হজের মাধ্যমে মানুষ জান্নাতি মানুষে রুপান্তরিত হয়
১৯ মে ২০২৩, ১১:৪৩ পিএম | আপডেট: ১৯ মে ২০২৩, ১১:৪৩ পিএম
ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম পবিত্র হজ। প্রত্যেক সমর্থবান মুসলমানের উপর হজ পালনকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ফরজ করছেন। মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহত্ত সম্মেলন ও মিলন মেলা পবিত্র হজ। হজ পালনের গুরুত্ব ও ফযিলত অপরিসীম। যার মাধ্যমে মানুষ পূর্বের গুনাহ্সমূহ থেকে মুক্ত হয়ে নেককার ও জান্নাতি মানুষে রূপান্তরিত হয়। সভ্য ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মকে আদর্শবান সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। হজের মাধ্যমে পরস্পরের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি পায়। গতকাল মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে জুমার খুৎবা পূর্ব পূর্ব বয়ানে খতীব মুফতী মাওলানা মাহবুবুর রহমান এসব কথা বলেন।
পবিত্র হজে গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি কোরআনের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন- মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বাইতুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ রাখে তাদের উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ করা ফরজ। আর কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন (সূরা আল ইমরান : ৯৭)।
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন- হে মানবসকল! আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর হজ ফরজ করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ করো। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! প্রতি বছর কি হজ করতে হবে? তিনি চুপ রইলেন এবং লোকটি এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করল। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে তা (প্রতি বছর হজ করা) ফরজ হয়ে যেতো, কিন্তু তোমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হতো না (সহীহ মুসলিম : ১৩৩৭)। অপর এক হাদিসে বর্ণীত আছে আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরে আসবে যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়েছিল (সহীহ বুখারী : ১৫২১)। খতীব বলেন, এসকল আয়াত ও হাদীস দ্বারা আমরা বুঝতে পারি হজের হুকুম কি এবং এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য কতখানি। আমাদের সমাজে অনেকেই আছে যারা লোক দেখানো ইবাদাত করে, মানুষের প্রশংসা ও সহানুভুতি প্রাপ্তির জন্য। তেমনি হজ পালনের মাধ্যমে সমাজে খ্যাতি ও সম্মান প্রাপ্তির আশা করলে উক্ত হজের মাধ্যমে ঐ ব্যক্তি কখনই আল্লাহ অনুগ্রহ প্রাপ্ত হবে না। বরং দুনিয়া ও আখিরাতে বিভিন্নভাবে অপদস্ত ও অপমানিত হবে। সুতরাং হজ কেবল আল্লাহর রাজি-খুশির নিমিত্তে পালন করতে হবে। হজের মাধ্যমে যে শিক্ষা পেয়ে থাকি তা পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পরবর্তী সময়ে সকল কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং ইসলামি মূল্যবোধ উপলব্ধি করে ইবাদাত বন্দেগীর মাধ্যমে নিজের জীবন সাজাতে হবে। তাহলেই হজে পরিপূর্ণ সাওয়াব ও দুনিয়া-আখিরাতে কামিয়াবি লাভ করা সম্ভব।
প্রসঙ্গক্রমে খতীব বলেন, আজ সমাজের যে দিকেই তাকাবেন অন্যায় অত্যাচার, অনৈতকতা যেন মামুলি ব্যাপার। দ্বীনি শিক্ষা তথা ইসলামি মূল্যবোধ থেকে ক্রমশ মানুষ দূরে সরে যাওয়ায় সারাবিশ্ব বিশৃঙ্খল হয়ে যাচ্ছে। হৃদয়ে আল্লাহর ভয় ও রাসূল (স.) এর ভালবাসা না থাকায় ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ, সন্তানের কাছে পিতা মাতা অসহায় সর্বপরি ভ্রাতৃত্ববোধ লোপ পাচ্ছে। কোরআন হাদিসের অনুকরণে জীবন পরিচালনা না করায় অপরাধমূলক কর্মকান্ড বেড়েই চলছে অবিরাম। পত্রপত্রিকা খুললেই গুম, খুন, ধর্শন, ছিনতাই এর খবরে হৃদয় কেঁপে উঠে। ইদানিং সন্তনের দ্বারা পিতা-মাতা হেনস্তা, খুন, যুলুম, অত্যাচারের খবর বারবার আলোচনায় আসছে। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন- আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল। আর তাদের উভয়ের জন্য দয়া পরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, ‘হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন (সূরা বনী ইসরাইল ২৩-২৪)। খতীব উপস্থিত কিশোর ও যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন- মনেরেখ সন্তানের সাফল্যের পেছনে যেমনিভাবে পিতা-মাতার দুয়া অবধারিত, ঠিক তেমনিভাবে তাঁদের একটি দীর্ঘশ্বাস আপনার পতনের কারণ হতে পারে। তাই আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ি দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জনের জন্য পিতামাতার অনুগত থাকতে হবে। কখনই এমন কোন আচরণ করা যাবে না যাতে, তারা কষ্ট পায়। একই সাথে পিতামাতাগণের উচিত তাঁর সন্তানকে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করে ইসলামী মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। কেননা আল্লাহর ভয় ও রাসূল (সা.) এর প্রতি ভালবাসা থাকলে, ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত হলে, কোরআন হাদিস চর্চা করলে কখনই সন্তান পিতামাতাসহ বয়জেষ্ঠ্যদের সাথে দুর্ব্যাবহার, অসদাচরণ করার দুঃসাহস করবে না। কেননা তখন তারা এর ভয়াবহ পরিণতি সম্বন্ধে ওয়াকিফাল থাকবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে কবুল করুন। আমীন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
তোফাজ্জলকে হত্যার আগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয় পরিবারের কাছে
বিশ্বের কাছে ১২টি পরমাণু গবেষণার ও স্থাপনা উন্মুক্ত করবে চীন
এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস
লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের
সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক
ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!
যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা
তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল
৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে
ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু