রাজস্ব ক্ষতির ৯৩ কোটি টাকা আদায় হচ্ছে ভদ্র’র কাছ থেকে
১৮ এপ্রিল ২০২৩, ১০:২২ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৩ পিএম
প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প ‘ই. সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’র নামে প্রায় শত কোটি টাকা ডাক অধিদফতর থেকে লোপাট করা হয়েছে। এই অর্থ লোপাট করেন প্রকল্পটির পিডি ও ডাক অধিদফতরের তৎকালিন মহাপরিচালক সুশাংশু শেখর ভদ্র। বিষয়টি নিয়ে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাব। ‘সার্ভার না কিনেই শত কোটি টাকা খরচ! ডাক বিভাগে দুর্নীতি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তোলপাড় সৃষ্টি হয় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে। তড়িঘড়ি গঠন করে তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা মেলে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে এসএস ভদ্রের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করে সরকার। এ মামলার রায়ে এসএস ভদ্রের অর্থ তছরুপের অপরাধ প্রমাণিত হয়। পরে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির অর্থ প্রকল্প পরিচালক এসএস ভদ্রের কাছ থেকে আদায়ের রায় হয়। রায়ের এ তথ্য দীর্ঘদিন চেপে রাখে মন্ত্রণালয়। তবে সম্প্রতি ডাক অধিদফতরকে লেখা ডাক, টেলিযোযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে এ তথ্য প্রকাশ পায়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পোস্ট ই সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ প্রকল্পে সরকারের ৯২ কোটি ৮৭ লাখ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। এ অর্থ আদায় করা হবে প্রকল্প পরিচালক এবং ডাক অধিদফতরের ততকালিন মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সুধাংশু শেখর ভদ্র’র (এসএস ভদ্র) কাছ থেকে। বিভাগীয় মামলার আদেশে রাজস্ব ক্ষতির এই অর্থ আদায়ের নির্দেশ এসেছে। এর ভিত্তিতে মহামান্য প্রেসিডেন্ট অর্থ আদায়ের অনুমোদন দিয়েছেন। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হরিদাস ঠাকুর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানা গেছে এ তথ্য।
গত ২২ মার্চ ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এ চিঠি (স্মারক নং-১৪.০০.০০০০.০০৬.২৭.০১৬.১৯-১৩০৬,তারিখ:৪ জানুয়ারি-২০২৩) পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, জনাব সুধাংশু শেখর ভদ্র, সাবেক প্রকল্প পরিচালক, ‘পোস্ট-ই. সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি‘ এবং প্রাক্তন মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব), ডাক অধিদফতর,ঢাকা (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) কর্তৃক সরকারের রাজস্ব ক্ষতি বা আর্থিক ক্ষতি মোট ৯২.৮৭ কোটি টাকা। উক্ত অর্থের মধ্যে যতটুকু পেনশন, গ্র্যাচুইটি ও লাম্পগ্র্যান্ট থেকে আদায়যোগ্য তা আদায়ের জন্য বিএসআর পার্ট-১ এর বিধি-২৪৭ অনুযায়ী এবং অবশিষ্ট আর্থিক ক্ষতি পিডিআর অ্যাক্ট-১৯১৩ অনুযায়ী আদায় করার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি সদয় অনুমোদন করেছেন।
উপরোক্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সূত্রোক্ত স্মারকের পত্রে তাকে অনুরোধ করা হয়েছিলো। কিন্তু এ বিষয়ে গৃহিত পদক্ষেপ সম্পর্কে এ বিভাগ অবহিত নয়। এমতাবস্থায় বর্ণিত বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা এ বিভাগকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এ চিঠি প্রাপ্তির পর কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানার জন্য প্রতিষ্ঠানটির মহা-পরিচালক মো: হারুন অর রশিদকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। এসএমএস পাঠানো হয়। কোনোটিতে তিনি সাড়া দেননি।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন প্রকল্পের নামে ডাক বিভাগের ততকালিন মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র এবং তার সহযোগীরা শত শত কোটি টাকা লুট করেন। এ সম্পর্কে একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাব। এছাড়া দেশে প্রাণঘাতি করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় ২০২০ সালের ১৪ আগস্ট করোনা পজেটিভ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর খুব কাছাকাছি চলে যান ডাক বিভাগের ততকালিন ডিজি এসএস ভদ্র। এ বিষয়ে ১৮ আগস্ট ‘করোনা পজেটিভ নিয়ে গণভবনের অনুষ্ঠানে ডাক বিভাগের ডিজি!’ শীর্ষক ব্রেকিং নিউজ প্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাব। এ ঘটনায়ও তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। পরবর্তীতে এসএস ভদ্রকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
‘সার্ভার না কিনেই শত কোটি টাকা খরচ!’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ই.সেন্টার ফর রুলাল কমিউনিটি প্রকল্প’র আওতায় দেশের ৪৯২টি উপজেলা ডাকঘর এবং ৬৫টি জেলা ডাকঘরের জন্য একটি করে সার্ভার কেনার কথা ছিল। পরবর্তীতে কোনো সার্ভারই কেনা হয়নি। প্রতিটি উপজেলা এবং জেলা পোস্ট অফিসে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৫৩০টির মতো সার্ভার কেনার কথা। ই. সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি প্রকল্পের আওতায় ১১০ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে এ কেনাকাটায়।
ডাক বিভাগ টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস) এবং আইটিসিএল সমন্বিতভাবে সরকারি ক্রয়নীতি (পিপিআর) ঠিক রেখেই সম্পন্ন করা হয় কথিত এই ‘সার্ভার ক্রয়’। ৫৪০ কোটি ৯৪ লাখ টাকার প্রকল্পটি শেষ হয় ২০১৭ সালের ৩০ জুন। সাবেক ডাক কর্মকর্তাদের মতে, এটি হচ্ছে, ডাক বিভাগের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যর্থ একটি প্রকল্প। প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অর্থ লোপাট এবং অপচয় ছাড়া এটি আর কিছুই ছিল না। অথচ প্রকল্পের অর্থ প্রাক্কলনে বলা হয়, ‘রূপকল্প ২০২১ বাস্তবে রূপায়ণ’-এর ডাক সেবা অংশে উল্লেখ করা হয়, ডাক সেবা উন্নয়ন অংশে বিধৃত অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ডাক নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে সঙ্গতি বিধান দেশের সকল ডাকঘরের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ,গ্রাহক-উপযোগী পণ্য ও সেবা প্রদান, স্বল্প-সুবিধাযুক্ত এলাকাগুলোতে ডাকসেবার বিস্তার, উন্নয়ন, দারিদ্র্য নিরসন এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে শহর ও গ্রামের মধ্যকার অসঙ্গতি দূরীকরণে ডাক বিভাগ পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
এদিকে ইনকিলাব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসএস ভদ্র এবং তার সহযোগীদের দুর্নীতি,অবৈধ সম্পদ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। কিন্তু তিন বছর অতিবাহিত হলেও অদৃশ্য কারণে সেই অনুসন্ধান আলোর মুখ দেখে নি। তবে ভদ্রের দুর্নীতির অন্যতম সহযোগী এক কর্মকর্তা দুদকের অনুসন্ধান-তদন্ত মোকাবেলায় রক্ষণাত্মক হাতিয়ার সৃষ্টির লক্ষ্যে ইনকিলাব সম্পাদক-প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে প্রেস কাউন্সিলে মামলা ঠুকে দেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ভারতের সেবাদাসী হাসিনাকে পুনর্বাসনে এবার জঙ্গি মিশনে তারা!
মাহফুজকে উপদেষ্টা থেকে বাদ দেওয়া উচিত? যা বললেন ড. জাহেদ
৬ বছরের মধ্যেই চীনের হাতে হাজার পরমাণু বোমা! উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের
`বিগত সময়ে দলীয় স্বার্থ উদ্ধারে বড় ধরনের অপরাধ করেছে পুলিশ, এ জন্য আমরা লজ্জিত'
ব্রাহ্মণপাড়ায় পাঁচ দিনেও খোঁজ মিলেনি নিখোঁজ সোহাগের
কসবায় পাহাড় কাটার অপরাধে ২ জনের অর্থদণ্ড
নরসিংদীতে মাকে কুপিয়ে হত্যা, ছেলে গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামকে বিদায় করে টিকে রইল খুলনা
পলাতক ১৯ বাংলাদেশি নাবিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
ফ্রিজে রাখা বাসি ভাতে উপকার দ্বিগুণ!
আ.লীগ দেশটাকে গোরস্থানে পরিণত করেছিল : জামায়াত আমির
সেনবাগে মর্মান্তিক মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় ভাগ্নে নিহত : মামা আহত
কুষ্টিয়ায় সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় গৃহবধুকে নির্যাতন
রাজশাহীর বাগমারায় পুকুর থেকে ভ্যান চালকের লাশ উদ্ধার
‘জনশক্তি’ নামে কোনও রাজনৈতিক দল নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি : জাতীয় নাগরিক কমিটি
কুষ্টিয়ায় ট্রাক ও নছিমন সংঘর্ষে গরু ব্যবসায়ী নিহত
র্যাবকে সমাজে রাখা ঠিক হবেনা -রাজশাহীতে নূর খান
নওগাঁয় ৩ জনকে পিটিয়ে জখম, আহতদের উদ্ধার করলো পুলিশ
মাদারীপুরে গুড়ি বৃষ্টি আর হিমেল বাতাসে জনজীবন স্থবির
দুমকীতে বীর মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফনে বাঁধা