লাগামহীন পেঁয়াজের দাম
১৯ মে ২০২৩, ১১:৩৯ পিএম | আপডেট: ১৯ মে ২০২৩, ১১:৩৯ পিএম
লাগাম ছাড়াই হু হু করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়ে এখন ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। এছাড়া আদা, রসুন, জিরাসহ অন্যান্য মশলার দামও বাড়ছে। সপ্তাহ দুয়েক আগেও রাজধানীর খুচরা বাজার থেকে ক্রেতারা দেশি পেঁয়াজ কিনেছেন ৪৫-৫০ টাকায়। বাড়তে বাড়তে গত বৃহস্পতিবার এবং গতকাল শুক্রবার সে দাম পৌঁছেছে ৮০-৮৫ টাকায়। মূল্যবৃদ্ধির চক্র থেকে রেহাই পাচ্ছেন না ঢাকার বাইরের ক্রেতারাও। ভারত সীমান্তবর্তী দিনাজপুরের হিলিতে তিন-চার দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৫ টাকা। অথচ দুই দিন আগেই বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কৃষকেরা যেন ন্যায্যমূল্য পান, সে জন্য পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে না। তবে দাম না কমলে কৃষি মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেবে। এমনকি গতকালও রংপুরে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে একই হুশিয়ারি দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। মন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারিও বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ কমাতে পারছে না। এদিকে করপোরেটসহ নানা সিন্ডিকেট মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ানবাজার, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। এসব বাজারে কয়েকজন বিক্রেতা জানান, ১৫ দিন আগেও ৫০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। কিন্ত সেই পেঁয়াজ বর্র্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। এদিকে বাজারে আদা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজিতে। চীন থেকে আমদানি করা ভালোমানের আদা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে মাসখানেক আগেও আদা বিক্রি হতো ১৮০ টাকায়। এছাড়া আমদানি করা রসুনের দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। কয়েকদিনের ব্যবধানে জিরার দাম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়।
সূত্র মতে, সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের বাজারের চালচিত্রে আসেনি কোনো পরিবর্তন। ক্রেতাদের দাবি এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও কমেনি পেঁয়াজের দাম। আড়তদার ও বিক্রেতারা বলছেন, আমদানির আগে কমবে না দাম। বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু করলে দাম কমে আসবে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও আগানগর কাঁচাবাজার ও পুরান ঢাকার শ্যামবাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
সূত্র জানায়, তেল-চিনি ও মুরগির পর এবার অস্থির পেঁয়াজের বাজার। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাড়ছে দাম। তবে চলতি সপ্তাহে দাম কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও এখনও কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। এতে দিশেহারা সাধারণ ভোক্তারা।
সরেজমিন পুরান ঢাকার শ্যামবাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ৫ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকা। আর আড়তদাররা ৫০ কেজির বস্তা প্রতি বিক্রি করছেন ৩ হাজার ৩০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। একই চিত্র কারওয়ানবাজারেও।
ক্রেতারা বলছেন, পেঁয়াজের দাম ধীরে ধীরে ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। মূলত আমদানির অজুহাত আর কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ইচ্ছে করে বাজারে সংকট সৃষ্টি করছে ব্যবসায়ীরা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোকাম থেকে বাড়তি দামে দেশি পেঁয়াজ কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি না হলে পরে দাম আরও বাড়তে পারে। কেরানীগঞ্জের আগানগর কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা পাভেল হোসেন বলেন, দিনকে দিন বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। পাশাপাশি অন্যান্য জিনিসের দামও বাড়তি। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজারে নিয়মিত মনিটরিং হয় না। সরকার নিয়মিত মনিটরিং করলে দাম কমে আসবে বলেও জানান তিনি। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, আড়তদাররা ঠিক মতো পেঁয়াজ সরবরাহ না করায় দাম বাড়ছে পেঁয়াজের। আড়ত থেকে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ৭০ টাকার ওপরে। তাই বাধ্য হয়েই ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা।
এদিকে পেঁয়াজ সঙ্কটের কথা স্বীকার করে আড়তদাররা জানান, বাজারে পেঁয়াজের আমদানি কম। চাষিরা ঠিকমতো পেঁয়াজ দিচ্ছেন না। পাশাপাশি বন্ধ বিদেশ থেকে আমদানিও। তবে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি চালু হলে দাম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে বলে জানান তারা।
শ্যামবাজারের মের্সাস নিউ বাণিজ্যালয়ের মালিক শহিদুল বলেন, সরকার পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। এই সুযোগে দাম বাড়চ্ছে প্রান্তিক চাষিরা। ফলে আড়তেও বাড়ছে দাম। শিগগিরই আমদানি চালু না হলে দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। আর কারওয়ানবাজারের আড়তদার আবু সোলায়মান বলেন, সরকার আমদানি চালু করলেই পেঁয়াজের দাম ১০ থেকে ২০ পড়ে যাবে। তাই দ্রুত পেঁয়াজ আমদানি করার দাবি জানান তিনি। সম্প্রতি কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার জানিয়েছেন, কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে পেঁয়াজ আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে পেঁয়াজের বাজার সবসময় মনিটর করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশি। তবে শিগগিরই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হবে।
পেঁয়াজের উৎপাদন, চাহিদা ও আমদানির তথ্য তুলে ধরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছিল, গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টনেরও বেশি। চলতি বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। আর বর্তমানে মজুত আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। আর গত ১১ মে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছিলেন, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন পর্যাপ্ত হওয়ায় আমদানি কমিয়ে দেয়া হয়েছিল, এখন প্রয়োজনে তা বাড়ানো হবে। এ ছাড়া বর্তমানে ঊর্ধ্বমুখী থাকা পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে থাকলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ বাড়ানো হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়। আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছে করে দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
হাঁটতে পারছেন খালেদা জিয়া, দোয়া চাইলেন দেশবাসীর কাছে
মধ্যরাতে অনশনে যোগ দিলেন জবির অর্ধশতাধিক ছাত্রী
রিয়ালকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে চ্যাম্পিয়ন বার্সা
গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে
৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?
মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,
আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ
তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!
সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,
গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা
দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ
চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২
স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব
শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস
শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম
ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ
ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন
পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ