৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ
১৯ মে ২০২৩, ১১:২০ পিএম | আপডেট: ২০ মে ২০২৩, ১২:০৫ এএম
আজ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মোট ৬৫ দিন বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় নৌযান দিয়ে সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এর আগে গত বৃহস্পতিবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ইফতেখার হোসেনের সই করা পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের মতো এবারও ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মোট ৬৫ দিন বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছ ধরার নৌযান কর্তৃক সব প্রজাতির মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ থাকবে। দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের লক্ষ্যে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়ে থাকে।
এদিকে ৬৫ দিনের জন্য সমুদ্রে মৎস্য শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বরগুনার পাথরঘাটায় বালেশ্বর থেকে বিষখালী নদীতে যাওয়ার ভারানি খালের দুপারে শত শত ট্রলার নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে। সমুদ্রগামী জেলেরা হয়ে পড়েছে বেকার। পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে সংসার চালাবে সেই হতাশার ছাপ জেলেদের চোখমুখে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন :
বঙ্গোপসাগরে ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদন বাড়াতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ৬৫ দিনের সাগরে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। দীর্ঘদিন যাবত উপকূলীয় এলাকায় মোখা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সমুদ্রে মাছ আহরণ করতে না পারায় অভাব অনটনে দিশেহারা বরগুনার হাজার হাজার জেলে পরিবার।
খাদ্য সহায়তা হিসেবে ৪০ হাজার ৫২১ জেলেকে দেয়া হচ্ছে ৮৬ কেজি করে চাল। বিকল্প কোন কর্মসংস্থান না থাকায় শুধু চাল নয়, জেলেরা দাবি করছেন আর্থিক সহায়তাও। অসংখ্য জেলে নিবন্ধনের তালিকায় না আসায় বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি সহায়তা থেকে। মানবেতর জীবনযাপন করছে সহায়তা বঞ্চিত জেলে পরিবারগুলো। ক্ষতিগ্রস্ত ট্রলার মালিকরা পাচ্ছেন না ঋণ সুবিধা। বরাবরের মতো এবারও ট্রলার মালিক ও জেলেদের অভিযোগ ভারত বাংলাদেশ একই সময় নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বিগত সময়ের মতো বাংলাদেশের জল সীমানায় ঢুকে মাছ শিকার করে নিয়ে যায় ভারতীয় জেলেরা।
৬৫ দিনের জন্য সমুদ্রে মৎস্য শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায়, বরগুনার পাথরঘাটায় বালেশ্বর থেকে বিষখালী নদীতে যাওয়ার ভারানি খালের দুপারে শত শত ট্রলার নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে। সমুদ্রগামী জেলেরা হয়ে পড়েছে বেকার। গত পক্ষ কালব্যাপী ঘূর্ণিঝড় মুখার প্রভাবে সমুদ্র উত্তল থাকায় জেলেরা নিরাপদ স্থানে ছিল। কোন প্রকার মৎস্য আহরণ জেলেদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এনজিও গুলোর ঋণ আদায়ের চাপ, কোন প্রকার আয় রোজগার না থাকায় সংসারে চরম টানাপোড়ন, পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে সংসার চালাবে সেই হতাশার ছাপ জেলেদের চোখমুখে। জ্যৈষ্ঠ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত পাঁচ মাস ধরা হয় ইলিশ মৌসুম কিন্তুু মৌসুমী অর্ধেক সময় আটকে যায় নিষেধাজ্ঞায়। নিবন্ধিত জলেদের নিষেধাজ্ঞা সময়ে দেয়া হয় ৮৬ কেজি চাল। চালের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার দাবি প্রান্তিক জেলেদের। বার্ধক্যে উপনীত জেলেদের দেয়া হচ্ছে না খাদ্য সহায়তা।
ভারত-বাংলাদেশ একই সময়ে সমুদ্রে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় সংশয় রয়েছে বাংলাদেেেশর পানি সীমানায় ঢুকে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে।
মাছ শিকারে গোপনে সমুদ্রগামী হচ্ছে অনেক জেলে। বন্দি হচ্ছে আইনের বেড়াজালে। এ অবস্থায় নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ অপ্রতুল খাদ্য সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধি প্রকৃত জেলেরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাল সুষ্ঠু বণ্টন এবং সময়মত প্রদানের দাবি জেলেসহ ফিশিং ট্রলার মালিকদের। এছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের মত রেশন কার্ড চালুর দাবি জানান জেলেরা।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার অর্ধশতাধিক জেলে পাড়ায় আট হাজার ২২৭টি জেলে পরিবারের ৩৭ হাজার ২২ জন সদস্য রয়েছে। এসময়ে উপকূলীয় এলাকার জেলেদের জন্য বিশেষ খাদ্য সহায়তার স্বল্প পরিমানের চাল প্রদানের বিষয়টি খুবই অপ্রতুল বলে মনে করছেন জেলেরা। জেলেদের অধিকাংশের বড় সংখ্যকের নিবন্ধন না থাকায় বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি খাদ্য সহায়তা থেকে। দীর্ঘ কর্মহীনতায় অনিবন্ধিত জেলেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কাটাচ্ছেন মানবেতর জীবন।
বিভিন্ন মৎস্য পল্লী সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপকূলীয় এলাকা সাগর ও নদ নদী ঘেষা জনপদের বেশি ভাগ মানুষ জেলে। সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় ইলিশ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষন, বাঁধাহীন প্রজননের জন্য অনেক জেলে নৌকা ডাঙ্গায় তুলে রেখেছেন। বিভিন্ন ঘাটে জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বরাদ্দকৃত চাল জেলেরা সময়মত পাচ্ছে না। যখন চাল পাচ্ছেন তখন জেলেদের কোনো উপকার হচ্ছে না। ফলে জেলেরা বাধ্য হয় মাছ শিকারে। এমন দুর্দশার সুযোগ নিয়ে কিছু সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী জেলেদের উৎসাহিত করছে সাগরে মাছ শিকার করতে। ফলে পরিবারের খাদ্যের যোগান দিতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গোপনে মৎস্য শিকারে সমুদ্র যাচ্ছে অনেক জেলে। এতে আইনের বেড়াজালে বন্দী হচ্ছে অনেক জেলে। ভ্রাম্যমান আদালতে গুনতে হচ্ছে জরিমানা। আবার অনেক সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। এতে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে সরকারের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও বাঁধাহীন প্রজননের উদ্যোগ।
স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের পানিসীমায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে ইলিশ মাছ শিকার করে। তারা বাংলাদেশী পতাকা ব্যবহার করে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ মাছ শিকার করে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার ইলিশ রক্ষার জন্য অবরোধ দিলেও ভারতীয় জেলেরা তা না মেনে ইলিশ শিকারে নেমে পড়েন।
পাথরঘাটা উপজেলার নিজলাঠিমারা গ্রামের জেলে খলিলুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোন কাজ জানা নেই জেলেদের। তাছাড়া মাত্র দু’এক মাসের জন্য কাজেও এদের কেউ নিতে চায় না। ফলে বাড়ীতে অলস সময় কাটাতে হয়। যাদের সামান্য পুঁজি বা সঞ্চয় থাকে তা দিয়ে পরিবারের ভরণ-পোষন বহন করতে পারলেও অধিকাংশ জেলে পরিবার দু-এক বেলা কিংবা আধা পেট খেয়ে দিন পার করে। তিনি জেলেদের জন্য সরকারি নিয়মে রেশন কার্ড দেয়ার দাবি জানান।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় তারা কোন সুফল পাচ্ছে না। ভারত-বাংলাদেশ একই সময়ে সমুদ্রে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক। অনেক জেলে আসেনি এখনো নিবন্ধনের তালিকায়। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ট্রলার মালিকদের ঋণ সহায়তার দাবি জানান।
জেলা মৎস্য অফিসের সহকারী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বরগুনা জেলায় মোট নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৪০ হাজার ৫শ’ ২১ জন জেলে পাবে খাদ্য সহায়তা ৮৬ কেজি করে চাল।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য প্রশাসন বাংলাদেশের সামুদ্রিক পানিসীমায় সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সকল প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে। গতকাল মধ্য রাত থেকে থেকে ২৩ জুলাই রাত বারোটা পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ উদ্যোগ সফল করতে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রচার প্রচারণাসহ বিভিন্ন জায়গায় তারা মতবিনিময়ের সভা করেছে।
কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মৎস্যজীবী, মৎস্য ব্যবসায়ী, ট্রলার ও নৌকা মালিক, জেলে, আড়তদার এবং বরফকল মালিকদের নিয়ে মৎস্য বন্দর আলীপুর, মহিপুর, কুয়াকাটা, গঙ্গামতি, চাড়িপাড়া, ঢোস, দেবপুর, পাটুয়াসহ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে জনসচেতনতামূলক সভা করেছে। সরকার ঘোষিত ৬৫ দিনের সরকারের অভিযান সফল করতে সভায় অংশগ্রহনকারীরা মাছ আহরণ, বিপনন থেকে বিরত থাকতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন।
জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এমনিতেই এবার তারা মাছ পায়নি। বিভিন্ন ধার-দেনায় জর্জরিত। গত সপ্তাহে বয়ে যাওয়া মোখায় সবাই বসে বসে খেয়েছে। মোখা চলে যাওয়ার পর কিছু কিছু মাছ ধরার ট্রলার সাগরে মাছ শিকারে গেলেও ফিরে আসছে শুণ্য হাতে। এ পরিবার পরিজন নিয়ে সময় কাটছে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মাঝে। এক দিকে পরিবারের মুখে ভাত ব্যবস্থা করা অন্য পাশে ঋণের বোঝা। তারা দাবি করে বলেন, আমরা অবরোধ সময় যে পরিমানে চাল পাই, তা সামান্য। অবরোধকালীন সময় আমরা অন্য কোন কাজ করতে পারি না। হয় আমাদের জন্য ভিন্ন পেশার ব্যবস্থা করা, না হয় বাড়তি চালের ব্যবস্থা করা দরকার।
মহিপুরের নজীবপুরের সোহেল নাজীর বলেন, অবরোধ সময় আমরা শুয়ে বসে সময় পার করি। আর ফাঁকা মাঠে গোল দেয় ভারতীয় জেলেরা।
গঙ্গামতির জেলে মো. ছলেমান বলেন, মাত্র ৬৫ কেজি চালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। অথচ আমাদের কত খরচ সংসারে। অবরোধ দেলে পুরো সাগরই ফ্রি থাকবে কিন্তু সাগরে ভারতের জেলেরা মাছ ধরে আরামে। এগুলো সরকার কেন দেহে না। আল্লাহ ভরসার স্বত্তাধিকারী লুনা আকন বলেন, অবরোধ সময়ে জেলেরা খুব কষ্টে থাকে। এ বছর জেলেদের জালে তেমন কোন মাছ আসেনি। এমনিতে কষ্ট এখন আরো কষ্ট বাড়বে। আমার মনে হয় অনেক জেলেরা পেশা পরিবর্তন করবে।
কলাপাড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহ জানান, এ সময় কলাপাড়া উপজেলায় নিবন্ধিত ১৮ হাজার ৩৫০ জন জেলেকে সরকারের পক্ষ থেকে ৪২ কর্মদিবসের জন্য মোট ৫৬ কেজি চাল ও বাকি ২৩ কর্মদিবসের জন্য মোট ৩০ কেজি চাল প্রদান করা হবে। শুধু মাত্র সাগরে মাছ ধরায় নিষেধ আছে। এ সময় তারা বিভিন্ন নদ নদীতে মাছ ধরতে পারবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
তেজগাঁও থানার হত্যা মামলা ইনু-মেনন-পলক-দীপু মনি, মামুন-রুপা-শাকিল গ্রেপ্তার
নিজ বাড়িতে কোয়াড নেতাদের আমন্ত্রণ জানালেন বাইডেন
ফিরলেন লিটনও, সঙ্গী পাচ্ছেন না শান্ত
থিতু হয়ে ফিরলেন সাকিব
হঠাৎ কেন ভারত সফরে যাচ্ছেন চীন ঘনিষ্ঠ মুইজ্জু
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ফের ৫ দিনের রিমান্ডে
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরীর পদত্যাগ
হেলিকপ্টারের তেল শেষ! ভোটপ্রচারে যেয়ে বিপাকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
নির্বাচনের পর শ্রীলঙ্কায় কারফিউ জারি
রামাল্লায় ভারী অস্ত্র নিয়ে আল জাজিরা অফিসে ইসরাইলি সেনাদের হানা
শান্ত-সাকিবের সাবধানী শুরু
ট্রাম্পের সঙ্গে আবারো মুখোমুখি হতে চ্যালেঞ্জ কমলার
পরিচারককে অপমান! মেয়েকে ‘শিক্ষা’ দিতে গিয়ে বিপাকে রণবীরের বোন
হার্ট অ্যাটাক করেছেন মাহমুদুর রহমান মান্না, হাসপাতালে ভর্তি
দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধে অচল তিন পার্বত্য জেলা
যুক্তরাষ্ট্র পৌঁছে প্রথম দিনেই বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে যে আলোচনা হলো মোদির
পাগড়ি বিতর্কে সাফাই দিয়ে বিজেপিকে তোপ রাহুলের
বিপুল সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাবে বাংলাদেশ : আশা ৪ মার্কিন সিনেটের
পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন ড. জাকির নায়েক
খালেদা জিয়া মানসিকভাবে অনেক শক্ত : মুশফিকুল আনসারী