ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে জাতিসংঘ বিশেষ প্রতিবেদক শ্যুটারের উদ্বেগ

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৯ মে ২০২৩, ১১:০০ পিএম | আপডেট: ৩০ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নানাবিধ প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চরম দারিদ্র্য এবং মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অলিভিয়ার ডি শ্যুটার। তিনি বলেন, ওই আইনের অধীনে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং শিক্ষাবিদদের তাদের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার প্রয়োগের কারণে আটক করা হয়েছে। এই বিষয়গুলো দেশটি যে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে চাচ্ছে কেবল তাদেরই শঙ্কিত করবে না, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে।

বাংলাদেশে ১২ দিনের সফর শেষে গতকাল সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ওলিভিয়ার ডি শ্যুটার (বেলজিয়াম) ২০২০ সালের মে মাস থেকে চরম দারিদ্র্য ও মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল কর্তৃক নিয়োগকৃত এবং বিশেষ প্রক্রিয়ার অংশ। ২০২৪ সালের জুনে বিশেষ প্রতিবেদক তার বাংলাদেশ বিষয়ক সর্বশেষ প্রতিবেদন মানবাধিকার কাউন্সিলে পেশ করবেন।

বাংলাদেশ সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভরতা কমানো, শহরাঞ্চলে আয়-বৈষম্য বৃদ্ধি এবং সামাজিক সুরক্ষাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে প্রত্যাশিত স্তরে উন্নীত হওয়ার পর একটি অধিকার-ভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন মূলত তৈরি পোশাক শিল্পের মতো একটি রপ্তানি খাত দ্বারা ব্যাপকভাবে চালিত, যা সস্তা শ্রমের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। মানুষকে দরিদ্রতার মধ্যে রেখে একটি দেশ তার আপেক্ষিক সুফল বা উন্নয়ন ভোগ করতে পারে না। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে জরুরি মানবিক প্রয়োজন মোকাবিলায় দাতাদের অবদান কমে যাওয়া অনভিপ্রেত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ডি শ্যুটার সরকারকে ২০২৬ সালে এলডিসি মর্যাদা থেকে আসন্ন উন্নীতকরণের সুযোগকে ব্যবহার করে তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরতা পুনর্বিবেচনা করার জন্য আহ্বান জানান। এর যুক্তি হিসেবে দেখান, এই শিল্প ৪ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের বর্তমান রপ্তানি আয়ে শতকরা ৮২ ভাগ অবদান রাখছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যত উন্নীতকরণের পথে এগোচ্ছে, তত এটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের ট্যাক্স-প্রণোদনা প্রদান এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা, কর্মীদের শিক্ষিত করা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং সামাজিক সুরক্ষার উন্নতিতে সরকারকে আরও বেশি সময় এবং সম্পদ ব্যয় করা প্রয়োজন। এ জাতীয় উদ্যোগ শুধু সুনামের চিন্তা করে এমন বিনিয়োগকারীদেরই আকৃষ্ট করবে না বরং এটি বাংলাদেশে উন্নয়নের একটি নতুন রূপরেখা তৈরি করবে, যা বৈষম্যমূলক রপ্তানি সুযোগের পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ চাহিদা দ্বারা চালিত হবে।

সফরকালে তিনি সারা দেশ ভ্রমণ করেন এবং দারিদ্র্যসীমায় থাকা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, দেশ সামগ্রিক আয়ের বৈষম্য হ্রাসে উল্লে­খযোগ্য অগ্রগতি সাধন করলেও, এখনো বহুমাত্রিক দারিদ্র্য রয়ে গেছে। বিশেষ করে, শহরাঞ্চলে আয়-বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ডি শ্যুটার সরকারকে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও যৌক্তিক করার জন্য আহ্বান জানান।

বিশেষ প্রতিবেদক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নতুন এবং উল্লে­খযোগ্য ঝুঁকি থেকে জনসংখ্যাকে রক্ষা করার জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি তৈরি করা উচিত। তার মিশনের অংশ হিসেবে কক্সবাজার সফর অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডি শ্যুটার সেই শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করেন, যেখানে ৯ লাখ ৭৭ হাজার ৭৯৮ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। যাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে তাদের মাতৃভূমির গণহত্যার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পালিয়ে এসেছে। তিনি প্রায় এক মিলিয়ন শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে জনাকীর্ণ দেশ বাংলাদেশের সরকারকে অভিবাদন জানান। পাশাপাশি আশ্রয় শিবিরের বসবাস-অনুপযোগী অবস্থার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের একটি স্বাচ্ছন্দ্য ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয়েরই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে।

বিশেষ প্রতিবেদক জানান, এটি ‘অনভিপ্রেত’ যে, ২০২৩ সালে রোহিঙ্গা শিবিরে জরুরি মানবিক প্রয়োজন মোকাবিলায় ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের যৌথ পরিকল্পনার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক দাতারা এতই কম অবদান রেখেছে যে চাহিদার মাত্র শতকরা ১৭ ভাগ অর্থায়ন জোগাড় হয়েছে। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে তার খাদ্য ভাউচারের মূল্য প্রতি মাসে ১২ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলার করতে হয়েছে। এটি আগামী জুনে আরও কমিয়ে ৮ ডলার করা হবে।

ডি শ্যুটার সতর্ক করেন, এর ফলে অপুষ্টি এবং যথেষ্ট পুষ্টির অভাব বৃদ্ধি পাবে, বিশেষ করে শিশুদের পরিণতি ভয়াবহ হবে। পরিবারগুলো মরিয়া হয়ে উঠছে। ###


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সহকারী শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা ২৯ মার্চ
তথ্য কমিশনে ৮টি অভিযোগ শুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি
ঈদের পর ভেঙে ফেলা হবে কারওয়ান বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন
গরুর গোশত ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা সম্ভব : ভোক্তার ডিজি
আগামী পাঁচ বছর দেশ পাহারা দেবো : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আরও

আরও পড়ুন

মেহেরপুরে বিদেশ ফেরত অভিবাসীদের বিষয়ে সেমিনার

মেহেরপুরে বিদেশ ফেরত অভিবাসীদের বিষয়ে সেমিনার

সহকারী শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা ২৯ মার্চ

সহকারী শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা ২৯ মার্চ

তথ্য কমিশনে ৮টি অভিযোগ শুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি

তথ্য কমিশনে ৮টি অভিযোগ শুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি

ঈদের পর ভেঙে ফেলা হবে কারওয়ান বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন

ঈদের পর ভেঙে ফেলা হবে কারওয়ান বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন

সিলেটে আদালত ভবন থেকে এক আসামির আ’ত্ম’হ’ত্যা’র চেষ্টা

সিলেটে আদালত ভবন থেকে এক আসামির আ’ত্ম’হ’ত্যা’র চেষ্টা

অস্ট্রেলিয়ায় কুবি অ্যালামনাইদের ইফতার মাহফিল

অস্ট্রেলিয়ায় কুবি অ্যালামনাইদের ইফতার মাহফিল

সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্ল্যাহ রোগ মুক্তিতে সিলেটে দোয়া মাহফিল

সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্ল্যাহ রোগ মুক্তিতে সিলেটে দোয়া মাহফিল

ইরানের ন্যানো-টেক পণ্য আমদানি করে ৪৮ দেশ

ইরানের ন্যানো-টেক পণ্য আমদানি করে ৪৮ দেশ

আগামী বছর আরও ২০ স্যাটেলাইট তৈরি করবে ইরান

আগামী বছর আরও ২০ স্যাটেলাইট তৈরি করবে ইরান

ফেনীতে উদ্বোধন আল্লাহর ৯৯ নামসম্বলিত ভাস্কর্যের

ফেনীতে উদ্বোধন আল্লাহর ৯৯ নামসম্বলিত ভাস্কর্যের

হাওরে ধ্বংস হচ্ছে মাছের প্রজনন পরিবেশ

হাওরে ধ্বংস হচ্ছে মাছের প্রজনন পরিবেশ

সরকার নির্ধারিত দাম মানছে না কেউ

সরকার নির্ধারিত দাম মানছে না কেউ

সালথায় আ.লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২০

সালথায় আ.লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২০

বোরো ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সৈয়দপুরের কৃষি শ্রমিকরা

বোরো ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সৈয়দপুরের কৃষি শ্রমিকরা

চাঁদপুরে বিষধর সাপের ছোবলে গৃহবধূর মৃত্যু

চাঁদপুরে বিষধর সাপের ছোবলে গৃহবধূর মৃত্যু

অবাধে পদ্মায় জাটকা নিধন ও ক্রয়-বিক্রয় উৎসব

অবাধে পদ্মায় জাটকা নিধন ও ক্রয়-বিক্রয় উৎসব

সাতক্ষীরায় ঝুলন্ত স্ত্রীকে নামিয়ে স্বামীর আত্মহত্যা

সাতক্ষীরায় ঝুলন্ত স্ত্রীকে নামিয়ে স্বামীর আত্মহত্যা

অস্তিত্ব সংকটে নদ-নদী বিল

অস্তিত্ব সংকটে নদ-নদী বিল

রোগীর সুরক্ষা নিশ্চিত জরুরি

রোগীর সুরক্ষা নিশ্চিত জরুরি

জাতিগোষ্ঠীর উত্থান-পতন কীভাবে হয়

জাতিগোষ্ঠীর উত্থান-পতন কীভাবে হয়