ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১
গ্রামপর্যায়ে ১০-১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ রামপাল : বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড চাহিদা মেটাতে হিমশিম :: দাবদহে বোরোর ক্ষেত দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কৃষিতে

লোডশেডিংয়ে নাকাল জীবন

Daily Inqilab পঞ্চায়েত হাবিব

১৮ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫০ পিএম

গরমে জীবন যেন আর চলে না। গ্রীষ্ম মৌসুমে তীব্র দাবদহের মধ্যেই পবিত্র রমজান মাসের মানুষ রোজা রাখছেন। সারাদেশে তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যেই বেড়েছে বিদ্যুতের ভোগান্তি। রাজধানীর বাইরে কুড়িগ্রাম-রংপুর- লালমনিহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নাটোর পাবনা, জয়পুরহাট, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, ময়মসিংহ, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় দিনে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কোথাও লোডশেডিং আরো বেশি। গরমে অতিষ্ঠ মানুষ রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। দাবদাহে শুকিয়ে যাচ্ছে ক্ষেত্রের ধানগাছ। শতভাগ বিদ্যুতের দেশে লোডশেডিংয়ে পবিত্র রমজান মাসে মানুষে জীবন নাকাল হয়ে পড়েছে।

সারাদেশের কয়েকটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং গ্রাম পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রামে বিদ্যুৎ কখন আসে আর কখন যায় তা বলা দুষ্কর। প্রচ- গরমে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে ফ্রিজের খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা চলছে না। ঈদ সমাগত অথচ গরমের কারণে ক্রেতা মার্কেটমুখী হচ্ছে না। ভ্যাপসা গরম দুর্বিষহ জীবন। তাপমাত্রা না কমা পর্যন্ত ভোগান্তি কমবে না বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। গত কয়েক দিনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড হলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গরম বেড়ে যাওয়ায় এসি ও ফ্যান বেশি চলছে। পাশাপাশি রমজান ও সেচ মৌসুম চলার ফলে বিদ্যুতের চাহিদা এক লাফে অনেক বেড়েছে। উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশি হওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয়ভাবে সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন কোম্পানীগুলো। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৩০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এর মাধ্যমে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরও গরমের কারণে বিদ্যুতের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। তীব্র গরমে সামান্য বিদ্যুৎ বিভ্রাটও মানতে চাইছেন না গ্রাহকরা। আবার চাইলেই জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন আরও বাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে চাহিদা মেটাতে এক ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে।

রাজশাহী থেকে রেজাউল করিম রাজু জানান, তীব্র তাপাদহে বয়ে যাচ্ছে রাজশাহীর উপর দিয়ে। অসহ্য গরমে ছটফট করছে মানুষ। এর সাথে আরেক যন্ত্রণা বিদ্যুতের যাওয়া আসা পরিস্থিতিকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে। গরম থেকে বাঁচতে ফ্যান চালিয়ে একটু আরাম নেবার উপায় নেই। পাখা থাকলেও বিদ্যুতের অভাবে চালানো যাচ্ছেনা। সেহেরী, ইফতার সকাল দুপুর রাত সব সময়জুড়ে থাকছে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা। ঘরের মধ্যে এক দম বন্ধকর অবস্থা। বাজারগুলো জেনারেটর দিয়ে কোন রকমে তাদের ব্যবসা সচল রাখার চেষ্টা করছে। বিপাকে রয়েছে মধ্যবিত্ত মানুষ। তাদের ঘরে আইপিএস নেই। লু-হাওয়ার কারণে ঘরের জানালা খুলে রাখা যাচ্ছে না। রোজাদাররা কাহিল হয়ে পড়েছেন। এদিকে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে পানির পাম্প না চলার ফলে পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘœ ঘটছে।

রাজশাহীতে নেসকোর প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা একশো ছয় মেগাওয়াট হলেও পাওয়া যাচ্ছে একাত্তর মেগাওয়াট। ঘাটতি পঁয়ত্রিশ মেগাওয়াট। লোডশেডিং করে ম্যানেজ করা হচ্ছে। তাছাড়া গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। গ্রামেও চলছে লোডশেডিং। সেখানে প্রভাব পড়েছে কৃষিতে। দাবাদহে বোরোর ক্ষেত দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। সেচদিয়ে ফসল বাচানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে সেখানে সেচ পাম্পে বিঘœ ঘটছে। পল্লী বিদ্যুতের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের চাহিদা ও ঘাটতির পরিসংখ্যান না দিলেও বলেন আমরা সেচ ব্যবস্থা চালানোর চেষ্টা করছি।

বগুড়া থেকে মহসিন রাজু জানান, বগুড়ায় তাপমাত্রার পারদ উঠেছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। একদিকে তাপদাহ, অন্যদিকে বিদ্যুতের ঘনঘন আসা যাওয়ায় নাকাল ও নাজেহাল হয়ে উঠেছে বগুড়ার মানুষ। এদিকে এই অসহনীয় গরমে বিদ্যুতের মিনিটে মিনিটে আসা যাওয়ার ঘটনায় ত্যক্ত বিরক্ত অতিষ্ঠ মানুষ। বিদ্যুৎ বিভাগের কমপ্লেইন সেকশনে ফোন করে কোনো সদুত্তর পাচ্ছে না গ্রাহকরা। বিদ্যুৎ বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, বগুড়া জেলায় এখন বিদ্যুতের চাহিদা ১০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে মিলছে ৭০ থেকে ৮০ মেগাওয়াট। এছাড়াও প্রচ- গরমের কারণে বিদ্যমান ট্রান্সফরমারগুলো ঠিকঠাক মতো কাজ করতে পারছে না। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের এ ধরনের ব্যাখ্যা মানতে নারাজ ভোক্তারা। তাদের প্রশ্ন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে কি বিদ্যুৎ বিভাগ সত্যই অক্ষম?

চট্টগ্রাম থেকে রফিকুল ইসলাম সেলিম জানান, চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চরম সঙ্কট চলছে। তাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গ্রীষ্মের প্রচ- গরমের সাথে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া চলছে। বিদ্যুতের অভাবে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি পরিশোধন ও সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মক বিঘিœত হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। হাঁসফাঁস গরমে রোজাদারের প্রাণ ওষ্ঠাগত। বিদ্যুৎ না থাকায় এই অঞ্চলের ছোট বড় কল-কারখানার উৎপাদনের চাকা অচল হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ঈদ বাজারে কেনাকাটায় রীতিমত ধস নেমেছে।

চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। জ্বালানি সাশ্রয়ে আরো কয়েকটি দিনের বেলায় বন্ধ রেখে সন্ধ্যায় কিছু সময়ের জন্য চালু রাখা হচ্ছে। তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রচ- গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম হওয়ায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

কোন কোন এলাকায় রাতে দিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। খরতাপে বিগড়ে যাচ্ছে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন, ট্রান্সফরমার। তাতেও বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে বিগত দেড় দশকে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু তার কোনো সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ গ্রাহকরা। এখন পবিত্র রমজান মাস আর রেকর্ড গরমেও বিদ্যুৎ সরবরাহ মিলছে না। তাতে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ ফুঁসে উঠছে। এই প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সংশ্লিষ্ট স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে।

পিডিবির তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম অঞ্চলে ছোট বড় আর সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার ৩৮২ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে দিনের বেলায় ৯২০ থেকে ৯২৫ মেগাওয়াট। আর সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ২৬০ মেগাওয়াট। অথচ পিক আওয়ারে চট্টগ্রাম অঞ্চলের চাহিদা প্রায় এক হাজার ছয়শ মেগাওয়াট। চাহিদা আর সরবরাহের এই বিশাল ব্যবধান লোডশেডিং এখন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। দিনের বেলায় নগরীতে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। তাতে নগরীর বেশির ভাগ এলাকায় সারাদিন বিদ্যুৎ থাকছে না। মহানগরীর তুলনায় শহরতলী ও গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি আরো শোচনীয়। কবে নাগাদ এই সঙ্কটের অবসান হবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।

বিদ্যুতের অভাবে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামের সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। ঈদ বাজারে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ঈদের বাকি আর মাত্র কয়েক দিন অথচ বিদ্যুতের আসা-যাওয়া খেলায় অতিষ্ঠ মানুষ মার্কেটমুখী হচ্ছেন না। তাতে লোকসানের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকরা।

সিলেট থেকে ফয়সাল আমীন জানান, চলছে তাপপ্রবাহ। অসহ্য যাপিত জীবন। এমনিতেই পবিত্র রমজান শেষে দোরগোড়ায় ঈদুল ফিতর। মার্কেট বিপণিবিতানে ঈদের কেনাকাটা। বিশ্বজোড়া অর্থনীতিক মন্দা। তারপরও বাজারমুখিী মানুষের স্রোত। কিন্তু সব কিছু লন্ডভন্ড করে দিয়েছে লোডশেডিং। খোদ ব্যবসায়ীরা দোকানে বসে গরমের জ¦ালায় অতিষ্ট। দূর-দূরান্তের ক্রেতারা কীভাবে সহ্য করবে গরমে এমন অশান্তি। সার্বিক বিবেচনায় বিপর্যস্ত জনজীবন। এদিকে, মাত্রাতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে গতকাল রবিবার (১৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে সিলেট নগরীর নয় সড়কে সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে এর প্রায় ১৫ মিনিট পর বিদ্যুৎ চলে আসলে তারা অবরোধ তুলে নেন। স্থানীয়রা জানানÑ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় তারা ইফতার করেছেন এবং তারাবির নামাজ পড়েছেন। শুধু নয় সড়কই নয়, গত ৪ দিন থেকে সিলেটের সব এলাকায়ই চলছে চরম বিদ্যুৎ বিভ্রাট। দিনরাত মিলিয়ে ৮-১০ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না সিলেটবাসী। এতে চরম ভোগান্তিতে আছেন সিলেটের মানুষ। সংশ্লিষ্টর বলছেনÑ সিলেটে চাহিদার অর্ধেকের চাইতেও কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল শনিবার (১৫ এপ্রিল) সিলেটে পিডিবির সবগুলো ডিভিশনের চাহিদার মধ্য থেকে ৪২ ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। ঘাটতি ছিল ৫৮ ভাগ। যে কারণে শনিবার সকাল থেকেই সিলেট মহানগরের সব এলাকায় ছিলো চরম বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ-ই-আরেফিন বলেন- আজ এই সময়ে তার ডিভিশনে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দরকার। কিন্তু সরবরাহ করা হয়েছে ১৭ মেগাওয়াট। ঘাটতি ১৩ মেগা.। ফলে বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-২ এর আওতাভুক্ত এলাকায় অনির্ধারিত লোডশেডিং হচ্ছেই।

নোয়াখালী থেকে এহসানুল আলম খসরু জানান, প্রচ- গরমে নোয়াখালীতে বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং এর মাত্রা। দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ পাচ্ছে না গ্রাহকরা। অতিমাত্রায় লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবনে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, ঘন ঘন লোডশেডিং-এ নষ্ট হচ্ছে বিদ্যুৎচালিত জিনিসপত্র, বিদ্যুৎচালিত কল-কারখানার মেশিন। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম পাওয়ায় লোডশেডিং অনেকটা বেড়েছে। আবহাওয়া শীতল, বৃষ্টি ও গরমের মাত্রা কমে গেলে দ্রুতই লোডশেডিং সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা বিদ্যুৎ বিভাগের।

মাইজদীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালের পরিচালক বোরহান উদ্দিন আহমেদ মিঠু বলেন, হাসপাতালে বিদ্যুতের প্রয়োজনটা সবচেয়ে বেশি। শনিবার সারাদিনে হাসপাতালে প্রায় ৬ ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। কিছুক্ষণ পর পর লোডশেডিং হয় আর আমাদের জেনারেটর চালু করতে হয়। একটু পর পর জেনারেটর চালু করার কারণে মেশিনের যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, জেলায় বেড়েছে বিদ্যুতের বিড়ম্বনা। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ায় বিদ্যুতের লাগাতার লোডশেডিং চলছে। গত তিনদিন ধরে দিনের বেলা প্রতি এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরপর লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন গ্রাহকরা। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসায় তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

এদিকে বিদ্যুৎ লোডশডিংয়ের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন আবাসিক এলাকার বাসিন্দাসহ বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুৎ সঙ্কটে ঈদের মৌসুমে বিপণিবিতানগুলোতে দুর্ভোগে পড়ছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। ভ্যাপসা গরমে তারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেবা প্রদান বিঘিœত হচ্ছে। হাসপাতালের রোগীরা গরমে চরম বিড়ম্বনা সহ্য করছেন।

নেত্রকোনা থেকে এ কে এম আব্দুল্লাহ জানান, গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহ ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিং এর কারণে নেত্রকোনার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নেত্রকোনা জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৪০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে পিডিবি’র চাহিদা ২০ মেগাওয়াট, পাওয়া যাচ্ছে ১৪ মেগাওয়াট আর পল্লী বিদ্যুতের চাহিদা ১২০ মেগাওয়াট পাওয়া যাচ্ছে ৬৫ মেগাওয়াট। সরকার চলতি ইরি-বোরো মওসুমে ও পবিত্র মাহে রমজান মাসে সর্বত্র নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের আশ্বাস দিলেও বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মাক্তারপাড়া নিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী বলেন, পবিত্র রমজান মাসে সাহরি, ইফতারি ও তারাবির নামাজের সময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় রোজাদাররা খুব কষ্ট পাচ্ছে। আটপাড়া উপজেলার স্বরমুশিয়া রূপচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক আকিকুর রেজা খোকন জানান, আমরার এলাকায় ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় একদিকে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে। অপরদিকে এই গরমে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। নেত্রকোনা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাহমুদ এলাহী জানান, গ্রীষ্ম মওসুমে তীব্র তাপদাহে এবং পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের সরবরাহ কম হওয়ায় মাঝে মাঝে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

নরসিংদী থেকে মো. রফিকুল ইসলাম জানান, দেশের বৃহত্তর বাণিজ্যিক ও শিল্পাঞ্চল নরসিংদীতে বিদ্যুতে লোডশেডিং এর কারণে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। এরই মধ্যে প্রচ- গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে, সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকার নিম্নআয়ের মানুষগুলো। বর্তমানে ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে কাপড় তৈরির কারখানাগুলো পড়ছে চরম ক্ষতির মুখে। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে কারখানা বন্ধ থাকা অবস্থায় শ্রমিকদের বসিয়ে রেখে পুরো দিনের হাজিরা দিচ্ছেন ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে অনেক গুন। এতে প্রত্যেক কারখানার মালিককে লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে।

ফরিদপুর থেকে আনোয়ার জাহিদ জানান, এ জেলায় তীব্র তাপদাহ আর লোডশেডিংয়ে দুর্বিষহ জনজীবন। দিন রাত চলছে থেমে থেমে লোডশেডিং। এতে পবিত্র রমজানে রোজাদারদের কষ্টের কোনো সীমা নেই। মসজিদ অথবা বাসা বাড়িতে মুসল্লি ও নামাজিরা পড়ছেন চরম কষ্টে। একদিকে রাত-দিন প্রচ- গরম। সাথে চলছে তীব্র লোডশেডিং। দিনে ৪ বার এবং রাতে ২/৩ বার প্রায় ১ থেকে ২ ঘণ্টা করে লোডশেডিং এ জেলাবাসীর নাকাল অবস্থা। ঘন ঘন বিদ্যুৎ এর লোডশেডিং এর কারণ সম্পর্কে ফরিদপুর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের (আবাসিক) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিনুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি ইনকিলাবকে জানান, আমরা যতটা জেনেছিÑ রামপাল বিদ্যুৎ-এর পাওয়ার প্ল্যান্টে সমস্যা হওয়ায় আমাদের সমস্যা চলছে। এটা সঠিক কিনা তাও নিশ্চিত নয়। তিনি আরো বলেন জেলায় আমাদের প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ৮০ থেকে ১০০ মেগাওয়াট সেখানে আমরা পাচ্ছি মাত্র ৩০ থেকে ৪০ মেগাওয়াট। সমস্যা কতদিন চলবে জানতে চাইলে তিন বলেন, ঈদের পরে আশা করছি লোডশেডিং এর সমস্যা থাকবে না।

সুনামগঞ্জ থেকে মো. হাসান চৌধুরী, পবিত্র মাহে রমজান শুরু হওয়ার আগেই সুনামগঞ্জ জেলায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থার অবনতি শুরু হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের দাবি বিদ্যুৎ ব্যবস্থার কোনো ঘাটতি নেই। গ্রাহকদের অভিযোগ, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে আর আসে না। দিনে ৪ থেকে ৫ বার বিদ্যুৎ নেয়া হচ্ছে। বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিংয়ে জনজীবন চরম বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে। তীব্র তাপদাহ, ভ্যাপসা গরম ও রৌদ্রের প্রখরতার সাথে যেন পাল্লা দিয়ে চলছে সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিং। এ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে হাজার হাজার গ্রাহক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

জয়পুরহাট থেকে মশিউর রহমান খান জানান, এ জেলায় গত ১৩ এপ্রিল থেকে দৈনিক প্রায় ১০ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। এতে গ্রাম ও নগরবাসীর এ পবিত্র রমজান মাসে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এর কারণ হিসেবে অত্যন্ত তাপদহে অত্যাধিক পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদাকে দায়ী করেছেন। জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সূত্রে জানা যায়, দেশে চলমান তাপদাহ কারণে ও পবিত্র মাহে রমজান মাসের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ায় এবং রামপাল ৫০০ ( মেগা ওয়ার্ড) থামাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, অশ্বগঞ্জ ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ও চট্টগ্রাম (রাউজান) ২১০ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ত্রুটির কারণে বন্ধ থাকাই এবং হাটহাজারী ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিট উপকেন্দ্রে চঞ বিস্ফোরণের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় এ লোডশেডিং হচ্ছে।

ভোলা থেকে মো. জহিরুল হক জানান, একদিকে রোজা অন্যদিকে প্রচ- দাবদাহের মাঝে বিদ্যুতের লোডশেডিং অস্থির হয়ে পরছে ভোলার বাসিন্দারা। অথচ ভোলায় বিদ্যুৎ চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন হলেও লোডশেডিং হচ্ছে। চরফ্যাশনসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে দিনে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানা যায়। বোরহান উদ্দিনে রাতে দিনে কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং হয়। পল্লী বিদ্যুৎ চরফ্যাশনের ডিজিএম মিজানুর রহমান বলছেন তীব্র তাপমাত্রার কারণে ফ্যান, এসি ব্যবহার হচ্ছে বেশি তাতে চাহিদাও বাড়ছে বেশি এবং দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ ব্যাবহারের ফলে মাঝে মাঝে ফ্রিকোয়েন্সি ডাউনের কারণে এ লোডশেডিংটা হচ্ছে।

মাদারীপুর থেকে আবুল হাসান সোহেল জানান, তীব্র গরমের পর ব্যাপক লোডশেডিংয়ের কারণে ঘরেও থাকা যাচ্ছে না। এতে শিশু ও বৃন্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। শহরের সুমন হোটেল এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী জাবের আলী বলেন, গরমে শেষ হইয়ে যাচ্ছি। এক ঘণ্টা পর পর বিদ্যুৎ চলে যায়। মানুষও ঘরের বাইরে আসছে না। যে কারণে বেচাবিক্রিও অর্ধেকে নেমে আসছে। এভাবে আরো কত দিন থাকবে বুঝতে পারছি না। আমরা ছোট ব্যবসায়ীরা শেষ হয়ে যাব।

মৌলভীবাজার থেকে এস এম উমেদ আলী জানান, প্রচ- তাপদাহের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলা সদরসহ অন্যান্য উপজেলায় ঘনঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। পবিত্র রমজাম মাসে বারবার সাধারণ মানুষ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করার পরও মিলছে না কোনো সমাধান। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিষয়ে নানা উক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। স্থানীয়রা জানান, পবিত্র মাহে রমজানের ১৫ রোজার পর থেকেই বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ জেলার মানুষ। প্রায় সময় প্রচ- তাপাদাহের মধ্যে লোডশেডিং হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও থেকে মাসুদ রানা পলক জানান, তীব্র লোডশেডিং আর তাপদাহের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের এ জেলা। রাতে ও দিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় সাধারণ মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। বিশেষ করে অতিরিক্ত গরমে রোজাদাররা দুর্ভোগে পড়েছেন।

বিদ্যুতের ভেলকিবাজির কারণে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। গরমে খেটে খাওয়া মানুষজন রোজা থাকতে কষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীরা বিদ্যুতের আসা যাওয়া খেলায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত তাপদাহের কারণে লেখাপড়ার টেবিলে মনোনিবেশ করতে পারছেন না। গ্রাম পর্যায়ে এ অবস্থা আরও ভয়াবহ। সেখানে সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টাও বিদ্যুৎ স্থায়ী হয় না। ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বৈদ্যুতিক বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকে আব্দুল হামিদ জানান, বিদ্যুতের অভাবে কলারোয়ার গ্রামগজ্ঞ সন্ধার পরে ভুতুড়ে অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। আর শ্বাসরুদ্ধকর গরমে রোজাদার মানুষ, বৃদ্ধ শিশুদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে পড়ছে। তাপে বিপুল পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। জানা গেছে, কলারোয়া পৌর এলাকায় লোডশেডিং কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে। কিন্তু গ্রামগঞ্জে বেলা দেড়টার পরে মাঝে মাঝে ১৫ থেকে ২০ মিনিট বাদে প্রায় ৪টা পর্যন্ত লোডশেডিং চলে।

পাবনার চাটমোহর থেকে মো. আফতাব হোসেন জানান, চাটমোহরে প্রচ- গরমে আর বিদ্যুৎ বিড়ম্বনায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। গত ৫ দিন ধরে দিনের বেলা প্রতি এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরপর লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন গ্রাহকরা। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসায় তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন। বিদ্যুৎ লোডশডিংয়ের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন আবাসিক এলাকার বাসিন্দাসহ বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুৎ সংকটে ঈদের মৌসুমে বিপণিবিতানগুলোতে দুর্ভোগে পড়ছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেবা প্রদান বিঘিœত হচ্ছে।

সাতকানিয়া থেকে সৈয়দ জনাঈদ মো. হাবিব উল্লাহ জানান, বৈশাখের তীব্র গরমের সঙ্গে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া বাসিন্দারাও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। গত কয়েকদিন ধরে দিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। পাশাপাশি রমজান মাস হওয়াতে তীব্র গরমে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ছে মানুষ। শ্রমজীবী মানুষদের দুর্ভোগ পৌঁছেছে চরম পর্যায়ে। গরমে পুকুরের পানি উত্তপ্ত হয়ে মাছও মারা যাচ্ছে।

খুলনা ব্যুরো জানায়, দফায় দফায় লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে খুলনার জনজীবন। সারাদিন কাজ শেষে রাতে বাড়িতে ফিরে শান্তি পাচ্ছেন না মানুষ। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দফায় দফায় চলছে লোডশেডিং। তীব্র গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ে নির্ঘুম রাত কাটছে খুলনার মানুষের। অসহ্য গরম আর লাগাতার লোডশেডিংয়ে রোজাদারেরা রয়েছেন সবচেয়ে বেশি কষ্টে।

এদিকে, দাবদাহের তীব্র গরমে অনেক স্থানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপে পানি উঠছে না, ফলে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানি সঙ্কট। মাঠঘাট ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়ায় কৃষিতে সেচ বন্ধ হতে বসেছে।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ ২১টি জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। সংস্থাটির সদর দফতর খুলনায়। ওজোপাডিকোর লোড ডেসপাস সেন্টার থেকে জানা গেছে, শনিবার পিক আওয়ারে ২১ জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৬৮০ মেগাওয়াট, সরবরাহ ছিল ৬১৫ মেগাওয়াট, লোডশেডিং ছিল ৬৫ মেগাওয়াট। গত রোববার ২১ জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৬৬৯ মেগাওয়াট, সরবরাহ ছিল ৬০৬ মেগাওয়াট, লোডশেডিং ছিল ৬৩ মেগাওয়াট। গত রোববার রাতে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিলোন প্রায় ৮০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত ১ মেগাওয়াট লোডশেডিংয়ে আবাসিক এলাকার ১০টি ফিডারে প্রায় ১ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হয়। সেই হিসেবে গত দুই রাতে নগরীর অধিকাংশ এলাকাতেই কয়েক দফায় লোডশেডিং করতে হয়েছে। ওজোপাডিকোর প্রধান প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তাদেরকে কেন্দ্রীয়ভাবে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে কারণে তারা লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছেন।

ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, ময়মনসিংহেও তীব্র তাপদাহে জনজীবন উষ্ঠাগত অবস্থা। এরই মাঝে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী। সাহরি, ইফতার ও তারাবিতে বিদ্যুতের সরবরাহ থাকলেও বেশিরভাগ সময়ই থাকছে না বিদ্যুৎ। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তীব্র সমালোচনা। তবে লোডশেডিংয়ের কারণ হিসেবে উৎপাদন ঘাটতিকে দায়ী করছে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা। মানুষের স্বাভাবিক জীবনসহ ও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্য। শ্রমজীবীদের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। বিঘিœত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াও। বিভাগীয় নগরীর পাশাপাশি ময়মনসিংহের প্রায় সব উপজেলা গুলোতেই চলছে সমানতালে লোডশেডিং। বিগত প্রায় বিশ দিন ধরে মাত্রাতিরিক্ত এই লোডশেডিং ক্রমেই বেড়ে চলছে। বিশেষ করে পল্লী বিদ্যুতের অধীন গ্রামগুলোতে এই চিত্র আরো ভয়াবহ।

সূত্রমতে, ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় প্রতিদিন সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা ৭৮০ মেগাওয়াট। সরবরাহ রয়েছে ৬৪০ মেগাওয়াট। এতে ঘাটতি ১৪০ মেগাওয়াট। এ কারণে ময়মনসিংহসহ বিভাগীয় জেলা নেত্রকোণা, জামালপুর ও শেরপুরে লোডশেডিং হচ্ছে।

বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড থেকে গ্যাসের সরবরাহ কম এবং জামালপুরে শিকদার গ্রুপের ৯৫ মেগাওয়াটের পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে না। মূলত এই কারণেই ময়মনসিংহে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে বলে জানান পিডিবির কর্মকর্তারা।

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, তীব্র গরমের মধে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকছে না বিদ্যুৎ। বেশিরভাগ সাহরি, ইফতার-তারাবীহ নামাজের সময় লোডশেডিং হয়। যাতে করে চরম তাপদাহে গরম সহ্য করে মহান রবের ইবাদাত করতে হচ্ছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের। যার ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মুসল্লীরা।

লোডশেডিংয়ে ব্যবসা বাণিজ্যে ভাটা পড়েছে। প্রচ- তাপদাহে জনসাধারণ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন। সবার মুখে শুধু একিই কথা রোজার মাসে ইফতার, সাহরি তারাবীর সময়ও মিলছে না বিদ্যুৎ।

দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) জাহিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, প্রচ- গরমে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎতের চাহিদা অনুযায়ী উপজেলায় বরাদ্দ কম। ফলে ৬০ ভাগ বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছেন। কয়েকদিনের ভেতরে ঠিক হয়ে যাবে।

মো. হায়দার আলী গোদাগাড়ী (রাজশাহী) থেকে জানান, ৪২ ডিগ্রী ছুঁই ছুঁই তাপমাত্রায় পুড়ছে মানুষ, সবুজ প্রকৃতি, ফসল, ইরিধান, আম, লিচুসহ শাকসবজির ক্ষেত। রুক্ষ আবহাওয়ায় গাছের পাতাও যেন নড়ছে না। সে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের লোডশেডিং।

বিদ্যুৎ যাওয়ার পর আসার নাম নেই। রোজা মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় কাহিল হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ যাওয়ার পর ১ ঘণ্টা/দেড় ঘণ্টা পর আসে, কিছুক্ষণ থাকার পর আবার চলে যায়। গোদাগাড়ী উপজেলার মহিশালবাড়ী মসজিদ কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম বাবলু জানান, তারাবি, ফরজ নামাজের সময় লোডশেডিং নিয়মে পরিণত হয়েছে। এখান থেকে মানুষ পরিত্রাণ পেতে চাই।

সকালের সূর্য উদয় হচ্ছে আগুনের হলকা নিয়ে। দশটার মধ্যেই উত্তপ্ত হচ্ছে আবহাওয়া। সময় যত গড়ায় তাপদাহ ততই বাড়তে থাকে। এর সাথে মরা পদ্মার বিশাল বালিচর হচ্ছে তপ্ত কড়াই। সেখান থেকে ভেসে আসছে তপ্ত বালি। যা চোখে মুখে জ্বালা ধরাচ্ছে।

সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছে টিনের চালার ঘরের বসবাসকারী মানুষ। তাপ যেন টিন চুইয়ে নীচে নামছে। ফলে ঘরে থাকাও যেন দায় হয়ে পড়েছে।

এদিকে তীব্র দাবদাহের কারণে করোনার মধ্যে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়াসহ নানা রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা। বিশেষ করে হাসপাতালের তিনটি শিশু ওয়ার্ডে যেন ধাপ ফেলার জায়গা নেই।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

শপথ নিলেন অতিশী, মমতার পর দ্বিতীয় মহিলা মুখ্যমন্ত্রী পেল ভারত

শপথ নিলেন অতিশী, মমতার পর দ্বিতীয় মহিলা মুখ্যমন্ত্রী পেল ভারত

মালয়েশিয়ায় নাইট ক্লাবে স্ফূর্তি করতে গিয়ে আটক ৫ বাংলাদেশি

মালয়েশিয়ায় নাইট ক্লাবে স্ফূর্তি করতে গিয়ে আটক ৫ বাংলাদেশি

নতুন রেকর্ড সোনার দামে, ভরি ১৩৩০৫১ টাকা

নতুন রেকর্ড সোনার দামে, ভরি ১৩৩০৫১ টাকা

সিলেটে একদিনে বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু

সিলেটে একদিনে বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু

কৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জহুরুল হক

কৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জহুরুল হক

শেখ হাসিনা সকল দপ্তরের টাকা লুট করে আমানত খেয়ানত করেছে : নোয়াখালীতে শিবির সভাপতি

শেখ হাসিনা সকল দপ্তরের টাকা লুট করে আমানত খেয়ানত করেছে : নোয়াখালীতে শিবির সভাপতি

ইসলামী ছাত্র মজলিসের নির্বাচন সম্পন্ন--রায়হান সভাপতি ও ইমরান সেক্রেটারি নির্বাচিত

ইসলামী ছাত্র মজলিসের নির্বাচন সম্পন্ন--রায়হান সভাপতি ও ইমরান সেক্রেটারি নির্বাচিত

হাজীগঞ্জে বিএনপি'র দুই গ্রুপের সংঘর্ষে চিকিৎসাধীন কিশোরের মৃত্যু

হাজীগঞ্জে বিএনপি'র দুই গ্রুপের সংঘর্ষে চিকিৎসাধীন কিশোরের মৃত্যু

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই-ধর্ম উপদেষ্টা

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই-ধর্ম উপদেষ্টা

নয়ন মিয়ার আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না : যুবদল সভাপতি মুন্না

নয়ন মিয়ার আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না : যুবদল সভাপতি মুন্না

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে আওয়ামীলীগের পাঁচ নেতা গ্রেপ্তার

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে আওয়ামীলীগের পাঁচ নেতা গ্রেপ্তার

একই কর্মস্থলে অর্ধ যুগ কাটিয়েছেন পিআইও রেজা, করেছেন প্রকল্পের টাকা হরিলুট

একই কর্মস্থলে অর্ধ যুগ কাটিয়েছেন পিআইও রেজা, করেছেন প্রকল্পের টাকা হরিলুট

আওয়ামীলীগ শাসনামলে যশোরে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রদর্শিত অস্ত্রের কোনো হদিস নেই

আওয়ামীলীগ শাসনামলে যশোরে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রদর্শিত অস্ত্রের কোনো হদিস নেই

যে আইন বাংলাদেশে চলে, সেই আইনে পার্বত্য অঞ্চলেও চলবে -কুমিল্লার সমাবেশে ফয়জুল করিম চরমোনাই

যে আইন বাংলাদেশে চলে, সেই আইনে পার্বত্য অঞ্চলেও চলবে -কুমিল্লার সমাবেশে ফয়জুল করিম চরমোনাই

সীতাকু-ের বিতর্কিত সাবেক সহকারী কমিশনার চট্টগামের এডিসি হলেন

সীতাকু-ের বিতর্কিত সাবেক সহকারী কমিশনার চট্টগামের এডিসি হলেন

ফরাজীকান্দি নেদায়ে ইসলাম ওয়েসীয়ান ছাত্রদের উদ্যোগে  ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.) উপলক্ষে আনন্দ র‌্যালি

ফরাজীকান্দি নেদায়ে ইসলাম ওয়েসীয়ান ছাত্রদের উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.) উপলক্ষে আনন্দ র‌্যালি

ব্রুনাইয়ে ভবন থেকে পড়ে গফরগাঁওয়ের প্রবাসী নিহত

ব্রুনাইয়ে ভবন থেকে পড়ে গফরগাঁওয়ের প্রবাসী নিহত

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে