আমি কখনো দেশবাসীকে অসম্মান করতে চাই না
০৩ মে ২০২৩, ১১:২৬ পিএম | আপডেট: ০৪ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাবা-মা এবং তিন ভাইসহ সবকিছু হারিয়ে দেশবাসীকে পাশে পেয়েছি। দেশের জনগনই আমার আপনজন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে জীবনের অনেক ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়েছে, তবে আমি কখনই মাথানত করিনি। তিনি বলেন, ‘আমি কখনো মাথানিচু করে দেশবাসীকে অসম্মান করতে চাই না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জতির জনক’ বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ নিয়ে দেশ-বিদেশে আজো ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উপযুক্ত জবাব দিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহবান জানান।
বিশ্ব ব্যংাকের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনার তিনি উপরোক্ত কথা বলেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন ভার্জিনিয়া রাজ্যের রিটজ কার্লটন হোটেল বলরুমে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস ও সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌসিক বসু অনুষ্ঠানে বক্তৃতা রাখেন এবং বৈশ্বিক ঋণদাতা ভিপি মার্টিন সমাপনী বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মঞ্চে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন উপবিষ্ট ছিলেন।
সংবর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণের শুরুতে উপস্থিত দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে পরিচিত হন। এসময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের শাখা আওয়ামী লীগের নাম ধরে ডেকে ডেকে তাদের সাথে পরিচিত হন। এসময় দলীয় নেতা-কর্মীরা হাত তুলে ও সেøাগান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এরপর তিনি শীতের মধ্যে যারা হোটেলের বাইরে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করছেন তাদেরকে এসে দাবি-দাওয়া জানানোর কথা বলেন এবং চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানান।
পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা ছাড়াও ’৮১ সালে তার দেশে ফেরা ও আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অনেক দল ক্ষমতায় এসেছে তারা কি সেই বাসন্তীদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পেরেছে। আমি বাসন্তীর বাড়ীতে গিয়েছি, তার খোঁজ নিয়েছি। বাসন্তীকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া-এরশাদ-খালেদার সরকার দেশকে দুর্নীতি ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ জনগণের দল বলেই আজ দেশ বিশ্বে উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাজেটের আকারের তুলনামূলক চিত্র দেখে তাদের দ্বারা কতটা উন্নয়ন হয়েছে তা বিচার করতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বঙ্গবন্ধু জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতাকে আমাদের সংবিধানে মৌলিক রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তাকে নৃশংসভাবে হত্যাকা-ের পর জাতিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে আমাদের দীর্ঘ ২১ বছরের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করতে হয়েছে। তিনি বলেন, আজ অনেকেই মানবাধিকারের কথা বলেন, আমার বাবাকে হত্যার পর মানবাধিকার কোথায় ছিল? আইন করে আমার বাবার হত্যার বিচার রহিত করা হয়েছিলো।
প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বে আসন্ন তীব্র খাদ্য সঙ্কট সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করে ভবিষ্যতে তা থেকে বাঁচতে আরো বেশি করে খাদ্য উৎপাদনের উপর জোর দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা স্মার্ট জনগণ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বো। দেশের কোন মানুষ ভূমিহীন থাকবে না। তিনি বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা অক্ষুণœ রেখে মাথা উঁচু করে চলার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীরা সেøাগানে মুখরিত করে তুললে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেøাগান দিলে চলবে না, ভোটে জিততে হবে। নির্বাচনের সময় সেøাগান দিতে হবে। তিনি আগামী দিনের বিশেষ করে ২০৪১ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, সমালোচানাকারীদের মুখে ছাই দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে।
তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের আমন্ত্রণে আমি এসেছি। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ঋণ প্রদান বন্ধ করেছিল, কিন্তু ঘরের মানুষ যদি ষড়যন্ত্র করে তাহলে অন্যের দোষ দিয়ে লাভ কী? তিনি কারো নাম উল্লেখ না করে বলেন, দেশে একজন আছেন যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন, জনগণের স্বার্থের কথা বলে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে নিজেই লাভবান হয়েছেন। ৬০ বছর বয়সেও আইন অমান্য করে ঐ ব্যাংকের এমডি থাকতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, নানা বিরোধিতা, কানাডায় মামলার পরও দেশের মানুষের সমর্থন পাওয়ার কারণেই নিজেদের অর্থে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পেরেছি।
তিনি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাঙালীকে কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না। তিনি বলেন, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, মেট্রোরেল হয়েছে, আগামীতে কর্ণফুলি টানেল হবে, পাতাল রেল হবে। বিদ্যুৎ, রাস্তা, যোগাযোগ ব্যবস্থ্যায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে। আমরা দেশে সব ঘরে আলো জ্বালিয়েছি। কোনো ঘর অন্ধকারে নেই। একদিনেই ১০০ রাস্তা, আরেকদিনে ১০০টি সেতু উদ্বোধন করেছি। ১০০টা অথনৈতিক অঞ্চল করা হয়েছে। প্রবাসী ব্যবসায়ীদের জন্য কোটা থাকবে। প্রয়োজনে আমেরিকান ব্যবসায়ীদের জন্য পৃথক অঞ্চল করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পেরেছি, আমরাই পরবো।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সচিবালয়ের গেটে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া-পুলিশের ফাঁকা গুলি
ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থী রাজনীতিবিদ মারি লা পেনের মৃত্যু
দুদক কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার তিন ভুয়া কর্মকর্তা রিমান্ডে, হত্যা মামলায় যুবলীগ নেতা সোহাগ রিমান্ডে,
শিগগিরই চালের দাম কমে আসবে : বাণিজ্য উপদেষ্টা
কুরস্কে ২৪ ঘন্টায় ইউক্রেনের ৪৮৫ সেনা নিহত
পশ্চিম তীরে বন্দুক হামলায় ৩ ইসরাইলি নিহত
ঢাবিতে হাসিনার ‘ডামি নির্বাচন’ প্রদর্শনী
জুলাই গণহত্যা: হাসিনাসহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল
শিগগিরই চালের দাম কমে আসবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
গাজায় ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ সহযোগিতা দিচ্ছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি
ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতি যুদ্ধ নাকি বন্ধুত্বের পক্ষে
মিথ্যা ন্যারেটিভ ভেঙ্গে দেয়া আমাদের ইতিহাসের দায়বদ্ধতার অংশ
বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
এক-পঞ্চমাংশ এইচ-১বি ভিসাই ভারতীয় সংস্থাগুলোর কাছে
গ্রীনল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন ট্রাম্প জুনিয়র
মক্কা-মদিনায় ভারী বৃষ্টিতে বন্যা
ভারতে চীনের পরিবর্তে বাড়ছে জাপানি বিনিয়োগ
পশ্চিম তীরে ৩ ইসরাইলি নিহত
যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা একীভূত করার প্রস্তাব ট্রাম্পের
অস্ট্রিয়ায় সরকার গঠন করছেন অতি ডানপন্থি নেতা কিকল