২৬ দেশে রফতানি হচ্ছে রাজবাড়ীর ধানের খড়-পাট-হোগলা পাতা-কচুরিপানার পণ্য
১৪ মে ২০২৩, ১১:০১ পিএম | আপডেট: ১৫ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রতিবন্ধী রেহেনা পারভীন। পায়ের সমস্যা থাকলেও হাত দুটো ভালো। তার স্বামীও একজন প্রতিবন্ধী। তাদের ঘরে ৪টি সন্তান। প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে কেউ কোনো কাজ করাতে চাইতো না। অনেক সময় মন খারাপ করে বসে থাকতে হতো। আর মনের মাঝে স্বপ্ন বুনতে থাকেন, ছেলে-মেয়েদের কি মানুষ করতে পারবেন। এরই মাঝে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের ভবদিয়ায় গড়ে উঠা গোল্ডেন জুট প্রোডাক্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ডাকে সেখানে কাজ শুরু করেন। আজ তার আয়ের উপরই সংসার ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া চলছে। তার চোখে মুখে এখন হাঁসির ঝলক। কথাগুলো বলছিলেন আর তার দু’চোখ বেয়ে পানি পড়ছিল। তারমতো প্রতিবন্ধী সোহেল রানা, রুপালীসহ শ্রবণ ও অন্যান্য ধরনের প্রতিবন্ধীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে ১২ জন প্রতিবন্ধী কাজ করছেন। সবার চোখে-মুখে এখন রঙিন স্বপ্ন।
এখানে ধানের খড়, পাট, হোগলা ও কচুরিপানা দিয়ে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ম্যাট, পাপস, টুপি, ফুলের টপ, ব্যাগসহ শতাধিক ধরনের পণ্য। এসব পণ্য রফতানি হচ্ছে জাপান, কানাডা, আমেরিকা, চীন, জাপান অস্ট্রেলিয়া, সউদী আরবসহ অন্তত ২৬টি দেশে। ফেলনা নয় ধানের খড়, পাট, হোগলা, কচুরিপানা তার প্রমাণ দিয়েছে গোল্ডেন জুট প্রোডাক্ট নামের এ প্রতিষ্ঠান। এসকল পণ্য বিদেশে রফতানি করে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। এছাড়াও গ্রামাঞ্চলে প্রতিষ্ঠানটি তৈরি হওয়ায় দুই হাজারের বেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে রাজবাড়ী শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দুরে বরাট ইউনিয়নের ভবদিয়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মো. হাকিম আলী সরদার নিজের এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এমন কিছুর করার চিন্তা থেকেই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। নিজের তিন একর জমি, জমানো কিছু টাকা ও ইসলামি ব্যাংকের সহযোগিতা গড়ে তোলেন গ্লোবাল গোল্ডেন জুট এন্ড ক্রাফট লিমিটেড। বর্তমানে এখানে নিয়মিত কাজ করছেন ৮০০ শ্রমিক। আর চুক্তিভিত্তিতে বাহিরে কাজ করছেন আরো ১২০০ শত’র বেশি শ্রমিক। যারা বেশির ভাগই সর্বনাশা পদ্মায় ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টে গিয়ে দেখা যায়, এখানে পুরুষ শ্রমিকের সাথে তালমিলিয়ে কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা।
এ সময় শ্রমিক কালাম মিয়া বলেন, তিনি এক সময় ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। ঢাকায় কাজ করে যে বেতন পেতেন, রাজবাড়ীতেও সেই বেতন পাচ্ছেন। সুবিধা হয়েছে ঢাকায় বাসা ভাড়া ও অন্যান্য খরচ করে সংসার চালাতে হিমসিম খেয়েছি। আর এখানে নিজের বাড়ীতে থেকে প্রতিষ্ঠানের পরিবহনে এসে কাজ করতে পারছি। এখন অনেক ভালোভাবে কাটছে দিন।
প্রতিবন্ধী শ্রমিক সোহেল রানা বলেন, এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠার কারণে আমার মতো একজন প্রতিবন্ধী দুবেলা দু-মুঠো ভাত খেতে পারছি। আগে প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে কেউ কাজে নিতো না। ধুর ধুর করে তাড়িয়ে দিতো। আজ কাজ করে পরিবারের খরচ মিটিয়ে নিজেও স্বাবলম্বী হচ্ছি। অনেক ব্যক্তি অনার্স মাস্টার্স পাস করে এখানে অফিসিয়াল কাজসহ বিভিন্ন কাজ করছে। এতে জেলার বেকার সমস্যা কিছুটা হলেও কমেছে।
শ্রমিক হাসি আক্তার বলেন, আগে স্বামীর একা কাজ করতো এখন আমি ও কাজ করি। দুইজনে আয় দিয়ে আমাদের সংসার ভালোভাবে চলছে। পাশাপাশি সন্তানদের পড়াশোনা করাতে তেমন বেগ পেতে হচ্ছে না। প্রতিদিন সকাল ৮টায় আসি আর বিকেল ৫টায় বাড়ি গিয়ে বাড়ির কাজ করি।
শ্রমিক স্মৃতি আক্তার বলেন, সর্বনাশা পদ্মার ভাঙনে ঘরবাড়ি জমিজমা সব হারিয়েছি। বাড়ির কাছে এ কারখানায় চাকরি করে এক বছরে ৮৫ হাজার টাকা জমিয়েছি। আর একটু জমি কিনে ঘর তোলার স্বপ্ন দেখছি। আমার মতো অনেক নারী আছে যারা এখানে কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন।
গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টের এইচআর এডমিন সাইদ হোসেন বলেন, আমরা মূলত বিদেশে আমাদের উৎপাদিত পণ্য বেশি রফতানি করে থাকি। কারণ বিদেশে পরিবেশবান্ধব এসব পণ্যের চাহিদা বেশি। ক্রেতারা অর্ডার করার সাথে সাথেই আমরা পণ্য প্রেরণ করি। আমাদের তৈরি পণ্যের গুনগত মান ভালো হওয়ায় দিন দিন চাহিদা বেড়েছে।
গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টের জেনারেল ম্যানেজার মো. আলাউদ্দিন শুভ বলেন, এতদিন পাট হোগলা দিয়ে নানান ধরনের পণ্য তৈরি হলেও এবছর যুক্ত হয়েছে ধানের খড় ও কচুরিপানা। আমরা গ্রাম পর্যায়ে থেকে ধানের খড় ও কচুরিপানা কিনে এনে সেগুলোও ব্যবহার উপযোগী বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করছি। যেগুলো বিশ্বের ২৬টি দেশে রফতানি করা হচ্ছে।
গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টের ব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাঁচামাল হচ্ছে ধানের খড়, পাট, হোগলা ও কচুরিপানা। রাজবাড়ীতে প্রচুর পাট চাষ হয় তাই এ জেলা থেকে পাট ক্রয় করা হয়। আর হোগলা কিনে আনা হয় কুমিল্লা থেকে।
তিনি আরো বলেন, নিজের এলাকার প্রতিবন্ধি, বৃদ্ধ, অসহায়রা যে যে ধরনের কাজ করতে পারছে তাকে সেই ধরনের কাজ দিয়েই কর্মস্থান তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে নদী ভাঙন এলাকা হওয়ায় কাজ পেয়ে এই এলাকার মানুষে মুখে হাঁসি ফুটেছে।
রাজবাড়ীর বিসিক শিল্প নগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক চয়ন বিশ্বাস বলেন, বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা হচ্ছে। আর গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টের পণ্যের কারণে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে। কর্মসংস্থানের তৈরি হয়েছে। আমরা মাঝে মধ্যেই ওই কারখানাটি পরিদর্শন করি। তাদের নানান ধরনের পরামর্শ প্রদান করে থাকি।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, পরিবেশবান্ধব এসব পণ্য তৈরির উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। কারখানা এলাকায় বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন দিক খেয়াল রাখা হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব এসব পণ্য ব্যবহারে সকলকে আগ্রহী করে তুলতেও কাজ করা হচ্ছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গর্ভে থাকা সন্তান মারা গেলে মা-বাবা প্রতিদান প্রসঙ্গে?
হাজীগঞ্জে বিএনপির ২ গ্রুপের সংঘর্ষে কিশোরসহ ৪ জনের অবস্থা গুরুত্বর : আহত ৫০
উত্তরপ্রদেশে নেকড়ের পর এবার রাজস্থানে চিতাবাঘের হামলা, দুদিনে নিহত ৩
কলকাতায় ৪১ দিনের মাথায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার জুনিয়র ডাক্তারদের
দুই রাজ্যে সংঘাত, ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকল পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানা
ডায়নার সঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল দেহ, এবার ধর্ষণে অভিযুক্ত সেই ডোডির বাবা
ভারতে 'এক দেশ এক ভোট’ আয়োজন কতটা সম্ভব হবে?
বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ৯
কুমিল্লায় অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় প্রবাসীর ওপর হামলা
এবার হলিউডের সিনেমায় জ্যাকুলিন
৯ বছর পর ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানি সিনেমা!
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি
ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত