৭৬১৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট আসছে

নির্বাচনী বছরের বাজেট

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

৩০ মে ২০২৩, ১১:৫৫ পিএম | আপডেট: ৩১ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

সংবিধান অনুযায়ী এটা নির্বাচনের বছর। নির্বাচনের বছরগুলোতে সাধারণত ‘নির্বাচনের চিন্তা মাথায় রেখে’ বাজেট ঘোষণা করা হয়। এবার সে চিন্তার পাশাপাশি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ‘ভিসা নীতি’ ঘোষণা, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্দলীয় বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি, মার্কিন ভিসা নীতির কারণে প্রশাসনের কর্মরত কর্মকর্তাদের অস্থিরতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের নি¤œমুখিতা, বছরজুড়ে ডলার সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আইএমএফের ঋণের শর্ত মাথায় রেখেই আগামী অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। আগামী কাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হবে। জনগণের ভোটের কথা মাথায় রেখেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ মূল লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেই ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ‘দেড় দশকের উন্নয়নের পর স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রগতি’ শীর্ষক বাজেট উত্থাপন করবেন। বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মতো খাতে বরাদ্দের বড় কোনো পরিবর্তন হবে না এমন ইংগিত দেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা ও উচ্চতর জিপিডি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখা।

২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর এটাই আওয়ামী লীগ সরকারের চলমান ৫ বছরের মেয়াদের শেষ বাজেট হবে। এমন এক সময়ে এই বাজেট ঘোষণা করতে হচ্ছে যখন খাদ্য থেকে জ্বালানি ও পরিবহন ভাড়া থেকে শুরু করে ইউটিলিটি বিল পর্যন্ত প্রায় সব কিছুরই উচ্চমূল্যে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। নি¤œবিত্ত তো বটেই মধ্যবিত্ত এবং সীমিত আয়ের মানুষের খাদ্যপণ্য ক্রয়ই কঠিন হয়ে গেছে। অর্থনীতিবিদদের ভাষায় অনেকেই খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। গত মে মাসে বিআইডিএসের এক গবেষণায় বলা হয় রাজধানী ঢাকা শহর দরিদ্রের সংখ্যা বাড়ছে। রাজধানীতে বসবাসকারী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৫১ শতাংশই ‘নতুন দরিদ্র’। বিআইডিএসের ওই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম ও পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অস্থিরতা চলছে। উন্নয়ন সহযোগী চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপান উতোনের লক্ষ্যবস্তু হয়ে গেছে বাংলাদেশ। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে সোচ্চার। তারা কোনো ভাবেই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো পাতানো নির্বাচন মেনে নেবে না। এমনকি ভারতও চায় জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়ে ফের ক্ষমতা আসুক। দিল্লির বুদ্ধিজীবীরা প্রবন্ধ নিবন্ধে লিখছেন ভারত এখন আর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে মার্কিন প্রশাসনে দুতিয়ালি করবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিরপেক্ষ নির্বাচন তথা জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা হলে আগামীতে জিএসপি প্লাস দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গতকালও ইইউ সদস্য ২৭ দেশের কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ওই সব দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এমনকি মন্ত্রী পর্যায়ের লোকজন বাংলাদেশ সফর করবেন না। কারণ তারা বাংলাদেশে আর পাতানো নির্বাচন দেখতে চান না। মাঠের বিরোধী দল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। অন্যদিকে গৃহপালিত বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টিও চায় নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। গতকালও দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, মার্কিন নতুন ভিসা নীতি বাংলাদেশে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে ভূমিকা রাখবে। এই প্রেক্ষপটে ঘোষণা করতে হচ্ছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট। সরকার চায় আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি যাতে ৭ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছায় এবং মূল্যস্ফীতির হার নেমে ৬ দশমিক ০৩ শতাংশের কাছাকাছি থাকে। মূল্যস্ফীতির হার এপ্রিল পর্যন্ত ছিল ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি বাজেটের চেয়ে আগামী বাজেটের আকার ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি এবং সুদ পরিশোধের জন্য ১ লাখ ২ হাজার কোটির বেশি করার প্রস্তাব করা হবে। চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ ছিল ৮১ হাজার কোটি টাকা এবং সুদ পরিশোধের জন্য ছিল ৮০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের উচ্চমূল্য এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় এই ২ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কিছু ভর্তুকির বোঝা কমাতে বিদ্যুৎ ও সারের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে বকেয়া পরিশোধ করতে ভর্তুকির জন্য সরকারের এখনো আরো অর্থ প্রয়োজন। বৈদেশিক রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে আগামী অর্থবছরে কঠোরতা অবলম্বন অব্যাহত রাখা হবে। বাজেটের মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বাড়ানো হবে না বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে মূল্যস্ফীতিকে। এছাড়া, এক্সপোর্ট ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উন্নয়ন, আইএমএফ এর শর্ত অনুযায়ী জিডিপি রেশিও ০.৫০% বাড়ানো, এক লাখ কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি এবং সরকারি ঋণের সুদব্যয় যোগান নিশ্চিত করাকে আগামী অর্থবছরের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরেছে অর্থ বিভাগ। মূলত অর্থ বিভাগের প্রাক্কলন অনুযায়ী, ৭.৬৪ লাখ কোটি টাকার বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ থাকবে ২.৬৩ লাখ কোটি টাকা। বাকি অর্থ সরকারের পরিচালন ব্যয়খাতে বরাদ্দ হবে। উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বরাদ্দ থাকবে ১.৬৯ লাখ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ব্যয় হবে ৯৪ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের বাকি ৫ লাখ কোটি টাকা ব্যয় হবে পরিচালনখাতে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৪.৩১ লাখ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবিদের বেতন-ভাতা ৭৭ হাজার কোটি টাকা, পণ্য ও সেবা ক্রয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা, ঋণের সুদ পরিশোধে ১.১০ লাখ কোটি টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ১.১৮ লাখ কোটি টাকা এবং ভর্তুকি ও প্রণোদনায় ১.০৫ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হবে।

বাজেট ঘাটতি : জাতীয় সংসদে উত্থাপিত আগামী বাজেটে সার্বিক ঘাটতি ধরা হবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এটা জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংকসহ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা এবং বিদেশি উৎস থেকে ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। আইএমএফ শর্ত অনুযায়ী বাজেটের প্রাথমিক ঘাটতি জিডিপির ৩ শতাংশের মধ্যে থাকতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রকৃতপক্ষে ঘাটতি আইএমএফ-নির্ধারিত সীমার কাছাকাছিই আছে। কারণ সামগ্রিক ঘাটতি থেকে সুদ প্রদান ও বৈদেশিক অনুদান বাদ দিয়ে প্রাথমিক ঘাটতি ধরা হয়। পরবর্তী অর্থবছরের প্রাথমিক ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৩ দশমিক ১ শতাংশ।

রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা : প্রস্তাবিত বাজেটে আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির শর্ত মাথায় রেখে ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে; যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা বেশি।

আইএমএফের শর্ত অনুসারে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের এমনভাবে রাজস্ব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের চেয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপির আরো অতিরিক্ত দশমিক ৫ শতাংশ রাজস্ব লাভ করতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য মোট কর-রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রকৃত রাজস্ব ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জিডিপির অতিরিক্ত দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের প্রাক্কলিত জিডিপি ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা এবং এর দশমিক ৫ শতাংশ হলো ২৫ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে সারা দেশে বেসরকারি এজেন্ট নিয়োগসহ বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাদের টিআইএন আছে এবং যাদের আয় করযোগ্য আয় সীমার নিচে, তাদেরকেও রিটার্ন জমা দিতে হবে এবং ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর দিতে হবে। করভুক্ত আয় সীমা বর্তমান ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হতে পারে। করভুক্ত আয়ের ওপর ন্যূনতম কর আগের মতো ৫ হাজার টাকাই থাকছে। তবে করযোগ্য আয় নেই এমন ব্যক্তিদের জন্য টিআইএন বাতিল করার মতো বিকল্প ব্যবস্থা থাকবে, যাতে তাদের কর দিতে না হয়।

দেশে বর্তমানে প্রায় ৮৮ লাখ মানুষের টিআইএন আছে। তবে তাদের মধ্যে কর রিটার্ন জমা দিয়েছে কেবল ৩০ লাখ মানুষ। যারা রিটার্ন জমা দেন, তাদের অনেকেই কর প্রদান করেন না। কারণ তাদের আয় করযোগ্য নয়। বাজেট প্রস্তাবনায় ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট এবং নির্দিষ্টকরণ বিল, ২০২৩ অনুমোদন’ শিরোনামের সার-সংক্ষেপে রাজস্ব সংগ্রহের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে আগামী বছরের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে অবকাঠামোগত সংস্কার অব্যাহত রাখা ও বিনিয়োগ পরিবেশ আরও ব্যবসাবান্ধব করে কোভিড-উত্তর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া বেগবান করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখাকে আগামী অর্থবছরের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটেও ৮টি প্রধান চ্যালেঞ্জ নির্ধারণ করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে কয়েকটি আগামী অর্থবছরের জন্যেও থাকছে, আর অন্যগুলো নতুন। চলতি অর্থবছরের বাজেটে আমদানি-জনিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ; তেল, গ্যাস ও সারের বিপুল ভর্তুকি প্রদান, রাজস্ব আহরণ বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানোর মতো বিষয়গুলোকে মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যা নতুন অর্থবছরেও থাকছে।

নিম্ন-অগ্রাধিকারের প্রকল্পগুলো পিছিয়ে দেওয়া চলতি অর্থবছরের জন্য একটি মূল চ্যালেঞ্জ ছিল; তারপরও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর জন্য অপর্যাপ্ত বরাদ্দ আগামী অর্থবছরের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিয়েছে। অথচ বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পকে বড় বিনিয়োগের একটি অনুঘটক হিসাবে মনে করা হয়। এছাড়া, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রসারিত করা চলতি অর্থবছরের অগ্রাধিকার ছিল মূল্যস্ফীতিতে সাধারণ মানুষের দুর্দশা অব্যাহত থাকায় সেটা আগামী অর্থবছরেও থাকবে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও প্রযুক্তিখাত শক্তিশালী করা, রপ্তানি বাজার প্রসার ও ব্যবসাবাণিজ্যের পরিবেশ উন্নতিকেও অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদনের পর জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের জন্য ৭,৬১,৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব আকারে উপস্থাপন করা হবে।

নির্বাচনী বছরের বাজেটে ভোটের কথা মাথায় রেখে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগে ইতিবাচক পরিবর্তন, কৃষিখাতে সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি, রাজনৈতিক স্থিাতিশীলতা, অবকাঠামো উন্নয়নে সমন্বিত কার্যক্রম এবং সরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এডিবির আকার ও এর বাস্তবায়ন বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে মনে করা হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো এবং বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে বলে মন্ত্রিসভার জন্য প্রস্তুত করা সার-সংক্ষেপে উল্লেখ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রিসভার জন্য প্রস্তুত করা সার-সংক্ষেপে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়ন, গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ, বেকারদের কর্মসৃজন এবং পল্লী উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রাম ও শহরের ব্যবধান কমানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় উপযুক্ত কার্যক্রম ও প্রকল্প বাস্তবায়ন, খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করা, কৃষি গবেষণা, যান্ত্রিকীকরণ, সেচ ও বীজে প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসন, এবং নারী বান্ধব কর্মপরিবেশ সৃজনে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে ।

প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শুধু সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানো ও ভাতা বৃদ্ধি যথেষ্ঠ নয়। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা ও ভাতা বাড়ানোর পাশাপাশি রাজস্ব নীতির আওতায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কিছু সময়ের জন্য সরকার শুল্ক ছাড় দিতে পারে। এছাড়া, মুদ্রানীতির আওতায় সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, রাজস্ব বাড়ানো না গেলে এসব চ্যালেঞ্জ উৎরানো সম্ভব হবে না। সরকারকে বসে থাকলে হবে না। সংস্কার উদ্যোগ নিতে হবে এবং বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। রাজস্ব খাতে সংস্কারের পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিশেষ করে ব্যালান্স অব পেমেন্ট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো, মূল্যষ্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হবে। বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে হবে। ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ লস বন্ধ করতে হবে। ##


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মানুষ প্রশিক্ষিত না হলে এআই-এর অপব্যবহার বাড়বে: মোদি

মানুষ প্রশিক্ষিত না হলে এআই-এর অপব্যবহার বাড়বে: মোদি

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে দেখা মিললো ৮০ কেজি ওজনের এক জোড়া কচ্ছপ

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে দেখা মিললো ৮০ কেজি ওজনের এক জোড়া কচ্ছপ

হাইওয়ে থেকে ৩০০ ফুট নিচে পড়ল গাড়ি, কাশ্মিরে নিহত ১০

হাইওয়ে থেকে ৩০০ ফুট নিচে পড়ল গাড়ি, কাশ্মিরে নিহত ১০

চোর-ডাকাতদেরকেই বিএনপি নিজেদের কর্মী মনে করে: হাছান মাহমুদ

চোর-ডাকাতদেরকেই বিএনপি নিজেদের কর্মী মনে করে: হাছান মাহমুদ

নরসিংদীতে চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে হাত-পা বিচ্ছিন্ন যুবকের

নরসিংদীতে চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে হাত-পা বিচ্ছিন্ন যুবকের

ট্রান্সকম গ্রুপের মামলায় নতুন মোড়, কবর থেকে তোলা হবে পরিচালকের লাশ

ট্রান্সকম গ্রুপের মামলায় নতুন মোড়, কবর থেকে তোলা হবে পরিচালকের লাশ

দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মায় পড়ে একজনের মৃত্যু

দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মায় পড়ে একজনের মৃত্যু

বায়তুল মোকাররমে রমজানের তৃতীয় জুমায় মুসল্লিদের ঢল

বায়তুল মোকাররমে রমজানের তৃতীয় জুমায় মুসল্লিদের ঢল

কেজরিওয়ালের গ্রেফতারি নিয়ে এবার জাতিসংঘের মন্তব্য, অস্বস্তিতে মোদী সরকার

কেজরিওয়ালের গ্রেফতারি নিয়ে এবার জাতিসংঘের মন্তব্য, অস্বস্তিতে মোদী সরকার

টেকনাফে পুলিশের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক-১

টেকনাফে পুলিশের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক-১

'দুর্নীতির টাকায় কেনা', মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

'দুর্নীতির টাকায় কেনা', মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

লোহাগড়ায় আওয়ামীলীগ নেতাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে যেয়ে জিয়া চৌধুরী নামে এক যুবক গ্রেফতার

লোহাগড়ায় আওয়ামীলীগ নেতাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে যেয়ে জিয়া চৌধুরী নামে এক যুবক গ্রেফতার

বেনাপোলে পায়ূপথে মিলল ৬টি স্বর্ণেরবার, পাচারকারী আটক

বেনাপোলে পায়ূপথে মিলল ৬টি স্বর্ণেরবার, পাচারকারী আটক

গাজীপুরে ককটেল ফাটিয়ে স্বর্ণালংকার ও টাকা লুটের চেষ্টা

গাজীপুরে ককটেল ফাটিয়ে স্বর্ণালংকার ও টাকা লুটের চেষ্টা

বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের

বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের

কাল জামায়াতের ইফতার, বিএনপির ইফতারে নেতাদের ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য

কাল জামায়াতের ইফতার, বিএনপির ইফতারে নেতাদের ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য

নোয়াখালীতে ইফতার মাহফিলে যাবার পথে সড়কে ট্রাকচাপায় মৃত্যু প্রবাসীর

নোয়াখালীতে ইফতার মাহফিলে যাবার পথে সড়কে ট্রাকচাপায় মৃত্যু প্রবাসীর

ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে ১৩০ ব্রিটিশ এমপির চিঠি

ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে ১৩০ ব্রিটিশ এমপির চিঠি

মিরজাফরের পাশে ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র! পূর্বপুরুষের ‘বেঈমানি’ নিয়ে বিপাকে বিজেপি প্রার্থী

মিরজাফরের পাশে ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র! পূর্বপুরুষের ‘বেঈমানি’ নিয়ে বিপাকে বিজেপি প্রার্থী

কপালে ব্যান্ডেজ নিয়ে ইফতার পার্টিতে মমতা

কপালে ব্যান্ডেজ নিয়ে ইফতার পার্টিতে মমতা