গাজীপুরে যে কারণে হারলো আওয়ামী লীগ
২৬ মে ২০২৩, ১১:৩০ পিএম | আপডেট: ২৭ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর হারের পর আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সমীকরণ এমন হতেই পারে। তবে বর্তমান সরকারের সময়েও যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। তা এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রাণিত হয়েছে। তবে নৌকার পরাজয়ের কারণ হিসেবে মূলত আওয়ামী লীগের সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলছেন, নৌকার প্রার্থী কোন ক্রমেই গাজীপুরে জাহাঙ্গীর আলমের যে বলয় তা ভাঙ্গতে পারে নি। কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা ‘বলয়ের’ বিষয়ে দলের হাইকমান্ডকে দীর্ঘদিন অন্ধকারে রাখায় এ বিষয়টিকে অনেকে অবমূল্যায়ণ করে গেছেন।
বিএনপি বিহীন এ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে কঠিন চ্যালেঞ্জ দিয়ে জয়লাভ করেছেন আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত নেতা জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। এবার সিটি নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি বিএনপি ও জামায়াত। মাঠে ছিলেন জাতীয় পার্টিসহ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে কেন নৌকার প্রার্থীর এমন পরাজয় তা এখন সারা দেশে আওয়ামী লীগের প্রধান আলোচ্য বিষয়।
স্থানীয় ভোট বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নির্বাচনে জায়েদা খাতুন টেনেছেন বিএনপি ও জামায়াতের ব্যাপক ভোট। এর বাইরে আওয়ামী লীগের একটি অংশের ভোটও জায়েদা খাতুনের পক্ষে গিয়েছে। এর ফলে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানের বড় ব্যবধানে পরাজয় হয়েছে। তারা মনে করেন, এবারের এ নির্বাচনে জয়ে প্রধান নিয়ামক হয়েছেন ভাসমান ও নতুন ভোটারা। যারা মূলত জায়েদা খাতুনকে ভোট গিয়েছেন। এ ছাড়া দীর্ঘ দিন এ এলাকায় মেয়র ছিলেন জায়েদা খাতুনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। ফলে তার রয়েছে একটি বিশাল ‘বলয়’ । সেই বলয় কোন ক্রমেই ভাঙ্গতে পারেন নি নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা। নির্বাচনের আগে উল্টো জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিস্কার করায় তার অনেক কর্মী যারা মুখে নৌকার ভোট করলেও ভেতরে ভেতরে জায়েদা খাতুনের জন্য কাজ করেছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীও রয়েছেন।
গাজীপুর আওয়ামী লীগের মাঠ নেতারা বলছেন, গাজীপুর আওয়ামী লীগে রাজনীতিতে আজমত উল্লা খানের লম্বা ক্যারিয়ার থাকলেও তিনি আওয়ামী লীগের বাইরেও তরুন ভোটারদের মতামতের সঙ্গে একাত্মা হতে ব্যর্থ হয়েছেন। দলীয় পদে থাকার সময় জাহাঙ্গীর আলম মহানগরে যে ‘বলয়’ তৈরী করেছিলেন তাও নৌকার প্রার্থীর পরাজয় নিশ্চিতে কাজে লাগানো হয়েছে। ওই বলয়ের অনেকে এক সময় বিএনপি- জামায়াতে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল।
এ বিষয়টিতে নৌকার প্রার্থীর হারে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারাও। স্থানীয় ভোটাররা মনে করেন, এ নির্বাচনে জয়ে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন, এলাকার নতুন ভোটার, শ্রমিক, বস্তিবাসী, শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের সমর্থন, বিএনপি-জামায়াতের ভোটাররা।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নৌকার ব্যাচ ধারণ করে অধিকাংশ কেন্দ্রেই অবস্থান নিয়েছিলেন জাহাঙ্গীরের কর্মী-সমর্থকরা। তারা নিজেরা নৌকার পক্ষে অবস্থান নিলেও শেষ পর্যন্ত টেবিল ঘড়ি প্রতিকে ভোট দিয়েছেন। দলের এই সকল ছদ্মবেশী ভোটারের কারণেই নৌকার পরাজয় হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে ওই নির্বাচনে জয়লাভ আওয়ামী লীগের জন্য এই বড় এসিড টেষ্ট হিসেবেই দেখেছেন স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হারের পরও শুক্রবার দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গাজীপুরের সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের সমন্বয়ক টিমের সদস্য সচিব মির্জা আজম বলেন, জয় পরাজয় হতেই পারে। তবে গাজীপুর সিটিতে জাহাঙ্গীর আগে মেয়র থাকায়, সে নির্বাচনের অনেক কিছুই জানে যা তার মায়ের জন্য কাজে লাগিয়েছেন। সেখানে আমাদের ওয়ার্ড পর্যায়ে অর্থাৎ তৃণমূল নেতা-কর্মীরা জাহাঙ্গীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগটা ছিল বেশি। এছাড়া বিএনপি-জামায়াত, হেফাজত ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি গুলো মিলে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমনটা হতে পারে।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক নয়। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে যা হয়েছে তা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবে না। কারন সে ক্ষেত্রে দলীয় নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থেকে নৌকার প্রার্থীকে জয় করবে। তবে এই নির্বাচনের কোথাও কারো গায়ে একটি আচরও লাগেনি। সকল প্রার্থী অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা স্বীকার করেছেন। এটি জাতীয় নির্বাচনের একটি মেসেজ যে- বাংলাদেশ বর্তমান সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।
আওয়ামী লীগের সদস্য ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে দলীয় টিমের সদস্য নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেন, সেখানে জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিল, তাই ওয়ার্ল্ড ও থানার কমিটি গুলো তার অনুসারীরাই বেশি। এবং স্বাধীনতা বিরোধীরাও নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছে। কিন্তু গাজীপুর সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে এ সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রমাণিত হয়েছে।
তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলছেন, এ নির্বাচনে প্রচুর টাকা খরচ করেছেন গাজীপুরের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত নেতা জাহাঙ্গীর আলম। তারা বলছেন, নীতি ও আদর্শবান নেতা আজমত উল্লাহ খানের পরাজয় দলের জন্য একটি বড় বার্তা। নৌকার প্রার্থী আজমতের বড় অযোগ্যতা ছিল টাকা। টাকা না থাকায় তিনি দলেও অনেককেই খুশি রাখতে পারেননি। এখন দলে সৎ মানুষের মূল্য নেই। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, গাজীপুরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল কাউন্সিলরা। এদের মধ্যে অেেনক জায়েদা খাতুনের পক্ষে কাজ করলেও নৌকার ব্যাচ নিয়ে ছিলেন। এদের অনেকে নৌকার ব্যাজ লাগিয়ে ভোট চেয়েছেন জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের জন্য।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল এক নেতা মনে করেন, গাজীপুরের হারের কারণ স্থানীয়ভাবে সেখানে আওয়ামী লীগের গত কয়েক বছরের গ্রুপিং, বিভেদ ও কোন্দল।
দলীয় কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এখানে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বেশ আগে থেকেই ‘মাই ম্যান’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার এ নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে দল। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও এর প্রভাব পরবে বলেও তিনি মনে করেন।
নির্বাচনে ইলেট্রনিক ভোটিং মেশিনে- ইভিএম ভোট গণনায় দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। পরাজয়ের পর এ ইভিএম প্রদ্ধতিতে যে সমস্যা হয়েছে তা স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানও। গত শুক্রবার তিনি বলেন, নির্বাচনে ইভিএমসহ আরও কিছু ত্রুটি ছিল, যা পর্যালোচনা করে খুঁজে বের করা হবে।
নৌকার প্রার্থী আজমত বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, কিছু কিছু ত্রুটি ছিল ইভিএমের কারণে, অনেকেই ভোট দিতে পারেননি। নির্বাচনের রেজাল্ট যা হয়েছে আমি রেজাল্ট মেনে নিয়েছি এবং যিনি বিজয়ী হয়েছেন তাকে আমি অভিনন্দন জানাই। তিনি বলেন, আমি যেহেতু দলীয় প্রার্থী ছিলাম, সেহেতু পরাজয়ের কারণ পর্যালোচনা করা হবে। পরাজয়ের কী কী কারণ ছিল তা খুঁজে বের করা হবে।
মানবিক অবক্ষয়ে বাড়ছে নিষ্ঠুরতা
ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব, সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ও এর জন্য দায়ী। আগে একজন মানুষের চরিত্র গঠনের পেছনে পরিবার, সমাজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে ভ’মিকা ছিল এখন আর সেটা নেই- অধ্যাপক ড. জিয়াউর রহমান দেশে যতক্ষণ অস্থিরতা থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সামাজিক, পারিবারিক সহিংসতা বাড়বে। ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব, নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের অভাবে পরিবারিক বন্ধন ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে-মো. নূর খান
সাখাওয়াত হোসেন
সমাজে কোমলমতি শিশু-নারী ও অসহায় পিতা-মাতা নির্যাতনসহ তুচ্ছ কারণে খুনখারাবি, নৃশংসতা, বর্বরতা ও নির্মমতার ঘটনা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। মানুষ কেন এমন জঘন্য অপরাধমূলক কর্মকা- ঘটাচ্ছে, কেন পশুর মতো এতটা হিংস্র ও নৃশংস হয়ে উঠছে? কেনই-বা মানুষ নিজের ‘মান’ আর ‘হুঁশ’ হারিয়ে অমানুষ হয়ে যায়? মানবাধিকার ও সমাজকর্মী, অপরাধ বিশ্লেষক, মনোবিজ্ঞানী, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এসব নৃশংসতার জন্য দোষী ব্যক্তিদের যথাসময়ে বিচারের মুখোমুখি করতে না পারাকে দায়ী করছেন; একই সঙ্গে তারা ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব, সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়কেও দোষারোপ করছেন। যদিও পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের পূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকে আমি ধ্বংস করেছি, যখন তারা সীমা অতিক্রম করেছিল। স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাদের কাছে তাদের রাসুল এসেছিল, কিন্তু তারা বিশ্বাস করার জন্য প্রস্তুত ছিল না। এভাবে আমি অপরাধী সম্প্রদায়কে প্রতিফল দিয়ে থাকি।’ (সূরা ইউনুস, আয়াত: ১৩)
স্বদেশ মানব কল্যান সোসাইটির সভাপতি আব্দুস সালাম চৌধুরী বলেন, স্বাধীন দেশেও চারদিকে এ ধরনের অবক্ষয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা সত্যিই ভাবনার বিষয়। সামাজিক বন্ধন আজ হুমকির সম্মুখীন। মানুষের জীবনও তুচ্ছ। তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের খুন-গুম কিংবা নিষ্ঠুরতার জন্য কঠোর আইন রয়েছে। প্রচলিত আইনে এসবের বিচারও হচ্ছে। কিন্তু এর পরও থেমে নেই অমানবিকতা। এ জন্য নেতৃত্বের অসুস্থ বিবেককে সর্বপ্রথম সুস্থ করে তুলতে হবে। আইনের মাধ্যমে একজনকে কারাবন্দি করে রাখা যায়। তার মন আটকে রাখা যায় না। প্রত্যেকটি মানুষ যদি তার পরিবার ও সমাজ থেকে নৈতিকতা, দায়বদ্ধতা ও মানবিকতাসহ ধর্মীয় শিক্ষা পায় তখনই একটি সুন্দর সমাজ সৃষ্টি হবে। তবেই আমরা নিরাপদে মুক্ত বাতাসে ঘুরতে পারবো।
গত শনিবার ২০ মে ৮৮ বছরের বৃদ্ধা মা বেগম খাতুনকে পরিবারের বোঝা মনে করে নির্জন বিলে ফেলে পালিয়ে গেছে সন্তান। এমনই এক অমানবিক ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুসল্লি ইউনিয়নের নির্জন ভারুয়া বিলে। পরে খবর পেয়ে অসহায় বৃদ্ধাকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে নান্দাইল থানা পুলিশ।
নান্দাইল থানার ওসি রাশেদুজ্জামান জানান, সিআইডি পুলিশের সহযোগিতায় ওই নারীর আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে জানা গেছে, তার নাম বেগম খাতুন (৮৮)। তিনি জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলার পাগলাপাড়া জয়গঞ্জ বাজার এলাকার ৭নং ওয়ার্ডের নিজাম উদ্দিনের স্ত্রী।
তিনি আরও জানান, কঙ্কালসার ওই বৃদ্ধার ডান চোখের ওপরে মাথার একাংশজুড়ে বড় টিউমার রয়েছে। ফলে তার ডান চোখ লালচে হয়ে মাংসপি-ের মতো বের হয়ে আসার অবস্থা। শারীরিকভাবেও তিনি খুব অসুস্থ, দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। তার মুখের কথাও অস্পষ্ট। এ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তার উন্নত চিকিৎসা অতি প্রয়োজন। অসহায় ওই নারীকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, তার ছেলে তাকে তিন দিন আগে চোখ-মুখ ঢেকে ওই বিলে ফেলে রেখে যায়। এরপর আসবে বলে পরে আর আসেনি।
স্থানীয়রা জানান, ভারুয়া বিলটি নির্জন এলাকা। ওই বিলে লোকজনের যাওয়া আসা অনেক কম। গত কয়েক দিন বৃষ্টি হওয়ায় এলাকার লোকজনের বিলে যাওয়া-আসা নেই বললেই চলে। এরই মধ্যে স্থানীয় ফারুক মিয়া নামের এক তরুণ নিজের পালিত হাঁসের খোঁজে শনিবার বিলের মাঝখানে যায়। সেখানে গিয়ে সে দেখতে পায়, একটি উঁচু মাটির টিলায় ঝোপের মধ্যে পড়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধা। কোনো নড়াচড়া নেই। মশা-মাছি ও বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ তার শরীরে ও আশপাশে ঘিরে ধরেছে। তখন কাছে গিয়ে দেখতে পায়, অস্পষ্টভাবে শব্দ করছেন ওই বৃদ্ধা। তাৎক্ষণিকভাবে ফারুক মিয়া প্রতিবেশী রুবেল নামের এক যুবককে ডেকে এনে সেখান থেকেই ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে। গত ৯ মে মঙ্গলবার সকালে উপজেলার সিংগুরিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার পশ্চিম পাড়া কবরস্থান জামে মসজিদের পাশ থেকে রাইসকুকারের কার্টনে রাখা নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় একটি চিরকুট পাওয়া যায় যাতে লেখা ছিল, ‘দয়া করে আপনারা কেউ দাফন করুন, কিছু টাকা রেখে গেলাম। বাচ্চাটা ১২ ঘণ্টা বেচে ছিল।’
এ ঘটনায় মসজিদের ইমাম গোলাম মোস্তফা জানান, ফজরের নামাজ ও সকালে মক্তব শেষে বাড়িতে ধানের কাজ করছিলাম। সে সময় খবর আসে মসজিদের দরজার পাশে একটি রাইসকুকারের কার্টন রাখা। এটি দেখে কেউ কেউ ধারণা করছিল কার্টনে অন্যকিছু থাকতে পারে। তাই ভয়ে কেউ কার্টনটি খুলতে সাহস পাচ্ছিল না। এরপর ঘটনাস্থল মসজিদে এসে দেখি সামনের দরজার পাশে কার্টন। পরে মসজিদ কমিটির লোকজনদের সঙ্গে নিয়ে কার্টনটি খুলে দেখি ফুটফুটে এক মৃত নবজতাক। সঙ্গে কাগজে লেখা একটি চিরকুর রয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে নবজাতকটি দেখতে ভিড় করে। তারপর পুলিশকে খবর দিলে নবজাতকের লাশ উদ্ধার করেন।
গত ৯ মে সোমবার শিহাব নামে একজন তার বান্ধবী নিয়ে চট্টগ্রামের স্টেডিয়াম এলাকায় বসে ছিলেন। এ সময় রবিউল নামে একজন এসে শিহাবকে বলেন, ‘এই মেয়ে তোর সঙ্গে যায় না’। বান্ধবীর সামনে এমন কথা বলায় ক্ষিপ্ত হন শিহাব। দুজনের মধ্যে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে মারামারি হয়। এরপর দুজনই তাদের বন্ধুবান্ধবদের খবর দেন।
একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে শালিস বসে পাহাড়তলী থানার বিটাক মোড় এলাকায় নেতা ইলিয়াসের অফিসে। সেখানে বিচারের একপর্যায়ে ইলিয়াস আদেশ দেন ‘শালাদের মার’ বলে। নেতার আদেশ পেয়ে ফয়সাল, বাবু, বিপ্লব, কার্তিকসহ আরও ১০ থেকে ১৫ জন মিলে মাসুম এবং সবুজকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশ পশ্চিম জোনের ডিসি জসীম উদ্দিন বলেন, কথিত শ্রমিক নেতা ইলিয়াসের অফিসে শালিসি বৈঠকের সময় হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করে জড়িতদের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তারা হত্যাকা-ের বিষয়টি স্বীকার করেছে। মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়াউর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, তুচ্ছ কারণে এসব অপরাধ থেকে উত্তরণ দ্রুত সময়ে ঘটবে না। এ জন্য বিচার ব্যবস্থা, পুলিশ এবং কারাগার এই তিনটি জায়গা ঢেলে সাজাতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে সময়োপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করে পুরো বিচারব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। অন্যায়কারীর শাস্তি হলে তা দেখে অন্যরা অন্যায় কাজে নিরুৎসাহ হবে।
তিনি আরো বলেন, ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব, সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ও এর জন্য দায়ী। আগে একজন মানুষের চরিত্র গঠনের পেছনে পরিবার, সমাজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে ভ’মিকা ছিল এখন আর সেটা নেই। আমরা আধুনিক হচ্ছি বা উন্নত হচ্ছি কিন্তু তার সাথে তাল মিলিয়ে সমাজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটছে না। পুরাতন প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পরার কারনে সমাজের মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ কমে যাচ্ছে। পরকীয়া, ফেসবুকের অপব্যবহার, আধিপত্য সার্বিক পরিস্থিতিটাই অন্য রকম হয়ে গেছে। প্রাপ্তির প্রত্যাশাটা যখন বেড়ে যায়, আর সে অনুসারে প্রাপ্তি হয় না, তখনই একটা গ্যাপ তৈরি হয়ে হতাশা জন্ম নেয়। এসব তুচ্ছ কারণে অনেকে হত্যা বা আত্মহত্যায় ঝুঁকছে। এ ছাড়া সার্বিকভাবে পারিবারিক বন্ধনটাও নড়বড়ে হয়ে গেছে। সেটাতে জোর দিতে হবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান ইনকিলাবকে বলেন, দেশে যতক্ষণ অস্থিরতা থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সামাজিক, পারিবারিক সহিংসতা বাড়বে। নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের অভাবে পরিবারিক বন্ধন ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। এর পাশাপাশি সহনশীলতার মাত্রা কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া সামাজিক অস্থিরতার জন্য জীবনে বাড়ছে হতাশা, মানসিক বিষণœতা ও আর্থিক দৈন্য। ফলে সমাজে বেড়ে চলেছে অপরাধ। এ অপরাধ এখন পরিবারে ঢুকে পড়েছে। অন্যদিকে সমাজে ভোগবাদী প্রবণতা বৃদ্ধিও এর একটি কারণ।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনরার ডিবি হারুন উর রশীদ ইনকিলাবকে বলেন, একেবারে অপরাধ নেই এমনটা বিশ্বের কোথাও নেই। কারণ অপরাধ কখনো নির্মূল হয় না। তুচ্ছ ঘটনাসহ নানা কারণে যেসব খুনখারাবির ঘটনা ঘটছে তার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে ফৌজদারি অপরাধ কমেছে। অপরাধ দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নির্বিঘেœ কাজ করছেন। সামাজিক মূল্যবোধ এবং পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও মানুষের চাওয়া-পাওয়া উচ্চমাত্রায় বেড়েছে। যে কারণে তুচ্ছ ঘটনায় খুনোখুনি বেড়েছে। এক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

এরদোগানকে সউদী যুবরাজের অভিনন্দন

কালিয়াকৈরে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ২০ টি কক্ষ পুড়ে ছাই

শ্যামলীতে আগুন: একজনের লাশ উদ্ধার, নিরাপদে উদ্ধার ১৬জন

ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জনের ব্যাপারে বেনজেমা / 'বাস্তবতা ইন্টারনেটের জগৎ থেকে ভিন্ন'

সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬ পদ ফাঁকা

পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের জন্য যত বরাদ্দ

স্মার্ট দেশ গড়ার প্রত্যয়

মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির বঙ্গজয়-১

হজের সংক্ষিপ্ত নিয়ম ও জরুরি মাসায়েল-৫

দাম বাড়বে

দাম কমবে

চলমান সঙ্কট সমাধানের পথরেখা নেই : ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

সঙ্কট স্বীকার করা হয়নি ও সমাধানের কথাও নেই -সিপিডি

কর আদায়ের লক্ষ্য পূরণই চ্যালেঞ্জ -এফবিসিসিআই সভাপতি

সঙ্কটে ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট -ওবায়দুল কাদের

সরকার ঋণ করে ঘি খাচ্ছে : আমীর খসরু

এটা নির্বাচনমুখী বাজেট বাস্তবসম্মত নয় : জি এম কাদের

অর্থমন্ত্রী উন্নয়নের কথামালা দিয়ে বাস্তবতা অস্পষ্ট করেছেন -রাশেদ খান মেনন

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে পিটার হাসের বৈঠক

সুষ্ঠু নির্বাচনের কি ব্যবস্থা নিয়েছে ইসির কাছে জানতে চেয়েছে জাপান