জি-সেভেন শীর্ষ বৈঠকের টেবিলে কেন এবার আটটি অতিরিক্ত চেয়ার

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১৯ মে ২০২৩, ১১:১১ পিএম | আপডেট: ২০ মে ২০২৩, ১২:০৫ এএম

জি-সেভেন বৈঠকটি যদি কোনো ডিনার পার্টি হতো তাহলে নিমন্ত্রণকর্তাকে অতিরিক্ত চেয়ার আর প্লেট-গ্লাস-চামচের জন্য দৌড়াতে হতো। তবে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর এ জোটের এবছরের এই শীর্ষ বৈঠকের আয়োজক, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বাড়তি অতিথির জন্য প্রস্তুত। কারণ, গতকাল হিরোশিমাতে শুরু হওয়া এ বৈঠকে তিনি নিজের পছন্দে জোটের বাইরের আটটি দেশের নেতাদের আমন্ত্রণ করে নিয়ে এসেছেন। পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছে যে, ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সঙ্কট এবং চীনের সাথে সম্পর্কের কৌশল নির্ধারণের মত জটিল ইস্যুগুলোতে বাকি বিশ্বকে পাশে রাখার প্রয়োজনীয়তা কতটা বোধ করছে জি-সেভেন জোট।
বিশ্ব ব্যবস্থা যে বদলে যাচ্ছে তাও বুঝতে অসুবিধা হয় না। কারণ, যে দুই দেশকে নিয়ে হিরোশিমার এই বৈঠক সরগরম থাকবে, সেই চীন ও রাশিয়া অতিথি তালিকায় অনুপস্থিত।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী গণতান্ত্রিক সাতটি দেশ এ জোটের সদস্য - যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, কানাডা ও জাপান। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সবসময় জি-সেভেন জোটের শীর্ষ বৈঠকে প্রতিনিধি পাঠায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আয়োজক দেশ বাইরে থেকে তাদের পছন্দমত ক›জন বিশ্বনেতাকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসে।
কারণ, জি-সেভেন জোটের অর্থনৈতিক শক্তি ক্রমাগত কমছে। ১৯৯০ সালে যেখানে বিশ্বের জিডিপিতে এ জোটের দেশগুলোর অবদান ছিল অর্ধেকেরও বেশি, এখন তা ৩০ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে। ফলে তাদের এখন জোটের বাইরের প্রভাবশালী বন্ধু প্রয়োজন।
তাই মি. কিশিদা - যিনি পশ্চিমা একটি কোয়ালিশনের চাইতে আন্তর্জাতিক একটি কোয়ালিশনের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী - বৈঠকের টেবিলে বসার জন্য অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, কোমোরোস (আফ্রিকার ইউনিয়নের প্রতিনিধি) এবং কুক আইল্যান্ডসকে (প্রশান্ত-মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতিনিধি) আমন্ত্রণ করে এনেছেন।
গত ১৮ মাসে মি. কিশিদা ১৬ বার বিদেশ সফর করেছেন। ভারত, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে গেছেন।। তাদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করছেন চীন ও রাশিয়ার টাকা-পয়সা এবং প্রভাব-প্রতিপত্তির বিকল্প তাদের সামনে রয়েছে।
হিরোশিমায় তার আমন্ত্রিত অতিথিদের দিকে তাকালে বোঝা যায় মি. কিশিদা এশিয়া, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার প্রভাবশালী দেশগুলোকে - যাদেরকে এখন ‘গ্লোবাল সাউথ’ নামে অবিহিত করা হয় এবং যারা চীন ও রাশিয়ার সাথে জটিল রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক রেখে চলেছে – আস্থায় রাখার চেষ্টা করছেন, তাদের সাথে আরো ঘনিষ্ট হতে চাইছেন।
মি. কিশিদার অন্যতম লক্ষ্য এটি তুলে ধরা যে, ইউক্রেনে রুশ হামলার বিরুদ্ধে পুরো বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু এই লক্ষ্য হাসিলে তাকে খুবই বেগ পেতে হবে। সাফল্যের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
জি-সেভেন জোট চাইছে রুশ জ্বালানি এবং রফতানির ওপর অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা চাপানো যাতে রাশিয়ার যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা আরো কমে। কিন্তু গ্লোবাল সাউথ থেকে যে অতিথিদের মি. কিশিদা ডেকে এনেছেন তাদের অনেকেই এতে রাজী হবেন না।
ভারত এখন পর্যন্ত পশ্চিমাদের চাপাচাপিকে অগ্রাহ্য করে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে। তারা এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে হামলার জন্য সরাসরি রাশিয়ার নিন্দা করেনি। ভারতের বক্তব্য স্পষ্ট - রাশিয়ার সাথে ঐতিহাসিক সম্পর্কের ঐতিহ্য ছাড়াও বাড়তি দাম নিয়ে তেল আমদানি করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
শুধু ভারত নয়, উন্নয়নশীল বিশ্বে অনেক দেশেরই অবস্থান একই রকম, কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে জ্বালানি এবং খাদ্যের সংকটের প্রধান শিকার হয়েছে তারা। এসব দেশে ভয় পাচ্ছে, রাশিয়ার ওপর অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা বসালে মস্কো কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেনকে খাদ্যশস্য রফতানি করতে দেয়ার চুক্তি থেকে সরে আসবে, এবং তার জেরে খাদ্যের দাম আরও একদফা বাড়বে। তবে অনেক দেশের কাছে এটা শুধু অর্থনৈতিক চাপের প্রশ্ন নয়।
‘ঐতিহাসিকভাবে ভিয়েতনামের সাথে রাশিয়ার একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এখনও ভিয়েতনামের অস্ত্রের ৬০ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। সারের ১১ শতাংশ আসে সেদেশ থেকে’ -বলেন সিঙ্গাপুরে ইন্সটিটিউট অব সাউথ ইস্ট এশিয়ার ভিজিটিং শিক্ষক এনগুয়েন খাক গিয়াং।
‘ইন্দোনেশিয়া অতটা নির্ভরশীল না হলেও তারা রাশিয়ার কাছ থেকে অনেক অস্ত্র কেনে। মস্কোর সাথে তাদের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ’। ফলে, এনগুয়েন খাক গিয়াং মনে করেন রাশিয়ার ওপর অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা এই দুই দেশ সমর্থন করবে না। ‘কারণ, তেমন সমর্থন এই দুই দেশের জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করবে, কিন্তু বদলে তাদের তেমন কোনও লাভ নেই’।
তবে মি. কিশিদা হয়তো আশা করছেন হিরোশিমার করুণ অভিজ্ঞতার ইতিহাস তুলে ধরে তিনি হয়ত বাকি বিশ্বকে বোঝাতে সক্ষম হবেন যে, রাশিয়া পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করেছে, এবং তাদের ঠেকাতে হবেই।
রাশিয়ার ওপর আরও চাপ তৈরির জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির কাছ থেকেও চাপ আসবে যিনি ভিডিওতে জি-সেভেন শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেবেন। তবে তাতে বাড়তি নিষেধাজ্ঞার প্রশ্নে বিরোধের সুরাহা হবে না। এমনিতেই বাইরের বিশ্বের অনেক দেশের মধ্যেই হতাশা ও রাগ রয়েছে যে, পশ্চিমারা তাদের কথার বা মতামতের তোয়াক্কা করে না। তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন এসব দেশের কথা শোনা, তাদেরকে সহযোগী হিসাবে মর্যাদা দেয়ার একটা সূচনা অন্তত হিরোশিমাতে হতে পারে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

‘অবৈধ দখলদাররা যত প্রভাবশালীই হোক, ব্যবস্থা নেওয়া হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ: রিজভী
আমাদের প্রধান কাজ গণহত্যার বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন: আইন উপদেষ্টা
চাকরিবিধি লঙ্ঘনের দায়ে আমলাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে : নাহিদ ইসলাম
জাসদ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম মিন্টু অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার
আরও

আরও পড়ুন

প্রকৃতির সাথে হাসছে সরিষা ফুল, সাথে মিশে আছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন

প্রকৃতির সাথে হাসছে সরিষা ফুল, সাথে মিশে আছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন

উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবি পার্টির জাতীয় নির্বাহী কাউন্সিলের নির্বাচন

উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবি পার্টির জাতীয় নির্বাহী কাউন্সিলের নির্বাচন

শ্যামনগর জুয়ার মাস্টার এজেন্টরা রক্ষা পেতে রাজনৈতিক নেতাদের ছায়াতলে

শ্যামনগর জুয়ার মাস্টার এজেন্টরা রক্ষা পেতে রাজনৈতিক নেতাদের ছায়াতলে

‘অবৈধ দখলদাররা যত প্রভাবশালীই হোক, ব্যবস্থা নেওয়া হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা

‘অবৈধ দখলদাররা যত প্রভাবশালীই হোক, ব্যবস্থা নেওয়া হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ: রিজভী

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ: রিজভী

আমাদের প্রধান কাজ গণহত্যার বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন: আইন উপদেষ্টা

আমাদের প্রধান কাজ গণহত্যার বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন: আইন উপদেষ্টা

কীর্তিমানসহ সব বাবাই হচ্ছেন আমাদের জন্য বটবৃক্ষ- মাহমুদুল হক রুবেল

কীর্তিমানসহ সব বাবাই হচ্ছেন আমাদের জন্য বটবৃক্ষ- মাহমুদুল হক রুবেল

রামগতিতে কৃষকের ধান পুড়িয়ে দিল দুর্বৃত্তরা

রামগতিতে কৃষকের ধান পুড়িয়ে দিল দুর্বৃত্তরা

পানামা খাল নিয়ে ট্রাম্পের অভিযোগ অমূলক : জোসে রাউল মুলিনো

পানামা খাল নিয়ে ট্রাম্পের অভিযোগ অমূলক : জোসে রাউল মুলিনো

৫৫ লাখ টাকা নিয়ে উধাও বিকাশের ডিএসও ইমরান গ্রেপ্তার

৫৫ লাখ টাকা নিয়ে উধাও বিকাশের ডিএসও ইমরান গ্রেপ্তার

কোন সুদী সরকারই আর চাই না: অধ্যাপক মজিবুর রহমান

কোন সুদী সরকারই আর চাই না: অধ্যাপক মজিবুর রহমান

টিকটক নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্টে ট্রাম্পের আবেদন

টিকটক নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্টে ট্রাম্পের আবেদন

কুষ্টিয়ায় বিএনপির কর্মীসভায় দলীয় নেতার মতো বক্তব্য দিয়ে ভাইরাল ওসি

কুষ্টিয়ায় বিএনপির কর্মীসভায় দলীয় নেতার মতো বক্তব্য দিয়ে ভাইরাল ওসি

পাকিস্তান-তালেবান সম্পর্কে শীতলতা, ইতিহাস থেকে বর্তমান

পাকিস্তান-তালেবান সম্পর্কে শীতলতা, ইতিহাস থেকে বর্তমান

কটিয়াদীতে অপহরণের ৫ দিন পর শিশুর লাশ উদ্ধার

কটিয়াদীতে অপহরণের ৫ দিন পর শিশুর লাশ উদ্ধার

বিকিনি নয় মনোকিনি পরে অভিনেত্রীর স্কাই ড্রাইভিং

বিকিনি নয় মনোকিনি পরে অভিনেত্রীর স্কাই ড্রাইভিং

বিমানবন্দর থানায় যোগ দিলেন নারী ওসি

বিমানবন্দর থানায় যোগ দিলেন নারী ওসি

চাকরিবিধি লঙ্ঘনের দায়ে আমলাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে : নাহিদ ইসলাম

চাকরিবিধি লঙ্ঘনের দায়ে আমলাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে : নাহিদ ইসলাম

সোমালিয়ায় নতুন মিশন অনুমোদন ইউএন-এর

সোমালিয়ায় নতুন মিশন অনুমোদন ইউএন-এর

জাসদ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম মিন্টু অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার

জাসদ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম মিন্টু অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার