প্রতারণা মামলায় গায়ক নোবেল রিমান্ডে
২০ মে ২০২৩, ১০:২৯ পিএম | আপডেট: ২১ মে ২০২৩, ১২:০২ এএম
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গাইতে না গিয়ে এক লাখ ৭২ হাজার টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় সংগীতশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেলের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল শনিবার তাকে আদালত হাজির করা হয়। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তিনদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে ডিবি। অন্যদিকে তার আইনজীবী জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবীর এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গতকাল সকালে গায়ক নোবেলকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, গত ১৬ মে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬-এর প্রতিনিধি মো. সাফায়েত ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। ১৭ মে আদালত এ মামলার এজাহার গ্রহণ করে আগামী ৯ জুলাই প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বিষয় জানতে চাইলে মতিঝিল থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রতারণার অভিযোগে নোবেলের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় গান গাওয়ার কথা বলে গান না গাওয়ায় অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলায় সাফায়েত ইসলাম অভিযোগ করেন, তিনি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। ২০১৬ সালে যারা ওই প্রতিষ্ঠানের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন, তারা পুনর্মিলনী উপলক্ষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। পরে শিল্পী হিসেবে নোবেলের সঙ্গে তিনি মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। গত ২৫ মার্চ রাজধানীর মতিঝিলের হীরাঝিল হোটেলের দ্বিতীয় তলায় নোবেলের সঙ্গে তিনি ও তার এক বন্ধু বৈঠক করেন। সেখানে তাদের কলেজের অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য নোবেলকে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দেয়ার চুক্তি হয়। সেদিনই তাকে ১৫ হাজার টাকা দেয়া হয়। নোবেল জানান, অনুষ্ঠানের আগেই সব টাকা পরিশোধ করতে হবে। এরপর দুই দফায় তার ব্যাংক হিসাবে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা দেয়া হয়। নোবেল সেই টাকা তুলেও নেন। কিন্তু ২৮ এপ্রিল তিনি অনুষ্ঠানে আসেননি। তবে অনুষ্ঠানে না গিয়ে প্রতারণা করে এ অর্থ আত্মসাৎ করেন।
নেশা-উচ্ছৃঙ্খল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন নোবেল: গতকাল শনিবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, নোবেল বিভিন্ন জায়গায় প্রোগ্রাম করতে গিয়ে অতিরিক্ত মদ্যপান করে মাতাল অবস্থায় মঞ্চ ভেঙে ফেলেন- এমন অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। তিনি তার স্ত্রীকেও ব্যাপক মারধর করে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন। এসব নিয়ে তার স্ত্রীও আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ করেছে।
এছাড়া, বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ আসে যে, নোবেল টাকা নিয়ে প্রোগ্রাম না করে এসব টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আমরা নিয়ে এসেছি। যেহেতু তার নামে মামলা হয়েছে। সেই মামলার প্রেক্ষিতে তাকে আমরা আদালতে পাঠানো হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, তিনি অনেক সময় টাকা নিয়ে প্রোগ্রাম করতে যায় না। আর যদি যানও, সেখানে গিতে অতিরিক্ত মদ্যপান করে প্রোগ্রামের মঞ্চে ভাঙচুর করেন। এর প্রেক্ষিতে তাকে আমরা বিভিন্ন সময় বুঝানোর চেষ্টা করেছি। তার স্ত্রীও আমাদের কাছে তিন থেকে চার দিন এসে অভিযোগ দিয়েছেন। নোবেল তার স্ত্রীকে বিভিন্ন সময় মারধর করতেন। মারধর করার পর তাকে চিকিৎসাও করাতেন। তার স্ত্রী এসব বিষয়ে আমাদের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, নোবেলের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি, তার জীবনে অধঃপতন নেমে এসেছে। তাকে প্রতিদিন মদ পান করতে হয় এবং প্রতিদিন ৩-৪টি ঘুমের ওষুধ খেয়ে তাকে ঘুমাতে হয়। তিনি আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন, অন্য শিল্পীদের কাছ থেকে মদ্যপান, গাঁজা ও ইয়াবা সেবন শিখেছেন তিনি। আমরা তার কথায় বুঝতে পারি, তিনি এসব কারণে সারাদিন ঘুমান এবং সেই ঘুমের কারণে টাকা নিয়েও প্রোগ্রাম করতে যেতে পারেন না। অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খাওয়ার কারণে প্রোগ্রামের তারিখ দিলেও, তিনি যেতে পারেন না। নেপথ্য চক্রের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, এ বিষয়ে উনার স্ত্রী বিস্তারিত বলতে পারবেন। তবে এসব অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখছি। তাকে রিমান্ডে এনে আমরা এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করব।
নোবেলের মাদকাসক্তির পেছনে কয়েকজন শিল্পী ও এয়ার হোস্টেজ দায়ী: গতকাল মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের নোবেলের সাবেক স্ত্রী মেহরুবা সালসাবিল মাহমুদ অভিযোগ করে বলেছেন, নোবেলের মাদকাসক্তির পেছনে কয়েকজন শিল্পী ও আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করা বিমানের এয়ার হোস্টেজ জড়িত। তারাই নোবেলকে মাদক সাপ্লাই দিতেন।
নির্যাতন ও ডিবিতে আসার বিষয়ে সালসাবিল বলেন, নোবেল মাদকসেবন করে বাসায় এসে আমাকে নির্যাতন করতো। একদিন জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশ ডাকি। তারা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। নোবেল সেই পুলিশ সদস্যদের সামনে স্বীকার করে মাদক সেবনের কারণে আমাকে মারধর করেছে। এরপর আমি গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। যদিও পরে আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি এসব বিষয় নিয়ে নোবেলের সাবেক স্ত্রী কথা বলায় তাকে বিভিন্ন নম্বর থেকে হুমকি দেওয়া হতো। তবে জড়িত কারও নাম প্রকাশ করেননি নোবেলের স্ত্রী। নোবেলের সাবেক স্ত্রী আরও বলেন, ডিবি পুলিশের কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছি। তারা পুরো বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বলে জানিয়েছেন ডিবি কর্মকর্তারা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
নোয়াখালীতে চাঁদাবাজির অডিও ক্লিপ ফাঁস, যুবদল নেতা বহিষ্কার
কুলাউড়ায় টিলা কাটা ও বালু উত্তোলনের দায়ে আটক-১
ইউক্রেনের ঘাঁটি কুরাখোভ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে : মস্কো
আদমদীঘিতে মাদক বিরোধী প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত
উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ , সিউলে ব্লিংকেনের উপস্থিতির মাঝে উত্তেজনা বৃদ্ধি
ভারতেও ছড়াল এইচএমপিভি ভাইরাস, আক্রান্ত ২ শিশু
ফুলকপি উৎপাদন খরচ ১৫ টাকা বিক্রি ৫ টাকা: মাঠেই কেটে ফেলে রাখছে চাষিরা
ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রতি খালেদা জিয়ার যে মহানুভবতায় বিস্মিত আসিফ নজরুল
পঞ্চগড়ে শিবিরের নেতৃত্বে জুলফিকার-রাশেদ
নির্মাণের ৩৬ বছরে মেরামত হয়নি ভোলা বাস টার্মিনাল
সুবিধা বঞ্চিত গরীব অসহায়দের মাঝে এডভোকেট ফরহাদ ইকবালের শীতবস্ত্র বিতরণ
মুজিব ছিল ভারতীয় নকশা বাস্তবায়নের মূল খেলোয়াড়: মেজর ডালিম বীর উত্তম
মাসুদ-বাবরের রেকর্ড জুটি
ছাত্রলীগের শরীয়তপুর সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি সোহাগ বেপারী গ্রেপ্তার
বিনামূল্যে ফ্ল্যাট পাওয়া নিয়ে মিথ্যা বলেছিলেন টিউলিপ : ডেইলি মেইল
প্রতারণার মাধ্যমে ৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, ৩০ মামলার আসামী গ্রেপ্তার
‘ডিবি অফিসে আর কোনো ভাতের হোটেল হবে না’
রাজবাড়ীতে ট্রেনে কাটা পড়ে বৃদ্ধার মৃত্যু
সিলেটে ক্রিকেট উন্মদনা শুরু
ইসরায়েলের কারাগার থেকে জর্ডানিয়ান চিকিৎসকের মুক্তি