ঢাকা   সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮ আশ্বিন ১৪৩১
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল

নির্দলীয় সরকারের দাবির ফয়সালা হবে রাজপথে

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৯ মে ২০২৩, ১০:৪৫ পিএম | আপডেট: ১০ মে ২০২৩, ১২:০৪ এএম

ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকারের অধীনের কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য হতে পারে না এবং জনগণ স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই সংসদ ভেঙে দিয়ে এই অবৈধ সরকার পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি আজ গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। তাই জনগণের মনোভাব বুঝে বিএনপির ঘোষিত ১০ দফা মেনে সরকারকে পদত্যাগের আহ্ববান জানাচ্ছি। অন্যথায় রাজপথে এই দাবির ফয়সালা হবে। গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সারাদেশে মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনী মাঠ শূণ্য করতে সরকার আবারো পুরনো খেলা শুরু করেছে। তিনি বলেন, এই সরকার নির্বাচিত নয়, তাদের কোনো জনগণের ম্যান্ডেট নেই, তারা আবারো ২৩ সালের ডিসেম্বর অথবা ২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেই নির্বাচন নিয়ে আগের খেলাতে মেতে উঠেছে। তারা যেভাবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে সম্পূর্ণভাবে তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফলাফলটাকে তাদের পক্ষে নিয়েছিলো ঠিকই কায়দায় আজকে এখন থেকে বিরোধী দলকে সম্পূর্ণভাবে মাঠ থেকে সরে যাওয়ার জন্য তারা নির্বাচনে যেটা আমরা বলি ‘রিগিং প্রসেস’ সেটা তারা শুরু করে দিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার সময় থেকে তারা শুরু করেছিলো। এবার তারা অনেক আগে থেকে শুরু করেছে যে, মামলা-মোকাদ্দমা, সন্ত্রাস-ত্রাস, বিভিন্ন আইনের মধ্য দিয়ে মিথ্যা মামলা ও গায়েবী মামলা করে আবারো নেতাকর্মীদেরকে মাঠ থেকে পুরোপুরিভাবে সরিয়ে দেয়ার কাজটি শুরু করেছে। তাদের (সরকার) নীলকশার লক্ষ্য হচ্ছে একটা নীলনকশার নির্বাচন করা। বিরোধী দলকে পুরো মাঠ থেকে বের করে দেয়া এবং এরপর সেই নীলনকশার নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় আসা-এটাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য। এবার একেবারেই সেটা পারবে না জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জনগণ ইতোমধ্যে রাস্তায় নেমেছে, আন্দোলন শুরু করেছে। এই আন্দোলনে ইতোমধ্যে আমাদের ১৭ জন মানুষ রাজপথে প্রাণ হারিয়েছে, অসংখ্য নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। তারপরও আন্দোলন চলমান আছে, আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলন আরো বেগবান হবে, তীব্র হবে। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকার বাধ্য হবে জনগণের দাবি মেনে নিতে।
খুব শিগগিরই নতুন কর্মসূচি:
খুব শিগগিরই সরকার পতন আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আন্দোলন একটা ওয়েভের মতো। এটা কখনো উঠে, কখনো নামে। সেটা জনগণের সব পরিপ্রেক্ষিত বুঝে নিয়ে আন্দোলনটা করতে হয়। যেমন রোজার মাসে তো স্বাভাবিকভাবে তো যারা রোজা রাখেন, সেটা খেয়াল রাখতে হয়। তখনো আমরা ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি, পদযাত্রা, সমাবেশ করেছি। এখন আমরা যারা আন্দোলনের অংশীদার, শরিক দলগুলো আছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত আলোচনার পর্যায় এসছি। খুব শিগগিরই নতুন করে কর্মসূচি জানতে পারবেন।
বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, শুধুমাত্র বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে তাই না। তারা যে সমস্ত মিথ্যা মামলা অতীতে দিয়েছিলো সেই মিথ্যা মামলাগুলোর চূড়ান্তভাবে রায় দেয়ার জন্যে আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটা তালিকা প্রস্তুত করে দ্রুততার সাথে এগিয়ে নিচ্ছে। গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে তারা (সরকার) এখন ব্যবহার করতে শুরু করেছে ইনক্লুডিং জুডিশিয়ারি এন্ড এডমিনিস্ট্রেশন। কিভাবে বিরোধী দলের সিনিয়ন নেতৃবৃন্দ, নেতৃবৃন্দ এবং যারা এই চলমান আন্দোলনে নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করছেন তাদেরকে কিভাবে মাঠ থেকে সরিয়ে দেয়া যায় সেজন্য তারা কাজ করছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচনকালীন সরকারের বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানানোর ইঙ্গিতের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা (সাংবাদিকরা) কি বিশ্বাস করেন? ২০১৮ সালে শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে আমরা তার সাথে সংলাপে বসেছিলাম। সেই সংলাপে যে সমস্ত কথা তিনি দিয়েছিলেন সেগুলোর একটাও তারা রক্ষা করেননি। সুতরাং ওবায়দুল কাদের সাহেবের কথায় আস্থা রাখা, বিশ্বাস করা-এটার প্রশ্নই উঠতে পারে না। এগুলোকে আমি মনে করি, এটা আরেকটি চক্রান্ত জনগণকে বিভ্রান্ত করবার। তারা বলবে যে এই তো আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, ওরা শুনছে না, যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমাদের কথা খুব পরিস্কার- আমরা বিএনপিকে ক্ষমতায় নেয়া বা বিরোধী দলকে ক্ষমতায় নেয়া এজন্য আমরা আন্দোলন করছি না। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, মানুষ যেন ভোট দিতে পারে সেজন্য আমাদের আন্দোলন। গত দুইটি নির্বাচনে মানুষ ভোটই দিতে পারেনি এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও তারা ভোট দিতে পারেনা। কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামে একটা উপনির্বাচন হয়েছে নির্বাচন কমিশন বলছে যে, মাত্র ১৪% মানুষ ভোট দিয়েছে। তাহলে নির্বাচন প্রক্রিয়াটাকে কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে? যেখানে ভোটে মানুষ উৎসব করতো সেই জায়গায় ১৪ ভাগ লোক ভোট দিতে যায়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আমরা না করলেও আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার, নির্যাতন, বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে তারা। গাজীপুরে একট ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। একতরফা বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার, নির্যাতন করছে। সিলেটে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গণহারে গ্রেফতার ও বাসায় বাসায় তল্লাশি করছে। এই বিষয়টি সিলেটের নেতৃবৃন্দ সেখানকার পুলিশ কমিশনারকে অবহিত করেছে।
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইসের সাথে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা কাউকে কোনো নালিশ করি না, কাউকে কিছু বলতে যাই না, এটা মনে রাখতে হবে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এখানে বিদেশী যেসমস্ত মিশন আছে অথবা যারা কাজ করছেন তাদের সঙ্গে রুটিন আলোচনা হয়, সেই আলোচনা হয়েছে।###


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

খাগড়াছড়িতে অবরোধের তৃতীয় দিন, বাজারে পাহাড়ি-বাঙালি উপস্থিতি স্বাভাবিক

খাগড়াছড়িতে অবরোধের তৃতীয় দিন, বাজারে পাহাড়ি-বাঙালি উপস্থিতি স্বাভাবিক

শৈলকুপায় নিখোঁজের ৩ দিন মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার

শৈলকুপায় নিখোঁজের ৩ দিন মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার

অমিত শাহ’র বক্তব্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করে না : জামায়াত

অমিত শাহ’র বক্তব্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করে না : জামায়াত

এবার পাকিস্তানে ১২ দেশের কূটনীতিকদের গাড়িবহরে হামলা

এবার পাকিস্তানে ১২ দেশের কূটনীতিকদের গাড়িবহরে হামলা

নতুন থিয়ানছি স্যাটেলাইটগুচ্ছ উৎক্ষেপণ করেছে চীন

নতুন থিয়ানছি স্যাটেলাইটগুচ্ছ উৎক্ষেপণ করেছে চীন

বাংলাদেশের জন্য এবারের জাতিসংঘ সম্মেলন যেসব কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ

বাংলাদেশের জন্য এবারের জাতিসংঘ সম্মেলন যেসব কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ

‘প্রতি বছরই সম্পদের হিসাব দিতে হবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের’

‘প্রতি বছরই সম্পদের হিসাব দিতে হবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের’

গোয়ালন্দে চরমপন্থি দলের সদস্যকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা

গোয়ালন্দে চরমপন্থি দলের সদস্যকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা

দিসানায়েক : দিনমজুরের ছেলে থেকে শ্রলীঙ্কার প্রেসিডেন্ট

দিসানায়েক : দিনমজুরের ছেলে থেকে শ্রলীঙ্কার প্রেসিডেন্ট

ভারতে মহাসংকটে ভোডাফোন-আইডিয়ার ভবিষ্যৎ

ভারতে মহাসংকটে ভোডাফোন-আইডিয়ার ভবিষ্যৎ

পর্তুগালে অপপ্রচারের প্রতিবাদে বেজা বিএনপির সভা

পর্তুগালে অপপ্রচারের প্রতিবাদে বেজা বিএনপির সভা

‘মুরুব্বি মুরুব্বি উঁহু’ বলায় গরম পানিতে ঝলসে দেওয়া হলো কিশোরীকে

‘মুরুব্বি মুরুব্বি উঁহু’ বলায় গরম পানিতে ঝলসে দেওয়া হলো কিশোরীকে

বিএনপির সমাবেশে হামলা-ভাঙচুরের দুই বছর পর আ.লীগের ১০৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

বিএনপির সমাবেশে হামলা-ভাঙচুরের দুই বছর পর আ.লীগের ১০৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ছিলেন তার ভাবি শরীফা আক্তার

তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ছিলেন তার ভাবি শরীফা আক্তার

চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি কমেছে জার্মানিতে

চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি কমেছে জার্মানিতে

ইসরাইলি বর্বরতা থামছে না, গাজায় আরও ৪০ জনকে হত্যা

ইসরাইলি বর্বরতা থামছে না, গাজায় আরও ৪০ জনকে হত্যা

নতুন মামলায় সাবেক আইজিপি মামুন দুটি এবং আনিসুল একটিতে গ্রেপ্তার

নতুন মামলায় সাবেক আইজিপি মামুন দুটি এবং আনিসুল একটিতে গ্রেপ্তার

কমলার সঙ্গে আর বিতর্ক করবেন না ট্রাম্প

কমলার সঙ্গে আর বিতর্ক করবেন না ট্রাম্প

নার্সিং কাউন্সিলের নতুন রেজিস্ট্রার হালিমা আক্তার

নার্সিং কাউন্সিলের নতুন রেজিস্ট্রার হালিমা আক্তার

নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা

নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা