উবে গেল রফতানি সম্ভাবনা
২৪ মে ২০২৩, ১১:৩২ পিএম | আপডেট: ২৫ মে ২০২৩, ১২:০২ এএম
এক সময়ে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাজার পুরোটা প্রায় দখলে নিচ্ছিল বাংলাদেশের রহিম আফরোজ কোম্পানির ব্যাটারি, আইপিএস ও অন্যান্য সামগ্রী। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্টিল ও আয়রন শিল্প-কারখানায় উৎপাদিত এমএস রড, সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রী, ঢাকার এরোমেটিক সাবান, কেয়া কসমেটিক্স, তিব্বত-এর প্রসাধনী সামগ্রী, চট্টগ্রামের ১৯৪৭ গোল্লা সাবান এবং সবশেষে প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির হরেক পণ্যসামগ্রী ভারতের ওই অঞ্চলের বাজার ধরবে ধরবে অবস্থায় পৌঁছে যায়। তখনই শুরু হয় নয়াদিল্লির প্রচ- মাথাব্যাথা। সুকৌশলে থামানো হয় বাংলাদেশের উৎপাদিত উৎকৃষ্ট পণ্যসামগ্রীর ভারতে রফতানি বাজারের দুর্দমনীয় অগ্রযাত্রা। ভারতের ‘কৌশল’ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শুল্ক ও অশুল্ক (ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার) বাধা-প্রতিবন্ধকতার পাহাড়।
নয়াদিল্লির সরকারি নীতি-নির্ধারকরা জানেন, বাংলাদেশের গুণগত মানসম্পন্ন পণ্যের ব্যাপক চাহিদা উত্তর-পূর্ব ভারতে। কেননা ওই বিশাল অঞ্চলটি ভারতের মূল ভূখন্ড থেকে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন, দুর্গম, তুলনামূলক অনুন্নত, সুবিধা-বঞ্চিত এবং দীর্ঘ ঘুরপথ।
সর্বোপরি ভারতের মূল অংশের সাথে ভূমিবেষ্টিত হলেও বাংলাদেশের সন্নিকটে। এর ফলে বাংলাদেশের যেমন বাজার সম্ভাবনা ব্যাপক, একইভাবে দেশটির উত্তর-পূর্বের জনগণও সুলভে হরেক বাংলাদেশী পণ্য কিনতে পারেন। আট কোটিরও বেশি জনগণের বিরাট বাজার ‘দি সেভেন সিস্টার্স’। যেটি উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, অরুণাচল, নাগাল্যান্ড ও মনিপুর। তাছাড়াও এর পাশর্^বর্তী রাজ্য সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে এমনকি তামিলনাড়–-উড়িষ্যাসহ দেশটির অনেক অঞ্চল। চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দর, স্থলবন্দর এবং ৮টি করিডোর (রুট) ব্যবহার করে ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’ কিংবা ‘কানেকটিভিটি’র নামে ট্রানজিট সুবিধা পেয়ে গেল ভারত। গত ২৪ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে সরকারি আদেশে (এসআর) তা কার্যকর হলো।
২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিটি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়েছে। যা হল কার্যত ‘ভারত থেকে ভারতের পণ্যÑ ভারতের জন্য’। একমুখী ট্রানজিট ও করিডোর সুবিধাদানের ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি এবং তাতে উভয় দেশ লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা উবে গেল।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. আবুল কালাম আযাদ বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতে বাংলাদেশের উৎকৃষ্টমানের পণ্যসামগ্রীর রফতানি বাজার সম্ভাবনা প্রচুর। তাতে শুধু বাংলাদেশের লাভ হবে না, বরং উত্তর-পূর্ব ভারতের জনগণ কম দামে ভাল পণ্য কিনতে এবং জীবনমান উন্নত করতে সক্ষম হবে। তবে ভারত সহযোগিতা না করলে দেশটির ওই অঞ্চলের বাজার আয়ত্তে আনা সম্ভব নয়। ভারতের সাথে জেনারেল এগ্রিমেন্ট করা উচিৎ যাতে আমাদের গুণগত ভাল মানসম্পন্ন পণ্যসামগ্রী সেখানকার বাজারে প্রবেশাধিকার পায়। একরতফা ট্রানজিট সুবিধাদান করা হলেও দেশের রফতানি স্বার্থের নিশ্চয়তাটা রাখা হয়নি।
চট্টগ্রামের বনেদি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমাদের গুণগত মানসম্পন্ন পণ্যের প্রবেশাধিকার ভারতকে দিতে হবে। ভারতকে যুক্তি দিয়ে বিষয়টি উপলব্ধি করাতে হবে যে, এতে লাভ উভয় প্রতিবেশি দেশের। বাংলাদেশের পণ্য রফতানির বিরাট সুযোগ সেখানে বিদ্যমান। যেমন- সিমেন্ট, স্টিল, আয়রন থেকে শুরু করে গোল্লা সাবান পর্যন্ত ভারতের ভোক্তা সাধারণ সুলভে কিনতে পারবেন। অথচ ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাধা-বিপত্তির কারণে বাংলাদেশের পণ্যের প্রবেশাধিকার আটকে আছে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ট্রানজিট ও করিডোর ব্যবস্থায় এখন ভারতের পণ্য ভারতে যাবে। এর ফলে দেশের ব্যবসায়ী, শিল্পোদ্যোক্তাদের মাথায় হাত। তারা হতাশ।
ব্যবসায়ীরা আরো বলছেন, বাংলাদেশের উৎপাদিত শতাধিক ধরনের উৎকৃষ্টমানের নিত্য ও ভোগ্যপণ্য, শিল্প, আইটি ও সেবাখাতের সামগ্রীর উচ্চ চাহিদা তথা ব্যাপক রফতানি বাজার সম্ভাবনা রয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতে। একতরফা ট্রানজিটের ফলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলের রফতানি ব্যবসা-বাণিজ্য সর্বনাশের কিনারে। আগে ট্যারিফ নন-ট্যারিফ (শুল্ক ও অশুল্ক) বাধার বেড়াজালে দেশের উন্নতমানের পণ্যেরও ভারতে প্রবেশাধিকারে ছিল অঘোষিত নিষেধাজ্ঞার বেড়াজাল। ট্রানজিট চালুর সাথেই আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি থমকে গেছে।
নব্বইয়ের দশকে আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের পণ্য রফতানি শুরু হয়। ২০১০ সালের ১৩ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হয় এটি। এরপর প্রতিদিনই কয়েক কোটি টাকার সিমেন্ট, এমএস রড, পাথর, কয়লা, প্লাস্টিক, মাছ, ভোজ্যতেল ও নির্মাণ সামগ্রী ভারতে রফতানি হচ্ছিল। তিন শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আগরতলা দিয়ে যেত।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশের উৎপাদিত ওষুধ ও পেটেন্ট সামগ্রী, ভেষজ দ্রব্য, শাড়ী, বস্ত্র ও তৈরি পোশাক, ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রনিক পণ্যসামগ্রী, সিরামিক পণ্য, প্লাস্টিকজাত দ্রব্যাদি, আসবাবপত্র, কৃত্রিম অলংকার-গহনা, তথ্য-প্রযুক্তি, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, কেবলস, লোহা ও স্টিল সামগ্রী, সিমেন্ট, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও বেকার্স খাদ্যদ্রব্য, খেলনাসহ সেবা পণ্যের ব্যাপক রফতানি বাজার চাহিদা রয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ছাত্রজনতা হত্যার নির্দেশদাতা বিতর্কিত পুলিশ সদস্যরা এখনো লাপাত্তা
রোগীদের সুস্থ করে তুলতে ‘রোবটের মতো’ কাজ করেছে লেবাননের যে চিকিৎসক
মোদীর সফরের আগে ভারত সরকারের নামে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা পান্নুনের
মিয়ানমার থেকে মণিপুরে অনুপ্রবেশ ৯০০ জঙ্গির, দাবি ভারতের
৪৩ দিন পর কাজে ফিরলেন আর জি করের জুনিয়র চিকিৎসকরা
গিল-পান্তের ব্যাটে পিষ্ট বাংলাদেশ
ফের মৃত্যুর খেলা! ‘স্কুইড গেম সিজন ২’র টিজারে বিপদের বার্তা
অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি কচুয়ায় যুবলীগ নেতার ৪টি দোকান পুড়েছে দুর্বৃত্তরা
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বিএনপির দু’পক্ষে সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক
লেবাননের বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪
রাঙামাটিতে সেনা, বিজিবি ও পুলিশের টহল, পরিস্থিতি শান্ত
পরমাণু দূষিত পানি নিয়ে চীন ও জাপানের কিছু ঐকমত্য
ঝিকরগাছায় বিএনপি নেতা খায়রুজ্জামান মিনুসহ ২১ নেতাকর্মী বহিষ্কার
হিজবুল্লাহর ভয়ে ইসরাইলিদের আশ্রয়কেন্দ্রের কাছে থাকার নির্দেশ
ভারতের ঘুম হারাম করে পাকিস্তানকে ভয়ঙ্কর হেলিকপ্টার দিচ্ছে চীন
পাকিস্তানে সেনানিবাসে আত্মঘাতি হামলা, সেনাসহ নিহত ১৮
জুলাই বিপ্লবে শহিদের সংখ্যা ১৪২৩, আহত ২২ হাজার
নড়াইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জুয়েল গ্রেফতার
বিচারবিভাগ নিয়ে আজ রোডম্যাপ দেবেন প্রধান বিচারপতি
নেছারাবাদে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার নিহতদের স্মরণে বিএনপির আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল