মার্চের পর এপ্রিলে কমেছে সাড়ে ১৬ শতাংশ

রফতানি আয়ও নেতিবাচক

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

০৩ মে ২০২৩, ১১:০১ পিএম | আপডেট: ০৪ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পর দেশের রফতানি আয়ের নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। সবশেষ মাস এপ্রিলেও রফতানি আয় কমেছে। এ মাসে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারার পাশাপাশি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে রফতানি আয়। এর আগের মাস মার্চেও রফতানি আয়ে আড়াই শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। বিশ্বব্যাপী পোশাকের গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোতে চাহিদা কমে যাওয়ায় আলোচ্য মাস এপ্রিলে রফতানি হয়েছে ৩৯৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের এপ্রিলে রফতানি হয়েছিল ৪৭৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের পণ্য। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে ঈদের মাস হওয়ার পরও গত এপ্রিলে প্রবাসী আয় এসেছে ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। গত বছরের এপ্রিলে প্রবাসী আয় এসেছিল ২০১ কোটি ডলার। সে হিসাবে গত বছরের এপ্রিলের তুলনায় এ বছরের এপ্রিলে প্রবাসী আয় কমেছে ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।

গতকাল পণ্য রফতানি আয়ের এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুারো (ইপিবি)। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের এপ্রিলে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫শ’ কোটি ডলারের বেশি। এ মাসে লক্ষ্যমাত্রার ২১ দশমিক ৬৭ শতাংশ অর্জন করা যায়নি। ইপিবি’র প্রকাশিক সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ৪ হাজার ৫৬৭ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। গত বছরের এই সময়ে রফতানি হয়েছিল ৪ হাজার ৩৩৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের পণ্য। অর্থাৎ গত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের তুলনায় এবার পণ্য রফতানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক পণ্য ও চামড়াবিহীন জুতা রফতানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। অন্যদিকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল ও প্রকৌশল পণ্যের রফতানি কমেছে। আলোচ্য সময়ে (জুলাই-এপ্রিল) তিন হাজার ৮৫৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। এই রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। গত মার্চ পর্যন্ত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি ইতিবাচক ধারায় ছিল। তবে এপ্রিল শেষে এই খাতের রফতানিও নেতিবাচক ধারায় চলে গেছে। এ খাতে রফতানি দাঁড়িয়েছে একশ কোটি ডলারে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ কম। এছাড়া কৃষিজাত পণ্যে ২৮ দশমিক ৯১ শতাংশ, পাটজাত পণ্যে ২০ দশমিক ২৫ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

তবে রফতানিকারকরা বলছেন, বরাবরই দুই ঈদের মাসে রফতানি আয় কম আসে। এবার তাই হয়েছে। ২২ এপ্রিল দেশে ঈদ উদযাপিত হয়েছে। এর আগে-পরে মিলিয়ে ৮-১০ দিন রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকসহ সব কারখানা বন্ধ ছিল। সে কারণে পণ্য উৎপাদন হয়নি; রফতানিও হয়নি। তাই এপ্রিল মাসে আয় কমেছে। তবে বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটও এই কমার কারণ বলে জানান তারা।

সূত্র মতে, ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে সারা বিশ্বের গ্রাহকদের চাহিদা কমেছে। মানুষ মৌলিক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদে অন্যান্য পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছে। কটন ইনকর্পোরেটেডের ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় তিনজন গ্রাহকের মধ্যে দুইজন হয় নিজেদের জন্য কম পোশাক কিনছেন, বা কেনাকাটা একেবারেই বন্ধ করে দিচ্ছেন। বাংলাদেশের পোশাক আমদানিকারী সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা দেখা গেছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, বৈশ্বিক বাজারে পোশাকের চাহিদা কম থাকায় প্রতিটি কারখানাই কম ধারণক্ষমতা নিয়ে চলছে। তাছাড়া গত মাসে রমজান ও ঈদুল ফিতরের কারণে পোশাক শিল্পে প্রায় ১২ দিনের ছুটি ছিল, যার প্রভাব দেখা যাচ্ছে রপ্তানি আয়ে। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, বিশ্ববাজারে গত কয়েক মাস ধরে বিক্রি কমেছে, যার প্রভাব পড়ছে আমাদের ব্যবসায়। তবে অন্যান্য প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় স্থানীয়ভাবে উন্নত মানের সুতা উৎপাদন করতে পারায় ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ; যদিও অর্ডার ৩০ শতাংশ কমেছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ বাজার আবারও ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসবে বলে আশাব্যক্ত করেন আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ।

পোশাক খাতের রফতানি আয়ের বিষয়ে বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, চলতি অর্থবছরে পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৬ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। এখন পর্যন্ত ১০ মাসে পোশাক রফতানি খাতে অর্জিত হয়েছে ৩৮ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। আগামী ২ মাসে (প্রতি মাসে) অন্তত ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হলে এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জুলাই গণহত্যা: হাসিনাসহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল
শিগগিরই চালের দাম কমে আসবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
মৎস্যজীবীদের নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন: কারা অধিদফতর
রমজান শেষ না হওয়া পর্যন্ত পণ্যের শুল্কে পরিবর্তন আনবে না সরকার
ছাত্রহত্যা মামলার আসামি হয়েও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ান শিমুলিয়ার ‘বাবুল মাস্টার’!
আরও

আরও পড়ুন

জুলাই গণহত্যা: হাসিনাসহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল

জুলাই গণহত্যা: হাসিনাসহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল

শিগগিরই চালের দাম কমে আসবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

শিগগিরই চালের দাম কমে আসবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

গাজায় ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ সহযোগিতা দিচ্ছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি

গাজায় ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ সহযোগিতা দিচ্ছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি

ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতি যুদ্ধ নাকি বন্ধুত্বের পক্ষে

ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতি যুদ্ধ নাকি বন্ধুত্বের পক্ষে

মিথ্যা ন্যারেটিভ ভেঙ্গে দেয়া আমাদের ইতিহাসের দায়বদ্ধতার অংশ

মিথ্যা ন্যারেটিভ ভেঙ্গে দেয়া আমাদের ইতিহাসের দায়বদ্ধতার অংশ

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

এক-পঞ্চমাংশ এইচ-১বি ভিসাই ভারতীয় সংস্থাগুলোর কাছে

এক-পঞ্চমাংশ এইচ-১বি ভিসাই ভারতীয় সংস্থাগুলোর কাছে

গ্রীনল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন ট্রাম্প জুনিয়র

গ্রীনল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন ট্রাম্প জুনিয়র

মক্কা-মদিনায় ভারী বৃষ্টিতে বন্যা

মক্কা-মদিনায় ভারী বৃষ্টিতে বন্যা

ভারতে চীনের পরিবর্তে বাড়ছে জাপানি বিনিয়োগ

ভারতে চীনের পরিবর্তে বাড়ছে জাপানি বিনিয়োগ

পশ্চিম তীরে ৩ ইসরাইলি নিহত

পশ্চিম তীরে ৩ ইসরাইলি নিহত

যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা একীভূত করার প্রস্তাব ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা একীভূত করার প্রস্তাব ট্রাম্পের

অস্ট্রিয়ায় সরকার গঠন করছেন অতি ডানপন্থি নেতা কিকল

অস্ট্রিয়ায় সরকার গঠন করছেন অতি ডানপন্থি নেতা কিকল

গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ-কুকুর

গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ-কুকুর

শত্রুদের যে বার্তা দিলেন কিম

শত্রুদের যে বার্তা দিলেন কিম

আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসের সদস্যপদ পেল ইন্দোনেশিয়া

আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসের সদস্যপদ পেল ইন্দোনেশিয়া

স্বামী ও ৬ সন্তান রেখে ভিক্ষুকের সঙ্গে পালালেন নারী

স্বামী ও ৬ সন্তান রেখে ভিক্ষুকের সঙ্গে পালালেন নারী

গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনড় এরদোগান

গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনড় এরদোগান

সন-টটেনহ্যাম চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি

সন-টটেনহ্যাম চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি

ইবি’র পাঠ্যসূচিতে জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস

ইবি’র পাঠ্যসূচিতে জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস