ঢাকা   শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

তীব্র দাবদাহে বেপরোয়া লোডশেডিং

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:০৮ পিএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৩৪ এএম

দেশ জুড়ে তীব্র দাবদাহ। মানুষ অতিষ্ট। জীবনধারা বিপর্যস্ত। এরকম ঠাঠা রোদ, প্রচ- উত্তাপ অনেকদিন দেখা যায়নি। ঢাকায় রোববার তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ১৯৬৫ সালের পর এত তাপমাত্রা দেখা যায়নি। ওই বছর তাপমাত্র ছিল ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এবার ঢাকার চেয়েও বেশি তাপমাত্রা উঠেছিল চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে। লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে, তাপমাত্রা ৬৫ সালকে ছাড়িয়ে যাবে। আবহাওয়া অধিদফতরের মতে, এই দাবদাহ, এই উচ্চ তাপমাত্রা আরো কয়েকদিন থাকতে পারে। তার মানে ঈদের আগে তাপদাহ কমার তেমন সম্ভবনা নেই। ভয়াবহ খরতাপ, ও লু হাওয়ার মতো গা-পোড়ানি হাওয়ায় মানুষের জীবনযাত্রা যেমন স্বাভাবিকতা হারিয়েছে, তেমনি কৃষি-শিল্পের উৎপাদন হ্রাসের আশংকাও দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ অনাবৃষ্টি ও অসহনীয় খরাপরিস্থিতি উৎপাদন-অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এহেন দুর্ঘট অবস্থার মধ্যে বিদ্যুতের বেপরোয়া লোডশেডিং চলছে। রাজধানীতে অন্তত দু’তিন বার ৩-৪ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। গ্রামঞ্চলে হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি। কোনো কোনো এলাকায় ৮-১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। রোদ ও গরমের প্রচ-তায় মানুষ যখন তিষ্ঠাতে পারছে না তখন ফ্যান, এসি কিছু স্বস্তি ও আরাম এনে দিতে পারে। বিদ্যুৎ না থাকায় বা লোডশেডিং থাকায় সেটাও ঠিকমত পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুতের রেকর্ড পরিমাণ চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন কম হওয়ায় লোডশেডিং করা ছাড়া উপায় থাকছে না। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, গত শনিবার বিকেল ৫টায় যখন বিদ্যুতের মোট চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ১০০ মেগাওয়াট তখন উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৩৪১ মেগাওয়াট। অর্থাৎ আড়াই হাজার মেগাওয়াটের বেশি ঘাটতি ছিল, যা ‘ম্যানেজ’ করা হয়েছে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, মোট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫৮ শতাংশ আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ থাকায় এক বিরাট উৎপাদন ঘাটতি দেখা দেয়। মূলত জ্বালানি সংকটের কারণেই উৎপাদন ব্যহত হয়। কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যা ওইদিন জ্বালানি সংকটের কারণে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন করেনি, সেগুলো হলো: রামপাল (কয়লা), সিদ্ধিরগঞ্জ (গ্যাস), বরিশাল (কয়লা), সিরাজগঞ্জ, ইউনিট-২ (গ্যাস/ডিজেল), সিরাজগঞ্জ ইউনিট-৩ (গ্যাস/ডিজেল), খুলনা (ডিজেল), শিকলবহা (গ্যাস/ডিজেল) এবং আশুগঞ্জ-নর্থ (গ্যাস)।

পরদিন রোববার অবশ্য উৎপাদন পরিস্থিতির উন্নতি হয়। ওইদিন সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় ১৪ হাজার ৯৯৯ মেগাওয়াট। সেদিন সর্বমোট চাহিদা ছিল ১৬ হাজার মেগাওয়াট। অর্থাৎ ১ হাজার মেগাওয়াটের সমান কিছু বেশি লোডশেডিং করা হয়। এটাও কিন্তু কম নয়। সরকারের দাবি, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপ্লব হয়েছে। দেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়ার সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে। তারপরও বিদ্যুতের উৎপাদন ও সরবরাহে ঘাটতি কেন, সেটাই প্রশ্ন। বলা হয়, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট। অন্য এক হিসাবে দেখা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্থাপিত ক্ষমতা ২৩ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট। ক্যাপাটিভ পাওয়ার কোম্পানি এর মধ্যে নয়। আমদানিও নয়। তাহলে এত বিদ্যুৎ গেল কোথায়? দেখা যাচ্ছে, ১৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। স্থাপিত ক্ষমতা মোতাবেক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন করা যাচ্ছে না? সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি বেসরকারি রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। অনেক সময় এসব সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রাখা হয়। বসিয়ে রাখার অর্থ এই নয় যে, খরচ কমে। বরং বিদ্যুৎ না কিনেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয় বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে। এজন্যে বছরে বিপুল অংকের অর্থ সরকারকে দিতে হয়। এর ওপর ভারত থেকে সরকারি পর্যায়ে এবং বেসরকারি পর্যায়ে আদানির বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। সরকারি বিদ্যুত কেন্দ্রই যখন বসিয়ে রাখা হয় তখন রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন? ভারত থেকে আমদানিই বা কেন? আবার কয়লা কিংবা জ্বালানি ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয় কেন? এই প্রচ- গরমের সময়, এই বোরো আবাদের সময় যখন বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়েছে বা বাড়ছে তখন জ্বালানি সংকট দেখা দেবে কেন? আগেই কেন জ্বালানির প্রয়োজনীয় মজুদ সংরক্ষণ করা হয় না?

গোটা বিদ্যুৎ খাত নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অধিক জোর দিয়েছে। সঞ্চালন লাইন ও সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতি যেভাবে নজর দেয়নি। ফলে, উৎপাদন ক্ষমতা বাড়লেও উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। যেহেতু ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না, কাজেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এজন্য খেসারত দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে আবার আমদানিও করা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে সুপরিকল্পানার ছাপ নেই। দেশে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা এখনকার চেয়ে অনেক বেশি। তারপরও সর্বোচ্চ ১৪ হাজার মেগাওয়াটে উৎপাদন আটকে রাখতে হচ্ছে। আর যখন তখন লোডশেডিং করে গোঁজামিল দেয়া হচ্ছে। আমরা আশা করবো, সরকার বিদ্যুৎ খাত নিয়ে যা হচ্ছে বা চলছে, তা বন্ধ করতে দৃঢ়তা দেখাবে। এখাতে সুচিন্তিত ও বাস্তবোচিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। শৃংখলা-সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে। যথেচ্ছ বিদ্যুৎমূল্য বাড়ানো ও লোডশেডিং বন্ধ করা হবে। উৎপাদন ও সরবরাহের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা হবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শীতে কাহিল উত্তরাঞ্চল
সমৃদ্ধ ও সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ: প্রধান উপদেষ্টা
প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে যুবদের দক্ষতা উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার তাগিদ বিশিষ্টজনদের
তাহেরির মাহফিল থেকে পুলিশের ওপর আক্রমণ
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান হামিদের এলাকাবাসীর সাথে মতবিনিময়
আরও

আরও পড়ুন

শীতে কাহিল উত্তরাঞ্চল

শীতে কাহিল উত্তরাঞ্চল

রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ না বানাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান মির্জা ফখরুলের

রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ না বানাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান মির্জা ফখরুলের

ক্রিসমাসকে ঘিরে বর্ণিল সাজে সজ্জিত স্পেন

ক্রিসমাসকে ঘিরে বর্ণিল সাজে সজ্জিত স্পেন

সমৃদ্ধ ও সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ: প্রধান উপদেষ্টা

সমৃদ্ধ ও সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ: প্রধান উপদেষ্টা

প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে যুবদের দক্ষতা উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার তাগিদ বিশিষ্টজনদের

প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে যুবদের দক্ষতা উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার তাগিদ বিশিষ্টজনদের

কেরানীগঞ্জে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার

কেরানীগঞ্জে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্কের ১২ মাসে ১২ হাজার কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্কের ১২ মাসে ১২ হাজার কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি

বেনাপোলে আবাসিক হোটেল থেকে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পণ্য জব্দ

বেনাপোলে আবাসিক হোটেল থেকে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পণ্য জব্দ

গফরগাঁওয়ে বালুভর্তি লড়ি চাপায় যুবকের মৃত্যু

গফরগাঁওয়ে বালুভর্তি লড়ি চাপায় যুবকের মৃত্যু

‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ উক্তি সম্পূর্ণ ইসলামবিরোধী'

‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ উক্তি সম্পূর্ণ ইসলামবিরোধী'

মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা করায় ইউক্রেনকে সমালোচনা ট্রাম্পের

মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা করায় ইউক্রেনকে সমালোচনা ট্রাম্পের

সংবিধানে 'আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস' পুনঃস্থাপন করতে হবে

সংবিধানে 'আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস' পুনঃস্থাপন করতে হবে

জামিন পেলেন অভিনেতা আল্লু অর্জুন

জামিন পেলেন অভিনেতা আল্লু অর্জুন

অপরাধীদের ক্ষমায় রেকর্ড করলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেন

অপরাধীদের ক্ষমায় রেকর্ড করলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেন

লামায় চতুর্থ শ্রেণী সরকারি কর্মচারী সমিতির নতুন সভাপতি দুলাল, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম

লামায় চতুর্থ শ্রেণী সরকারি কর্মচারী সমিতির নতুন সভাপতি দুলাল, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম

৭২ সংবিধানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করেছেন শেখ মুজিব   মাওলানা মামুনুল হক

৭২ সংবিধানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করেছেন শেখ মুজিব  মাওলানা মামুনুল হক

নিজ স্বার্থেই বাংলাদেশ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেবে: জয়শঙ্কর

নিজ স্বার্থেই বাংলাদেশ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেবে: জয়শঙ্কর

ঠাকুরগাঁও সুগার মিলে মাড়াই কার্যক্রম উদ্বোধন

ঠাকুরগাঁও সুগার মিলে মাড়াই কার্যক্রম উদ্বোধন

তাহেরির মাহফিল থেকে পুলিশের ওপর আক্রমণ

তাহেরির মাহফিল থেকে পুলিশের ওপর আক্রমণ

শিক্ষার্থীরা যেমন ছাত্ররাজনীতি চায়

শিক্ষার্থীরা যেমন ছাত্ররাজনীতি চায়