শহরে নতুন দরিদ্র দেড় কোটি
১৭ মে ২০২৩, ১০:৫৮ পিএম | আপডেট: ১৮ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম
মহামারি করোনার সময়ে দারিদ্র্যের হার প্রায় দ্বিগুনে পৌঁছেছিল। পরে সেটি ধীরে ধীরে কমে আসে। তবে করোনার কারণে শহরের সমাজে নতুন দারিদ্র্যের আবির্ভাব ঘটেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ যে দারিদ্র্য হারের কথা বলা হয়েছে, তার প্রায় অর্ধেক বা ৯ শতাংশের মতো নতুন দরিদ্র হয়েছে। সরকারি হিসেবে দেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৭ কোটি। এর ৯ শতাংশ, অর্থাৎ দেড় কোটির বেশি মানুষ মহামারির ধাক্কায় অধোপতিত হয়েছে। নতুন দরিদ্র মানুষকে আবার দারিদ্র্যসীমার ওপরে তুলতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ২০২২ সালে করা ‘আরবান প্রভার্টি ডায়নামিস ডিউরিং কোভিড-১৯: এ্যানাটমিক অব রেজিলিয়েন্স’ শীর্ষক’ শীর্ষক এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বিআইডিএস রিসার্চ অ্যালমানাক ২০২৩ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে এই গবেষণার তথ্য প্রকাশ করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম ও পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিআইডিএস ২ হাজার ৪৬টি খানার ওপর জরিপ করে বিআইডিএস এই গবেষণা করেছে। একই সঙ্গে করোনার আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে দরিদ্র মানুষের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। করোনার পর অর্থাৎ গত বছর (২০২২) সেটি বেড়ে ৩৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে অতিদরিদ্র মানুষের মধ্যে করোনার আগে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। করোনার পর সেটি বেড়ে ৩৩ দশমিক ২১ শতাংশে দাঁড়ায়। পাশাপাশি ২০১৯ সালে দরিদ্র খানা বা পরিবারের মধ্যে ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ এমএফএস ব্যবহার করত। করোনার পর অর্থাৎ ২০২২ সালে সেটি বেড়ে ৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ হয়েছে। যদিও তাদের ব্যাংক হিসাব খোলার পরিমাণ খুব একটা বাড়েনি। করোনার আগে ৩২ দশমিক ২২ শতাংশ পরিবারের ব্যাংক হিসাব ছিল। পরে সেটি বেড়ে হয়েছে ৩৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
সম্মেলনে বিআইডিএস মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, মোট দরিদ্রের প্রায় ৫০ শতাংশ নতুন দরিদ্র। যারা নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে নেমে গেছে। সঙ্কটে থাকা এই শ্রেণির ওপর আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, করোনা-পরবর্তী সময় দারিদ্র্য কমাতে আত্মকর্মসংস্থান বড় ভূমিকা রেখেছে। যাঁদের আর্থিক সঞ্চয় ছিল, তারা সেটি ভেঙে নিজের কর্মসংস্থানের জন্য কাজে লাগিয়েছেন। তা ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএস আত্মীকরণ দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে সহায়তা করেছে। তিনি বলেন, করোনাকালে অনেক শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। নিম্ন আয়ের পরিবারের মধ্যে সেই প্রবণতা বেশি। শহরাঞ্চলে সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা অল্প বিধায় এই জায়গায় বেশি নজর দিতে হবে।
বিআইডিএস বলছে, অতিদরিদ্র পরিবারের মধ্যে মোবাইল ফাইন্যান্সসিয়াল সিস্টেম (এমএফএস) ব্যবহারের প্রবণতাও বেড়েছে। ২০১৯ সালে এসব পরিবারের মধ্যে ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ এমএফএস ব্যবহার করত। করোনার পর সেটি বেড়ে ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ হয়েছে। এই ধরনের অতিদরিদ্র পরিবারের মধ্যে ব্যাংক হিসাব খোলার প্রবণতা বাড়েনি।
সন্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সম্পদ যখন সৃষ্টি হয় তখন বৈষম্য অবধারিত। বৈষম্য প্রশমনে আমরা কাজ করছি। তারই অংশ হিসেবে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার মতো ভাতা দেয়া হচ্ছে। তারা কাজ না করেও ভাতা পাচ্ছেন। তিনি বলেন, সমতাভিত্তিক সুযোগ নিশ্চিত করা গেলে বৈষম্য কমানো সম্ভব। আমরা সেটিই করার চেষ্টা করছি। এম এ মান্নান বলেন, করোনার সময় নানা প্রতিষ্ঠান নানা রকম তথ্য দিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছিল। তবে বিবিএস এর সর্বশেষ জরিপে যে দারিদ্র্য হার পাওয়া গেল তাতে দেখা যায়, আমরা সঠিক পথেই আছি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা পরিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, করোনার সময় দারিদ্রতা বেড়ে ছিল এটা ঠিক। সরকারের সঠিক পরিকল্পনা এবং উদ্যোগে নিয়ন্ত্রণ কমানো সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে করোনার সময়ে বিভিন্ন উৎপাদমুখী শিল্প কারখানা বন্ধ না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই কারণে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতির প্রভাব পড়েনি।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, চরম দরিদ্র পরিবারের ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ বলছে, তাদের করোনা মহামারী চলাকালীন ছেলে বা মেয়ের পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়েছে। এছাড়া দরিদ্র পরিবারের জন্য ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্য ১০ দশমিক ৩ শতাংশ এবং উচ্চ মধ্যবিত্তের জন্য ৮ শতাংশের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। স্পষ্টতই, করোনার সময়ে শিক্ষামূলক মানবিক পুঁজির বিকাশের ক্ষেত্রে শহুরে দরিদ্রতম শ্রেণি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শহুরে দরিদ্রদের শেখার ক্ষতি কমাতে এবং তাদের সন্তানদের শিক্ষাগত ধারায় পুনঃপ্রবেশের সুবিধার্থে একটি বিশেষ শিক্ষা পুনরুদ্ধার কর্মসূচি চালু করা দরকার।
ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ ৩০ লাখ মানুষকে নতুন করে দারিদ্রতার দিকে ঠেলে দিয়েছে: সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘ইমপ্যাক্টঅব রাশিয়া ইউক্রেন ওয়্যার প্রাইস স্টোকস অন দ্যা বাংলাদেশি ইকোনোমি: এ জেনারেল এ্যানালাসিস। এই তথ্য তুলে ধরেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক তাহরিন তাহরিমা চৌধুরী ও গবেষক পউল এ প্রদ্দেশ।
তাদের গবেষণায় বলা হয়, ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশে ৩০ লাখ মানুষকে নতুন করে দারিদ্রতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এর প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে যেমন বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, সার এবং অপরিশোধিত তেলের দাম। যার প্রভাব পড়েছে দেশে। এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জাতীয় কল্যাণ ২ শতাংশ কম হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের কৃষি খাত। তুর্কিতে সার বিক্রি উৎপাদনকে বাড়িয়েছে। কিন্তু তার থেকে সঠিক পন্থা ছিল দারিদ্রতা কমানোর জন্য নগদ অর্থ প্রদান। ২০২২ সালের প্রথম দিকে পেট্রোলিয়ামের দাম বাড়তে থাকে। শুধুমাত্র ২০২১ সালের জুলাই মাসে বাড়ানো হয়েছিল। তবে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু হওয়ার কয়েক মাস পরে ২০২২ সালে জুলাইয়ে এ হার আর ও বৃদ্ধি পায়।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে বিশ্ববাজারে ইউরিয়া এবং ডিএপি সারের বৈশ্বিক মূল্য বৃদ্ধির শর্তেও অভ্যন্তরীণ মূল্য স্থীর ছিল। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুনে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি ইউরিয়ার দাম ২৭ দশমিক ৮ টাকা থেকে বেড়ে ৭৩ দশমিক ৭ টাকা হয়েছিল। দেশের অভ্যন্তরে মূল্য ছিল ১৬ টাকা । এটার মূল কারণ ছিল ভর্তুকি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে বিনিময় হারের অবমূল্যায়ন হয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশের মুদ্রার ৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। গত বছরের এপ্রিল থেকে জুনে গড় বিনিময় হার ছিল প্রতি ডলার সমান ৮৯ দশমিক ৬৩ টাকা যা জুলাই আগস্ট বেড়ে দাড়ায় ৯২ দশমিক ৯ টাকা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দফতর পুনর্বণ্টনের পর কে পেলেন কোনটি
গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা বন্ধ করেছে কাতার
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ট্রাম্প বিরোধী বিক্ষোভ
চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ চায় না ইইউ
ইয়েমেনের রাজধানীতে মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনীর অভিযান
আড়াই হাজার লিটার বুকের দুধ দান করে বিশ্বরেকর্ড
পরাজয় নিয়ে ডেমোক্র্যাট শিবিরে উত্তাপ, পাল্টাপাল্টি দোষারোপ
দলীয় পদে শামা ওবায়েদের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার
পরকীয়ার জন্য স্বামী আত্মঘাতী হলে দায় স্ত্রীর নয় : আদালত
ফের রাজপথে
মার্কিন-মেক্সিকো চুক্তি
বিশ্ব সেরা স্কুল
দুঃসংবাদ
৮৮ হাজার টাকা জরিমানা, ৯৩৬ কেজি পলিথিন জব্দ
তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে সিলেটে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় টিমের মতবিনিময়
শহীদ নুর হোসেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মহানায়ক : ডা. ইরান
সিলেটের বন্ধ থাকা সকল পাথর কোয়ারী খুলে দিতে হবে: চরমোনাইর পীর
সাইবার বুলিং বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকার আলাদা ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করছে : নাহিদ ইসলাম
ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির বন্ধুত্ব কতটা মুখে আর কতটা কাজে!
যশোরের সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত ট্রাক আটক