অরক্ষিত বেড়িবাঁধ উপকূলে আতঙ্ক
১১ মে ২০২৩, ১১:১২ পিএম | আপডেট: ১১ মে ২০২৩, ১১:১২ পিএম
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। বিজ্ঞানের বদৌলতে আসন্ন ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আছড়ে পড়ার প্রায় দুই সপ্তাহ আগ থেকে আবহাওয়াবিদরা সতর্ক বার্তা প্রচার করছেন। বঙ্গোপসাগরে ঘূণিঝড়ের গতিবিধি নিয়ে প্রতিদিন কয়েক দফায় বার্তা প্রচার করা হচ্ছে। উপকূলবাসীকে নিরাপত্তা দেয়ার লক্ষ্যে সরকার নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু উপকূলবাসীর আতঙ্ক কমছে না। কারণ সাগরে ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উপকূলে বেড়িবাঁধ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই বেড়িবাঁধ অরক্ষিত হওয়ায় উপকূলের লাখ লাখ মানুষ আতঙ্কের মধ্যে পড়ে গেছেন।
সিডর, আইলা, মহসিন, বুলবুল, আম্পান ও ইয়াসের মতো ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস প্রতিনিয়ত আঘাত হানে উপকূলীয় খুলনা জেলার উপকূলীয় কয়রা উপজেলায়। ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছ্বাসের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয় উপকূলের মানুষদের। প্রতি বছর যখনই ঝড়-বন্যায় নদীর পানি বৃদ্ধি পায় তখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলের মানুষ। ভেসে যায় মৎস্য ঘের, ফসলি জমিসহ ঘরবাড়ি। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের যে গতিপথ রয়েছে, তা পরিবর্তন না হলে আপাতত ঘূর্ণিঝড় উপকূল এলাকায় আঘাত হানার আশঙ্কা নেই। তবে ঝড়ের প্রভাবে হালকা বাতাস ও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আগামী ১৩ মে আঘাত হানতে পারে এবং থেকে থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোখার ধেয়ে আসার খবরে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলজুড়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। দুর্বল বেড়িবাঁধ উদ্বেগকে ভয়াবহ করে তুলেছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় কন্ট্রোল রুম খুলেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বৈঠক করে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০১৩১৮-২৩৪৫৬০ এবং গ্রিন রোডে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুমের মোবাইল নম্বর ০১৭৭৫-৪৮০০৭৫। এসব নম্বরে ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও সেবা পাওয়া যাবে।
ঘূর্ণিঝড় মোখার ধেয়ে আসার খবরে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলজুড়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। দুর্বল বেড়িবাঁধ উদ্বেগকে আরো ভয়াবহ করে তুলেছে। খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার উত্তর মহেশ্বরীপুর, গাতিরঘেরি ও কাটকাটা এলাকায় বাঁধ ধসে যাওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে মানুষ। চলতি বছর বর্ষার আগেই কয়রার শাকবাড়িয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের প্রায় ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন জায়গায় ধস দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছেন পাঁচ ইউনিয়নের বাসিন্দারা। সাতক্ষীরার ঝাপালী বাজার থেকে ঘোলা খেয়াঘাট অভিমুখে বেড়িবাঁধের তিনটি স্থানের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। বিড়ালক্ষীতে দু’টি ও বড়কুপটের একটি জায়গা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সেই বাঁধ আবার নির্মাণ হয়। অনেক সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে দায়সারাভাবে কাজ করে। তবে দুর্বল বেড়িবাঁধ কখনোই টেকসই বেড়িবাঁধ হয়ে ওঠে না। বাঁধের তদারকি না করায় আবারও ভেঙে প্লাবিত হয়। এমনই অভিযোগ উপকূলবাসীর।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসের পাশাপাশি সাগরপাড়ের মানুষের কাছে জোয়ার-ভাটা নিত্য ঘটনা। কোটি মানুষ বসবাস করেন অথচ সাগরপাড়ে সুরক্ষা নেই। পরিবেশের বিপর্যয়ের কারণে দীর্ঘস্থায়ী জোয়ার এবার নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার, ভোলায় মেঘনার, সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর, লক্ষ্মীরসহ ১৮ উপকূলীয় জেলার জোয়ারের চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। হাজার হাজার বাড়িঘরে পানি উঠেছে। অথচ নাগরিকদের সুরক্ষায় এসব উকূূলীয় এলাকায় উঁচু বাঁধ নির্মাণে পরিকল্পনা থাকলেও বাঁধ নির্মাণে এখনো নজর নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাগরপাড়ের বাঁধগুলো উঁচুকরণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে নজর না থাকার কারণে জোয়ারের পানির ঝুঁকিতে কোটি মানুষ। দীর্ঘস্থায়ী জোয়ার হওয়ায় এবার সাগরপাড়ের লাখ লাখ মানুষকে পানিবন্দি জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় খুলনায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৪০৯টি সাইক্লোন শেল্টার। সার্বিক প্রস্তুতি নিতে বৃহস্পতিবার খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার জন্য ৪০৯টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত করা হচ্ছে, যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ লোকজন সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন। এসব সাইক্লোন শেল্টারে মোট ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। তিনি জানান, সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বৃহস্পতিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি সভা হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হক ইনকিলাবকে বলেন, আম্পানের সময় ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় জেলার বাঁধগুলোর ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করা হয়েছে। সেগুলো নির্মাণের জন্য নতুন নতুন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প শুরু করার মধ্যে আবার নতুন করে জোয়ারের পানি দেখা দিয়েছে। এতে অনেক জেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে এবং বিলীন হয়েছে।
দেশের উপকূলীয় এলাকার ৮ হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর ও ২০০৯ সালে আইলার পর উপকূল এলাকার এসব বাঁধের অনেক জায়গা ভেঙে গিয়েছিল, অনেক জায়গা বানের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল, কিন্তু তার বড় অংশ এখনো যথাযথভাবে মেরামত করা হয়নি। এতে করে গোটা উপকূলীয় এলাকা অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। চলতি বছর আম্পানে উপকূলীয় জেলার ১৫২টি স্থানে ৫০ দশমিক ৪৭৮ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে বিলীন হয়েছে। ৫৮৩টি স্থানে ২০৯ দশমিক ৬৭৮ কিলোমিটার আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৮টি নদীর তীরভাঙনে ১৩ দশমিক ২০৮ কিলোমিটার বিলীন হয়েছে এবং ৩৭টি নদীর তীর সংরক্ষণ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের ক্ষতি হয়েছে ১২ দশমিক ৮০০ কিলোটার। এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ভাসছে উপকূলের বিস্তীর্ণ জেলাগুলো। চট্টগ্রাম, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ দেশের উপকূলীয় জেলাগুলো। নি¤œচাপের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি ও নদীতে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগরের ৬০ গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে উপকূলীয় বিভিন্ন জেলার বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে দিন-রাত দু’দফা জোয়ারের পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হচ্ছে বসতভিটা, গ্রামীণ জনপথ, মাছের পুকুর-ঘের, উৎপাদিত ফসল ৬-৭ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। আম্পানের সেই ধকল কাটতে না কাটতে আবারো জোয়ারের পানির দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। তার ক্ষয়ক্ষতির তালিকা এখনো করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এ প্রসঙ্গে পানিসম্পদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, আইলা-সিডর-আম্পান এবং চলতি বন্যায় দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এবার দেখা দিয়েছে জোয়ারে পানি। এসব প্রাকতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে বর্তমানে বাঁধের উচ্চতা সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে ১৫ ফুট, ভেতরের দিকে ১৪ কিংবা ১২ ফুট। এগুলো যদি সবল থাকে তাহলে ১৪-১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস ঠেকিয়ে দেবে।
জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে ১৯৯৯ সালের পর প্রথম সুপার সাইক্লোন আম্পান। ঘূর্ণিঝড়টি প্রায় ১৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্যাটাগরি-১ থেকে ক্যাটাগরি-৫ মাত্রায় শক্তি বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়েছিল। সে কারণে দেশের উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নি¤œাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১৪-১৫ ফুট উঁচু উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে আঘাত হেনেছে। প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে সাতক্ষীরা, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙেছে। অনেক স্থানের বাঁধে ফাটল ধরেছে। পায়রা নদীর জোয়ারে বরগুনা সদর উপজেলার মাইঠা এলাকার বাঁধের একটি অংশের অন্তত ২০ ফুট বিলীন হয়।
জানা গেছে, ৬ নম্বর কয়রা, ৪ নম্বর কয়রা রিং বাঁধ, ঘাটাখালী, হরিণখোলা, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট-সংলগ্ন এলাকা, মঠবাড়িয়া, ২ নম্বর কয়রা, হোগলা, গাজীপাড়া, গোলখালী, হাজতখালী, জোড়শিং ও মহেশপুর এলাকার প্রায় ১২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদীতে পানি বাড়লে ওই এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এ ছাড়া কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীতে পানি সরবরাহের আটটি জলকপাট (স্লুইসগেট) অকেজো পড়ে আছে। শাকবাড়িয়া নদীর নয়ানী ও সুতিয়া বাজার-সংলগ্ন জলকপাটটি নষ্ট হওয়ার উপক্রম।
শাকবাড়িয়ার হেমলতা মন্ডল বলেন, আগে দু’বার ভেঙেছে। পরে বড় বাঁধ দিলেও সেটিও কয়েক দিন আগে ভেঙে গেছে। বালু দিয়ে বাঁধ দেয়ায় এ অবস্থা। আরেকটু হলে গ্রামে পানি ঢুকবে। ভাঙন তাদের নিঃস্ব করেই ছাড়বে।
উত্তর মহেশ্বরীপুর সিংহেরচরের হরিপদ মন্ডল বলেন, কয়েকবারের ভাঙনে আমার ১১ বিঘা জমি নদীর পেটে চলে গেছে। এখন নতুন করে বাঁধে ধস দেখা দেয়ায় ভিটেবাড়ি হারানোর শঙ্কায় রয়েছি।
দক্ষিণ বেদকাশী ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোজাফফর হোসেন বলেন, ইউনিয়নের দুই পাশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে শাকবাড়িয়া ও কপোতাক্ষ। দুই নদ-নদীর ক্রমশ ভাঙনে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হতে যাচ্ছে ইউনিয়নটি। ১০ বছর আগেও দুই নদ-নদীর দূরত্ব দুই কিলোমিটারের বেশি ছিল। প্রতি বছর ভাঙতে ভাঙতে এখন ৩০০ মিটারে এসে ঠেকেছে।
মহেশ্বরীপুর ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মনি শঙ্কর রায় বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ও জলকপাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। পাউবো টালবাহানা করে কালক্ষেপণ করছে। উত্তাল নদী আর বৈরী আবহাওয়া দেখলেই এলাকার মানুষ ভয়ে থাকেন।
মহেশ্বরীপুর ইউপির চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারি বলেন, প্রতি বছর বাঁধ ভাঙছে। কেউ না কেউ নিঃস্ব হচ্ছে। বর্তমানে যে কয়েক জায়গায় বাঁধ ধসে গেছে, নদীতে জোয়ার বাড়লে বড় ক্ষতি হতে পারে। বাঁধ ভাঙলে গোটা ইউনিয়ন নদীর পানিতে তলিয়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে পাউবো কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে।
উত্তর বেদকাশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নের গাজীপাড়া ও গাতিরঘেরী এলাকায় নতুন প্রযুক্তিতে বাঁধ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বছর না ঘুরতেই সেই বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এখন দৃশ্যমান। বেড়িবাঁধের উচ্চতা বাড়াতে না পারলে উপকূলীয় অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি বাড়তেই থাকবে। কয়রার বাঁধগুলোর উচ্চতা আরো অন্তত ১০ ফুট বাড়ানো উচিত।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের পর উপজেলার ২১টি জায়গায় ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত করা হয়। পাশাপাশি ২০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে মাটি ও বালুর বস্তা ফেলে সংস্কার করা হয়। বর্তমানে সাত কিলোমিটারের বেশি সংস্কারকাজ চলমান। তবে এখনও ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে।
পাউবো খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, ‘তিন দিকে নদীবেষ্টিত কয়রা উপজেলার মূল সমস্যা নদীভাঙন। যেকোনো দুর্যোগে নদীতে জোয়ারের চাপ বাড়লে কোথাও না কোথাও ভাঙন ধরে। স্থায়ী সমাধানে বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি মেগা প্রকল্প শুরু হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঝুঁকি কমবে।
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন, ঝাপালী বাজার থেকে ঘোলা খেয়াঘাট অভিমুখে বেড়িবাঁধের তিনটি স্থান অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। সামান্য জলোচ্ছ্বাসে ওই বাঁধ ভেঙে যেতে পারে।
আটুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবু বলেন, আটুলিয়া ইউনিয়নে তিনটি পয়েন্ট পাউবোর বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে বিড়ালক্ষীতে দু’টি ও বড়কুপটের একটি জায়গা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
শ্যামনগরের পাউবোর সেকশন কর্মকর্তা সহকারী প্রকৗশলী (এসও) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, শ্যামনগরে পাউবোর বেড়িবাঁধের অধিকাংশ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান মেরামত সম্পন্ন হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলছে।
শ্যামনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শাহিনুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে প্রত্যেক ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের সাবধান থাকার কথা বলা হয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আক্তার হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, ইতোমধ্যে প্রত্যেক ইউপি চেয়ারম্যান ও সিপিপি টিম লিডারদের সঙ্গে কথা হয়েছে। উপজেলার ১০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করার জন্য বলা হয়েছে।
খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুল করিম জানান, উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে। বিপদ সংকেত জারি হলে তারা এলাকায় মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করবেন। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আমিরুল আজাদ জানান, বর্তমানে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের যে গতিপথ রয়েছে, তা পরিবর্তন না হলে আপাতত ঘূর্ণিঝড় খুলনা উপকূলে আঘাত হানার আশংকা নেই। তবে ঝড়ের প্রভাবে হালকা বাতাস ও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ১৩ মে থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গাজীপুরে অবৈধভাবে মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই সংবিধান সংশোধন হওয়া উচিৎ : দুলু
আমিরাতে নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে বিএনপির ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন
সুন্দরগঞ্জে ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্বনাথ উপজেলা ছাত্রদলের শীতবস্ত্র বিতরণ
সুন্দরগঞ্জে ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
রাজবাড়ীতে জমকালো আয়োজনে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
যশোরের গদখালীতে ৩৫ বছরের ফুল ব্যবসা কেড়ে নিয়েছে বিএনপি
গাবতলীতে অনূর্ধ্ব-১৭ গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট এর উদ্বোধন
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর ওলামা পরিষদের স্মারকলিপি
গাবতলীতে অনূর্ধ্ব-১৭ গোল্ডকাপফুটবল টুর্নামেন্ট এর উদ্বোধন
ব্যারিস্টার সুমনের জামিন নামঞ্জুর
বরগুনায় যুবদল নেতা নাসিরকে কুপিয়ে হত্যা করলো নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কর্মীরা
সৈয়দপুরে শীতে জনজীবন স্থবির ফ্লাইট চলাচলে বিঘ্ন
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্য হল পাকিস্তান
যুক্তরাষ্ট্রে নববর্ষ উদযাপনের সময় ভিড়ের মাঝে গাড়িচাপায় নিহত ১০
কুষ্টিয়ায় জমি নিয়ে বিরোধ, ভাইদের হামলায় নিহত
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করছে গুগল ও ভারতীয় মিডিয়া!
ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেশবপুরে বর্নাঢ্য র্যালী অনুষ্ঠিত
বই হচ্ছে বন্ধুর মতো, অভিভাবকের মতো- তাকে যত্ন নিতে হবে : ইউএনও নাহিদুর রহমান