ঢাকা   রোববার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪ | ১২ কার্তিক ১৪৩১
তীব্র তাপদাহ

বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী অধিকাংশই শিশু

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৮ এপ্রিল ২০২৩, ১০:২৪ পিএম | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:০৭ পিএম

সারা দেশে টানা অর্ধ মাস ধরে চলছে চলছে তাপদাহ। ঢাকা ভেঙেছে ৫৮ বছরের রেকর্ড। চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪২ ডিগ্রি। সাধারণত টানা এমন গরমে অভ্যস্ত না সাধারণ মানুষ। প্রচ- গরমে মিলছে হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর খবর। বেশি অসুস্থ হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা। বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) বা কলেরা হাসপাতালে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে পাঁচ শতাধিক রোগী। আইসিডিডিআরবি সূত্র জানায়, সাধারণ সময়ে গড়ে সাড়ে তিনশ রোগী ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালটিতে আসে। অথচ গত এক সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছেন পাঁচ শতাধিক রোগী। যার অধিকাংশই শিশু।

আইসিডিডিআরবির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ১০ এপ্রিল ৫৩৪ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হন। এরপর ১১ এপ্রিল ৪৮৪ জন, ১২ এপ্রিল ৪৯১ জন, ১৩ এপ্রিল ৫১৫ জন, ১৪ এপ্রিল ৫৩০ জন, ১৫ এপ্রিল ৫৬৫ জন, ১৬ এপ্রিল ৫২২ জন, ১৭ এপ্রিল ৫৩৪ ও গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টা পর্যন্ত ৩০০ জনের মতো রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে বেশিরভাগ রোগীকে দুই-তিন ঘণ্টার জন্য ভর্তি রেখে রিলিজ দেয়া হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ভীড় তেমন একটি নেই। অনেক বেড এখনো ফাঁকা। তবে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সরা কাটাচ্ছেন ব্যস্ত সময়। হাসপাতালে আসা রোগীদের বেশিরভাগই বলছেন গরমের কারণেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তারা। চিকিৎসা করিয়ে চলে যাচ্ছেন।

ঢাকার সাভার থেকে ১৪ মাস বয়সী ছেলেকে নিয়ে কলেরা হাসপাতালে ভর্তি করেছেন মা আয়েশা। তিনি জানান, গত রোববার সকাল থেকে হঠাৎ পাতলা পায়খানা শুরু হয়। অতিরিক্ত গরমে এ সমস্যা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এসেছেন ইয়াসমিন। তার ছয় বছরের ছেলে ইয়াসিন ঠিকমতো খাচ্ছে না। রোববার রাতে হঠাৎ করেই পাতলা পায়খানা, বমি শুরু হয়। এলাকার হাসপাতালে গেলে সেখান থেকে এই হাসপাতালে পাঠানো হয়।

সম্প্রতি দুবাই থেকে ছেলে হামদান আমিরকে নিয়ে দেশে ফিরেছেন শিল্পী আক্তার। তিনি জানান, আসার পর থেকে দুবাইর চেয়ে তাপমাত্রা এখানে বেশি। দুবাইয়ে রাতের তাপমাত্রা এত বেশি থাকে না। তার ওপর এসি নেই। সব মিলে বাচ্চাটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পাতলা পায়খানাও শুরু হয়েছে।

আইসিডিডিআরবির মিডিয়া ম্যানেজার একেএম তারিফুল ইসলাম বলেন, গরমে সাধারণ সময়ের তুলনায় ডায়রিয়া আক্রান্তের হার কিছুটা বেড়েছে। তবে এই সময়ে ডায়রিয়া রোগীদের আরও অনেক বেশি চাপ থাকে। বছরে দুই সময়- যেমন বর্ষার শুরু ও শীতের আগের সময়টাতে ডায়রিয়া রোগীর চাপ বাড়ে। এই সময়েও চাপ থাকে। তবে এবার রোজা থাকায় মানুষ বাইরের খাবার কম খাচ্ছে। কলেরার টিকা দেয়া হয়েছে গত বছর। এছাড়াও যারা কলেরায় আক্রান্ত হয়ে পরের তিন বছর ফের কলেরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে তাদের। এসব মিলিয়ে আশা করছি এবার রোগীর চাপ আগের তুলনায় কম থাকবে।

হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, কলেরা ছাড়াও ডায়রিয়া অনেক কারণেই হয়। বর্তমানে গরম একটা কারণ ডায়রিয়া বাড়ার। তবে এই ডায়রিয়ায় তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে এন্টিবায়োটিক ছাড়াই রোগী সুস্থ হয়ে যায়। এখন খুব খারাপ অবস্থা নিয়ে রোগী আসছে না। সর্বোচ্চ দু-একজন ঢাকার বাইরের এলাকা থেকে জটিলতা নিয়ে আসেন।

আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. ইকবাল হোসেন বলেন, গত কয়েকদিনে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় রোগী কিছুটা বেড়েছে। কারণ, গরম এলে সব বয়সীরাই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। গরমের কারণে সবাই পিপাসার্ত থাকেন। তাই গরমে তৃষ্ণা মেটাতে অনেকেই অনিরাপদ পানি পান ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছেন। এতে ফুড পয়জনিং থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া ভালোভাবে হাত ধোয়া ও অন্য স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। অনেকে রাস্তার পাশের দোকান বা ফুটপাথ থেকে অনিরাপদ পানি ও শরবত পান করছেন। আমাদের প্রয়োজন সুপেয় পানি। সেই পানি আমরা অনেক সময় পাই না। ফলে ডায়রিয়ার প্রকোপ কিছুটা বেড়েছে।

তিনি বলেন, এ সময়ে হিটস্ট্রোকের আশঙ্কাও বেশি থাকে। আমাদের সবার বাসায় ফ্রিজ নেই। খাবার তৈরির পর সেটি আমরা বেশ কিছুক্ষণ বাইরে রাখি। কিন্তু এই গরমে শীতের মতো খাবার অধিক সময় ভালো থাকে না। যে কারণে খাবারে অল্প পরিমাণ জীবাণু থাকলেও সেটি গরমে অনেকটা মাল্টিপ্লাই (সংখ্যা বৃদ্ধি) হয়। তাদের (জীবাণু) শরীর থেকে রস বের হয়। এ কারণে অল্প পরিমাণ খাবার খেলেও আমাদের ডায়রিয়া হয়।

ইমিরিটাস প্রফেসর ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, সারা দেশে গত কয়েকদিন ধরে যে মাত্রার তীব্র গরম পড়ছে, তাতে যে কেউ যে কোনো সমস্যায় অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। এক্ষেত্রে কৃষক, রিকশা চালকসহ যাদের রোদে পুড়ে ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের কাজ করতে হয়, তাদের গরমজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও কিডনি বিকলসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, বয়স্ক ও শিশুরাও ঝুঁকিতে রয়েছেন।

তিনি বলেন, তীব্র গরমে ড্রিহাইড্রেশন অর্থাৎ, শরীরে পানিশূন্যতা বা স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। অনকের রক্তচাপ ও প্রসাব কমে যেতে পারে। গরমে শরীরে তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রির ওপরে উঠলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া ও পালস (নাড়ির স্পন্দন) কমে যেতে পারে। এ সময়ে ঘরের বাইরে যতটা কম যাওয়া যায়, ততই ভালো। যারা প্রয়োজনে বাইরে যাচ্ছেন তারা পানির সঙ্গে একটু লবণ মিশিয়ে স্যালাইনের মতো প্রস্তুত করে খেতে পারেন। এতে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে বের হওয়া লবণের ঘাটতি পূরণ হবে। সবাইকে ঢিলেঢালা সূতি কাপড় পড়তে হবে।

এ সময়ে অসুস্থ হওয়াদের বেশিভাগই শিশু। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক প্রফেসর ডা. সৈয়দ শফি আহমেদ বলেন, বড়দের মতো আবহাওয়ার দ্রুত তারতম্যের সঙ্গে শিশুরা নিজেকে মানিয়ে নিতে অনেক সময়ই পারে না। গরমের সময় সাধারণত ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা বেশি হয়। গরমের এ পরিস্থিতিতে ফলের শরবত, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, স্যালাইন, গ্লুকোজ ও পুষ্টিকর রসালো ফল বেশি করে খেতে হবে। এতে শরীর থেকে ঘাম হয়ে বের হয়ে যাওয়া পানির চাহিদা পূরণ হবে। গরমে এ সময়ে শিশুদের ঘরের বাইরে না যাওয়া, টিলেঢালা আরামদায়ক পোশাক ব্যবহার করা, নিয়মিত গোসল করানো, ফ্রিজের ঠান্ডা পানি ও বরফ খাওয়া থেকে বিরত রাখার পরামর্শ দেন তিনি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ছবিয়ালের রজত জয়ন্তীতে ফারুকীর আবেগঘন পোস্ট

ছবিয়ালের রজত জয়ন্তীতে ফারুকীর আবেগঘন পোস্ট

১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠক

১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠক

বাংলাদেশিদের জন্য ই-ভিসা চালু করবে থাইল্যান্ড

বাংলাদেশিদের জন্য ই-ভিসা চালু করবে থাইল্যান্ড

সব সময় মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করেছে যুবদল- আবুল বাসার আকন্দ

সব সময় মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করেছে যুবদল- আবুল বাসার আকন্দ

"ভ্রমণশিল্পের সাথে জরিত ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ জীবন-জীবীকার ঝুঁকিতে পড়বে"  - স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি

"ভ্রমণশিল্পের সাথে জরিত ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ জীবন-জীবীকার ঝুঁকিতে পড়বে" - স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি

কর্মসংস্থান সৃষ্টি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য : উপদেষ্টা নাহিদ

কর্মসংস্থান সৃষ্টি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য : উপদেষ্টা নাহিদ

কোরআন মাজীদ স্পর্শ করে বা মসজিদে উঠে কসম করা প্রসঙ্গে?

কোরআন মাজীদ স্পর্শ করে বা মসজিদে উঠে কসম করা প্রসঙ্গে?

কালীগঞ্জে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

কালীগঞ্জে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

পূর্বধলায় যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

পূর্বধলায় যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

গণহত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ইইউর সহযোগিতা চাইলেন নাহিদ ইসলাম

গণহত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ইইউর সহযোগিতা চাইলেন নাহিদ ইসলাম

গাজীপুরে হাজারেরও বেশি যুবকর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ইউসেপ বাংলাদেশ

গাজীপুরে হাজারেরও বেশি যুবকর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ইউসেপ বাংলাদেশ

ইউজিসিতে শিক্ষক প্রশিক্ষণ মডিউল নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ইউজিসিতে শিক্ষক প্রশিক্ষণ মডিউল নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

জুলাই শহীদদের স্বপ্নের দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায় জামায়াত : ডা. শফিকুর রহমান

জুলাই শহীদদের স্বপ্নের দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায় জামায়াত : ডা. শফিকুর রহমান

২৪ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেল মুছা

২৪ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেল মুছা

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে

ভবদহ নিয়ে কারও পকেট ভারি করতে দেয়া হবে না -অনিন্দ্য ইসলাম অমিত

ভবদহ নিয়ে কারও পকেট ভারি করতে দেয়া হবে না -অনিন্দ্য ইসলাম অমিত

রক্তের হোলিখেলা শেষ, আ'লীগের গণেশ উল্টে গেছে : রাশেদ প্রধান

রক্তের হোলিখেলা শেষ, আ'লীগের গণেশ উল্টে গেছে : রাশেদ প্রধান

ঈশ্বরগঞ্জে কলেজের কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

ঈশ্বরগঞ্জে কলেজের কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

বেকারত্ব দূরীকরণের ভূমিকায় উদ্যোক্তাদের মিলনমেলা

বেকারত্ব দূরীকরণের ভূমিকায় উদ্যোক্তাদের মিলনমেলা

রাজশাহী মহিলা কলেজে ছাত্রলীগের এক নেত্রী পরীক্ষা দিতে এসে গ্রেফতার

রাজশাহী মহিলা কলেজে ছাত্রলীগের এক নেত্রী পরীক্ষা দিতে এসে গ্রেফতার