পরনিন্দা কখন জায়েজ নাজায়েজ
১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৪ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:২৪ পিএম
একজন মান্যবর বুদ্ধিজীবীর একটি লেখার বক্তব্য বহু বছর পরও মাথা থেকে নামিয়ে রাখতে পারছি না। তিনি বাড়ির বেলকনিতে বসে দূরের এক বাড়ির বারান্দায় একটি আপত্তিকর দৃশ্য দেখেন। লিখতে বসে ওই দৃশ্য বর্ণনার জন্য তার কলম সচল হয়ে ওঠে। বেশ রগরগা বর্ণনা দেন দৃশ্যটির সমালোচনা করে। দৃশ্যটি হয়ত তিনি ছাড়া আর কেউ দেখেনি। এখন তার বয়ান পড়ে অনেকের মনে সুড়সুড়ির সৃষ্টি হয়েছে। এত বড় চিন্তাবিদ হয়েও একটিবার ভাবলেন না যে, অন্যের একান্ত ব্যক্তিগত দোষের কথা ভরা মজলিসে আলোচনা করে তিনি মারাত্মক সামাজিক অপরাধ করেছেন। কারণ, তার সরস বর্ণনা পড়ে অসংখ্য মানুষ, কিশোর তরুণের মন কলুষিত হওয়া স্বাভাবিক। বুদ্ধিজীবীর মতো পত্রিকা জগতের অনেক কলমজীবীও সমাজের অনেক গোপন বিষয়ের বর্ণনা দেন অনুমান থেকে বা কানকথা শুনে। তাতে সেই ব্যক্তির চরিত্র হনন করে, আর পাঠকদের মনে পাপের প্রতি এক ধরনের অব্যক্ত স্পৃহা জাগিয়ে তোলেন। ইসলাম বিষয়টিকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। কোরআন মজিদে এরশাদ হয়েছে:
‘হে মোমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারি তোমাদের নিকট কোনো বার্তা আনয়ন করে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে, পাছে অজ্ঞতা বশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে বস এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদের অনুতপ্ত হতে হয়।
এসব ক্ষেত্রে ইসলামের নীতি হলো, অন্যের দোষ গোপন করা। কেউ ব্যক্তিগতভাবে কোনো অপকর্ম বা পাপ করে বসল। আপনি কোনো এক ফাঁকে দেখে বা জেনে ফেললেন। ঘটনা সত্য হলেও আপনি সমাজের সামনে তা বলতে পারবেন না। একেই বলে অন্যের দোষ গোপন করা। দ-বিধি প্রয়োগের মতো অপরাধ হলেও প্রয়োজনীয় সাক্ষী ব্যতিরেকে আপনি সমাজের সামনে কাউকে অভিযুক্ত করতে পারবেন না। তখন তা অপবাদ আরোপের মতো হবে। প্রমাণ করতে না পারলে আপনাকে উল্টা আশি ঘা বেত্রাঘাতের শিকার হতে হবে।
হ্যাঁ, কারো অপরাধ বা অপকর্মের দ্বারা যদি অন্যের ক্ষতি হয়, আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হন, সমাজ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, অন্যায়টি ব্যক্তিগত সীমা অতিক্রম করে সমাজ ব্যবস্থাকে আক্রমণ করে তা হলে অবশ্যই প্রকাশ্যে বলতে পারবেন, সমালোচনা করতে পারবেন। এমনকি তার প্রতিবাদ করা আপনার দ্বীনি দায়িত্ব হয়ে পড়বে। সেই সমালোচনা গিবত বা পরনিন্দা হিসেবে গণ্য হবে না। অন্যথায় গিবত হবে। আপনি কারো গিবত করবেন, ব্যক্তিগত পর্যায়ের দোষ বা পাপকর্ম দেখে কলমের খোঁচায় বা মুখের বর্ণনায় রগরগা করবেন, কাউকে সমাজের সামনে খাটো করবেন ব্যাপারটি নিয়ে আপনি মজা পেলেও তার পাপ অন্যকিছুকে ছাড়িয়ে যাবে। হাদীস শরীফে এমন গিবতকে জেনা-ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য গোনাহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
পরের দোষ চর্চার বদ অভ্যাস শুধু ওয়াজ নসিহত দিয়ে সংশোধন হয় না। বরং তার জন্য প্রয়োজন কঠোর অনুশাসন ও অনুশীলন। এর জন্য ইসলামে দীর্ঘ অনুশীলন ও কঠোর কৃচ্ছ্রতার বিধান আরোপ করা হয়েছে। যেমন পবিত্র রমজান মাসের সিয়াম সাধনা। দীর্ঘ একমাস দিনের বেলা পানাহার ও যৌন সংসর্গ থেকে বিরত থাকার সাথে সাথে দিনে ও রাতে আরো কিছু কঠোর বিধান মানতে হয়। নচেত প্রকৃত রোজা পালন হয় না। হাদিস শরিফে পরিষ্কার বলা হয়েছে :
‘যে ব্যক্তি রোজা রাখল অথচ মিথ্যা কথা ও কাজকর্ম এবং মূর্খতা পরিহার করল না তার পানাহার ত্যাগ করাতে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ মিথ্যা কথা ও কাজের মধ্যে প্রধানতম পাপ গিবত, পরনিন্দা, পরচর্চা। হাদীসের বর্ণনার চেয়েও কঠোরভাবে কুরআন মজিদে নিষেধ করা হয়েছে বিষয়টিকে।
‘হে মোমিনগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক; কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা একে অপরের গোপন বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কী কেউ আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে। (অথচ পরনিন্দা মৃত ভাইয়ের লাশের গোশত খাওয়ার মতো জঘন্য পাপ ও অপরাধ) বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। (সূরা হুজুরাত, আয়াত-১২)
গিবত পরিহারের জন্য নবী করিম (সা.) যে আবেদন জানিয়েছেন তা আরো মর্মস্পর্শী।
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কু-ধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাক। কারণ কুধারণা সব চাইতে বড় মিথ্যা কথা। অপরের গোপনীয় দোষ খুঁজে বেড়িয়ো না, অপরের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করো না, একে অপরের সাথে (অসৎ কাজে) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করো না, পরস্পরে হিংসা করো না, পরস্পরে বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অপরের পেছনে লাগবে না। বরং তোমরা আল্লাহর বান্দা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও। (বুখারী, হাদিস নং-২০৪৬)।
প্রেমপ্রীতি-ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সমাজ গঠন ইসলামের মূল লক্ষ্য। তার জন্য আরো অনেক বিধান দিয়েছে। পাঁচওয়াক্ত নামাজে বিদায়ের সময় শেষ বৈঠকে ডান পাশে তারপর বাম পাশে যারা আছে তাদের সালাম দিতে হয়। সালাম মানে সবার জন্য শান্তি কামনা। নামাজ শেষে প্রধান মোনাজাতেও সেই শান্তির জন্য ফরিয়াদ ‘আল্লাহুম্মা আন্তাস সালাম, ওয়ামিনকাস সালাম...
‘হে আল্লাহ! তুমি শান্তিময়। তোমার কাছ থেকেই আসে শান্তি। তুমি বরকতময়, ওহে মহিয়ান গরিয়ান। তোমার কাছেই ফিরে যায় শান্তি। প্রভু হে আমাদের শান্তিময় জীবন দান কর। তোমার শান্তিধাম দারুস সালাম বেহেশতে আমাদেরকে দাখিল কর।’
আসুন গিবতের মতো জঘন্য পাপটিকে আমরা ঘৃণা করি, পরিহার করি, সচেতন হই এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে সুন্দর সমাজ গড়ার জন্য যতœবান হই।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের জন্য শেরপুর বিএনপির মিছিল
সৈয়দপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিফলেট বিতরণ
তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে পটুয়াখালীতে মেয়েদের হকি ম্যাচ অনুষ্ঠিত
কুকুর পরিচালনা শিখতে ইতালি যাচ্ছেন পুলিশ কর্তারা
ফেদেরারের যে রেকর্ড এখন জোকোভিচের
কুষ্টিয়ায় আ.লীগ নেতাকে হাতুড়িপেটায় মাথা ফাটাল, যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দল নেতারা
কালীগঞ্জে বিএনপির উদ্যোগে মোচিক ইউনিয়নের কমিটিকে সংবর্ধনা
বগুড়ায় করেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলার প্রধান আসামি সহ গ্রেপ্তার ৪
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আকাশে উড়ার স্বপ্ন পূরণ করল নভোএয়ার
সিলেটে 'সিটিজেন রাইটস এন্ড জাস্টিস নেটওয়ার্ক' এর আত্মপ্রকাশ
ঠাকুরগাঁওয়ে কাজে লাগছে না দুই কোটি টাকার স্লুইস গেট
এনসিটিবির সামনে হামলার সময় সরব ছিল না পুলিশ
নগরকান্দায় “তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ”-শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
ফেনীতে ট্রেনের ধাক্কায় মহিলার মর্মান্তিক মৃত্যু
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ে ঘেরা হচ্ছে ট্রাম্পের অভিষেকের মঞ্চ
৬টি কমিশনের মেয়াদ আরও এক মাস বাড়ানো হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
লস অ্যাঞ্জেলসে ভয়াবহ দাবানলের কারণে বাতিল হতে পারে অস্কার
২৪ গণ অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের দাবীতে আলোচনাসভা
ফ্রিল্যাসিং করে তাসনিমুলের মাসে আয় লাখ টাকা
ঈশ্বরগঞ্জে বিজ্ঞান মেলার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ