সড়ক পাকা প্লট ফাঁকার শহর পূর্বাচল
১৫ মে ২০২৩, ১১:১৮ পিএম | আপডেট: ১৬ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম
২৮ বছর ধরে রাজধানী শহরের যানজট আর কোলাহল কমাতে কাজ চলছে রাজউকের অধীনে থাকা পূর্বাচলের। যেখানে নাগরিক সুবিধার অভাবে প্লট বুঝে পেলেও বাড়ি তৈরী করতে দেখা যায় না খুব একটা। শুধু তাই নয়, সাধারণ নাগরিকদের নাগালের বাইরে চলে গেছে প্লটের অতিমুল্যের তফাতে। গত ২৮ বছরে বাড়ছে প্লটের মুল্য। এদিকে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় ভবন নির্মাণ করছেন না প্লটগ্রহীতারা।
রাজউক সূত্রমতে, ৬ হাজার ১৫০ একর জায়গা নিয়ে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। যা ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। সব ঠিক থাকলে ৩০টি সেক্টরে ২৬ হাজার প্লটে আবাসিক এতোদিনে ভবন গড়ে ওঠতো প্রায় ৮০ ভাগ। যদিও এ পর্যন্ত ২১ হাজার প্লট হস্তান্তরও করা হয়েছে গ্রহিতাদের কাছে। তবে ভবন নির্মাণের কাজ হচ্ছে মাত্র ৩ শতাধিক।
ধীরগতি প্রসঙ্গে প্রকল্পের সাবেক পরিচালক ও রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক জানান, এখন পর্যন্ত ৫ বার নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। ৭ বার বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ করা হয়েছে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এভাবে বর্তমানে রাজউকের পূর্বাচলের প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৭০ শতাংশ।
এদিকে ঢাকার বসতি চাপ কমানোর উদ্দেশ্য থাকলেও প্লট মালিকদের বেশিরভাগের মালিকানায় একাধিক প্লট বা স্বজন প্রীতির কারণে নানা কৌশলে পূর্বাচলের প্লট মালিক হয়ে আছেন একই ব্যক্তি। ফলে তাদের ব্যক্তিগত অনিচ্ছায় ভবন নির্মাণ চিত্র দেখা যায় না। এসব নানা কারণে প্রকল্প এলাকায় প্লট পাওয়া বেশিরভাগ মানুষই এখনো সেখানে বাড়ি করছেন না। কারণ হিসেবে জানতে চাইলে পূর্বাচলের একটি প্লট মালিক কলামিস্ট লায়ন মীর আব্দুল আলীম বলেন, পূর্বাচলে বাড়ি করার উপযোগী পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ন্যূনতম কোনো নাগরিক সুবিধাই সেখানে নিশ্চিত করেনি রাজউক। কবে সেখানে বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি হবে তা বুঝা যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, পূর্বাচল প্রকল্পের কাজ সর্বোচ্চ ১০ বছরের মধ্যে শেষ করা উচিত ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও প্রকল্পের কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। এটা খুবই দুঃখজনক। পূর্বাচলের বাসিন্দা শরীফ মিয়া বলেন, নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে না পারলে প্লট গ্রহীতারা বাড়ি বানাবেন না এটাই স্বাভাবিক।
পূর্বাচল প্রকল্প সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ৩শ’ ফুট সড়কের পাশে শাখা সড়ক দিয়ে প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৯০ ভাগ পাকা সড়ক। তবে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পড়ে আছে হাজার হাজার ফাঁকা প্লট। দু-একটি প্লটে নির্মাণ হচ্ছে বাড়ি। আবার কিছু প্লটে গড়ে উঠেছে টিন-কাঠের অস্থায়ী ঘর। কেউ প্রাচীর করে রেখেছেন নিজের প্লটে। সেখানেও নিরাপত্তার অভাবে ফটক চুরি হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ফাঁকা প্লটে চাষাবাদ করছেন। আবার বহু প্লটে গজিয়েছে ঝোঁপ-ঝাড়। কিছু প্লটে চাষাবাদ হচ্ছে নানা রকম শাক-সবজি। এখনো প্রকল্প এলাকায় এখনো পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়নি। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ রাস্তায় কোনো বাতি নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে সেখানে কোনো থানা বা পুলিশ ফাঁড়িও নেই।
পূর্বাচলের অপর বাসিন্দা আব্দুর রউফ মালুম বলেন, এটা নির্মাণাধীন ফলে নেই গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সুবিধা। সব মিলিয়ে কেউ সেখানে বাস করার জন্য বাড়ি নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছে না। পূর্বাচলজুড়ে হাজার হাজার প্লটের মালিক বাড়ির কাজ শুরু করতে পারছেন না।
অপর বাসিন্দা বাগবের এলাকার মনির হোসেন বলেন, বাড়ি করতে নকশার অনুমোদন দেয়া হয় না। নানা কাগজ প্রস্তুত করতে মালিকদের সময় গুণতে হয়। মধুখালীর বাসিন্দা মাহবুব আলম প্রিয় বলেন, পূর্বাচলে যেন আজব শহরের যাত্রা হচ্ছে। গত প্রায় ৩ দশক ধরে প্লট সব ধনীদের হাতে চলে গেছে। যাদের বড় বড় শহরে প্লট রয়েছে। ফলে তাদের বাড়ি করার তেমন প্রয়োজন নেই। তাদের আগ্রহ না থাকায়ও রাজউক সুযোগ পাচ্ছে। এতে ধীরগতির হয়ে যাচ্ছে শহর। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুড়াপাড়ার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান মনু ভুঁইয়া বলেন, পূর্বাচলে দেশের সব প্রান্ত থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রশংসনীয়। সম্প্রতি এমআরটি লাইনের কাজ শুরু হয়েছে, এরপর এর সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগের আলাদা মাত্রা যোগ হবে। এখনও কার্যকরী নানা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া সম্ভব। নাগরিক সুবিধা যেন দ্রুত নিশ্চিত করা যায় সেদিকে খেয়াল রেখে রাজউক কাজ করলে আরো দ্রুত কাজ এগুবে।
প্লট মালিক রাসেল মোল্লা বলেন আশপাশের কেউই শুরু করেনি কাজ, সে কারণে পূর্বাচলের সব এলাকা এখনও নিস্তব্ধ। বিদ্যুৎ আর পানির সংযোগ এখানে ভালোভাবে আসলে বাড়ির কাজ শুরু করবো। এখন টিনশেড করে বসবাস করছি।
জানা গেছে, পূর্বাচলে প্লটগুলোতে ভবন নির্মাণ শুরু হলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেবে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)। বর্তমানে যে কয়টি জায়গায় বসতি আছে সেখানে কিছু কিছু বিদ্যুতের সংযোগ দিচ্ছে সংস্থাটি।
সব মিলিয়ে যারা পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন তারা এখন বেশ দোলাচলে আছেন। সে কারণে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও সেখানে ভবন নির্মাণ করছেন না তারা। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হতে শুরু করলে তখন হয়ত প্লট মালিকরা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করবেন।
রূপগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদ বলেন, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চারটি থানা স্থাপন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জমি দিয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। সেখানে থানা হয়ে গেলে নিরাপত্তার অভাব থাকবে না। থানাগুলো স্থাপন করা হলে প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এখন থানার পক্ষ থেকে ক্যাম্প করে সীমিত সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়ে নিরাপত্তার কাজ চলমান রয়েছে। পুলিশি টহলও কাজ করছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঢাবি দাবা প্রতিযোগিতা শুরু
জোকোভিচ-কিরগিওস জুটির বিদায়
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের তালিকাভুক্তির সময় বাড়ল
হাসিনার বিরুদ্ধে সিনেমা করে হুমকির মুখে তিশা
ডুয়েটে টেকনিক্যাল সেমিনার ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত
প্রতিদিনের বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হলেন মোরছালীন বাবলা
‘লেখাপড়া না করে দেশ শাসন করতে গেলে আ.লীগের মতো ভুল করার আশঙ্কা রয়েছে’
বিরলে অবৈধ সুদ ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
বিরলে বুরো বাংলাদেশের আয়োজনে শীতবস্ত্র বিতরণ
বিরল প্রেস ক্লাবে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত
বিরলে পৃথকভাবে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন
বর্ণাঢ্য আয়োজনে পটুয়াখালীতে ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত
লামায় অবৈধ ৭টি ইট ভাটায় অভিযান ৭লক্ষ টাকা জরিমানা
২৭ জানুয়ারি পবিত্র শব-ই-মিরাজ
সিলেটে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় আঞ্চলিক কর্মশালা
মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে ছাত্রদল অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে
২৪ এর আন্দোলনেও ছাত্রদল অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে- মাহমুদুল হক রুবেল
রাবিতে পোষ্য কোটা বিতর্ক: ১ শতাংশ নির্ধারণ, সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি শিক্ষার্থীদের
রাবির দুই সহকারী প্রক্টরের নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক, যোগদান থেকে বিরত
মানিকগঞ্জে পুরস্কার পেলেন পুলিশের তিন ট্রাফিক কর্মকর্তা