চট্টগ্রাম নগরীর মাঝখানে নতুন সড়কে চলছে গাড়ি একাংশে কমছে যানজট

এক্সেস রোডে স্বস্তি

Daily Inqilab রফিকুল ইসলাম সেলিম

২৯ মে ২০২৩, ১০:৫১ পিএম | আপডেট: ৩০ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম

অবশেষে প্রস্তুত হয়েছে বহুল আলোচিত বাকলিয়া এক্সেস রোড। দফায় দফায় মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়ে শেষ করা হয়েছে নতুন এই সড়কের নির্মাণকাজ। সড়কে শুরু হয়েছে যানবাহন চলাচল। সৌন্দর্য বর্ধনসহ আর কিছু কাজ শেষে আগামী জুন মাসে সেটি যানবাহন চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হবে। এরমধ্যে সড়কটিতে গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ায় এলাকায় স্বস্থি বিরাজ করছে। চট্টগ্রাম নগরীর ঘনবসতিপূর্ণ বৃহত্তর বাকলিয়ায় কমে আসছে যানজট। খুব সহজে এই সড়ক হয়ে প্রতিদিন অনেকে গন্তব্যে ছুটছেন। বিতর্কিত একটি ১০ তলা ভবনের জন্য সড়কটির একশ’ মিটার অংশের কাজ প্রায় পাঁচ বছর ধরে আটকে ছিল। অবশেষে নতুন অ্যালাইনমেন্টে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। নগরীর চন্দনপুরা থেকে কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত এক দশমিক ৬শ’ কিলোমিটার দীর্ঘ বাকলিয়া এক্সেস রোড নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২০৫ কোটি ৪৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।

আন্দরকিল্লার নবাব সিরাজুদ্দৌলা রোড থেকে বাকলিয়া থানা ভবন পর্যন্ত (বহদ্দারহাট-কর্ণফুলী সেতু সংযোগ সড়ক) চার লেনের সড়কটি ৬০ ফুট প্রস্থ। সড়কটি সিরাজুদ্দৌলা রোডের ঐতিহাসিক চন্দনপুরা মসজিদের বিপরীত পাশে আয়েশা খাতুন লেইন দিয়ে আড়াআড়িভাবে গিয়ে চাক্তাই খাল পার হয়ে ডিসি রোড থেকে উত্তর-পশ্চিম কোণে বেঁকে বগার বিল, সৈয়দ শাহ রোড অতিক্রম করে বাকলিয়া থানার পাশে কর্ণফুলী সেতু সংযোগ সড়কে যুক্ত হয়েছে।

বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী সেতু হয়ে মইজ্জ্যার টেক পর্যন্ত ওই সড়কটি নগরীর প্রথম ছয় লেনের সড়ক। ওই সড়কে ওভারপাসের পাশাপাশি আন্ডারপাসও রয়েছে। বাকলিয়া এক্সেসে রোড নগরীর মধ্যবর্তি সিরাজুদ্দৌলা রোডের সাথে ওই ছয় লেনের সড়কের সাথে সেতুবন্ধন রচনা করেছে। এই সড়ক হয়ে দ্রুত সময়ে নগরীর বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও থেকে উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে সহজে যাতায়াত করা যাচ্ছে। সিডিএর উদ্যোগে নগরীর চাক্তাই থেকে কর্ণফুলী নদীর তীরঘেঁষে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে সাড়ে নয় কিলোমিটার দীর্ঘ আরো একটি আউটার রিং রোড। এই রোড চালু হলে নগরীর ওই অংশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। যানজটমুক্ত হবে মহানগরীর বিশাল এলাকা।

মহানগরীর একাধিক আবাসিক এলাকার ভিতর দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের নভেম্বরে। বাকলিয়া থানার কাছ থেকে শুরু হওয়া সড়কটির কাজ ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাকলিয়া ডিসি রোডে মৌসুমী আবাসিক এলাকায় সিডিএর অনুমোদন নিয়ে গড়ে ওঠা ১০ তলা একটি ভবন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। একটি বেসরকারি কোম্পানি ভবনটি নির্মাণ করে। ভবনটিতে ৩৭টি বিভিন্ন সাইজের ফ্ল্যাট তৈরি করে বিক্রি করে ওই কোম্পানি। তবে ভবনটি রাস্তার মাঝখানে পড়ায় প্রায় সাড়ে তিনশ’ ফুটের মতো জায়গায় রাস্তার নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে হয়।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) অ্যালাইনমেন্টের উপর গড়ে ওঠা ১০ তলা ভবনটি ভেঙে রাস্তাটির নির্মাণকাজ শেষ করার উদ্যোগ নেয়। তাতে বাধে বিপত্তি। ভবনটি ভাঙতে সিডিএকে ১১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়। আবার ভবন ভাঙার জন্য খরচ দাঁড়ায় চার কোটি টাকা। তাতে প্রকল্পের ব্যয় ১৫ কোটি টাকা বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারটি অনুমোদন করে অর্থের সংস্থান করার জন্য সিডিএ মন্ত্রণালয়ে যায়। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন না দিয়ে বিকল্প বের করতে বলা হয়। গঠন করা হয় টেকনিক্যাল কমিটি।
কমিটি ভবনটি না ভেঙে রাস্তার নকশা পাল্টানোর পরামর্শ দেয়। এতে ভবনটি রক্ষা পায় আর সিডিএর ১৫ কোটি টাকা খরচ সাশ্রয় হয়। নতুন নকশা মতে দ্রুত কাজ শেষ করা হয়। প্রকল্পটির আওতায় ৪১৭ দশমিক ৫০ কাঠা জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এছাড়া ড্রেন নির্মাণ, ৪টি বক্স কালভার্ট, ১০টি ক্রস কালভার্ট, ২০০টি স্ট্রিট লাইটও স্থাপন করা হয়।

ইতোমধ্যে সড়কটির কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। পিচ ঢালাইয়ের কিছু কাজ বাকি আছে। তা দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। তবে এরমধ্যে যান চলাচল শুরু হয়ে গেছে। সিডিএর কর্মকর্তারা বলছেন, যানজট কমানোর পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে নগরীর যোগাযোগ সহজ করার ক্ষেত্রে মাস্টারপ্ল্যানে রাস্তাটি প্রস্তাব ছিল। এছাড়া বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত ছয় লেনের সংযোগ সড়ক নির্মিত হলেও নগরীর বিস্তৃত এলাকার মানুষ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। বাকলিয়া এক্সেস রোড চালুর ফলে বহদ্দারহাট-কর্ণফুলী সংযোগ সড়কের সুফল বাকলিয়াসহ সন্নিহিত অঞ্চলের মানুষ পাবে। বিকল্প রোড চালু হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই নগরীর যানজট কমে যাবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

এবার রূপায়ণ সিটির সঙ্গি সাকিব

এবার রূপায়ণ সিটির সঙ্গি সাকিব

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ

শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করলো গণস্বাক্ষরতা অভিযান

শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করলো গণস্বাক্ষরতা অভিযান

নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতেই বিএনপির ভারত বর্জন কর্মসূচি : নাছিম

নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতেই বিএনপির ভারত বর্জন কর্মসূচি : নাছিম

জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান

জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান

সরকারের এমপিরা ঘোষণা দিয়ে লুটপাট শুরু করেছে- এবি পার্টি নেতা এড. তাজুল ইসলাম।

সরকারের এমপিরা ঘোষণা দিয়ে লুটপাট শুরু করেছে- এবি পার্টি নেতা এড. তাজুল ইসলাম।

চীনের সঙ্গে এফটিএ করতে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন বিনিময়

চীনের সঙ্গে এফটিএ করতে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন বিনিময়

স্বাধীনতা আন্দোলনের পেছনে অন্যতম কারণ ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি : শিল্পমন্ত্রী

স্বাধীনতা আন্দোলনের পেছনে অন্যতম কারণ ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি : শিল্পমন্ত্রী

আধিপত্যবাদী শক্তিকে সম্মিলিতভাবে  রুখে দিতে হবে

আধিপত্যবাদী শক্তিকে সম্মিলিতভাবে রুখে দিতে হবে

সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিদেশী প্রভুদের কাছে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে: আমিনুল হক

সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিদেশী প্রভুদের কাছে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে: আমিনুল হক

টাকার বিছানায় ঘুম

টাকার বিছানায় ঘুম

চশমার যাদুঘর

চশমার যাদুঘর

শেরপুরের পৃথক ঘটনায় দুই জনের মৃত্যু

শেরপুরের পৃথক ঘটনায় দুই জনের মৃত্যু

বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে

বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে

গ্রেফতার সেই কুমির

গ্রেফতার সেই কুমির

লেভেল ক্রসিং স্থাপন প্রয়োজন

লেভেল ক্রসিং স্থাপন প্রয়োজন

রাজধানীতে বেড়েছে তৃতীয় লিঙ্গের চাঁদাবাজি

রাজধানীতে বেড়েছে তৃতীয় লিঙ্গের চাঁদাবাজি

হাফিজ আহমেদ মজুমদার : যার তুলনা তিনি নিজে

হাফিজ আহমেদ মজুমদার : যার তুলনা তিনি নিজে

গরিব হয়ে যাচ্ছে দেশের মানুষ

গরিব হয়ে যাচ্ছে দেশের মানুষ

সীমান্তে আর কত হত্যা করবে বিএসএফ?

সীমান্তে আর কত হত্যা করবে বিএসএফ?