-মির্জা ফখরুল

কিসের জাদুতে আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স বাড়ছে

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৯ মে ২০২৩, ১১:০৩ পিএম | আপডেট: ৩০ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার হঠাৎ করে বলছে আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স বাড়ছে! কি এমন যাদু তৈরি হলো যে রেমিট্যান্স বেড়েছে? এর মূল কারণ হলো, চুরি হওয়া টাকা ফেরত আনছে লুটেরারা। আসলে চোরেরা চুরি করে যত পাচার করেছে সেগুলো ফেরত আনছে। কারণ আড়াই শতাংশ ইনসেনটিভ পাবে সে জন্য।

গতকাল সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের লাফালাফি কমে গেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, কত লাফালাফি করেছে। এই তো ক’দিন আগেই তাদের কত দম্ভ। এখন কিন্তু লাফালাফি কমে এসেছে। এখন বলছে ‘আমরা সংঘাত চাই না। আলোচনা চাই’। অথচ সেদিনও আমাদের সিনিয়র নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমানের গাড়ি ভেঙেছে, নিপুণের মাথা ফাটিয়েছে। নরসিংদীতে খোকন-শিরিনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং হবে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করব। আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করে এসেছি। এ আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে এসেছে। আমাদের দশ দফার আন্দোলনের প্রথম দফা সরকারের পদত্যাগ। আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবর্তন চাই, আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা ক্ষমতার পরিবর্তন চাই।

বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা সকলকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, মনে রাখতে হবে, তারা (সরকার) আমাদের ফাদে ফেলতে চাইবে। গাড়ী পুড়বে, অগ্নিসংযোগ করবে তারা, দায়ভার দিবে আমাদের।

তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ আবারও ভিন্ন আঙ্গিকে একদলীয় বাকশাল করতে চায়। তারা আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করেছে। কিন্তু আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার। আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা লড়াই করছি। তার নেতৃত্বে আমরা নতুন স্বপ্ন দেখি। যেখানে ন্যায়-সমতার ভিত্তিতে হবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অন্যতম একজন জিয়াউর রহমান। তার জানাজায় ২০-২৫ লাখ মানুষ শরিক হয়েছিলেন। তারা সবাই সেদিন ডুকরে কেঁদেছিলেন। কারণ জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বাংলাদেশ অনিরাপদ হয়ে পড়ে। সে সময় বিখ্যাত টাইম পত্রিকার সাংবাদিক লিখেছিলেন- ‘রিক্শাওয়ালা রিক্শার পেছনে জিয়াউর রহমানের ছবি লাগিয়েছিলেন। সব কাজ বন্ধ হয়ে গেছিল। কৃষকরা কৃষিকাজ বন্ধ করেছিলেন।’ কারণ এত ভালো মানুষ আর তারা পাবেন না। এটাই হচ্ছে জিয়াউর রহমান। আজকে তাকে খাটো করা হচ্ছে। তাকে খলনায়ক বানানোর চেষ্টা হচ্ছে। যত ষড়যন্ত্রই করুক, চিৎকার করুক আর লিখতে থাকুক তাকে ইতিহাস থেকে মুছে দেওয়া যাবে না। এটা ধ্রুবতারার মতো সত্য যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান আবারও ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে সেনানিবাসে বিদ্রোহ দমন করেছিলেন। তিনি দেশের সবচেয়ে কঠিন সময়ে জাতির হাল ধরেছেন। ১৯৭৫ সালে দেশের একদলীয় শাসনের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করেছিলেন। সুতরাং তার সম্পর্কে যা খুশি বলা হোক না কেন তাকে মানুষের হৃদয় থেকে মুছে দেওয়া যাবে না।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অস্তিত্বের সংকটে। ৫০ বছর আগে যে জিনিস আমরা অর্জন করেছিলাম সেটা পুনরুদ্ধার করার আন্দোলন আমাদের চূড়ান্ত পর্যায়ে। আজকে তরুণ প্রজন্মকে বলব- জিয়াউর রহমান সম্পর্কে জানো। তার সম্পর্কে ভালোভাবে জানো। তিনি শিশু একাডেমি, নতুন কুঁড়ি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অসংখ্য কল-কারাখানা করেছিলেন। উচ্চ ফলনশীল ধানের চাষ করিয়েছেন। সেচের জন্য খাল খনন করেছিলেন। এক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করেছিলেন তিনি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ৩টি পর্যায়ে জিয়াউর রহমান ছিলেন সফল জীবনের অধিকারী। তিনি সৈনিক, রাষ্ট্রনায়ক ও রাজনীতিবিদ হিসেবে সফল। তিনি ছিলেন বড় মনের মানুষ। তাকে নিয়ে আলোচনা করতে গেলে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। তিনি দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে শুরু করে সব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের একটি মৌলিক পরিচয় দিয়ে গেছেন। সেটি হলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। তিনি মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করে গেছেন, সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজন করেছেন। তার অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না।

তিনি বলেন, আজকের আওয়ামী লীগ ১৯৭২-৭৫ সালে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। সে সময় জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সে জন্যই তারা জিয়াউর রহমানকে ভয় পায়। আজকেও তারা অলিখিত বাকশাল করেছে। তারা বলে জিয়াউর রহমান নাকি মুক্তিযুদ্ধ করেননি! স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দেননি! এগুলো হচ্ছে আওয়ামী লীগের ছোট মানসিকতার পরিচয়।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজকে ক্ষমতাসীন যারা তারাই তো স্বাধীনতার পর দেশের সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। তারাই তো স্বৈরাচার এরশাদের ক্ষমতা দখলের সময় বলেছিল উই আর নট আনহ্যাপি। তারাই মিলে আবারও ২০০৮ সালে ষড়যন্ত্রের নির্বাচন করেছে। তাদের হাতে গণতন্ত্র নিহত। অন্যদিকে আমরা স্বাধীনতার ঘোষণাকারী দল বিএনপির কর্মী। তাদের সময় দুর্ভিক্ষ হলে লাখ লাখ মানুষ মারা গেছেন। আর জিয়াউর রহমান কৃষির উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য রপ্তানি করেছেন।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সব গুণে গুণান্বিত একজন মানুষ জিয়াউর রহমান। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশের উন্নতির শুরু। তিনি মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর ঐক্য গড়তে ভূমিকা রেখেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে তিনি সার্ক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অর্থাৎ পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে সম্মানের আসনে নিয়ে যান জিয়াউর রহমান, যা পরবর্তীতে ধরে রাখা কঠিন হয়েছিল। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জয়ী হয়েছিল।

তিনি বলেন, আজকে কী অবস্থা? সেটা অনুধাবন করা প্রয়োজন। এখন বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্ব কী বলছে? এখানকার গণতন্ত্রহীনতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ সব গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সে জন্যই আজকে আমেরিকায় গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পায় না। এখন বাংলাদেশের নির্বাচনের সাত মাস আগে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। এটা খুবই উদ্বেগের।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, মো. আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা নাসির উদ্দিন অসীম, অঙ্গসংগঠনের নেতাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মৎস্যজীবী দলের মো. রফিকুল ইসলাম মাহতাব, মো. আব্দুর রহিম, কৃষকদলের শহীদুল ইসলাম বাবুল, ওলামা দলের মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।###


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

এফডিসিতে সাংবাদিকদের ওপর শিল্পীদের হামলা, আহত ১০

এফডিসিতে সাংবাদিকদের ওপর শিল্পীদের হামলা, আহত ১০

মিশার নেতৃত্বে শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ

মিশার নেতৃত্বে শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ

উড়ন্ত চেলসিকে মাটিতে নামাল আর্সেনাল

উড়ন্ত চেলসিকে মাটিতে নামাল আর্সেনাল

১৭ রানও আটকাতে পারলেন না মুস্তাফিজ,ফের হারল চেন্নাই

১৭ রানও আটকাতে পারলেন না মুস্তাফিজ,ফের হারল চেন্নাই

সিলেটের মাটিতে ভারতীয় নারী ক্রিকেট টিম !

সিলেটের মাটিতে ভারতীয় নারী ক্রিকেট টিম !

বিশ্বনাথ পৌরমেয়র মুহিবকে গ্রেফতার ও অপসারণের দাবিতে ঝাড়– মিছিল

বিশ্বনাথ পৌরমেয়র মুহিবকে গ্রেফতার ও অপসারণের দাবিতে ঝাড়– মিছিল

থাইল্যান্ডে ইউএন এসকাপ-এর ৮০তম সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন প্রতিমন্ত্রী পলক

থাইল্যান্ডে ইউএন এসকাপ-এর ৮০তম সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন প্রতিমন্ত্রী পলক

মনিরামপুরে ভূমি কর্মকর্তাকে মারধর, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার - ২

মনিরামপুরে ভূমি কর্মকর্তাকে মারধর, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার - ২

পার্কটি সংস্কার ও উন্নত করা হোক

পার্কটি সংস্কার ও উন্নত করা হোক

যুব মহিলা লীগ নেত্রীর বাসা থেকে অপহৃত কিশোরী উদ্ধার

যুব মহিলা লীগ নেত্রীর বাসা থেকে অপহৃত কিশোরী উদ্ধার

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মাঠের বিরোধীদলের করণীয়

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মাঠের বিরোধীদলের করণীয়

ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রভাব কি বাংলাদেশে পড়ছে?

ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রভাব কি বাংলাদেশে পড়ছে?

ইন্টারনেট ব্যবহারে পিছিয়ে থাকা লজ্জার

ইন্টারনেট ব্যবহারে পিছিয়ে থাকা লজ্জার

ফজরের নামাজ কাযা হলে জুমার খুতবার পূর্বে আদায় না করতে পারলে করণীয় প্রসঙ্গে।

ফজরের নামাজ কাযা হলে জুমার খুতবার পূর্বে আদায় না করতে পারলে করণীয় প্রসঙ্গে।

ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে উত্তাল মার্কিন শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে উত্তাল মার্কিন শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

ফরিদপুরে গ্যারেজ মিস্ত্রি হত্যায় ২ জনের যাবজ্জীবন

ফরিদপুরে গ্যারেজ মিস্ত্রি হত্যায় ২ জনের যাবজ্জীবন

বিতর্কিত সিএএ কার্যকর হলে ভারতের সংবিধান লংঘিত হবে

বিতর্কিত সিএএ কার্যকর হলে ভারতের সংবিধান লংঘিত হবে

এক কর্মচারীতে চলছে নাঙ্গলকোট মৎস্য অফিস

এক কর্মচারীতে চলছে নাঙ্গলকোট মৎস্য অফিস

২৬ ঘণ্টা পর অপহৃত পল্লী চিকিৎসকসহ উদ্ধার ২

২৬ ঘণ্টা পর অপহৃত পল্লী চিকিৎসকসহ উদ্ধার ২

সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ঘোষণা মমতার

সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ঘোষণা মমতার