোশ্যাল কাউন্সিলের স্পেশাল কনসালটেটিভ স্ট্যাটাস দাবি করেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাগুরায় পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত
দেশের প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনা তৈরিতে বাজারে অত্যাধুনিক ফিড নিয়ে এল আকিজ রিসোর্স
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আফগানিস্তানের টানা ষষ্ঠ সিরিজ জয়
কমিউনিটি ব্যাংকে ট্রাফিক মামলার জরিমানা দেওয়া যাবে
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে না: দ্য ইকোনমিস্টকে ড. ইউনূস
‘ফ্যাসিবাদী প্রধানমন্ত্রী ও এমপিরা তাদের কৃত কর্মের জন্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে’
ব্রাহ্মণপাড়ায় ট্রাক্টরের চাপায় কলেজ ছাত্রের মৃত্যু, আহত ২
কুরআন শিক্ষা বোর্ড ঢাকা মহানগর উত্তরের নগর সম্মেলন অনুষ্ঠিত
এবি ব্যাংক পিএলসি. এর "বিজনেস রিভিউ মিটিং" অনুষ্ঠিত
উথ এশিয়ান বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেল সোনালী লাইফ
নেতাকর্মীদের রেখে লক্ষণ সেনের মত পালিয়ে গেছে স্বৈরাচার: ব্যারিস্টার সালাম
অভিনেতা অপূর্বকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার
বরিশালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অংশীজন সভায় প্রধান প্রকৌশলী
দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতিতে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস
সংস্কারোত্তর পিআর পদ্ধতিতেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে
‘শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে’
‘রাষ্ট্রের সকল স্তরে ইসলামী সংস্কৃতির অনুশীলন নিশ্চিত করতে হবে’
মেট্রোকে থামিয়ে ফাইনালে রংপুর
৪৩ বছর পর কুয়েতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি, হাসিনার ভরসা ভারতে: দুলু