খুলনাঞ্চলে গরুর গোশত ৮শ’ টাকা, হরিণ ৫শ’
০৮ মে ২০২৩, ১০:৩৭ পিএম | আপডেট: ০৯ মে ২০২৩, ১২:০৪ এএম
নানা অজুহাতে কয়েক দফা বৃদ্ধির পর খুলনাঞ্চলে গরুর গোশত এখন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে সাত শ’ থেকে ৮শ’ টাকায়। অন্যদিকে, খাসির গোশত বিক্রি হচ্ছে স্থান ভেদে এক হাজার থেকে ১১০০ টাকায়। সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় হরিণের গোশত প্রতি কেজি গড়ে ৫শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরু ও খাসির গোশতের চেয়ে তুলনা মূলকভাবে হরিণের গোশতের দাম কম হওয়ায় সুন্দরবন অঞ্চলে বেড়ে গেছে হরিণের গোশতের চাহিদা। এ সুযোগে নির্বিচারে মারা হচ্ছে হরিণ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চোরা শিকারীরা ফাঁদ পেতে বা বিষ দিয়ে হরিণ শিকার করে। এরা মৎসজীবি বা বাওয়ালী মৌয়াল সেজে বনে প্রবেশ করে। তাদের নৌকায় দড়ি, ফাঁদ, বিষ, জবাই ও কাটাকুটি করার ছুড়িসহ হরিণ শিকারের যাবতীয় উপকরণ থাকে। যে সকল এলাকায় হরিণের অবাধ চলাচল, সেখানে তারা দড়ির ফাঁদ পাতে। চঞ্চল ও ক্ষিপ্র গতির হরিণ ফাঁদে পড়ে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে আরো জড়িয়ে যায়। খুব ভোরে শিকারীরা ফাঁদ থেকে হরিণ ছাড়িয়ে বনের ভিতরেই তা জবাই দেয়। একটি ফাঁদে সাধারণত একটি বা দুটি হরিণ ধরা পড়ে। জবাই করে বনের ভিতরে হরিণকে কয়েক টুকরো করা হয়। এরপর সঙ্গোপনে তা নৌকায় করে লোকালয়ে আনা হয়। আবার বিষ দিয়েও হরিণ মারা হয়। তবে এটি একটু কষ্টসাধ্য। বিষ খেয়ে একটি হরিণ আধা কিলোমিটার বা এক কিলোমিটার দূরে গিয়েও মরতে পারে। তাই ফাঁদ পেতেই বেশি হরিণ শিকার করা হয়।
সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে বাগেরহাটের শরণখোলা, খুলনার কয়রা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর এলাকাগুলোতে চোরা শিকারীদের বেশি তৎপরতা রয়েছে। এসব এলাকায় কমপক্ষে ৩০টি চোরা শিকারী চক্র রয়েছে। প্রায়ই এসকল এলাকা থেকে হরিণের গোশত উদ্ধার হয়ে থাকে। সূত্র জানায়, চোরা শিকারীরা সাড়ে ৪শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা দরে প্রতি কেজি হরিণের গোশত বিক্রি করে। এ জন্য তাদের কিছু দালাল রয়েছে। কিছু পেশাদার কসাইও তাদের সাথে রয়েছে। বাইরের কোনো পর্যটক তাদের সাথে যোগাযোগ করলে অবশ্য প্রতি কেজি এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকায় তারা গোশত বিক্রি করে থাকে। হরিণের গোশতের পাশাপাশি শিং ও চামড়াও উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে। একেকটি হরিণের চামড়া ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা এবং শিং কমপক্ষে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার প্রায় প্রতিটি পরিবারের জীবিকা সুুন্দরবন কেন্দ্রিক। বনে তাদের অবাধ যাতায়াত রয়েছে। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে তারা কেউ মাছ ধরেন। কেউ মধু সংগ্রহ করেন। কেউ গোলপাতা সংগ্রহ করেন। তাদেরই ভিতর থেকেই আবার কেউ কেউ হরিণ শিকারে জড়িত রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মচারী এদের পশ্রয় দেয়, নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে থাকে। একাধিক স্থানে ইউনিয়ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিরা তাদের সহযোগিতা করে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
কয়রার জোড়শিং এলাকায় আবেদ আলী জানান, মাঝে মধ্যেই হরিণের গোশত বিক্রি হতে দেখা যায়। খুব ভোরে বিক্রি করা হয়। দিনের আলো ফোটার আগে বিক্রেতারা চলে যায়। আগে সাড়ে ৩শ’ টাকায় বিক্রি হতে দেখেছি। এখন ৫শ’ সাড়ে ৫শ’ টাকায় প্রতি কেজি হরিণের গোশত পাওয়া যায়। বনবিভাগের টহল জোরদার করলে গোশতের দাম বেড়ে যায়। তিনি দাবি করেন, এখানকার হরিণের গোশত অনেক পর্যটক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বাসিন্দা জালালউদ্দিন জানান, আগেও হরিণ শিকার হত। এখন বেড়ে গেছে। এখন এমন হয়েছে, একই দিনে পুলিশ তিন চারটি হরিণের মাথা চামড়া ও গোশত উদ্ধার করেছে। অনেক সময় নানা কারণে হরিণ লোকালয়ে প্রবেশ করে। চোরা শিকারীরা খবর পেলে সেগুলো ধরে নিয়ে যায়। পরে জবাই করে বিক্রি করে।
পরিবেশ কর্মী মনিরুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের সৌন্দর্য্য হরিণ। হরিণ রক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, বন বিভাগ ও প্রশাসনের গাফিলতি অথবা সমর্থন যেটাই বলা হোক না কেনো, দিনকে দিন হরিণ শিকারীদের সাহস বেড়ে যাচ্ছে। গত তিন মাসে কমপক্ষে ১৫ মন হরিণের গোশত উদ্ধার হয়েছে। ধরে নিতে হবে, এই ১৫ মনের বাইরে বহু গুন বেশি গোশত নির্বিঘেœ পাচার হয়ে গেছে। চোরাশিকারীদের রোধে বনবিভাগ ও প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের আরো কঠোর হতে হবে।
খুলনার কয়রা থানার ওসি এ বি এম এস দোহা বলেন, হরিণ শিকার ও পাচার রোধে আমরা সব সময় সতর্ক আছি। সুন্দরবনকেন্দ্রিক অপরাধ দমনে বন বিভাগের পাশাপাশি পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। অপরাধী যেই হোক আমরা তাঁকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, জনবল কম হওয়া সত্ত্বেও সুন্দরবনের বন্য প্রাণী নিধন এবং অন্যান্য অপরাধ দমনে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন বনরক্ষীরা। এর মধ্যেও কিছু অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সেগুলো দমনে বন বিভাগ আন্তরিকভাবে কাজ করছে। সুন্দরবনের বন্য প্রাণী রক্ষায় বন বিভাগকে সহযোগিতা করতে স্থানীয় মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ক্রিকেটে দুর্ভাগ্যের সংখ্যা '৫৫৬'!
ভিএআরে প্রতিবাদ করে নটিংহ্যামকে গুনতে হল প্রায় ১২ কোটি টাকা!
চৌদ্দগ্রামে ওভারটেক করার সময় দুই মোটর সাইকেল আরোহী নিহত, আহত ১
সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ ব্র্যাক ব্যাংকের ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্কের ২,০০০ কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি
ময়মনসিংহে ঐতিহ্যবাহী জিলা স্কুলের খেলার মাঠ দখল করে ভবন নির্মাণে প্রতিবাদ সভা
শান্তিতে নোবেল পাওয়া জাপানি সংগঠনকে অভিনন্দন ড. ইউনূসের
সবজি বাজারের সিন্ডিকেট এখনো বহাল কিভাবে?
সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবাজদের দ্বারা কোনভাবেই বৈষম্যহীন সমাজ গঠন সম্ভব নয় - ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
যশোরে নারীকে কুপিয়ে হত্যা করল প্রাক্তন স্বামী
স্বৈরাচার হাসিনা হিটলারেরর চেয়ে জঘন্যতম কাজ করছে
পূজামণ্ডপে ইসলামী সংগীত পরিবেশন জঘন্য অপরাধ, কথিত শিল্পীদের শাস্তির দাবি ইসলামী দলের
ফের হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী হলেন নায়াব সাইনিই!
শেখ হাসিনা ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন : মাওলানা মামুনুল হক
৫৮ জন জেলেকে মিয়ানমার থেকে ফেরত আনলো কোস্টগার্ড
আরব সাগরে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা, এক মাস পর উদ্ধার পাইলটের দেহ
গত ১৫ বছর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন করেছে আওয়ামী লীগ - নুরুল আমিন ভূঁইয়া বাদশা
যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘকে আহ্বান জানাবে লেবানন
সুন্নাহর মাঝেই রয়েছে বৈষম্যমুক্ত আদর্শ দেশ গড়ার চাবিকাঠি -মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক
অসাম্প্রদায়িক মনোভাব চাই
পূজা সংক্রান্ত বড় কোন দুর্ঘটনা নেই, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় মামলা ও গ্রেফতার ১৭