রহমতের জোসনাস্নাত শবে কদর
১২ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:১১ পিএম
আষাঢ়ের শুরুতে অমাবশ্যায় যখন মোষলধারে বৃষ্টি নামে তখন হালদা নদীতে রুই কাতলাদের উৎসব শুরু হয়। চট্টগ্রাম মহানগরীর কোলঘেঁষা কর্ণফুলী নদীর উজানে হালদা প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র্র। মৎস্যজীবিরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকে অমাবশ্যার আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টির জন্য। তখন সাগর মহাসাগরের তলদেশ হতে বিরাট বিরাট রুই কাতলা উঠে চলে আসে হালদায়। দুই তিন দিন ডিম পাড়ার উৎসব করে আবার ফিরে যায় সাগর বক্ষে তলদেশে। বর্ষা শুরুর উৎসব শেষে কোন অজানায় লুকিয়ে যায় কারো জানার সাধ্য নাই।
প্রাকৃতিক জগতের এসব তিথি, জো ও মওসুমের মতো আধ্যাত্মিক জগতেও আছে রহমতের বর্ষাকাল, ফয়জ ও বরকতের জোসনা-প্লাবণ, তিথি পার্বণ। মাহে রমযানের প্রধানতম নেয়ামত লাইলাতুল কদর সে ধরণের একটি অতিপ্রাকৃতিক উৎসব, আয়োজন। প্রাকৃতিক জগতের বর্ষায় বৃষ্টি নামে তার প্রমাণ পথ ঘাট ভিজে যায়, বাইরে থাকলে শরীর, কাপড় চোপড় চুপসে যায়। অতি প্রাকৃতিক জগতেও রহমতের বরিষণ হলে মুমিনের হৃদয় নগর প্লাবিত হয়, সেই প্লাবনের নিদর্শন জাগে চোখে মুখে। আল্লাহর ভয়ে ও ভালোবাসায় দেহমন রোমাঞ্চিত হয়। চোখে অশ্রুর ঝর্ণা নামে।
‘রাসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা যখন তারা শ্রবণ করে তখন তারা যে সত্য উপলব্ধি করে তার জন্য আপনি তাদের চক্ষু অশ্রুতে বিগলিত দেখবেন।... (সূরা মায়েদা, আয়াত-৮৩)
‘আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন উত্তম বাণী সম্বলিত কিতাব, যা সুসমঞ্জস এবং যা পুনঃ পুনঃ আবৃত্তি করা হয়। তার ফলে যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে তাদের গাত্র রোমাঞ্চিত হয়, অতপর তাদের দেহমন বিন¤্র হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে। ...’ (সূরা যুমার, আয়াত-২৩)
বস্তুত পৃথিবীতে আল্লাহর রহমতের প্লাবন লাইলাতুল কদরের পুণ্যতিথি। লাইলাতুল কদর সম্বন্ধে যদি আল্লাহ পাক কুরআন মজীদে সামান্য ইশারা করতেন তার ফযিলত মাহাত্ম্য, গুরুত্ব ও মর্যাদা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু ইশারা বা এক দুইটি শব্দ কিংবা বাক্য নয়, সম্পূর্ণ একটি সূরা নাযিল করেছেন লাইলাতুল কদরের ফযিলত বর্ণনায়। আরবি বাক্যরীতিতে বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবনে শ্রোতা বা পাঠককের মন প্রস্তুত করার জন্য প্রশ্নবোধক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় । এখানেও তাই হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন, ‘আমি কুরআন নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কী।’ তারপর বলছেন, ‘লাইলাতুল কদরের একটি রাত এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।’ ১০০০ মাসকে যদি ১২ দিয়ে ভাগ করা হয় ৮৩ বছর ৪ মাস দাঁড়ায়। তার মানে এই একটি রাতের ইবাদত ও সৎকর্মের সওয়াব ৮৩ বছর ৪ মাসের একটানা ইবাদত ও সৎকর্মের সওয়াবের চেয়ে বেশি।
সূরা কদরে এ রাতের আরো বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে, এই রাতে আল্লাহর সম্মানিত ফেরেশতা রূহ বা জিব্রাঈল (আ) অবতরণ করেন পৃথিবীর বুকে। জিব্রাঈল ফেরেশতা আগেকার জমানার নবী রাসূলগণের নিকট ওহী নিয়ে আসতেন। তিনিই কুরআন মজীদ এনেছেন আমাদের নবীজির কাছে। আমাদের প্রিয় নবীর পর ওহীর দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই জিব্রাঈল (আ) পৃথিবেিত ওহী নিয়ে আসেন না। তিনি শবে কদরে শান্তির সওগাত নিয়ে আসেন। একা আসেন না। অগণিত অসংখ্য ফেরেশতা সঙ্গে আনেন আল্লাহর হুকুমে।
তখন সর্বত্র শান্তি আর শান্তি বিরাজিত থাকে। ফেরেশতারা ইবাদতরত বান্দাদের সঙ্গে সাক্ষাত করলে তাদের অন্তর রোমাঞ্চিত আর দু‘নয়ন অশ্রুসিক্ত হয়। সূরার শেষ আয়াত, ‘শান্তি বিরাজিত থাকার এই অবস্থা ফজর উদিত হওয়া পর্র্যন্ত বলবৎ থাকে।’ (সূরা কদর)
হাদিস শরীফে সূরা কদরের আলোচনা কম করা হয়েছে। তার কারণ, কুরআন মজীদে লাইলাতুল কদরের যে গুরুত্ব ও ফযিলতের কথা ব্যক্ত হয়েছে তার চেয়ে বেশি বর্ণনা আর হতে পারে না।
তাই বেশির ভাগ বর্ণনা এই রাতের সৌভাগ্য কীভাবে কার কপালে জুটবে তার বয়ান সম্পর্কিত। নবী করিম (সা) রমযানের প্রথম দশদিন মসজিদে নববীতে একটি তুর্কি তাঁবুতে ইতিকাফ থাকার পর মাথা বের করে বলেন, আমি শবে কদর লাভের আশায় রমজানের প্রথম দশদিন ইতিকাফ ছিলাম। কিন্তু আমাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে শবে কদর রমযানের শেষ দশকে। কাজেই তোমরা রমজানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাতগুলোতে শবে কদর তালাশ কর।
শবে কদর তালাশ করতে হলে ইতিকাফ লাগবে। কিন্তু ইতিকাফ নিয়ে ঘুমিয়ে কাটালে হবে না। শবে কদর তালাশ হতে হবে। যাদের পক্ষে শেষ দশ দিন ইতিকাফ থাকা সম্ভব নয়, তারা অন্তত বেজোড় রাতগুলো ২১-২৩-২৫-২৭-২৯ মসজিদে কাটাতে পারেন। এর মধ্যে ২৩-২৫ ও ২৭ রাত তিনটি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যদি পুরো একরাত মসজিদে এসে ইতিকাফ করা সম্ভব না হয় কয়েক ঘন্টা বা কিছুক্ষণের নফল ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে যেতে পারেন। তাও সম্ভব না হলে যেখানে যে অবস্থায় আছেন মনটা আরশের দিকে লাগিয়ে রাখতে পারি। হযরত আয়েশা (রা) নবী করিম (সা) এর নিকট আরজ করলেন, আমি যদি শবে কদর পেয়ে যাই কোন আমলটি করব। নবীজি বলেন, তুমি বলবে, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন্ তুহিব্বুল আফওয়া ফা-ফু আন্নি।’ প্রভুহে তুমি অতিশয় ক্ষমাশীল। ক্ষমাকে তুমি ভালোবাস। অতএব আমাকে মাফ করে দাও।
হাদিস শরীফের সংক্ষিপ্ত একটি ভাষ্য ‘যে ব্যক্তি কদরের রাতে জাগ্রত হবে (ইবাদত করবে) তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারি, মুসলিম)
ব্যবসা বাণিজ্য বা আর্থিক লাভের আশায় আন্তঃজেলা যাতায়ত এখন দিনের চেয়ে রাতেই বেশি হয়। আমরা কী রাতের সফরের ন্যায় শবে কদরের ফযিলত লাভের আশায় ক‘টা দিন রাত্রি জগরণ করতে পারি না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
লেবাননে পেজার বিস্ফোরণে ভারত যোগ, ঘটনার পরেই উধাও ভারতীয় যুবক
ঈশ্বরগঞ্জে জামিয়াতুল মোদার্রেছীনের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশকে বিশাল লক্ষ্য ছুড়ে দিল ভারত
বিষ প্রয়োগ ও শিল্প দূষণ বন্ধ করে পশুর নদী ও সুন্দরবন বাঁচাতে হবে
রাশিয়ায় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি
ইসলামের বিধি-বিধান নিয়ে কটুক্তিকারী ড. সৈয়দ জামিল আহমেদকে অপসারণ করতে হবে
সাইবারট্রাক ‘অচল’ করে দেয়ার জন্য মাস্ককে দুষলেন কাদিরভ
ফিরেই পান্তের সেঞ্চুরি, তিন অঙ্কে গিলও
মুখে সুন্নী বললে সুন্নী হওয়া যায়না, আমলের মাধ্যমে সুন্নী হতে হয় -ছারছীনার পীর ছাহেব
রাঙামাটি পৌঁছেছে তিন উপদেষ্টাসহ সরকারের প্রতিনিধি দল
'কাজ না করলে বেতন বন্ধ’, ধর্মঘটকারী ভারতীয় কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিল স্যামসাং
অফ-স্পিনে ৩৯ বার আউট: কোহলিকে যে দাওয়াই দিলেন শাস্ত্রী
মাগুরায় ৮ বছর আগে কেড়ে নেয়া মাইক্রো উদ্ধার মালিককে ফেরত দিলেন যুবদল নেতা
পার্বত্য এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করা হয়নি: নাহিদ
যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তার রহস্যজনক মৃত্যু
সুনামগঞ্জে ২২ লাখ টাকার ইলিশ জব্দ
ছাত্রজনতা হত্যার নির্দেশদাতা বিতর্কিত পুলিশ সদস্যরা এখনো লাপাত্তা
রোগীদের সুস্থ করে তুলতে ‘রোবটের মতো’ কাজ করেছে লেবাননের যে চিকিৎসক
মোদীর সফরের আগে ভারত সরকারের নামে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা পান্নুনের
মিয়ানমার থেকে মণিপুরে অনুপ্রবেশ ৯০০ জঙ্গির, দাবি ভারতের