ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১
‘মরলে ৩ লাখ, বাঁচলে ১ লাখ’

হাতি-মানুষের দ্ব›েদ্ব বেড়েই চলেছে মৃত্যুর মিছিল

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৬ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৫ পিএম

মরলে ৩ লাখ, বাঁচলে ১ লাখ! না, এমনইতে মরলে নয়। গারো পাহাড়ে বন্য হাতির আক্রমণে মারা গেলে সরকার বন বিভাগের মাধ্যমে দেবেন ৩ লাখ, আহত হলে ১ লাখ আর ফসল ক্ষতি হলে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে বনবিভাগ। কিন্তু গত ২-৩ মাসে ও ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীতে মানুষ এবং হাতির মৃত্যু হয়েছে, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার শ্রীবরদী গারো পাহাড়ে হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু ও একজন মারাত্মকভাবে আহত হয়ে শেরপুর হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। এখানে যতই দিন যাচ্ছে বাড়ছে মানুষ ও হাতি মৃত্যুর মিছিল। সীমান্তবর্তী শেরপুরের গারো পাহাড়ি অঞ্চল ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় ১৯৯৫ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৩০ বছর চলছে হাতি-মানুষের দ্ব›দ্ব আর যুদ্ধ। গারো পাহাড়ের প্রায় ৫০-৬০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে বন্যহাতির তান্ডব। বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। ফি-বছর বন্য হাতি খেয়ে ও পায়ে পিষে সাবার করছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ জমির ফসল, ধ্বংস করছে বসতবাড়ি, খেয়ে সাবার করছে বাড়ির গোলার ধান। বন্য হাতির পাল পাহাড়ি অঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে আসছে লাগাতার ভাবে। ভেঙে তছনছ করে, মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে তাদের ক্ষেতের ফসল বসতবাড়ি। দীর্ঘ ৩০ বছর অব্যাহত চলে আসছে এ অবস্থা। এতে বন বিভাগের হিসাব মতেই হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা গেছে ৬০ জন, আহত হয়েছে ৫ শতাধিক। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন শতাধিক মানুষ। হাতিও মরেছে ৩৩টি। তবে বেসরকারি হিসেবে হতাহতের সংখ্যা আরো বেশি হবে বলে পাহাড়ি মানুষদের দাবি।
ফি-বছর ধান পাকার মৌসুমে ধান ও সবজি এবং আম-কাঁঠালের মৌসুমে আম-কাঁঠাল খাওয়ার নেশায় হাতির পাল নেমে আসে লোকালয়ে। চালায় তান্ডবলীলা। অত্যাচার থামাতে ইতোপূর্বে স্থাপন করা হয়েছে সৌরবিদ্যুৎচালিত তারের বেষ্টনী (ফেন্সিং), হাতির জন্য খাদ্যের বাগান তৈরিসহ হাতি ও মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। পাহাড়ি অঞ্চলে একের পর এক করা হয় বন বিভাগের মাধ্যমে জনসচেতনামূলক সভা। কিন্তু কোনভাবেই বন্যহাতির বেপরোয়া আক্রমণ প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না।
জানা যায়, পাহাড়ি অঞ্চল শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে গারো পাহাড়ে হাতির আবাসস্থলে তৎকালিন অসাধু বন কর্মকর্তা-কর্মচারিদের যোগশাজসেই নগদনারায়ণের বিনিময়েই দরিদ্র লোকজন বসতবাড়ি গড়ে তুলেছেন। টাকার বিনিময়ে অলিখিত চুক্তিতে বাড়িঘর নির্মাণ, গাছপালা নিধন ও পাহাড় কেটে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে হাতি ও জীব-জন্তুু, জানোয়ারের বিচরণ ক্ষেত্র। বন্যহাতি পাহাড়ি ঝর্ণা, নদীর পাড় বেয়ে এবং ব্রিজের নিচ দিয়ে পাকা ফসলের মাঠে নেমে আসছে। আশির দশকের পর থেকে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে গারো পাহাড়ের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। হারিয়ে যায় অনেক বন্যপ্রাণী। অব্যাহত থাকে বন্যহাতির তান্ডব।
‘বন বিভাগের পক্ষ থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঝিনাইগাতীর তাওয়াকুচা থেকে ছোট গজনী, হালচাটি এলাকা পর্যন্ত স্থাপন করা হয় ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ফেন্সিং। তাওয়াকুচা ও কর্ণঝোরার ৫০ হেক্টর জমিতে তৈরি করা হয় হাতির খাদ্যবাগান। রোপণ করা হয় কাঁটাযুক্ত গাছ। এতে কিছু সুফল মিললেও মানুষের অসচেতনতা ও সংস্কারের অভাবে সবই অকার্যকর হয়ে পড়ে।
বনবিভাগ জানায়, দিনের বেলায় সোলার ফেন্সিং বন্ধ থাকার কারণে এলাকাবাসী ফেন্সিং ঢিলা করে পাহাড়ে গরু চড়াতে যায় এবং লোকজনের যাতায়াতও বেড়েছে। সংস্কারের অভাবে সোলার ফেন্সিং অকার্যকর হয়ে পড়েছে। হাতির জন্য খাদ্যের বাগান এখন নেই বললেই চলে। ফলে হাতি খাবার না পেয়ে খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকে চালাচ্ছে তান্ডব। তবে ধান ও কাঁঠালের প্রতি হাতি দুর্বল। তাছাড়া হাতি কখনও এক জায়গায় থাকতে পছন্দ করে না। আজ এখানেতো কাল অন্য খানে ছুটে যায়, এভাবেই চষে বেড়ায় গোটা গারো পাহাড়ি অঞ্চল। তাই হাতি ও মানুষের সহাবস্থান তৈরির ব্যরস্থা করা জরুরী বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন দিলদার বলেন, পাহাড়ের মানুষ এমনিতেই দরিদ্র। তাদের কষ্টার্জিত ফসল অব্যাহতভাবে হাতি খেয়ে সাবার করায় কৃষকরা খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। মানুষ ও যাতে না মরে, হাতিও যাতে না মরে এমন ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সরকার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী পাহাড়ে হাতি চলাচলের জন্য অভয়াশ্রম করার প্রকল্প গ্রহণের কথা। এতে হাতির উপদ্রব কমে যাবে বলে আশা করছি। তবে সতর্ক থাকতে হবে সব সময় পাহাড়ে বসবাসরত মানুষকে। যাতে হাতির সাথে দ্ব›দ্ব না বাড়ে।

 

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ফরাজীকান্দি নেদায়ে ইসলাম ওয়েসীয়ান ছাত্রদের উদ্যোগে  ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.) উপলক্ষে আনন্দ র‌্যালি

ফরাজীকান্দি নেদায়ে ইসলাম ওয়েসীয়ান ছাত্রদের উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.) উপলক্ষে আনন্দ র‌্যালি

ব্রুনাইয়ে ভবন থেকে পড়ে গফরগাঁওয়ের প্রবাসী নিহত

ব্রুনাইয়ে ভবন থেকে পড়ে গফরগাঁওয়ের প্রবাসী নিহত

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক আওয়ামী লীগ তা কখনও চায়নি : শিমুল বিশ্বাস

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক আওয়ামী লীগ তা কখনও চায়নি : শিমুল বিশ্বাস

এনপি জনগণকে নিয়ে যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবে- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম ডাঃ জাহিদ হোসেন,

এনপি জনগণকে নিয়ে যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবে- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম ডাঃ জাহিদ হোসেন,

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে আওয়ামীলীগের পাঁচ নেতা গ্রেপ্তার

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে আওয়ামীলীগের পাঁচ নেতা গ্রেপ্তার

শেখ হাসিনা ও শামীম ওসমানসহ ৩৬ জনের নামে নারায়ণগঞ্জে মামলা।

শেখ হাসিনা ও শামীম ওসমানসহ ৩৬ জনের নামে নারায়ণগঞ্জে মামলা।

আড়াইহাজারে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে চাঁদাবাজ গ্রেপ্তার

আড়াইহাজারে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে চাঁদাবাজ গ্রেপ্তার