আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব বজ্রপাত এখন আতঙ্ক
১৮ মে ২০২৩, ১০:৫৮ পিএম | আপডেট: ১৮ মে ২০২৩, ১০:৫৮ পিএম
গত ১৩ মাসে বজ্রপাতে ৩৪০ মৃত্যু, এর মধ্যে চলতি বছর মৃত্যু ৭০ জনের হ বজ্রপাত রোধে দ্রুত বর্ধনশীল গাছ লাগাতে হবে হ খোলা মাঠে বজ্রপাতের ফলে বেশির ভাগই কৃষক মারা যাচ্ছে
আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের ফলে সারা পৃথিবী এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্থ। একের পর এক ঝড় বন্যা, ভ‚মিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, সাইক্লোন ও সুনামি সবমিলিয়ে বহু প্রাণ এবং সম্পদের ক্ষতির কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে মানুষ মানিয়ে নিতে শিখেছে। মানুষ বুঝতে পেরেছে এভাবেই মানুষকে টিকে থাকা শিখতে হবে। কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে। প্রকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে সা¤প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাত নতুন এক আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। খরা, অকাল বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ আরও বহু প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো বজ্রপাতও একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে আবির্ভ‚ত হয়েছে। প্রতি বছর আমাদের দেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বহু মানুষ হতাহতের কারণ হয় বজ্রপাত।
বিগত ২০১৫ সালে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই বছর বজ্রপাতে নিহত হয়েছিলেন ১৮৬ জন। সে অবস্থার এখনো উন্নতি হয়নি। চলতি বছরেই বজ্রপাতে মারা গেছে ৭০ জন। আর গত ১৩ মাসে দেশে বজ্রপাতে মারা গেছে ৩৪০ জন। এই মৃত্যুদের মধ্যে অধিকাংশই কৃষক। এসব মৃত্যু হয়েছে কৃষিজমিতে কাজ করার সময়, অথবা বৈশাখী ঝড়ে আম কুড়াতে গিয়ে। আবার বাড়ির আনিায় খেলা করার সময়, এছাড়া মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা গেছে।
সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টোর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম (এসএসটিএফ) সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি বজ্রপাতে মৃত্যু নিয়ে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এই পরিসংখ্যান করা হয় জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং টেলিভিশনের তথ্যের ভিত্তিতে। ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত মৃত্যুর তথ্য নেওয়া হয় পরিসংখ্যানে। এতে বলা হয়, ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত বজ্রপাতে ৩৪০ জন মারা গেছেন। আর ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা গেছেন ২৭৪ জন। এরমধ্যে ২৩৯ জন পুরুষ আর ৩৫ জন নারী। নারী ও পুরুষের মধ্যে ১২ জন শিশুও রয়েছে।
চলতি বছর জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারি মাসে বজ্রপাতে হতাহতের কোনো ঘটনা না ঘটলেও মার্চ থেকে মৃত্যুর ঘটনা শুরু হয়। এই মাসে মারা যান ১৫ জন। আর এপ্রিল মাসে মৃত্যু হয় ৫০ জনের। অন্যদিকে চলতি মে মাসের ১৫ তারিখ মারা গেছেন ৪ জন। এবছর বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি নিহতের ঘটনা ঘটেছে সিলেটের সুনামগঞ্জে। এ জেলায় মারা গেছে সাতজন। আর সিলেট জেলায় মারা গেছে পাঁচজন।
এসএসটিএফের সভাপতি ড. কবিরুল বাশার বলেন, বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে জন সচেতনতা বাড়াতে বজ্রপাত বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। এ ছাড়া আরেকটি হলো মাঠে মাঠে বজ্রনিরোধক টাওয়ার নির্মাণ ও দ্রæত বর্ধনশীল গাছ লাগাতে হবে।
ঘন কালো মেঘ থেকে তৈরি হচ্ছে বজ্রমেঘ। আর সেখান থেকেই বজ্রপাত। পৃথিবীর বিজ্ঞান বহুদূর অগ্রসর হয়েছে; কিন্তু বজ্রপাত ঠেকানোর মতো প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়নি। তবে বজ্রপাত পূর্বাভাসে যন্ত্র রয়েছে। বজ্রপাতে নিহতের অধিকাংশই হাওড় অঞ্চলের। যারা খোলা মাঠে কাজ করছেন তারাই বেশি বজ্রপাতে নিহত হচ্ছে। পৃথিবীর যে কয়েকটি অঞ্চল বজ্রপাত প্রবণ তার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া অন্যতম। প্রায় দিনই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে মানুষ মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। বজ্রপাতে মৃত্যুর পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে বজ্রপাতে মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশ ঘটে বাংলাদেশে।
এদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে যত মানুষ মারা যায় তার দ্বিতীয় কারণ বজ্রপাত। বজ্রপাতে এভাবে মানুষের মৃত্যুর মিছিল ক্রমদীর্ঘায়িত হওয়ায় মানুষ আজ আতঙ্কিত। ভ‚মিকম্পের মতোই বজ্রপাতেও পূর্ব কোনো প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হয় না। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি বড় কারণ হলো কার্বন নিঃস্বরন। দেশে বড় বড় গাছপালার সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এটাও বজ্রপাতের হতাহতের একটি অন্যতম কারণ। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বন-জঙ্গল উজাড়, বঙ্গোপসাগর থেকে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ, উত্তরের হিমালয় পাদদেশে পুঞ্জিভুত মেঘ, মেঘ সৃষ্টির প্রক্রিয়া, মোবাইল ফোন টাওয়ার থেকে উৎপন্ন অতিমাত্রার ম্যাগনেটিক ফিল্ড ও ওয়েব বজ্রপাতের জন্য দায়।
পরিবেশ বদলে যাওয়ার সাথে সাথে বাড়ছে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার। এর মধ্যে কৃষক, জেলে অর্থাৎ উন্মুক্ত স্থানে থাকা মানুষের সংখ্যাই বেশি। বজ্রপাতে হতাহত প্রতিরোধ করতে সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে পারে। মানুষ সচেতন হলেই বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমে আসবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্ট্যাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. খন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন বলেন, বজ্রপাত একটি স্বাভাবিক ঘটনা। যা আগেও হয়েছে। কিন্তু সা¤প্রতিক সময়ে এটা অনেক বেড়ে গেছে। বলা যায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত দুই-তিন বছরে গড়ে ৩০০-৪০০ লোক মারা গেছে। অতীতে এমন হয়নি। প্রধানত দু’টি কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে আবহাওয়া ও জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। এর ফলে বৃষ্টিপাতের ধরন ও সময় পরিবর্তন হয়েছে। কালবৈশাখী বেশি হচ্ছে, আর বজ্রপাতের সংখ্যা বা পরিমাণ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে আগে গ্রামাঞ্চলে প্রচুর উঁচু গাছ ছিল। তাল গাছ, বটগাছ প্রভৃতি। স্বাভাবিক নিয়মে বজ্রপাত হলে এসব উঁচু গাছ তা অ্যাসজর্ব করে নিতো। কিন্তু এখন তা না থাকায় যখন খোলা মাঠে বজ্রপাত হয় তা মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শহরে গাছ না থাকলেও উঁচু উঁচু ভবন আছে। ফলে শহরের মানুষ এই মৃত্যু থেকে রেহাই পাচ্ছে। এ জন্য বজ্রপাত প্রতিরোধে প্রচুর তালগাছ, বটগাছ এসব লাগাতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সাদপন্থি শীর্ষ নেতা জিয়া বিন কাসিমকে গ্রেপ্তার
জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেন মিজানুর রহমান আজহারী
নীতীশ-সুন্দরের ব্যাটে ফলো-অন এড়ালো ভারত
বগুড়ায় বালু ব্যবসার দ্বন্দ্বে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা
সউদীতে নিজ নামেই ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ
অলিভিয়া হাসি : কিংবদন্তি অভিনেত্রীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া
ঈশ্বরগঞ্জে যৌথবাহিনীর অভিযানে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই মামলার আসামি আটক
প্রকৃতির সাথে হাসছে সরিষা ফুল, সাথে মিশে আছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন
সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা সাময়িক :স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ছাত্রদের সহযোগিতা চাইলেন আইজিপি
উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবি পার্টির জাতীয় নির্বাহী কাউন্সিলের নির্বাচন
শ্যামনগর জুয়ার মাস্টার এজেন্টরা রক্ষা পেতে রাজনৈতিক নেতাদের ছায়াতলে
‘অবৈধ দখলদাররা যত প্রভাবশালীই হোক, ব্যবস্থা নেওয়া হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ: রিজভী
আমাদের প্রধান কাজ গণহত্যার বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন: আইন উপদেষ্টা
কীর্তিমানসহ সব বাবাই হচ্ছেন আমাদের জন্য বটবৃক্ষ- মাহমুদুল হক রুবেল
রামগতিতে কৃষকের ধান পুড়িয়ে দিল দুর্বৃত্তরা
পানামা খাল নিয়ে ট্রাম্পের অভিযোগ অমূলক : জোসে রাউল মুলিনো
৫৫ লাখ টাকা নিয়ে উধাও বিকাশের ডিএসও ইমরান গ্রেপ্তার
কোন সুদী সরকারই আর চাই না: অধ্যাপক মজিবুর রহমান