নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ
২০ এপ্রিল ২০২৩, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৯ পিএম
প্রচÐ গরম হলেও সড়ক-মহাসড়কে যানজট কম : দূরপাল্লার বাসভাড়া দ্বিগুণ-তিনগুণ
বঙ্গবন্ধু সেতুতে হাজার হাজার মোটর সাইকেলের সারি : আজ পদ্মা সেতুতে ‘বাইক’ উঠবে
ট্রেনের টিকিটের নাগাল পায়নি সাধারণ মানুষ : সদরঘাটে দেখা যায়নি ধাক্কা-ধাক্কি, হুড়োহুড়ি
স্টাফ রিপোর্টার
পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন কর্মজীবী মানুষ। ট্রেন, লঞ্চ, বাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলে করে যে যেভাবে পারছেন বাড়ির পথে ছুটছেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, এক্সপ্রেসওয়েসহ মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ থাকলেও তেমন যানজট নেই। এটা ঘরে মানুষের জন্য স্বস্তি। তবে বাসের ভাড়া দ্বিগন-তিনগুন হওযায় প্রচÐ গরমে ভোগান্তি মেনে নিয়েই ভেঙ্গে ভেঙ্গে কম ভাড়া দিয়ে গ্রামে যাচ্ছেন। তবে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপ্লাজায় উত্তরবঙ্গগামী মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। একইভাবে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ির শিমুলিয়া ফেরিঘাটে দক্ষিণাঞ্চলগামী মোটরসাইকেল আরোহীদের ঢল নেমেছে। ভোগান্তি এড়াতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গতকাল ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, গত ১৮ এপ্রিল মঙ্গলবার ঢাকা থেকে বাইরে গেছে ১২ লাখ ২৮ হাজার ২৭৮ সিম। ঢাকায় এসেছে ৬ লাখ ৬৭ হাজার ৭৮৩ সিম। গতকাল বুধবারের তথ্য জানা না গেলেও ঢাকা থেকে গ্রামে যাওয়ার সিমের সংখ্যা আরো বেশি হবে
ঈদ উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকা শহর ছেড়ে কর্মজীবী মানুষের ঘরে ফেরা শুরু হয়েছে দু’দিন আগে। প্রচন্ড গরমে নাকাল যাত্রীরা। প্রতিবছরের মতো এবার সড়ক-মহাসড়কে ভয়াবহ যানজটের চিত্র নেই, সদর ঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ধাক্কা-ধাক্কি, হুড়োহুড়ি নেই, কমলাপুর স্টেশনে টিকেটের জন্য দীর্ঘ লাইন নেই। অন্য যে কোনো বারের চেয়ে এবারের ঈদ যাত্রায় স্বস্তি। তবে ট্রেনের টিকেট ‘প্রশাসনের উপরওয়ালাদের নিয়ন্ত্রণে’ থাকায় সাধারণ মানুষ তেমন সুবিধা পাচ্ছেন না, বাসের ভাড়া দ্বিগুন হওয়ায় ভোগান্তি রয়ে গেছে। বাস ভাড়া বেশি হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষ ট্রাকে এবং বিভিন্ন যানবাহনে ভেঙ্গে ভেঙ্গে গ্রামে যাচ্ছেন। গতকাল বঙ্গবন্ধু বাইকের দীর্ঘ সারি ছিল। আজ থেকে পদ্মা সেতুতে বাইক চলাচল করবে।
গতকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিন রাজধানীর কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল ও গাবতলী গিয়ে জানা যায়, ঈদযাত্রায় যাত্রী কম। শিডিউল মেনেই সময়মতো গন্তব্যের বাস ছেড়ে যাচ্ছে। বাড়তি চাপ নেই বাস কাউন্টারগুলোতে, নেই যাত্রীদের ভিড়। দূরপাল্লার গন্তব্যে ভোগান্তি কিংবা যানজটেরও খবর মেলেনি। গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ও রজব আলী মার্কেটের বাস কাউন্টারগুলোতে দেখা যায়, কাউন্টারে টিকিটপ্রত্যাশীর চাপ নেই বললেই চলে। ব্যাগসহ কোনো যাত্রী দেখলে শুরু হচ্ছে হাঁকডাক। টিকিট বিক্রেতারা বলছেন, এমন দৃশ্য আগে কখনো দেখেননি তারা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার যাত্রী অর্ধেকেরও কম। অনেক যাত্রী টিকিট মোবাইল ফোনে বুকিং দিলেও পরে যাত্রা বাতিল করছেন।
ঈদযাত্রায় এখন পর্যন্ত যাত্রী কম থাকার বিষয়ে পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাস কাউন্টার ও টিকিট বিক্রেতারা বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন।
তবে যাত্রীরা বলছেন, বাসের ভাড়া দ্বিগুন তিনগুন বেশি নেয়া হচ্ছে। যার জন্য মানুষ ভিন্ন উপায়ে ঈদ করতে গ্রামে যাওয়ার পথ বেঁছে নিয়েছে।
জানতে চাইলে উত্তরবঙ্গের গণপরিবহন আল হামরার জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার বাসের অনেক যাত্রী মধ্যবিত্ত, নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। এবার পরিবহনের ভাড়া বাড়েনি। কিন্তু নিম্নআয়ের মানুষের পকেটে যেন টান পড়েছে। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এই গণপরিবহনের সঙ্গে আছি। কখনো এমন দৃশ্য দেখিনি। ঈদযাত্রা মানে কাউন্টারে ঠাসা মানুষ, টিকিটের জন্য হাহাকার, রিকোয়েস্ট, তদবির। কিন্তু এবার উল্টো চিত্র। অনেকেই ফোন করে ঈদযাত্রা বাতিল করছেন। বুকিং টিকিট বাতিল করছেন। বিশেষ করে পরিচিত যারা প্রতিবছর টিকিট চান, যেভাবেই হোক গ্রামে ফেরেন, তাদের একটা বড় অংশ এবার ঈদে বাড়িই যাচ্ছে না। কিন্তু যাত্রীরা বলছেন উল্টো কথা। তাদের অভিযোগ প্রতিটি বাসের ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে অগ্রিম টিকেট না কেটে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিভিন্ন যানবাহনে গ্রামে ফিরছেন।
মহাখালি, কল্যাণপুর, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালেও একই তথ্য পাওয়া গেল। প্রতিটি বাসে টিকেটের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বাস মালিক ও পরিবহণ শ্রমিকরা বলছেন, ঢাকা থেকে জেলা উপজেলায় বাস যাচ্ছে যাত্রী নিয়ে; কিন্ত ফিরতি পথে যাত্রী ছাড়াই ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে। এ জন্য ভাড়া কিছুটা বেশি নেয়া হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধ’ সেতুতে বাইক জট : ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলমুখি যানবাহন বের হয়ে গাজীপুরের চন্দ্রায় যানজটে পড়ছে। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়ছে ঈদেঘরমখি যাত্রীরা। ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে যানবাহনের চাপ বাড়লেও এখন পর্যন্ত যানজট না হওয়া এ মহাসড়ক দিয়ে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন মানুষ। গতকাল বুধবার ঢাকা- টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের আশেকপুর, রাবনা, রসুলপুর, এলেঙ্গা, হাতিয়া, সল্লা, জোকারচরসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা যায়। তবে ভোর রাতে এ মহাসড়কে যানবাহনের গতি ছিলো ধীর। টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রেজাউল মিয়া নামে এক
মহাসড়কের সল্লা এলাকা থেকে ট্রাকচালক সোহাগ মিয়া বলেন, গত কয়েক দিনের তুলনায় যানবাহনের চাপ অনেক বেশি। তবে যানজট নেই। স্বাভাবিকভাবেই আমরা গন্তব্যে ফিরছি।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহিদ হাসান বলেন, ভোরে দুর্ঘটনার কারণে মহাসড়কে ধীর গতিতে যানবাহন চলাচল করছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা স্বাভাবিক হয়েছে। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ঈদ উপলক্ষে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়ক উত্তরদিকে ওয়ানওয়ে করা হয়েছে। এছাড়া, উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনগুলো বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর সেগুলো ভ‚ঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা লিংক রোড দিয়ে ঢাকা যাচ্ছে। এতে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লেও যানজট হচ্ছে না।
টাঙ্গাইল পর্যন্ত মহাসড়ক এখনো যানজট কম হলেও বঙ্গবন্ধু সেতু পাড় হলেই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্ত্রী- ছেলে মেয়েসহ বঙ্গবন্ধু সেতু পার হচ্ছেন মোটরসাইকেলে। বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব এলাকায় আলাদা টোল বুথে শত শত মোটরসাইকেলের সারি দেখা গেছে।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত মোটরসাইকেল বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব টোলপ্লাজার পাশেই স্থাপিত আলাদা বুথে অপেক্ষা করছে সেতু পার হওয়ার জন্য। এসময় সেতু কর্তৃপক্ষের লোকজন অপেক্ষারত মোটরসাইকেল আরোহীদের নির্ধারিত টোলের টাকা হাতে রাখার জন্য মাইকিং করছিলেন।
এদিকে মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসের চেয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি দেখা গেছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে বাড়ি যাচ্ছেন মোবারক হোসেন। তিনি বলেন, সেহরির পর মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকার উত্তরা থেকে রওনা হয়েছি। মহাসড়ক ফাঁকা ছিল, তাই তাড়াতাড়ি আসতে পেরেছি। স্ত্রী নিয়ে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি যাচ্ছেন গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মী আবুল কালাম। তিনি বলেন, সেতু পার হলেই বাড়ি। তাই স্ত্রীকে নিয়ে ঈদের ছুটিতে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি যাচ্ছি। আমার মতো শত শত মোটরসাইকেলের আরোহীরা অপেক্ষা করছেন সেতু পার হতে।
সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ মহাসড়কের কড্ডার মোড়, ওভার ব্রিজ ও নলকা মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে মঙ্গলবার রাত থেকেই ঘরে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। কড্ডার মোড় এলাকায় বেশ কজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহাসড়কে কোথাও যানজট বা অন্য কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। নির্দিষ্ট সময়েই তারা ঘরে ফিরতে পেরেছেন।
গার্মেন্টসকর্মী হাফিজুল, সোহান, রুবেলসহ কয়েক যাত্রী সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে আশুলিয়া বেড়িবাঁধ থেকে রওনা হয়ে ১২টা ৩০ মিনিটে কড্ডায় পৌঁছেছেন বলে জানান।
রোমেল নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বেলা ১১টায় সপরিবারে ঢাকার শ্যামলী থেকে রওনা হয়ে দুপুর দেড়টায় কড্ডায় পৌঁছেন।
সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক সালেকুজ্জামান বলেন, মঙ্গলবার গভীর রাত থেকেই গাড়ির চাপ বেড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কড্ডা, ঝাঐল ওভার ব্রিজসহ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে গাড়ির গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর বলেন, ঈদের ছুটি হওয়ায় সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচলের সংখ্যা কয়েকগুন বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০ হাজার ২৫১টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৪৪ লাখ ২১ হাজার ৫৫০ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সড়ক পথে বঙ্গবন্ধু ব্রিজ হয়ে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলাসহ দেশের প্রায় ২২টি জেলার মানুষ যাতায়াত করে। বঙ্গবন্ধু ব্রিজের পশ্চিম প্রান্তে উত্তরবঙ্গের রংপুর পর্যন্ত মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নিতকরণের কাজ চলমান থাকায় গত কয়েক বছর ধরেই উত্তরের যাত্রা পথে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষদের। সবচেয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থেকে হাটিকুমরুল এবং বগুড়া রোডের সিরাজগঞ্জের চান্দাইকনা পর্যন্ত মহাসড়কে। মহাসড়কে চার লেনের কাজ চলমান থাকায় এবং মহাসড়ক প্রশস্তকরণ এবং বিভিন্ন স্থানে ব্রিজের কাজ চলমান থাকায় এবারের ঈদযাত্রায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম থেকে চান্দাইকনা পর্যন্ত প্রায় ৪১ কিলোমিটার রাস্তায় দুর্ভোগের আশঙ্কায় আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪১ কিলোমিটার রাস্তার প্রায় ১৪টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান নির্ধারণ করে সেগুলো মেরামত করার তাগিদ দিয়েছে পুলিশ। এসব স্থানে মেরামত কাজ শেষ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে সড়ক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
তবে পরিবহণ শ্রমিকরা বলছেন, এখনো ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়নি। তবে প্রচন্ড গরমে যাত্রীদের ত্রাহি অবস্থা। আবুল হোসেন নামের একজন যাত্রী জানান, প্রতিটি বাসে দ্বিগুন তিনগুন বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চাপ নেই : রাজধানী ঢাকা থেকে বের হয়ে যাত্রাবাড়ি-শনির আখড়া-সাইনবোর্ড-টিটাগাং রোডে একটু জটলা থাকলেও ঈদযাত্রায় এখনো ফাঁকা রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এ মহাসড়কে যানবাহনের চাপ না থাকায় এখন পর্যন্ত খুব কম সময়ে বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি যাত্রীরা। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লায় আসা কয়েকজন যাত্রী ও গণপরিবহনের চালকদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। আবু অনিক নামের এক যাত্রী বলেন, এটা অবিশ্বাস্য, সায়েদাবাদ থেকে মাত্র ২ ঘন্টায় কুমিল্লায় এসেছি। আমরা যারা ঢাকায় থাকি ঈদ এলে আমাদের মাথায় একটা দুশ্চিন্তা ভর করে। প্রতি বছর আমরা যানজটে দীর্ঘসময় আটকে থাকি। কিন্তু এ বছর চিত্রটা সম্প‚র্ণ ভিন্ন। তবে ঢাকা শহরের ভেতর তীব্র যানজট। কিন্তু ঢাকা থেকে বের হয়ে মহাসড়কের কোথায়ও যানজট নেই। রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা। তেমন গাড়ি নেই। আমার খুব ভালো লাগছে এত কম সময়ে কুমিল্লায় আসতে পেরে।
মো. সাহানুর রহমান নামের আরেক যাত্রী বলেন, মহাসড়কে কোনো যানজট নেই। খুব দ্রæত সময়ে কুমিল্লায় এসেছি আলহামদুলিল্লাহ। দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে কুমিল্লায় আসা যাচ্ছে।
এনা পরিবহণের আজিজুল হক নামের এক বাসচালক বলেন, রাস্তায় গাড়ির চাপ নেই বললেই চলে। খুব আনন্দের সঙ্গে কুমিল্লায় আসা-যাওয়া করছি। আশা করব চাঁদরাত পর্যন্ত এমন পরিবেশ যেন থাকে।
এবারের ঈদযাত্রাকে নিবিঘœ করতে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করা হয়েছে বলেই মহাসড়কে যানজট নেই দাবি হাইওয়ে পুলিশের। হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার রহমতুল্লাহ বলেন, মানুষের ঈদযাত্রাকে যানজটহীন রাখতে রমজানের শুরুর দিক থেকেই বিশেষ একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া রাস্তার কোথাও দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে গাড়ির জটলা বাঁধার সুযোগ নেই।
সিলেট মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কম : গত মঙ্গলবার প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজট দেখা গেলেও গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত ঢাকা টু সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে যানবাহনের তেমন চাপ দেখা যায়নি। তবে বিকেলে যানবাহনের চাপ বেড়েছে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দায়িত্বে থাকা ভুলতা হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক ওমর ফারুক বলেন, ঈদ যাত্রাকে সামনে রেখে হাইওয়েতে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত মহাসড়ক ফাঁকা। তবে বিকেলের দিকে যানবাহনের চাপ বাড়তে পারে। হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশও কাজ করছেন। একইসাথে নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের সাথেও সমন্বয় করা হয়েছে। ঈদযাত্রা যাতে সুখকর হয় সেজন্য ১৫ রমজানের মধ্যেই মহাসড়কগুলোর পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য নিয়ে যানজট নিরসনে যৌথভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস জানান, মহাসড়ক দুটির যেসব স্থানে সংস্কার কাজ করার প্রয়োজন ছিল তা করা হয়েছে। যেসব স্থানে কাজ চলছিল তাও ঈদযাত্রার জন্য বন্ধ রেখে সড়ক যান চলাচলের জন্য ফাঁকা রাখা হয়েছে। টোলপ্লাজাগুলোতেও দ্রæত টোল আদায়ের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যদিও ঈদযাত্রার মূল চাপ শুরু হয়নি, তারপরও যানবাহনের স্বাভাবিকের তুলনায় মহাসড়কে যানবাহনের আধিক্য রয়েছে। গত মঙ্গলবার টোলপ্লাজাগুলোর তথ্য অনুযায়ী ৪৪ হাজারেরও বেশি যানবাহন ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে চলাচল করেছে, যে সংখ্যা স্বাভাবিক সময় ৩০ হাজার থাকে। বুধবারও এই সংখ্যা আরো বেশি হবে।
ময়মনসিংহ মহাসড়ক : ঢাকা টু ময়মনসিংস রুটে আবদুল্লাহ পুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজট। ময়মনসিংহ রুটে পরের সড়কে যানবাহন চলাচলে তীব্র জট নেই। তবে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, ঢাকা টু ময়মনসিংহ মহাসড়কের দু-পাশের দুই লেনের প্রায় কয়েক কিলোমিটার জুড়ে বেশির ভাগ সময় বালু-পণ্যবোঝাই ট্রাক এবং কাভার্ডভ্যানের দখলে। এ কারণে ওই সড়কে অধিকাংশ সময় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঈদে ওই যানবাহনগুলোর কোনো ব্যবস্থা না করায় ঈদে অতিরিক্ত পরিবহনগুলো মিলে আরো যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চুরখাই এলাকায় রাস্তার দু-পাশে শত শত বালুভর্তি ট্রাক দাঁড় করিয়ে রেখেছেন চালকেরা। এসব ট্রাক থেকে বালু নামিয়ে রাখা হয় মহাসড়কের পাশে। এতে করে রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজটের। চুরখাই ছাড়াও ত্রিশাল উপজেলার বইলর, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড, ভালুকার পল্লিবিদ্যুৎ, স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় বালু, পণ্যবোঝাই ট্রাক এবং কাভার্ডভ্যানের দখলে থাকায় চালকেরা যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
শেরপুর থেকে ঢাকাগামী সারদা পরিবহনের চালক হজরত আলী বাবু জানান, শেরপুর থেকে ঢাকা যেতে বেশ কিছু স্থানে যানজট হয়। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ঈদে মানুষ স্বস্তিতে ঘরে ফিরতে পারতো। বিশেষ করে ময়মনসিংহ এলাকায় শম্ভুগঞ্জ, ঢাকা বাইপাস মোড়, চুরখাই, বইলর, ত্রিশাল এবং ভালুকার কিছু অংশে পণ্যবোঝাই ট্রাকসহ বিভিন্ন কোম্পানির কাভার্ডভ্যান মহাসড়কের দু-পাশে দাঁড়ানো থাকে। সেগুলো যানজটের অন্যতম কারণ।
সোনার বাংলা পরিবহনের চালক জহিরুল হক জানান, মহাসড়কে ইজিবাইক, মাহেন্দ্র চলাচল বন্ধ না হলে যানজট হবে। এসব অবৈধ যানের পাশাপাশি মহাসড়কের দুপাশে বালুভর্তি ট্রাক যানজটের অন্যতম কারণ হবে। কারণ বালুভর্তি ট্রাকের কারণে প্রতিনিয়ত আমাদের যানজটের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এগুলো দেখার কেউ নেই।
ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী খলিলুর রহমান বলেন, ঈদ যাত্রা নির্বিঘœ করতে রাস্তা মেরামতের পাশাপাশি আমাদের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাস্তার পাশে কোনোভাবেই যেন বড় গাড়িগুলো দাঁড়াতে না পারে, সে বিষয়েও তদারকি থাকবে। সার্বক্ষণিক আমাদের মনিটরিং টিম কাজ করছে।
চাপ নেই পাটুরিয়া ফেরিঘাটে : যানবাহনের চাপ নেই মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটে। গতকাল বুধবার ভোরবেলা গাড়ির কিছুটা চাপ থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা কমে যায়। লঞ্চঘাটেও নেই যাত্রীদের ভিড়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডবিøউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদযাত্রা শুরু হলেও নৌপথে যাত্রীবাহী বাস ও যাত্রীর চাপ নেই পাটুরিয়া ঘাটে। ভোরে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, জিপ, মোটরসাইকেল ও ছোট মালবাহী পিকআপ ভ্যান গাড়ির কিছুটা চাপ থাকে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের টেপড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে পাটুরিয়া ঘাটে চলে যেতে পারছে। পর্যাপ্ত ফেরি সচল থাকায় এসব গাড়ি অল্প সময়ের মধ্যেই পদ্মা নদী পার হয়ে পাটুরিয়া থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া প্রান্তে যেতে পেরেছে। বিআইডবিøউটিসির আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আবদুস সাত্তার বলেন, এবার ঈদযাত্রায় পাটুরিয়া দৌলতদিয়া নৌপথে রো রো, কে-টাইপ, ইউটিলিটি এবং ড্রাম ফেরিসহ মোট ২০টি এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে সাতটি ফেরি বরাদ্দ রয়েছে। বর্তমানে পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া নৌপথে ১৮টি এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ছয়টি ফেরি চলাচল করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাটুরিয়ার পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় ছোট গাড়িগুলোকে ফেরিতে উঠতে। পুলিশ সদস্যরা গাড়িগুলোকে শৃঙ্খলা রক্ষায় সারিবদ্ধভাবে রাখতে সহায়তা করছেন। বেলা ১১টার দিকে তিন নম্বর ঘাট এলাকায় ৩০ থেকে ৩৫টি যাত্রীবাহী বাস এবং পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় অর্ধশত ব্যক্তিগত গাড়ি লাইনে ছিল।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত লড়াই
টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর কথা ভাবছেন কিয়ার স্টারমার
আগুনে পুড়ল ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ, চলছে লুটপাট
লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল, প্রবল বাতাসে পরিস্থিতি ভয়াবহ
কাতারের আমিরের উদ্দেশে ফেসবুকে যা লিখলেন তারেক রহমান
গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৭০ ফিলিস্তিনি, মানবিক বিপর্যয় অব্যাহত
নারী শিক্ষার্থীদের ওয়াশরুমে ভিডিও ধারণ, যুবক আটক
শেখ হাসিনার সাথে হত্যা মামলায় জড়িত পটুয়াখালীর ইটবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মোজাম্মেল আটক
বেরোবিতে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ
ঠাকুরগাঁওয়ে ইত্যাদি চিত্রায়ন অনুষ্ঠানে চেয়ার ভাঙচুর-মারামারি, অনুষ্ঠান স্থগিত
কেসিসির সাবেক কাউন্সিলর টিপু কক্সবাজারে খুন
লক্ষ্মীপুরে বিদেশি পিস্তলসহ গৃহবধূ আটক
ফটিকছড়িতে অবৈধ বালু উত্তোলনে বাধা দেয়ায় কৃষককে পিটিয়ে হত্যা!
৭ ডিগ্রিতে নামল পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা
ম্যাচের আগে হঠাৎ বরখাস্ত এভারটন কোচ
চীনের অবিশ্বাস্য সামরিক উত্থানে টনক নড়েছে ভারতের
পারমাণবিক বোমা সজ্জিত নতুন যুদ্ধজাহাজে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন কিম
ধর্ষণের প্রতিশোধে বাবাকে হত্যা, গ্রেফতার ২ কিশোরী
আমাকে ধর্ষণ করার ভিডিও দেখে স্বামী
হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা নির্ধারণে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই