বারো মাসি অনিয়ম দেখার কেউ নাই
০৯ মে ২০২৩, ১০:৪৬ পিএম | আপডেট: ১০ মে ২০২৩, ১২:০৪ এএম
ফরিদপুর জেলা খাদ্য বিভাগের অনিয়ম তদন্তে আবারো শুরু হয়েছে মহা অনিয়ম। প্রবাদ বাক্যে আছে ‘যেমন লাউ তেমনি কদু’। ফরিদপুরেরর সর্বজন স্বীকৃত খাদ্যবিভাগের ১২ মাসি অনিয়ম দেখার কেউ নাই। এই বিভাগটি চলছে ‘যেমন খুশী তেমন সাজোর মতো’ দীর্ঘদিন যাবৎ চলছে সরকারের আমদানিকৃত চাল নিয়ে চলছে হরেক রকম খেলা।
প্রথম দফায় জেলার ৭টি এলএসডির বিপরীতে ৫৮১০ মেট্রিক টন এবং ২য় দফায় আসছে ২৫৪৮ মেট্রিক টন চাল মোট স্টক ৭৭২৮ মেট্রিক টন চাল। এর কম বেশিও হতে পারে। অভিযোগ আছে সরকারের এই পরিমাণ চাল ২ বার চলাচল সূচির মাধ্যমে ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয়। যাহা খুলনার ৪ নং ৭ নং ঘাট থেকে ট্রাক যোগে ফরিদপুর জেলার স্ব স্ব উপজেলার এলএসডিতে এসে সংরক্ষণ হয়। এর মধ্যে হাজার টন চাল অথবা তারও বেশি পরিমাণ চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ আছে।
এই বিষয় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সাথে কথা বললে তিনি ইনকিলাবকে জানান, আমরা এ ব্যাপারে তদন্ত টিম গঠন করে দিয়েছি।
এলাকাবাসী বলছেন, যারা গুদাম তদন্ত করতে আসছেন এরা তো গুদামেরই লোক তারা নগদ টাকা পেলে সবাই ম্যানেজ হয়ে যায়। আমরা চাই বিচাবিভাগীয় তদন্ত। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অথবা জুডিশিয়াল তদন্ত করা হলে সরকারের আমদানি করা কি পরিমাণ চাল খোয়া গেছে তা অবশ্যই প্রমাণ মিলবে। কেউ কেউ বলছেন ‘তদন্ত তো নয় যেন শিয়ালের কাছে মুরগি বর্গা’। অপরদিকে, সম্প্রতি ফরিদপুরের যে ৭টি মিলের নামে বোরো চাল ২০২৩ এর জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেখানে পাওয়া গেছে বিশাল শুভঙ্করী ভয়াবহ ফাঁকি।
জানা গেছে, ৭ উপজেলার এলএসডির আওতাধীন উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (টিসিএফ) এবং উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট টিআই (ট্যাকনিক্যাল ইন্সপেক্টর) মিলে যেসব অচল মিলের ফিটনেস ও বিদ্যুতের ক্যাপাসিটিসহ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের বরাবরে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্যতাসহম ভাল মানের সুপারিশসহ ভুয়া রিপোর্ট পেশ করে মিল মালিকদের ভাগ্য খুলিয়েছেন তা সবই কাগজ কলমের খেলা। আসল সত্য হলো বরাদ্দ পাওয়া মিলের পক্ষে করা সব রিপোর্টই ভুল প্রমাণিত হলো। অর্থব্যবস্থা হলো সরেজমিন ও বাস্তবতার সাথে কোনো মিল নাই। সবই নগদ টাকায় করা কাগজ কলমের খেলা।
জানা যায়, মাত্র ১৩-১৫ বা ২৫ দিনের মধ্যে যেসব মিল অনুকূলে বরাদ্দ দিয়ে ধান থেকে চাল উৎপাদন করে স্ব স্ব এলাকার খাদ্যগুদামে পৌঁছে দিবেন তার মধ্যে কারো মিলই নাই আবার যা কিছু আছে তাহা একেবারেই অচল।
এর মধ্যে উপজেলার নাম ঠিকানা ও অচল মিলের নামসহ বরাদ্দের পরিমাণ উল্লেখ্য করা হলো।
চরভদ্রাসন : এখানে মোট মিল তিনটি রিম্মি রাইচ মিল (হাজীগঞ্জ), ইউসুফ রাইচ মিল (কানাইরটেক), বদরউদ্দীন রাইস মিল, (মৌলবিবাজার, এখানে তিনটি মিলই অচল। অথচ তিন মিলের নামে বরাদ্দ পেয়েছে ১০৩ মেট্রিক টন। সদরপুর উপজেলা ‘এখানে আর এম রাইস মিল’ (কৃষ্টপুর বাজার) যাহার মালিক বাদল চন্দ সাহা, যে মিলে ১২ মাস দনিয়া মরিচ ভাঙ্গানো ছাড়া কোনো কাজ নেই। এই মিলটিকেও ধান থেকে চাল উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ি সচল এবং ক্যাপাসিটিসহ রিপোর্ট দিলেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও টিআই। এ মিলের বিপরীতে বরাদ্দ প্রায় ১২০ মেট্রিক টন। নগরকান্দা উপজেলা এখানে মেসার্স জামান ও মেসার্স হিমেল নামে দুটি মিল দেখানো হয় মিল দুটির মালিক স্বামী এবং স্ত্রী। মিল দুটি ও তাদের নয়। নিজেদের জমিও নয়। দুটি মিলই ভাড়া করা মিল। সরকারের চুক্তিমতে বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা উল্লেখ্য আছে কোনো ভাড়া নেয়া মিল দিয়ে ভাড়াটিয়া মিল মালিক বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্যতা হারিয়ে সরকারের চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অপরাধের সামিল। অথচ এই মিল দুটি ভাড়া মিলের বিপরীতে বরাদ্দ পেয়েছেন ১৪৩ মেট্রিক টন বোরো চাল।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা : এখানে শতকরা ২০% মিল চালু আছে। এখানে মিল মালিক ও মীলের অনুকূলে ২৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ঐ মিলের ক্যাপাসিটি অনুসারে প্রতিদিন ১০ মেট্রিক টন ধান থেকে চাল উৎপাদনের ক্ষমতাও নাই। প্রশ্ন ২৫০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন করবে কে? অভিযোগ আছে সবই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং টিআইর দয়ার খেলা।
বোয়ালমারী উপজেলা : বিকাশ এগ্রো ফুট মালিকের নাম বিজয় কুমার সাহা এখানে তিনটি মিল দেখানো হয়েছে। বোয়ালমারী তিন মিলের ২টি চালু। ২টি মিলের অনুকূলে বরাদ্দ পান ৩৯৯৭ মেট্রিক টন মাত্র ১৩-২৫ দিনেও জ্বীন ছাড়া উৎপাদন করা সম্ভব? যে পরিমাণ বিদ্যু ক্যাপাসিটি বাড়ানো আছে তার ২৫% ক্যাপাসিটিও নাই।
মধুখালী উপজেলা : মধুখালী তিনটি অচল মিলের অনুকূলে বরাদ্দ পেয়েছেন ১৯৭ মেট্রিক টন চাল। যেখানে তিনটি মিল বন্ধ সেখানে এক ছটাক ধান থেকে চাল উৎপাদনের সক্ষমতা আছে কিনা? এলাকাবাসীর এই প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট এলাকার উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে। সবার দাবি, সরেজমিন বিচারবিভাগীয় তদন্ত করলে সব প্রমাণ মিলবে।
ফরিদপুর সদর উপজেলা : সদর উপজেলার সব চেয়ে নামকরা ও প্রভাবশালী এবং ডিসিফুড অফিসের প্রিয় মিলের নাম ‘বর্ষা অটো রাইস মিল’ এই মিলের বিপরীতে ধান থেকে চাল উৎপাদনের সক্ষমতা ক্যাপাসিটি যাহা কাগজে কলমে আছে সঠিক নয়। কিন্ত মিলটিই দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ। অথচ এই অক্ষম এবং বন্ধ মিলের অনুকূলে ধান থেকে চাল উৎপাদনের জন বরাদ্দ পেয়েছেন মাত্র ৩২২৬ মেট্রিক টন।
উল্লেখিত, সকল মিলের বিদ্যুৎ ক্যাপাসিটি বাড়িয়ে বন্ধ মিল সচল দেখিয়ে সমস্ত কারিসমা করে নগদ টাকা পেয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকে বোকা বানিয়েছেন ৭ উপজেলা দায়িত্বে থাকা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং টিআই সাহেব।
উল্লেখিত, সকল বিষয়ে ফরিদপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. ফরহাদ খন্দকার ইনকিলাবকে বলেন, আমি সকল অনিয়মের বিষয় তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে অনিয়ম ধরা পড়লে তিনি অবশ্যই ব্যবস্থা নিবেন। কিন্ত এখানেও অনিয়ম। মোট কথা অনিয়ম তদন্তে আবারো একটি বড় অনিয়ম প্রকাশ্যে চলে আসল। বিষয়টি এরকম, যে সকল কর্মকর্তাগণ পূর্বে নগদ অর্থ পেয়ে অচল মিলকে সচল করে ক্যাপাসিট বাড়িয়ে অনিয়ম করছেন তারাই এলসির চাল বিক্রিসহ সকল অনিয়মের তদন্তের ভার পেলেন। জেলার সচেতন মহল বলছেন ‘অনিয়মের তদন্তে আবারো অনিয়ম!
উল্লেখিত বিষয় জেলার একাধিক মিল মালিক ও ডিলারা বলছেন, জেলার সরকারি সম্পদ রক্ষায় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কোনো মনযোগ নাই। তিনি সব ক্ষেত্রে শিথিল অবস্থানে থাকায় এই অবস্থা চলছে। জেলাবাসী সরকারি সম্পদের হিসেবসহ সকল অনিয়ম প্রকাশে আনতে বিচারবিভাগী তদন্ত দাবি করছেন।
পাশাপাশি জেলার চাল কল মালিক ও ব্যবসায়ীরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ তার হাত ধরে সকল অনিয়ম করা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিভাগীয় ব্যবস্থার আওতায় আনাসহ সকল ভুয়া মিলের বরাদ্দ বাতিলপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অনুবিভাগ) মুজিবুর রহমান এবং মহাপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন মহোদয়ের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন ফরিদপুরবাসী।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
খাগড়াছড়িতে অবরোধের তৃতীয় দিন, বাজারে পাহাড়ি-বাঙালি উপস্থিতি স্বাভাবিক
শৈলকুপায় নিখোঁজের ৩ দিন মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার
অমিত শাহ’র বক্তব্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করে না : জামায়াত
এবার পাকিস্তানে ১২ দেশের কূটনীতিকদের গাড়িবহরে হামলা
নতুন থিয়ানছি স্যাটেলাইটগুচ্ছ উৎক্ষেপণ করেছে চীন
বাংলাদেশের জন্য এবারের জাতিসংঘ সম্মেলন যেসব কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ
‘প্রতি বছরই সম্পদের হিসাব দিতে হবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের’
গোয়ালন্দে চরমপন্থি দলের সদস্যকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা
দিসানায়েক : দিনমজুরের ছেলে থেকে শ্রলীঙ্কার প্রেসিডেন্ট
ভারতে মহাসংকটে ভোডাফোন-আইডিয়ার ভবিষ্যৎ
পর্তুগালে অপপ্রচারের প্রতিবাদে বেজা বিএনপির সভা
‘মুরুব্বি মুরুব্বি উঁহু’ বলায় গরম পানিতে ঝলসে দেওয়া হলো কিশোরীকে
বিএনপির সমাবেশে হামলা-ভাঙচুরের দুই বছর পর আ.লীগের ১০৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ছিলেন তার ভাবি শরীফা আক্তার
চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি কমেছে জার্মানিতে
ইসরাইলি বর্বরতা থামছে না, গাজায় আরও ৪০ জনকে হত্যা
নতুন মামলায় সাবেক আইজিপি মামুন দুটি এবং আনিসুল একটিতে গ্রেপ্তার
কমলার সঙ্গে আর বিতর্ক করবেন না ট্রাম্প
নার্সিং কাউন্সিলের নতুন রেজিস্ট্রার হালিমা আক্তার
নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা