হাজার টন কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ
০৮ মে ২০২৩, ১০:৩৯ পিএম | আপডেট: ০৯ মে ২০২৩, ১২:০৪ এএম
ফরিদপুর ৭ উপজেলার খাদ্যগুদামের বিপরীতে চলাচল সূচির মাধ্যমে প্রোগ্রামের ৫১৮০ মেট্রিক টন চালের মধ্যে প্রায় এক হাজার টন চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ উঠছে। গত ২০২২ সালের শেষের দিকে শুরু হওয়া চাল আমাদানির প্রোগ্রাম এখনও চলমান। যাহা খুলনা বন্দরের ৪ ও ৭ নং ঘাট হতে ৫১৮০ মেট্রিক টন চাল খালাস করা হয়।
এর মধ্যে নগরকান্দা এলএসডিতে ১৭৭০ মেট্রিক টন চালের বিপরীতে ১০০ মেট্রিক টন, ভাঙ্গা এলএসডিতে ৩০০ মেট্রিক টন এর বিপরীতে ২০০ শত মেট্রিক টন সালথা এলএসডিতে ৮০০ মেট্রিক টন এর বিপরীতে ১০০ মেট্রিক টন, আলফাডাঙ্গা এলএসডিতে ৩০০ মেট্রিক টন এর বিপরীতে ১০০ মেট্রিক টন, মধুখালী এলএসডিতে ৬৬০ মেট্রিক টন এর বিপরীতে ১০০ মেট্রিক টন, আমদানিকৃত চাল কালোবাজারে বিক্রি করে সকল কর্মকর্তাদের কমপক্ষে ২০ লাখ মুনাফা হয়েছে বলে চাল আছে। সদরপুর ও চরভদ্রাসন এলএসডি বাদে ৭ উপজেলার ওসিএলএসডির মধ্যে চলছে সরকারি চাল বিক্রির পাল্লা।
জানা যায়, থাইল্যান্ড এবং ভারত হতে সরকারিভাবে, চলাচল সূচির মাধ্যমে আমদানিকৃত সমস্ত চালই উন্নতমানের। যাহার বাজার মূল্য প্রতি কেজি প্রায় ৫০ থেকে ৫২ টাকা। এই ধরনের ভাল চালকে স্থানীয়ভাবে বাংলা বাঁশমতি চাল বলা হয়। চাল দেখতে গুনগত এতই ভাল। ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করার অভিযোগ আছে।
উল্লেখ্য, এই চালের বিপরীতে শুধু বস্তার মান ঠিক রেখে, প্রতি কেজি চাল ৩৩ টাকা ৪০ টাকা দরে কেনা (মাজেদ চাল) তথা নিম্নমানের চাল কিনে শুধুমাত্র বস্তা পালটিয়ে এলসি করা সাদা চালের বস্তার মধ্যেই খামালজাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
৭ গুদামের বিশ্বস্ত সূত্রগুলো দাবি করছেন, প্রতি গুদামের আমদানির চালের সাদা বস্তার বর্ডার দিয়ে একই বস্তায় অথবা বস্তা ঠিক রেখে নিম্নমানের লাল ও পোকাযুক্ত মাছির মাথা এবং রাজবাড়ী মাজেদ চালের বস্তায় ভর্তি করে খামাল পুরণ করা হয়েছে। যাহা প্রত্যেক গুদাম সীল করে তদন্ত করলেই এর প্রমাণ মিলবে।
এর মধ্যে ভাঙ্গা, মধুখালী, নগরকান্দা, সালথা, বোয়ালমারী, ফরিদপুর এবং আলফাডাঙ্গায় বড় অনিয়ম আছে। ফরিদপুরবাসীর দাবি ৭ উপজেলার সবগুলো খাদ্যগুদাম বিচারবিভাগীয় তদন্তপূর্বক সীলগালা করলেই বহু অনিয়মের প্রমাণ মিলবে।
৭ উপজেলাতেই অভিযোগ আছে, এলএসডির আমদানি করা চাল যেসব ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হয়েছে। তার মধ্যে সালথার ওসিএলএসডি সালথার চাল ব্যবসায়ী সঞ্জিত এবং রঞ্জিত দুই ভাইয়ের কাছে এক থেকে দেড়শত মেট্রিক টন চালের বস্তা পাল্টিয়ে এলসির চাল বিক্রি করে প্রায় ১৫ লাখ টাকা, ভাঙ্গা এলএসডি হতে প্রায় ২০০ মেট্রিক টন চাল ব্যবসায়ী হাজী শরীয়তুল্লা বাজারের মো. হালিম হাওলাদার ও অন্য এক ব্যবসায়ীর নিকট বিক্রি করে প্রায় ২০ লাখ মুনাফা করছেন বলে জানা গেল। মধুখালী এলএসডি হতে স্থানীয় চাল ব্যবসায়ী সুজিতের মাধ্যমেও প্রায় ২০০ টন চাল বিক্রি করে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে শোনা যায়। বোয়ালমারী অম্বিকাপুর এবং মধুখালী হতে এলসির চাল বিক্রি করে ১০ লাখ এবং নতুন বস্তা বিক্রি করে পুরাতন বস্তায় ক্রয়ে আরো ১০ লাখ টাকাসহ মোট ২০ লাখ টাকা পকেটস্থ করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
তবে উল্লেখিত, নামীয় চাল ব্যবসায়ীরা এবং ৭ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্যকর্মকর্তাগণ সকলেই সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট এবং সঠিক নয় দাবি করছেন। ব্যবসায়ীরা বললেন, আমরা চাল ব্যবসায়ীরা গুদামের এক ছটাক চাল কিনিনি। আর কর্মকর্তারা বলছেন তারা কেউ কোনো অনিয়ম করেননি।
পাশাপাশি খাদ্যমন্ত্রণালয়ের এবং খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও খাদ্যবিভাগের আঞ্চলিক কর্মকর্তার কড়া নির্দেশনা আছে, যে সকল উপজেলার মিল অচল এসব মিলের নামে কোনো রকম সরকারি কোনো ধান চালের বরাদ্দ পাবে না। কিন্ত ফরিদপুর উপজেলার সম্পূর্ণ চিত্র ভিন্ন। এখানে কাগজে কলমে খাদ্যবিভাগের সমস্ত নিয়মকানুন ঠিক থাকলেও বাস্তব চিত্র সবই আলাদা। ফরিদপুর সদর উপজেলা তথা অম্বিকাপুর খাদ্যগুদাম থেকে শত শত সরকারি নতুন বস্তা চড়া মূল্যে বাহিরে বিক্রি হয়। শেষ পর্যন্ত সংরক্ষণ ও চলচল কর্মকর্তা বগুড়া কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা ও ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রায় এক লাখ ১০ হাজার বস্তা ক্রয় করে ৬ নং গুদামে সংরক্ষিত করে রেখেছেন। চাউল আছে সাবেক ঐ কর্মকর্তা মাত্র ২ সপ্তাহ আগে বস্তা বিক্রি করে প্রায় ৮০ লাখ টাকা সরকারি এলসির চাল এবং বাচাই করা চাল কালোবাজারে বিক্রি করে প্রায় ২ কোটি টাকা পকেটস্থ করে বিদায় নিয়েছেন। অম্বিকাপুর গুদাম এলাকার সবার মুখে মুখে। সরকারি চাল ও বস্তা চুরি যাওয়ার কারণে বর্তমান সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা তথা এসএন্ড এমও ফরিদপুরে বদলি এসে অম্বিকাপুরে যোগদান করার পরও প্রায় ১৫/১৬ দিন পর চার্জ বুঝে নেন।
অপরদিকে, সরকারি গুদামে নতুন করে শুরু হয়েছে বোরো সংগ্রহ ২০২৩ এখানেও শুরু হয়েছে বিশাল অনিয়মের পুকুর চুরি। যে সব মিল অচল এবং মিলের অস্তিত্বই সেই সকল মিলের নামে সরকারি ধান, চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
ফরিদপুর সদর থানার কানাইপুর ‘বর্ষা অটো রাইস মিল’ এই মিলটি দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ সেই মিলের বিপরীতে ৩২২৬ মেট্রিক টন বোরোর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া চরভদ্রাসন ১৫২ মেট্রিক টন সদরপুরে ১৭৫ মেট্রিক টন, নগরকান্দা ১৯৭ মেট্রিক টন, মধুখালীতে ২৯০ মেট্রিক টন বোরো চালের বরাদ্দ পেয়েছে। এগুলো ঐ উপজেলার শুধু মাত্র একটি করে অচল মিলের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখিত, বিষয় ফরিদপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (ডিসিফুড) এর সাথে কথা হলে সকল অনিয়মের বিষয় তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আসলে আমদানি চালের অভিযোগ আমি পেয়েছে, তদন্ত কমিটি করেছি রিপোর্ট পেলেই আমি ব্যবস্থা নিবো এবং যে সকল মিল সচল নয় তারা সরকারি ধান/চালের বরাদ্দ পেল কিভাবে? জানতে চাইলে তিনি বললেন, আমি এটাও জানি না। তবে আমি খোঁজখবর নিয়ে সরেজমিন তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো। তবে সকল অচল মিলই অচল নয়। সচল করা যায় এরকম মিলের নামে হয়তো কিছু আছে।
(চলবে)
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
চৌদ্দগ্রামে ওভারটেক করার সময় দুই মোটর সাইকেল আরোহী নিহত, আহত ১
সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ ব্র্যাক ব্যাংকের ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্কের ২,০০০ কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি
ময়মনসিংহে ঐতিহ্যবাহী জিলা স্কুলের খেলার মাঠ দখল করে ভবন নির্মাণে প্রতিবাদ সভা
শান্তিতে নোবেল পাওয়া জাপানি সংগঠনকে অভিনন্দন ড. ইউনূসের
সবজি বাজারের সিন্ডিকেট এখনো বহাল কিভাবে?
সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবাজদের দ্বারা কোনভাবেই বৈষম্যহীন সমাজ গঠন সম্ভব নয় - ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
যশোরে নারীকে কুপিয়ে হত্যা করল প্রাক্তন স্বামী
স্বৈরাচার হাসিনা হিটলারেরর চেয়ে জঘন্যতম কাজ করছে
পূজামণ্ডপে ইসলামী সংগীত পরিবেশন জঘন্য অপরাধ, কথিত শিল্পীদের শাস্তির দাবি ইসলামী দলের
ফের হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী হলেন নায়াব সাইনিই!
শেখ হাসিনা ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন : মাওলানা মামুনুল হক
৫৮ জন জেলেকে মিয়ানমার থেকে ফেরত আনলো কোস্টগার্ড
আরব সাগরে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা, এক মাস পর উদ্ধার পাইলটের দেহ
গত ১৫ বছর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন করেছে আওয়ামী লীগ - নুরুল আমিন ভূঁইয়া বাদশা
যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘকে আহ্বান জানাবে লেবানন
সুন্নাহর মাঝেই রয়েছে বৈষম্যমুক্ত আদর্শ দেশ গড়ার চাবিকাঠি -মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক
অসাম্প্রদায়িক মনোভাব চাই
পূজা সংক্রান্ত বড় কোন দুর্ঘটনা নেই, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় মামলা ও গ্রেফতার ১৭
‘হালোয়াখোর’দের পরিণতি ভালো হয় না
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দেশ-জাতির প্রত্যাশা