সারের দাম কেজিতে ৫ টাকা বৃদ্ধি
১২ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৯ পিএম
বিদ্যুৎ-গ্যাসের বিল নিয়ে মানুষ দিশেহারা। আগেই বাড়ানো হয়েছে ডিজেলের দাম। এখন আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে কৃষক ও ডিলার পর্যায়ে কেজি প্রতি ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি ও এমওপি সারের দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়ানো হলো। রাসায়নিক সারের কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে গতকাল সোমবার কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি করা হয়েছে।
এ দাম গতকাল থেকে কার্যকর হয়েছে। এদিকে সাবের দাম বৃদ্ধি করার কারণে ধান,চাল ও কৃষি পন্যের দাম বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভবননা রয়েছে। আবার এ দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষকের উপর প্রভাব পড়বে বলে জানা গেছে। ভরা বোরো মৌসুমে ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ৫টাকা বাড়ানোর পর ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সারাদেশের কৃষকরা। এতে উৎপাদন খরচ ও পরিবহন খরচ দুটোই বাড়বে বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন কৃষকরা। এদিকে আবারো সারের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে সরকারের এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে হঠাৎ করে সারের দাম বাড়া কতটা যুক্তিযুক্ত তা আমার বোধগম্য নয়। তবে কৃষকরা যে বিপাকে পড়বেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। সারের দাম বাড়লেও দেশিয় কৃষকদের কথা বিবেচনায় এনে ভর্তুকি দিয়ে বাজার সমতায় আনা উচিৎ বলে মনে করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ প্রফেসর গোলাম হাফিজ।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে সারের আমদানি যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা এবং সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সারের বিক্রয়মূল্য পুনর্র্নিধারণ করা হলো। এর আগে সারের মূল্য পুনর্নিধারণের সিদ্ধান্তের কথা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়ে জানায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। দাম বাড়ায় এখন থেকে কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ইউরিয়া ও টিএসপির দাম ২২ টাকা থেকে ২৭ টাকা, ডিএপি ১৬ টাকা থেকে বেড়ে ২১ টাকা, এমওপি সারের দাম ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা হয়েছে। অন্যদিকে ৫ টাকা বেড়ে ডিলার পর্যায়ে প্রতি কেজি ইউরিয়া ও টিএসপির দাম ২৫ টাকা, ডিএপির দাম ১৯ টাকা এবং প্রতি কেজি এমওপির দাম ১৮ টাকা হয়েছে। যা আগে ছিল ইউরিয়া ও টিএসপি ২০ টাকা, ডিএপি ১৪ টাকা এবং এমওপি ১৩ টাকা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিকেজি ইউরিয়া সারের বর্তমান দাম ৪৮ টাকা, ডিএপি ৭০ টাকা, টিএসপি ৫০ টাকা আর এমওপি ৬০ টাকা। এর ফলে ৫ টাকা দাম বৃদ্ধির পরও সরকারকে প্রতিকেজি ইউরিয়াতে ২১ টাকা, ডিএপিতে ৪৯ টাকা, টিএসপিতে ২৩ টাকা এবং এমওপিতে ৪০ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।বিগত তিন বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম প্রায় ৩-৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে দেশে সারে দেওয়া সরকারের ভর্তুকিও বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে ভর্তুকিতে লেগেছিল ৭ হাজার ৪২০ কোটি টাকা, সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে লেগেছে ২৮ হাজার কোটি টাকা, আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রয়োজন হবে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা।সারে ২০০৮-০৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের এখন পর্যন্ত সর্বমোট এক লাখ ১৯ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। গত ৩ এপ্রিল কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান এ বছর সারের দাম বাড়ানো হবে না। কিন্তু এর সাত দিনের মধ্যেই সারের দাম বাড়ানো হলো। ওইদিন সার বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় ও পরামর্শক কমিটির সভা শেষে কৃষিমন্ত্রী বলেন,গত চার বছরে প্রধানমন্ত্রী সারের দাম এক টাকাও বাড়াননি। অর্থ মন্ত্রণালয় বারবার আমাদের ওপর চাপ দিচ্ছে যে, সারের দাম বাড়ান, আমরা অর্থ যোগাড় করতে পারছি না, আমরা অর্থ আপনাদের দিতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রী অনড়, কিছুতেই তিনি সারের দাম বাড়াবেন না। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ পরিপ্রেক্ষিতে আজকেও আমরা আলোচনা করেছি। আমি আপনাদের বলতে চাই, আশা করি আপনারা (সাংবাদিক) জাতির সামনে তুলে ধরবেন। এ বছরও আমাদের সারের দাম বৃদ্ধির কোনো পরিকল্পনা নেই। সারের দাম বাড়ানো হবে না।
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার কৃষক হাফিজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, সার ও তেলের দাম বাড়ায় মানুষ এখন চাষাবাদ ছেড়ে দিচ্ছে। কারণ ফলন উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে অন্যদিকে কৃষক তার ফসলের ন্যয্য দাম পাচ্ছে না। কৃষক যদি ধান চাষ না করে, তাহলে দেশের অবস্থা তো অনেক খারাপ হয়ে যাবে। এ ভাবে সারের দাম বৃদ্ধি করা হলে সাধারণ কৃষক মারা যাবে। যশোরের অভয়নগর উপজেলার কৃষক তারা মিয়া জানান এক বারে প্রতি বস্তায় সারের দাম ২৫০টাকা বাড়ায় কৃষকের কষ্ট আরও বাড়বে। সারের দাম এমনিতেই বেশি।
নাটোরের কৃষক মকলেছ আলী বলেন, চাষাবাদে যে পরিমাণ খরচ তাতে সারের দাম বাড়লে ভবিষ্যতে চাষবাস করাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকাই দায় হবে।
এর আগে সরকারের নির্বাহী আদেশে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি বিদ্যুতের পর বাড়ানো গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। ‘বিল মাস’ ফেব্রæয়ারি থেকেই নতুন এই দাম কার্যকর হবে। তবে আবাসিক, সিএনজি ও চা শিল্পের গ্যাসের দাম বাড়েনি, এসব খাতে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম আগের মতোই রাখা হয়েছে। দাম বেড়েছে বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহ করা প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা করা হয়েছে। এছাড়াও ক্যাভটিভ পাওয়ার (শিল্প কারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে) খাতে গ্যাস প্রতি ঘনমিটারে দাম ১৬ টাকা থেকে বেড়ে ৩০ টাকা, বৃহৎ শিল্পে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা, মাঝারি শিল্পে ১১ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা এবং ক্ষুদ্র শিল্পে ১০ দশমিক ৭৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়াও বাণিজ্যিক গ্যাস সংযোগে প্রতি ঘনমিটারের দাম ২৬ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে প্রজ্ঞাপনে আবাসিক গ্রাহকদের এক চুলার দাম আগের মতোই ৯৯০ টাকাই রাখা হয়েছে। একইভাবে দুই চুলার দাম ১০৮০ টাকাই আছে। সিএনজিতেও প্রতি ঘনমিটার ৪৩ টাকা এবং চা শিল্পের গ্যাসের দামও আগের মতো প্রতি ঘনমিটার ১১ টাকা ৯৩ পয়সাই আছে। একইসঙ্গে সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দামও আগের মতোই আছে। জরুরি এই খাতটিতে সরবরাহকৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম আগের মতো ১৬ টাকাই রাখা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, প্রতি ঘনমিটার সিএনজি মূল্যহারের মধ্যে ফিড গ্যাসের মূল্যহার ৩৫ টাকা ও অপারেটর মার্জিন ৮ টাকা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এদিকে গৃহস্থালি ছাড়া অন্যান্য গ্রাহকশ্রেণি যেমন বিদ্যুৎ (সরকারি, আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র), ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ (ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট, স্মল পাওয়ার প্ল্যান্ট ও বাণিজ্যিক বিদ্যুৎকেন্দ্র), সার, শিল্প, চা-শিল্প (চা-বাগান), বাণিজ্যিক (হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য) এবং সিএনজির ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটারে (মাসিক অনুমোদিত লোডের বিপরীতে) ১০ পয়সা হারে ডিমান্ড চার্জ প্রযোজ্য হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ায় জনজীবনে সরাসরি প্রভাব না পড়লেও পরোক্ষভাবে এর প্রভাব পড়বে। এদিকে সরকার বলছে, এই দাম বৃদ্ধির ফলে তাদের ভর্তুকি কমবে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজি কিনতে গিয়ে পেট্রোবাংলা আর্থিক সংকটে রয়েছে। এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার আইএমএফ-এর কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে। আইএমএফ ঋণ ছাড়ের আগেই ভর্তুকি কমানোর শর্ত দিয়েছিল। সরকার ভর্তুকি কমাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে সবশেষ গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল গত বছরের ৪ জুন। এর আগে ২০১৮ সালের শেষভাগে এলএনজি আমদানির সময় থেকে সরকারের খরচ বাড়তে শুরু করে এবং তখন এই ঘাটতি পূরণ করতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
নেতাকর্মীদের রেখে লক্ষণ সেনের মত পালিয়ে গেছে স্বৈরাচার- সিলেটে ব্যারিস্টার সালাম
অভিনেতা অপূর্বকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার
পুঠিয়ার শিবপুরে স্বামী-স্ত্রী ও শেলিকাসহ একই পরিবারের ৩জন নিহত
বরিশালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অংশীজন সখভায় প্রধান প্রকৌশলী
দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতিতে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস
সংস্কারোত্তর পিআর পদ্ধতিতেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে
‘শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে’
‘রাষ্ট্রের সকল স্তরে ইসলামী সংস্কৃতির অনুশীলন নিশ্চিত করতে হবে’
মেট্রোকে থামিয়ে ফাইনালে রংপুর
৪৩ বছর পর কুয়েতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি, হাসিনার ভরসা ভারতে: দুলু
মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল, কানাডায় কি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন ট্রুডো?
পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য নিয়ে এবার এলো জাহাজ
ভারতের সেবাদাসী হাসিনাকে পুনর্বাসনে এবার জঙ্গি মিশনে তারা!
মাহফুজকে উপদেষ্টা থেকে বাদ দেওয়া উচিত? যা বললেন ড. জাহেদ
৬ বছরের মধ্যেই চীনের হাতে হাজার পরমাণু বোমা! উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের
বিগত সময়ে দলীয় স্বার্থ উদ্ধারে বড় ধরনের অপরাধ করেছে পুলিশ, এ জন্য আমরা লজ্জিত: আইজিপি
ব্রাহ্মণপাড়ায় পাঁচ দিনেও খোঁজ মিলেনি নিখোঁজ সোহাগের
কসবায় পাহাড় কাটার অপরাধে ২ জনের অর্থদণ্ড
নরসিংদীতে মাকে কুপিয়ে হত্যা, ছেলে গ্রেপ্তার