সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করে ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে চায় : সেমিনারে মির্জা ফখরুল
১১ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৯ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৯ পিএম
আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগসহ অন্যান্য আইনগুলো দিয়ে তাদের ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই সরকার কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, দখলদারী একটা সরকার।
তাই তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায়। এসব আইন করে ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করতে চায়। সামনে নির্বাচন- এই নির্বাচনকে সামনে রেখে যেন কেউই রুখে দাঁড়াতে না পারে, কেউ যেন তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে না পারে এবং নির্বাচনে তাদেরকে কেউ যেন বাধা দিতে না পারে তারজন্য এই সমস্ত আইনগুলো করেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে বিএনপির উদ্যোগে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, গণতন্ত্র এবং সাংবিধানিক কাঠামো’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন দিয়ে নাগরিকদেরকে প্রতিহত করা হচ্ছে যে, তারা তাদের কথা বলবে না, অভিযোগগুলো বলবে না, লিখবে না, সাংবাদিকরা যেন না লিখে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ঠিক একই অন্যান্য আইনগুলো দিয়ে আজকে এই নির্বাচনে তারা প্রতিপক্ষকে সম্পূর্ণ রুপে দূরে রেখে নির্বাচন পার হয়ে যেতে চায়।
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল করতে হবে। সবার আগে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করতে হবে। এটা এখন দেশের দাবি, জনগণের দাবি। তাই আসুন আমরা বাংলাদেশকে একটা সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য, কল্যানমূলক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্যে, এখানে সাধারণ মানুষ যাতে তার অধিকার ভোগ করতে পারে, বৈষম্য কমিয়ে নিয়ে এসে সাম্যের একটি অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করার জন্যে সবাই একযোগে লড়াই শুরু করি। যাতে এই দানব সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই জনগণের পার্লামেন্ট, জনগণের সরকার গঠন করতে পারি-সেই লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাই।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারের সবচেয়ে বড় অপরাধ তারা রাষ্ট্রের যে মূল চরিত্র তাকেই তারা ধবংস করে ফেলেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে শুধু নিজেরা ক্ষমতায় থাকার জন্য নতুন আঙিকে ছদ্মবেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কায়েম করছে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে নাগরিকদের নির্যাতন করা হচ্ছে। ডয়েচে ভেলের একটা ভিডিও গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে র্যাবের ঘটনা নিয়ে। সেই ভিডিওতে একজন সাক্ষ্য দিয়েছিলো নাফিজ তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের একটাই লক্ষ্য নাগরিকদের কথা বলতে দেয়া হবে না, অধিকার প্রয়োগ করতে দেয়া হবে না। তারা তাদের মতো করে এখনো রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, এটা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ, এদেরকে সরাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আজকে প্রত্যেকে আমরা ভিক্টিম হচ্ছি, প্রতিটি নাগরিক ভিক্টিম হচ্ছে, দেশের সাধারণ ও গরীব মানুষ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আমাদের সংবিধান পরিপন্থি, এই আইন গণতন্ত্রের পরিপন্থি, ইউনিভারসেল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস-১৯৪৮ এর পরিপন্থি। আজকে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান তিনি সরকারকে বলেছেন, এটা স্থগিত করেন।
এতে দলের দলের মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৭ মাস কারাবন্দি থাকা বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের মানুষের সমস্ত অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এই আইনের সমস্ত ধারাই খারাপ, নির্মম, নির্দয়, মানবাধিকার পরিপন্থি। সেইদিন আমাকে কর্মস্থল থেকে তুলে নেয়া হয়েছিলো। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রেখে দেশে গণতন্ত্রের কথা চিন্তা করা যায় না। এই ফ্যাসিস্ট সরকার যতদিন থাকবে দেশে মানুষ স্বাধীন থাকবে না।
আইসিটি অ্যাক্টে ভিকটিম রাজবাড়ীর সোনিয়া আখতার স্মৃতি বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছি বলে আইসিটি অ্যাক্টে মামলা করছে। আমাকে রাতে রাজবাড়ীতে থেকে তুলে নিয়ে কয়েক ঘন্টা কোথায় রেখেছে আমি জানি না। আমার দ্ইুটা ছোট ছোট বাচ্চা আছে তাদের কাছ থেকে আমাকে তুলে নিয়ে ছিলো। আমি এই মামলার ভুক্তভোগী। আমার কথাটা ভাইরাল হয়েছে বলে আমাকে আপনারা জানেন। কিন্তু এমন অনেকে আছেন তাদের খবর কেউ জানে না।
জাহিদ হাসান বলেন, এই আইনে মামলা দিয়ে তুলে নেয়ার পর কি যে অত্যাচার করা হয় যা আমি বলে শেষ করতে পারবো না। আমাকে গুম করেছে, আমার কি অপরাধ ছিলো? আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু লিখতাম, বøগিং করতাম.. এই যা। গুমে থাকা অবস্থার তার ওপর ‘নির্মম’ নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন তিনি।
ডিজিটাল আইনে গ্রেফতার হওয়া মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ বলেন, আমি শুধু সোশ্যাল মিডিয়া একটু বক্তব্য দিয়েছিলাম, আবেগ থেকে একটু কথা বলেছিলাম সেজন্য আমাকে তুলে নিয়ে গেলো। আমাকে র্যাব অফিসে নিয়ে একের পর এক ইন্টারোগেশন করেছে তার বর্ণনা দিলে শিহরিত হয়ে উঠতে হয়। আমি এখানে তা বলতে চাই না। আমাদের রিমান্ডের পর জেলে পাঠানো হয় সেখানে আমাকে কম্বল-বালিশটা পর্যন্ত দেয়া হয়নি। এই হচ্ছে আমাদের স্বাধীন দেশ।
দীর্ঘদিন গুম থাকা দৈনিক পক্ষকালের সস্পাদক আলোকচিত্রী শফিকুল ইসলাম কাজল বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম কতটা স্বাধীন? আমার মনে হয়, গণমাধ্যম এখন মৃতপ্রায়। ৫৩দিন গুম হওয়াকালে আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। কোথায় আছি? কেমন আছি? আমার চোখ বন্ধ ছিলো। আমি ক্রসফায়ারারে মুখোমুখি হয়েছি। অভিযোগ ছিলো- আমি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লিখেছি। হয়ত লিখেছি, এটা আমার অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার। তাই বলে গুম করে নেয়া হবে! ক্রসফায়ারের নেয়া হবে, জেল খাটতে হবে?
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসুর মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, গণঅধিকার পরিষদের ড. রেজা কিবরিয়া, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, এনডিপির ব্যারিস্টার ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর লুৎফর রহমান বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, গনসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার চৌধুরী বুলবুল, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, এনডিপির আবু তাহের, বিকল্পধারা বাংলাদেশ‘র প্রফেসর নুরুল আমিন ব্যাপারী, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহিউদ্দিন ইকরাম, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, ন্যাপের সালেকি, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের হারুন চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্ল্হা বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মীর নাসির, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, প্রফেসর সুকোমল বড়ুয়া, ইসমাইল জবিউল্লাহ, আবদুল কুদ্দুস, আবদুল কাইয়ুম, শাহিদা রফিক, আফরোজা খানম রীতা, বিজন কুমার সরকার, সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শ্যামা ওবায়েদ, জহির উদ্দিন স্বপন, আফরোজা আব্বাস, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কাদের গনি চৌধুরী, প্রফেসর এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, প্রফেসর শামসুল আলম, প্রফেসর নুরুল ইসলাম প্রমূখ ছিলেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
উথ এশিয়ান বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেল সোনালী লাইফ
নেতাকর্মীদের রেখে লক্ষণ সেনের মত পালিয়ে গেছে স্বৈরাচার- সিলেটে ব্যারিস্টার সালাম
অভিনেতা অপূর্বকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার
পুঠিয়ার শিবপুরে স্বামী-স্ত্রী ও শেলিকাসহ একই পরিবারের ৩জন নিহত
বরিশালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অংশীজন সখভায় প্রধান প্রকৌশলী
দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতিতে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস
সংস্কারোত্তর পিআর পদ্ধতিতেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে
‘শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে’
‘রাষ্ট্রের সকল স্তরে ইসলামী সংস্কৃতির অনুশীলন নিশ্চিত করতে হবে’
মেট্রোকে থামিয়ে ফাইনালে রংপুর
৪৩ বছর পর কুয়েতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি, হাসিনার ভরসা ভারতে: দুলু
মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল, কানাডায় কি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন ট্রুডো?
পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য নিয়ে এবার এলো জাহাজ
ভারতের সেবাদাসী হাসিনাকে পুনর্বাসনে এবার জঙ্গি মিশনে তারা!
মাহফুজকে উপদেষ্টা থেকে বাদ দেওয়া উচিত? যা বললেন ড. জাহেদ
৬ বছরের মধ্যেই চীনের হাতে হাজার পরমাণু বোমা! উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের
বিগত সময়ে দলীয় স্বার্থ উদ্ধারে বড় ধরনের অপরাধ করেছে পুলিশ, এ জন্য আমরা লজ্জিত: আইজিপি
ব্রাহ্মণপাড়ায় পাঁচ দিনেও খোঁজ মিলেনি নিখোঁজ সোহাগের
কসবায় পাহাড় কাটার অপরাধে ২ জনের অর্থদণ্ড