সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে
০৮ মে ২০২৩, ১০:৪৩ পিএম | আপডেট: ০৯ মে ২০২৩, ১২:০৪ এএম
বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় ভোক্তাদের নাভিশ্বাস। এমন কোনো পণ্য নেই, যার দাম বাড়েনি। দাম বাড়ানোর সিন্ডিকেট ধরতে অভিযান চালানোসহ কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। তাই দিনকে দিন ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে তেল, চাল, আটা, চিনি, ডাল, পিঁয়াজসহ সব খাদ্যপণ্যের দাম। পাশাপাশি প্রতিযোগিতা করে বাড়ছে সাবান, টুথপেষ্ট, গুঁড়াদুধসহ অন্যান্য নিত্য পণ্যের দামও। ফলে নিত্যপণ্য কিনে সংসার চালাতে গিয়ে মানুষের হাত পড়েছে সঞ্চয়ের ওপর। সংসার চালাতে মানুষ তার সঞ্চয়ের টাকা ভেঙ্গে ভেঙ্গে খাচ্ছে। ব্যাংক আমানতের সুদহার কম। আবার সময়মতো গ্রাহকের অর্থ ফেরত না দেয়া, অনিয়মের কারনে দেউলিয়া হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মানুষ আস্থা তলানিতে। শেয়ার বাজার বা বন্ড মার্কেট দীর্ঘদিন পর আস্থা ফিরলেও অতীত অভিজ্ঞতাও বেশ নেতিবাচক। দেশে প্রবীণ, কর্মহীন বা দরিদ্র মানুষের জন্য ব্যাপক অর্থে কোন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই। তাই সরকার অল্প আয়ের মানুষদের জন্য নিরাপদ সঞ্চয়ের সুযোগ হিসেবে সঞ্চয়পত্রে বাড়তি সুদে বিনিয়োগের সুযোগ রেখেছিল। যাতে প্রবীণ, অবসরপ্রাপ্ত কর্মহীন বা দরিদ্র মানুষ উপকৃত হন। কিন্তু নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বি হওয়ায় এবং দৈনন্দিন ব্যয় বাড়ায় মূল্যস্ফীতির চাপ সেখানেও পড়েছে। আর তাই সাধারণ মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্র বিক্রিও তলানিতে ঠেকেছে। এমনকি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ উল্টোপথে হাটছে। বিক্রির চেয়ে সুদ-আসল পরিশোধে বেশি টাকা চলে যাচ্ছে। আর সে কারণে উন্নয়ন কর্মকান্ডসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে এই খাত থেকে কোনো ঋণ নিতে পারছে না সরকার। উল্টো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করতে হচ্ছে। আর এতে বেড়ে যাচ্ছে সরকারের ব্যাংকঋণের পরিমাণ। অথচ বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার।
অবশ্য কিছুদিন আগেও সঞ্চয়পত্রের প্রতি আগ্রহ ছিল মানুষের। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারের আস্থার জায়গা ছিল এটি। চাকরি থেকে অবসরের পর পাওয়া অর্থ বা বাড়তি টাকা থাকলে সেগুলো সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতো। কিন্তু দিনি দিনে অবস্থা ভিন্ন। তলানিতে ঠেকেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি।
জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর ২০২২-২৩ এর প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে। বিক্রির পরিমাণ এত তলানিতে, বিক্রির টাকা দিয়ে গ্রাহকদের আগে বিনিয়োগ করা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করাও সম্ভব হয়নি। এমনকি বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তাও হয়নি পূরণ। এরমধ্যে প্রথম ছয় মাসে এ খাত থেকে কোনো ঋণ পায়নি সরকার।
আলোচিত ৯ মাসে ৬২ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। আর সরকার এই খাতের মোট পরিশোধ করেছে ৬৬ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নয় মাসে আরও ৪ হাজার ১৬১ কোটি টাকা সরকারি কোষাগার বা ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এখন সঞ্চয়পত্রে কিছুটা কড়াকড়ি রয়েছে। সুদহার কমিয়েছে সরকার। এসব কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস নেমেছে। গত মার্চ মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকার। তবে সরকারকে মূল ও মুনাফা বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৭ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে পরিশোধ হয়েছে ৬৫২ কোটি টাকার বেশি। গত বছরের একই সময়ে (২০২২ সালের মার্চ) নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।
অন্যদিকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা নির্ভর হয়েছে সরকার। এজন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া বাড়িয়েছে। এরই মধ্যে নেয়া হয়েছে সাড়ে ৫২ হাজার কোটি টাকার ঋণ। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে ভাঙানোর পরিমাণ বেশি হয়েছে। প্রথম মাস জানুয়ারিতে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ছিল ৩৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ঋণাত্মক ৪৪০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ১ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা ঋণাত্মক (নেগেটিভ) ছিল, নভেম্বরে নিট বিক্রি ঋণাত্মক ছিল ৯৮৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা, অক্টোবরে নিট বিক্রি ৯৬৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা, এবং সেপ্টেম্বরে নিট বিক্রি ঋণাত্মক ছিল ৭০ কোটি ৬৩ হাজার টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগের পরিমাণ কিছুটা ইতিবাচক ছিল। এরমধ্যে গত আগস্ট মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল আট কোটি টাকা। আর জুলাইয়ে ৩৯৩ কোটি টাকা ছিল।
গত অর্থবছরেও এ খাত থেকে কম ঋণ পেয়েছিল সরকার। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নিট ঋণ আসে ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। অথচ করোনাকালেও ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ হয়েছিল প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এদিকে সঞ্চয়পত্রের পরিবর্তে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া বাড়িয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরে ব্যাংক থেকে মোট ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ না পাওয়ায়, ব্যাংক থেকে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার বেশি ঋণ নেয়া লাগতে পারে। ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট থাকায় অভ্যন্তরীণ ঋণের পুরোটাই এখন যোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৫০ হাজার ৩৮০ কোটি টাকার বেশি, আর বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। আলোচিত সময়ে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরেও ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বড় অঙ্কের ঋণ ছিল। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণ নেয়ার পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
চৌদ্দগ্রামে ওভারটেক করার সময় দুই মোটর সাইকেল আরোহী নিহত, আহত ১
সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ ব্র্যাক ব্যাংকের ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্কের ২,০০০ কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি
ময়মনসিংহে ঐতিহ্যবাহী জিলা স্কুলের খেলার মাঠ দখল করে ভবন নির্মাণে প্রতিবাদ সভা
শান্তিতে নোবেল পাওয়া জাপানি সংগঠনকে অভিনন্দন ড. ইউনূসের
সবজি বাজারের সিন্ডিকেট এখনো বহাল কিভাবে?
সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবাজদের দ্বারা কোনভাবেই বৈষম্যহীন সমাজ গঠন সম্ভব নয় - ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
যশোরে নারীকে কুপিয়ে হত্যা করল প্রাক্তন স্বামী
স্বৈরাচার হাসিনা হিটলারেরর চেয়ে জঘন্যতম কাজ করছে
পূজামণ্ডপে ইসলামী সংগীত পরিবেশন জঘন্য অপরাধ, কথিত শিল্পীদের শাস্তির দাবি ইসলামী দলের
ফের হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী হলেন নায়াব সাইনিই!
শেখ হাসিনা ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন : মাওলানা মামুনুল হক
৫৮ জন জেলেকে মিয়ানমার থেকে ফেরত আনলো কোস্টগার্ড
আরব সাগরে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা, এক মাস পর উদ্ধার পাইলটের দেহ
গত ১৫ বছর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন করেছে আওয়ামী লীগ - নুরুল আমিন ভূঁইয়া বাদশা
যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘকে আহ্বান জানাবে লেবানন
সুন্নাহর মাঝেই রয়েছে বৈষম্যমুক্ত আদর্শ দেশ গড়ার চাবিকাঠি -মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক
অসাম্প্রদায়িক মনোভাব চাই
পূজা সংক্রান্ত বড় কোন দুর্ঘটনা নেই, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় মামলা ও গ্রেফতার ১৭
‘হালোয়াখোর’দের পরিণতি ভালো হয় না
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দেশ-জাতির প্রত্যাশা