আমরা আশাবাদী যে প্রত্যাবাসন টেকসই হবে
০৬ মে ২০২৩, ১০:১৯ পিএম | আপডেট: ০৭ মে ২০২৩, ১২:০৩ এএম
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর পরিবেশ-পরিস্থিতি পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করে দেখে এসেছে বাংলাদেশে বসবাসরত ২০ রোহিঙ্গাসহ ২৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল। গত শুক্রবার সকালে টেকনাফে ট্রানজিট ঘাট দিয়ে মিয়ানমারে পৌঁছে সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি শেল্টার পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে দেশে ফিরে আসে।
পরিদর্শনের বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা পরিবেশ-পরিস্থিতি খারাপ কিছু দেখিনি। আমরা মংডু শহরে দেখেছি প্রচুর রোহিঙ্গা ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। তাদের সঙ্গে আমাদের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা কথাবার্তা বলেছে, দেখা করেছে। আমি যতদূর তথ্য পেয়েছি, সেখানে প্রায় ৮০ শতাংশ রোহিঙ্গা রয়েছে।’ পরবর্তী উদ্যোগ কী, কবে নাগাদ প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরবর্তী উদ্যোগ হচ্ছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এখানে আসবে। এসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরও কথা বলবে। সবকিছুই করা হচ্ছে তাদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলার জন্য, তাদের আশ্বস্ত করার জন্য। মিয়ানমার থেকে প্রতিনিধিরা কবে আসবে, সেই তারিখ এখনো নির্ধারণ হয়নি। আগে তারা আসবেন, তারপরের পদক্ষেপ হচ্ছে প্রত্যাবাসন। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা আমরা দেখতে পেয়েছি। আমরা আশাবাদী যে প্রত্যাবাসন টেকসই হবে।’
‘প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে দাবি করা হচ্ছে প্লেস অব অরিজিন অথবা নিয়ারবাই (নিজ ভিটায় বা এর আশেপাশে জায়গায়), এ ব্যাপারে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি আশ্বস্ত করতে পারেনি। কারো কারো ক্ষেত্রে হয়তো প্লেইস অব অরিজিন (নিজ ভিটায়) হবে, কারো কারো ক্ষেত্রে নিয়ারবাই (আশেপাশে জায়গায়) হতে পারে। এটা একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে হবে।›
পরিদর্শনের বিষয়ে রোহিঙ্গা নেতা মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘আমরা মিয়ানমার যাওয়ার পর তারা ক্যাম্প দেখিয়েছে। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, এই ক্যাম্পগুলো কাদের জন্য? তারা বলল, আপনাদের জন্য। তাহলে আমরা তো নিজের দেশে স্বাধীনতার অনুভূতি পাচ্ছি না, নাগরিকের সম্মান পাচ্ছি না। তারা আমাদের বলল অ্যাম্বেসি কার্ড নিতে হবে। অ্যাম্বেসি কার্ড আমরা নেব না। অ্যাম্বেসি কার্ড মেহমানদের জন্য হয়। আমরা যদি মিয়ানমারে অ্যাম্বেসি কার্ড নিই, তাহলে আমরা সেখানকার কোনো নাগরিক না, বাসিন্দা না। মিয়ানমার সরকার আমাদেরকে জায়গার মালিক হতে দেবে না। ভিটার মালিক হতে দেবে না,’ বলেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের দাবির বিষয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কী বলেছে, জানতে চাইলে এই রোহিঙ্গা প্রতিনিধি বলেন, ‘তাদের প্রশ্ন করলে তারা আমাদের বলেছে, আগে অ্যাম্বেসি কার্ড নিতে হবে, নেওয়ার ৫-৬ মাস পর আস্তে আস্তে ক্যাম্পের বাইরে যেতে পারবে। আমরা বলছি আমরা ক্যাম্পে থাকব না। আমাদের দেশে, আমাদের গ্রামে, আমাদের ভিটাতে নিতে হবে। আমাদের টাকা-পয়সা দিতে হবে না। আমরা নিজের ভিটায় নিজ খরচে ঘর বেঁধে নেব।’
‘আমরা এই পরিস্থিতিতে সেখানে ফেরত যাব না। মিয়ানমারে ৩৬ জাতি আছে, ৩৫ জাতি একরকম করে চলছে আর আমাদের মুসলমান জাতিকে অন্যরকম করে চালাচ্ছে। আমরা যেন সৎ মায়ের ছেলে। ৩৫ জাতি নাগরিকত্ব নিয়ে সে দেশে পড়াশোনা, চাকরি, ব্যবসা সব করতে পারলে আমরা পারব না কেন? আমাদের জাতিতেও শিক্ষিত লোকজন আছে, বড় ডিগ্রি আছে এমন ছেলেমেয়ে আছে কিন্তু দেশে চাকরি পায় না, চাকরি দেয় না। যদি নাগরিকত্ব দেয়, নিজের জায়গা জমি, ভিটা ফিরিয়ে দেয়, তাহলে অবশ্যই যাব। বাংলাদেশ আমাদের স্থান দিয়েছে সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আমাদের দাবি-দাওয়া যদি মেনে নেয় তাহলে মিয়ানমারে আমরা অবশ্যই ফেরত যাব।’
রোহিঙ্গাদের অসন্তুষ্টির বিষয়ে জানতে চাইলে আরআরআরসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘এমন কথা বললে তো সমস্যা সমাধান কখনোই হবে না। ২ পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে। এটি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কথাবার্তা হয়েছে। সন্তুষ্টির বিষয়টি আপেক্ষিক। যে সমস্যার ৬০-৭০ বছর ধরে সমাধান হচ্ছে না, তার সমাধান দুয়েকদিনে হবে না। আমরা প্রত্যাবাসনটা শুরু করতে চাই। প্রত্যাবাসন যাতে টেকসই হয়, সেজন্যই এই পরিদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে।’
‘বাংলাদেশের কাছে রোহিঙ্গা সঙ্কটের একমাত্র সমাধান হচ্ছে প্রত্যাবাসন। প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দাবি বরাবরই ছিল যে এটি যাতে টেকসই হয়, স্বেচ্ছাকৃত (ভলানটারি) হয় এবং মর্যাদাপূর্ণ হয়। সেই নিরীখে মিয়ানমারের কাছে বাংলাদেশের প্রস্তাব ছিল যে যারা প্রত্যাবাসিত হবে সেই রোহিঙ্গাদের যাতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সেসব দেখানো হয়। সেজন্য আজ আমরা পরিদর্শনে যাই। আমরা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই যে তারা আমাদের প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে, রাজি হয়েছে।’
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
আখাউড়া প্রেসক্লাব সভাপতির পিতার ইন্তেকাল! সাংবাদিকদের শোক প্রকাশ
ওমরজাই-গুরবাজ জুটির ৫০
কোন অপশক্তি নেই, রুখতে পারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রযাত্রা - দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরাম
মুস্তাফিজের দ্বিতীয় আঘাত
যশোরের যবিপ্রবি এলাকা থেকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আটক
যশোরে সেনাবাহিনীর অভিযানে মাদকসহ আটক ১
যশোরের শার্শায় জাহাঙ্গীর মেম্বারের ক্ষমতার দাপট, পুলিশ নিরব
রহমতকে ফেরালেন মুস্তাফিজ
নোয়াখালী আদালতের নতুন পিপি শাহাদৎ, জিপি নুরুল আমিন
ঢাকায় স্বামীর আত্মহত্যার ৪৮ঘণ্টার পর যশোরে গলায় ফাঁস দিয়ে স্ত্রীর আত্মহত্যা
স্কুল হ্যান্ডবলে সেরা সানিডেল-ভিকারুননিসা
জাতীয় সাঁতারের তৃতীয় দিন নৌবাহিনীর এক রেকর্ড
পুরস্কারের চেক বুঝে পেলেন সাবিনারা
বিশ্বে গবেষণা নেতৃত্বে ৩২তম ইরান
বিতর্কিত উপদেষ্টা নিয়োগ শহীদের রক্তের অবমাননা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
ফারুকী-বশিরকে উপদেষ্টা করা শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি : ফ্যাসিবাদ বিরোধী বিপ্লবী ছাত্র-জনতা
গাজীপুরে সড়ক অবরোধে ছাত্রছাত্রীরা চরম দুর্ভোগে
সরকার ভৈরবে নদী বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নিচ্ছে : নৌপরিবহন উপদেষ্টা
গতির ঝড় তুলে প্রথম উইকেট নাহিদের
শেরপুরে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃক হামলার শিকার সময় টিভির দুই সাংবাদিক