স্ত্রীরা তোমাদের শান্তির ঠিকানা
১৮ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৩৮ পিএম
পুরোনো এক সহকর্মী ফোনে কতক প্রশংসাসূচক বাক্য শোনালেন। কৃতজ্ঞতার সুরে বললেন, আপনার উপদেশ মেনে আমার পারিবারিক অশান্তি দূর হয়েছে। তাই সবসময়...। তাকে কী উপদেশ বা পরামর্শ দিয়েছিলাম এখন মনে করতে পারছি না পুরোপুরি। একদিন বোধ‘য় তিনি মনের অব্যক্ত বেদনা জাহির করে বলেছিলেন, স্ত্রীর সাথে প্রায় আমার ঝগড়া হয়। বৃদ্ধা মা আছেন তারও ঠিকমত যতœ নেয় না। তিনটা ছেলেমেয়ে ছোট্ট ভাড়া বাসায় থাকি। সংসারে টানাপোড়েন, তার উপর বউয়ের সাথে বনিবনা না হওয়া। ছেলেমেয়েদের আচরণেও বিরক্তি আর বিরক্তি। অস্থির হয়ে যাই, স্যার।
সারাদিন বাইরে কাটিয়ে বাসায় ফিরলে কয়েক ঘন্টায় ছেলেমেয়েররা আপনাকে অস্থির করে তোলে? তাহলে বলুন, বদ্ধ ঘরে আপনার স্ত্রী সারাদিন বাচ্চাদের উৎপাত কীভাবে সহ্য করে। একবার সংসারের ঘানি টানায় আপনার স্ত্রীর কষ্টটা অনুভব করার চেষ্টা করুন। স্ত্রীর কষ্ট লাঘবের জন্য কাজেকর্মে তাকে দু‘একবার সাহায্য করে দেখুন। ঝগড়ায় যাবেন না। শাসন করতে যাবেন ফল উল্টা হবে। আপনার সংসারে তিন সন্তান। অনেক শক্তিশালী আপনার স্ত্রীর অবস্থান। আপোস করতে শিখুন। আপনি তো বড় লেখক, গবেষক, আলেম। হাদীস শরীফেই তো আছে নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পুরুষের বাম পাঁজরের হাঁঁড় থেকে। কথায় আচরণে বক্রতা থাকবেই। বাঁকা হাঁড় সোজা করতে যাবেন, ভেঙে যাবে। বাঁকা অবস্থাতেই কাজ নিতে হবে। তার মানে স্ত্রীর সাথে খাপ খেয়ে চলতে হবে। সংসার সুন্দর হবে।
মনে হল, তার এতদিনকার বিশ^াস ও আচরণে বড় ধরনের ধাক্কা লাগল। বললাম, অনেক সময় স্ত্রীরা বদমেজাযি হয়। স্বামীর উপর অন্যায়ভাবে মানসিক নির্যাতন চালায়। কিংবা স্ত্রী লাগাতার অসুস্থ থাকে, স্বামীর তখন অন্য রকম দুঃখ কষ্টের সীমা থাকে না। পরিস্থিতি যদি এমন হয় আর আপনি ধৈর্য ধারণ করে সংসার নামক সাইকেলে প্যাডেল চালাতে থাকেন, তাহলে আর কিছু না হোক আপনার আধ্যাত্মিক উন্নতি হবে। এর পক্ষে শক্ত দলীল আছে। প্রথমে গল্প আকারে বলছি। আমার জীবনের ঘটনা। রেডিও তেহরানের চাকরি ছেড়ে দেশে চলে আসার আগে ইরানের শাহরুদ শহরের উপকণ্ঠে বাস্তামে হযরত বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার যেয়ারত করতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরত্বে খারাকান এলাকায় হযরত আবুল হাসান খারকানীর যেয়ারত করার সুযোগও হয়। ইতিহাসে তিনি বাঘের পিঠে সওয়ার বুজর্গ হিসেবে বিখ্যাত। তার কবরের উপর একটি কবিতা খোদাই করা ছিল। আমার সংগ্রহে ‘সুলতানুল আরেফীন বায়েজিদ বোস্তামী’ শিরোনামের যে কিতাবটি আছে সেই কিতাবেও কবিতাটির ছবি মুদ্রিত আছে। আসলে সেটি মওলানা জালাল উদ্দীন রূমীর মসনবী শরীফের কবিতা। কবিতাটির সারমর্ম এরূপ:]
আবুল হাসান খারাকানীর সাক্ষাত লাভের আশায় একজন মুরিদ দূরের কোনো এলাকা থেকে তার বাড়িতে এসেছিল। মুরিদ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পীর হুজুর আছেন কিনা ডাক দিল সাক্ষাত পাওয়ার আশা নিয়ে। ঘরের দরজা খুলে এক মহিলা বেরিয়ে এলো । তিনি কিনা আবুল হাসান খারাকানীর স্ত্রী। হুজুরের কথা জিজ্ঞাসা করাতে মহিলা তেলেবেগুনে জ¦লে উঠল। খারাকানীকে ভন্ড তাপস, অলক্ষুণে ইত্যাদি বলে গালি পাড়ল। শেষে বলল, ঐ দিকে মরতে গেছে ভন্ডটা লাকড়ি আনতে বনে। ডাইনি বুড়ির কথা শুনে দিশেহারা দর্শনার্থী ভেবে পায় না কী করবে। হঠাৎ দেখে দূর থেকে এক লোক আসছে বাঘের পিঠে সওয়ার হয়ে, হাতে বাঘ হাঁকানোর সাপের ছড়ি। ভক্তকে উদ্দেশ্য করে দূর থেকেই বলে উঠলেন, ঘাবড়ে যাবে না। ঘরের বাঘিনী আমার পিঠের উপর সওয়ার আছে সেই সুবাদে আমি বনের বাঘের পিঠে সওয়ার হতে পেরেছি।
সহকর্মী বন্ধুকে বললাম। মসনবীর কবিতায় ধারণকৃত আবুল খাসান খারাকানীর এই ঘটনা কুরআন মজীদের একটি দুর্বোধ্য রহস্য খুলে দিয়েছে আমার সামনে। হযরত নূহ ও লুত (আ) দু‘জনই আল্লাহর পয়গাম্বর ছিলেন। কিন্তু তাদের স্ত্রীরা তাদের সাথে বিশ^াসঘাতকতা করেছিল এবং নবুয়াতী মিশনের বিরোধীতায় কাফেরদের সাথে হাত মিলিয়েছিল বলে উল্লেখ আছে পবিত্র কুরআনে। কিন্তু এতবড় সম্মানিত দু‘জন পয়গাম্বর স্ত্রীদের তালাক দেননি কেনো সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাইনি। এতদিন পর বুঝতে পেরেছি স্ত্রীর দিক থেকে দুঃখকষ্ট সহ্য করা বুঝি পয়গাম্বরি গুণ। এই গুণ যতখানি অর্জন করা সম্ভব হবে দাম্পত্য জীবন ততখানি সুখের হবে।
মওলানা রূমী মসনবীতে বেদুইন স্বামী স্ত্রীর ঝগড়ার দীর্ঘ গল্পে বলেছেন, ‘অভদ্র যারা তারা স্ত্রীর উপর দাপট দেখায় আর ভদ্রলোকদের উপর স্ত্রীরা প্রতাপ চালায়।’ মওলানা রূমীর মূল্যায়ন, সারা দুনিয়া চেয়ে থাকত প্রিয় নবীজির পবিত্র যবানের বাণী শোনার জন্য। অথচ আল্লাহর নবী আমাদের মাকে বলতেন, আয়েশা তুমি কথা বল প্রফুল্লতার পরশ বুলাও আমার মনে। প্রিয় নবীজি বাড়ি প্রবেশের সময় সালাম দিতেন তার বিবিগণকে, হযরত আয়েশাকে। আমরা সেই সুন্নাতের উপর আমল কতখানি করতে পেরেছি নিজের জীবনে, সে প্রশ্নের উত্তর পেতে হবে।
পৃথিবীতে মানুষের জন্য একটি শান্তির ঠিকানার কথা উল্লেখ আছে পবিত্র কুরআনে। সেই ঠিকানায় পৌঁছতে হলে চলতে হবে ভালোবাসার পথ বেয়ে। ইরশাদ হয়েছে:
‘আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদের মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে, যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।’ (সূরা রূম, আয়াত-২১)
মুসলমানদের জন্য আল্লাহর দেয়া অফুরন্ত নেয়ামতের একটি হল, পারিবরিক বন্ধন। স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের উপর পূর্ণ বিশ^াসের ভিত্তিমূলে গড়ে ওঠা এই পরিবার কতবড় সম্পদ তা পশ্চিমা উচ্ছৃঙ্খল জীবন ও বয়ফ্রেন্ড কালচারকে সামনে রাখলেই বুঝা সম্ভব হবে। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের প্রতি আমরা যত আন্তরিক হব, আল্লাহর দেয়া এই নেয়ামতের মহিমা ততবেশি আমরা অনুভব করতে পারব। মাহে রমজানে ইফতারে, সেহরিতে, নামাযে, ইবাদতে ঈদের প্রস্তুতিতে ও আত্মীয় স্বজনের দেখা সাক্ষাতে পারিবারিক জীবনের এই ঐশ^র্য ও বেহেশতি পরিবেশ আরো মধুময় হোক।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত
দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান
ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই
বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪
পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা
মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি
জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির
একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু
সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক
‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান
যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ
ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১
ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী
মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে
মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন
গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ