হাতি-মানুষের দ্ব›েদ্ব বেড়েই চলেছে মৃত্যুর মিছিল
১৬ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৫ পিএম
মরলে ৩ লাখ, বাঁচলে ১ লাখ! না, এমনইতে মরলে নয়। গারো পাহাড়ে বন্য হাতির আক্রমণে মারা গেলে সরকার বন বিভাগের মাধ্যমে দেবেন ৩ লাখ, আহত হলে ১ লাখ আর ফসল ক্ষতি হলে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে বনবিভাগ। কিন্তু গত ২-৩ মাসে ও ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীতে মানুষ এবং হাতির মৃত্যু হয়েছে, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার শ্রীবরদী গারো পাহাড়ে হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু ও একজন মারাত্মকভাবে আহত হয়ে শেরপুর হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। এখানে যতই দিন যাচ্ছে বাড়ছে মানুষ ও হাতি মৃত্যুর মিছিল। সীমান্তবর্তী শেরপুরের গারো পাহাড়ি অঞ্চল ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় ১৯৯৫ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৩০ বছর চলছে হাতি-মানুষের দ্ব›দ্ব আর যুদ্ধ। গারো পাহাড়ের প্রায় ৫০-৬০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে বন্যহাতির তান্ডব। বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। ফি-বছর বন্য হাতি খেয়ে ও পায়ে পিষে সাবার করছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ জমির ফসল, ধ্বংস করছে বসতবাড়ি, খেয়ে সাবার করছে বাড়ির গোলার ধান। বন্য হাতির পাল পাহাড়ি অঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে আসছে লাগাতার ভাবে। ভেঙে তছনছ করে, মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে তাদের ক্ষেতের ফসল বসতবাড়ি। দীর্ঘ ৩০ বছর অব্যাহত চলে আসছে এ অবস্থা। এতে বন বিভাগের হিসাব মতেই হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা গেছে ৬০ জন, আহত হয়েছে ৫ শতাধিক। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন শতাধিক মানুষ। হাতিও মরেছে ৩৩টি। তবে বেসরকারি হিসেবে হতাহতের সংখ্যা আরো বেশি হবে বলে পাহাড়ি মানুষদের দাবি।
ফি-বছর ধান পাকার মৌসুমে ধান ও সবজি এবং আম-কাঁঠালের মৌসুমে আম-কাঁঠাল খাওয়ার নেশায় হাতির পাল নেমে আসে লোকালয়ে। চালায় তান্ডবলীলা। অত্যাচার থামাতে ইতোপূর্বে স্থাপন করা হয়েছে সৌরবিদ্যুৎচালিত তারের বেষ্টনী (ফেন্সিং), হাতির জন্য খাদ্যের বাগান তৈরিসহ হাতি ও মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। পাহাড়ি অঞ্চলে একের পর এক করা হয় বন বিভাগের মাধ্যমে জনসচেতনামূলক সভা। কিন্তু কোনভাবেই বন্যহাতির বেপরোয়া আক্রমণ প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না।
জানা যায়, পাহাড়ি অঞ্চল শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে গারো পাহাড়ে হাতির আবাসস্থলে তৎকালিন অসাধু বন কর্মকর্তা-কর্মচারিদের যোগশাজসেই নগদনারায়ণের বিনিময়েই দরিদ্র লোকজন বসতবাড়ি গড়ে তুলেছেন। টাকার বিনিময়ে অলিখিত চুক্তিতে বাড়িঘর নির্মাণ, গাছপালা নিধন ও পাহাড় কেটে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে হাতি ও জীব-জন্তুু, জানোয়ারের বিচরণ ক্ষেত্র। বন্যহাতি পাহাড়ি ঝর্ণা, নদীর পাড় বেয়ে এবং ব্রিজের নিচ দিয়ে পাকা ফসলের মাঠে নেমে আসছে। আশির দশকের পর থেকে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে গারো পাহাড়ের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। হারিয়ে যায় অনেক বন্যপ্রাণী। অব্যাহত থাকে বন্যহাতির তান্ডব।
‘বন বিভাগের পক্ষ থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঝিনাইগাতীর তাওয়াকুচা থেকে ছোট গজনী, হালচাটি এলাকা পর্যন্ত স্থাপন করা হয় ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ফেন্সিং। তাওয়াকুচা ও কর্ণঝোরার ৫০ হেক্টর জমিতে তৈরি করা হয় হাতির খাদ্যবাগান। রোপণ করা হয় কাঁটাযুক্ত গাছ। এতে কিছু সুফল মিললেও মানুষের অসচেতনতা ও সংস্কারের অভাবে সবই অকার্যকর হয়ে পড়ে।
বনবিভাগ জানায়, দিনের বেলায় সোলার ফেন্সিং বন্ধ থাকার কারণে এলাকাবাসী ফেন্সিং ঢিলা করে পাহাড়ে গরু চড়াতে যায় এবং লোকজনের যাতায়াতও বেড়েছে। সংস্কারের অভাবে সোলার ফেন্সিং অকার্যকর হয়ে পড়েছে। হাতির জন্য খাদ্যের বাগান এখন নেই বললেই চলে। ফলে হাতি খাবার না পেয়ে খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকে চালাচ্ছে তান্ডব। তবে ধান ও কাঁঠালের প্রতি হাতি দুর্বল। তাছাড়া হাতি কখনও এক জায়গায় থাকতে পছন্দ করে না। আজ এখানেতো কাল অন্য খানে ছুটে যায়, এভাবেই চষে বেড়ায় গোটা গারো পাহাড়ি অঞ্চল। তাই হাতি ও মানুষের সহাবস্থান তৈরির ব্যরস্থা করা জরুরী বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন দিলদার বলেন, পাহাড়ের মানুষ এমনিতেই দরিদ্র। তাদের কষ্টার্জিত ফসল অব্যাহতভাবে হাতি খেয়ে সাবার করায় কৃষকরা খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। মানুষ ও যাতে না মরে, হাতিও যাতে না মরে এমন ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সরকার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী পাহাড়ে হাতি চলাচলের জন্য অভয়াশ্রম করার প্রকল্প গ্রহণের কথা। এতে হাতির উপদ্রব কমে যাবে বলে আশা করছি। তবে সতর্ক থাকতে হবে সব সময় পাহাড়ে বসবাসরত মানুষকে। যাতে হাতির সাথে দ্ব›দ্ব না বাড়ে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভোটার এবার আগের মত ভোট হবে না-মৌলভীবাজারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ. এম. এম. নাসির উদ্দিন
ইহুদি খ্রিস্টানদের স্বর্গরাজ্য পুড়ে ছাই হচ্ছে!
জালিয়াতির প্রশ্ন তুলে শিরোপা হারালেন মিস ইউনিভার্স
‘হাসিনা জানুয়ারিতে দেশে আসবেন দাবি সঠিক নয়’
বকশীবাজারে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়: মামলার বিচারক
বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে : আমিনুল হক
১০ ঘণ্টা অবরোধের পর বকশীবাজার ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা
ভাঙারি দোকানে আদালতের নথির বস্তা
অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে সংঘর্ষ, ৫০ ছাগল পুড়ে অঙ্গার
‘ভ্যাট বাড়ানোর’ পরিকল্পনা থেকে সরে না এলে রেস্তোরাঁ বন্ধের হুমকি
সুদহার বাড়ছে সঞ্চয়পত্রে
সুরমা নদীর তীরে জমে উঠেছে শীতকালীন সবজির হাট : প্রতিদিন প্রায় ১২ লক্ষ টাকার বেচাকেনা
মন্দিরে প্রবেশে ফ্রি টোকেন পেতে হুড়োহুড়ি, পদদলিতে নিহত ৬
লক্ষ্মীপুরে বহুতল ভবনের ফাইলিংয়ে বিধ্বস্ত সড়ক-দোকানপাট, ঝুঁকিতে ভবন
রাফির ব্যাংক লেনদেন নিয়ে যা বললেন সারজিস
পটুয়াখালী জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছিনের সাবেক সভাপতির ইন্তেকাল
আশুলিয়া থানায় নতুন ওসি হিসেবে যোগ দিলেন নুরে আলম সিদ্দিক
বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে আগুন দেওয়া হয়েছে
জকিগঞ্জে ক্রসফায়ারের চার বছর পর ওসির বিরুদ্ধে মামলা
আজকের মধ্যে ন্যায় বিচারের ইঙ্গিত না পেলে শাহবাগ ব্লকেডে যাবেন বিডিআর পরিবারের সদস্যরা