বাণিজ্যে ইউয়ানের দিকে ঝুঁকছে বিশ্বের দেশগুলো
০৯ মে ২০২৩, ১১:৪২ পিএম | আপডেট: ১০ মে ২০২৩, ১২:০৪ এএম
মার্কিন ডলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বের বাণিজ্যে একচেটিয়া রাজত্ব করে এসেছে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন জোটের নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্বজুড়ে দেশগুলি এখন বাণিজ্যের জন্য বিকল্প মুদ্রা ব্যবস্থার দিকে মনযোগ দিতে শুরু করেছে। অনেক বিশ্ব নেতা এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব ওয়াশিংটনের ক্ষমতার বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা শোনাচ্ছেন। এমনকি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁও মার্কিন ডলারের বিরুদ্ধে সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন। পলিটিকোকে এপ্রিলের একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‹ইউরোপকে ডলারের উপর নির্ভরতা কমাতে হবে। আমাদের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের অর্থায়ন করার জন্য ইউরোপের কাছে সময় বা সংস্থান থাকবে না এবং আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তপ্ত সংঘাতে ভুক্তভোগী হয়ে উঠব। ’
১২ এপ্রিল মার্কিন ধনকুবের বিনিয়োগকারী রে ডালিও সতর্ক করে বলেন, ‹রাশিয়ার ডলারের মুদ্রার মজুদকে সংকুচিত করা দেওয়া নিষেধাজ্ঞাগুলি এমন অনুভূত ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে যে, ঋণ সম্পদগুলি রাশিয়ার জন্যযেভাবে হিমায়িত করা হয়েছে, বাকিদের জন্যও সেভাবে হিমায়িত করা হতে পারে।› চীন সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে এবং ডলারের আধিপত্যের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হিসেবে ইউয়ানকে শুক্তিশালী করছে। মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন এপ্রিল মাসে সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে স্বীকার করেন, ‘যখন আমরা ডলারের ভূমিকার সাথে যুক্ত আর্থিক নিষেধাজ্ঞাগুলি ব্যবহার করি, তখন একটি ঝুঁকি থাকে যে, সময়ের সাথে সাথে এটি ডলারের আধিপত্যকে ক্ষুন্ন করতে পারে। এটি একটি খুব কার্যকরী হাতিয়ার। অবশ্যই এটি চীন, রাশিয়া, ইরানের পক্ষ থেকে বিকল্প খোঁজার আকাক্সক্ষা তৈরি করে।’
ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্সের ২৬ এপ্রিলের একটি গবেষণা রিপোর্ট অনুসারে, চীনা ইউয়ানের ব্যবহার মার্চ মাসে প্রথমবারের মতো চীনের আন্ত:সীমান্ত লেনদেনে ডলারের ব্যবহারকে ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে রাশিয়া, ব্রাজিল, বাংলাদেশ, আর্জেন্টিনা ও ইরান এই ৫টি দেশ পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করতে অথবা ডলারের বিকল্প হিসেবে বাণিজ্য ও অন্যান্য লেনদেনের জন্য সম্প্রতি ব্যাপকভাবে ইউয়ানের দিকে ঝুঁকেছে। মার্কিন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার ৬৪হাজার কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের অন্তত অর্ধেক হিমায়িত হয়ে গেছে। কিছু রাশিয়ান ব্যাঙ্ক সুইফ্ট থেকে নিষিদ্ধ হয়েছে, যা সারা বিশ্বের ব্যাঙ্কগুলির লেনদেন সংক্রান্ত বেলজিয়াম-ভিত্তিক ডলার-প্রধান পরিষেবা। রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে বর্তমানে রুবেল-ইউয়ান বাণিজ্য মোট আয়ের ৩৯শতাংশ, যা রুবেল-ডলারের ৩৪শতাংশকে ছাড়িয়ে গেছে।
ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ২০২২ সালের শেষে ইউরোকে ছাড়িয়ে ইউয়ানকে তার বৈদেশিক মজুদের দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রভাবশালী মুদ্রায় পরিণত করেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ব্রিক্স দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে ডলার থেকে দূরে সরে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ব্রিক্স দেশগুলোকে লেনদেনের জন্য একটি অভিন্ন মুদ্রা স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস অনুসারে, এপ্রিলে চীনে রাষ্ট্রীয় সফরে লুলা প্রশ্ন করেছিলেন, ‹কেন আমরা আমাদের নিজস্ব মুদ্রার ভিত্তিতে বাণিজ্য করতে পারি না? স্বর্ণের মাণে লেনদেন বিলুপ্ত হওয়ার পর ডলারকে একক মুদ্রা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কে?
বাংলাদেশ চীনের ইউয়ান ব্যবহার করে পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য এপ্রিলে রাশিয়াকে ৩১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লেনদেনের জন্য ইউয়ানে মীমাংসা করার আগে দুই দেশ এক বছর ধরে অচলাবস্থার মধ্যে ছিল কারণ বাংলাদেশ রাশিয়াকে ডলারে অর্থ পরিশোধ করতে পারছিল না। বাংলাদেশে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলেছেন যে, দেশকে জাতীয় স্বার্থের পক্ষে কাজ করতে হয়েছে এবং এর জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য একটি বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
এদিকে, ২৬ এপ্রিল আর্জেন্টিনা ঘোষণা করেছে যে, এটি চীন থেকে আমদানিগুলির জন্য মার্কিন ডলারের পরিবর্তে ইউয়ানে অর্থ প্রদান শুরু করবে। আর্জেন্টিনার অর্থনীতি মন্ত্রী সের্গিও মাসা টুইট করেছেন, ‘এই ধরণের পদক্ষেপগুলি আমাদের মজুদকে আরও শক্তি দেয় এবং সম্পূর্ন মজুদের উন্নতির চাবিকাঠি, যা আমাদেরকে আরও বেশি স্বাধীনতা এবং ক্ষমতা দেয়, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যারা অতিরিক্ত জল্পনা-কল্পনা এবং অনুমান করে, তাদের মুখে লাগাম টানার ক্ষমতা দেয়।›
ব্যাপক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা কবলিত ইরানের কাছ থেকে চীন ইউয়ান ব্যবহার করে অপরিশোধিত তেল কিনতে শুরু করেছে। রাশিয়ার মতো ইরানী ব্যাঙ্কগুলির ওপরেও ২০১৮ সাল থেকে সুইফটের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, যা তেহরানকে একটি বিকল্প অর্থপ্রদানের ব্যবস্থা খুঁজতে উৎসাহিত করেছে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তেহরান এবং বেইজিং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের জন্য ইউয়ান এবং ইরানি রিয়ালের ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করে। ইরানের অর্থনীতি মন্ত্রী এহসান খানদুজ বলেছেন, ‘ইউয়ান ইতিমধ্যে দুই পক্ষের মধ্যেববাণিজ্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের জন্য দায়ী।› ইরান রাশিয়ার লেনদেনে ব্যবস্থার সাথেও যুক্ত হয়েছে। ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, ‘ইরান ও বিশ্বের মধ্যে আর্থিক পথ পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে।› সূত্র: বিজনেস ইন্সাইডার।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
খাগড়াছড়িতে অবরোধের তৃতীয় দিন, বাজারে পাহাড়ি-বাঙালি উপস্থিতি স্বাভাবিক
শৈলকুপায় নিখোঁজের ৩ দিন মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার
অমিত শাহ’র বক্তব্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করে না : জামায়াত
এবার পাকিস্তানে ১২ দেশের কূটনীতিকদের গাড়িবহরে হামলা
নতুন থিয়ানছি স্যাটেলাইটগুচ্ছ উৎক্ষেপণ করেছে চীন
বাংলাদেশের জন্য এবারের জাতিসংঘ সম্মেলন যেসব কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ
‘প্রতি বছরই সম্পদের হিসাব দিতে হবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের’
গোয়ালন্দে চরমপন্থি দলের সদস্যকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা
দিসানায়েক : দিনমজুরের ছেলে থেকে শ্রলীঙ্কার প্রেসিডেন্ট
ভারতে মহাসংকটে ভোডাফোন-আইডিয়ার ভবিষ্যৎ
পর্তুগালে অপপ্রচারের প্রতিবাদে বেজা বিএনপির সভা
‘মুরুব্বি মুরুব্বি উঁহু’ বলায় গরম পানিতে ঝলসে দেওয়া হলো কিশোরীকে
বিএনপির সমাবেশে হামলা-ভাঙচুরের দুই বছর পর আ.লীগের ১০৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ছিলেন তার ভাবি শরীফা আক্তার
চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি কমেছে জার্মানিতে
ইসরাইলি বর্বরতা থামছে না, গাজায় আরও ৪০ জনকে হত্যা
নতুন মামলায় সাবেক আইজিপি মামুন দুটি এবং আনিসুল একটিতে গ্রেপ্তার
কমলার সঙ্গে আর বিতর্ক করবেন না ট্রাম্প
নার্সিং কাউন্সিলের নতুন রেজিস্ট্রার হালিমা আক্তার
নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা