জ্বালানি তেলে নির্দিষ্ট শুল্কারোপ
০১ জুন ২০২৩, ১১:০৭ পিএম | আপডেট: ০১ জুন ২০২৩, ১১:০৭ পিএম
কেরোসিন, লাইট ডিজেল, মোটর স্পিরিট এবং জেট ফুয়েলসহ ১১ ধরনের পেট্রোলিয়াম পণ্যে প্রতি লিটারে নির্দিষ্ট শুল্ক হবে ১৩.৭৫ টাকা। বর্তমানে ১২ ধরনের জ্বালানির শুল্ক হার ১০%। আসন্ন বাজেটে সুনির্দিষ্ট শুল্ক আরোপ করা হলে তা খুচরা মূল্যে বেশি প্রভাব ফেলবে। পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের উপর বিদ্যমান শুল্ক ৫%। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১,১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯,১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। আগামী অর্থবছর থেকে ১৩ ধরনের জ্বালানি পণ্যের ওপর বিদ্যমান শুল্কের বদলে সুনির্দিষ্ট শুল্ক আরোপ করবে সরকার। প্রতি লিটারে নতুন এই শুল্ক হতে পারে সর্বোচ্চ ১৩.৭৫ টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট সংসদে বাজেট উত্থাপনের সময় এ প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।
এ পদক্ষেপ মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দেবে বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। কর্মকর্তারা মনে করছেন, আগাম কর কমানো হলে অপরিশোধিত তেল, ডিজেল, জেট ফুয়েল, কেরোসিন ও বেস অয়েলের দাম কমবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগে মোট বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। আসছে অর্থবছরে ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৮ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা বেশি।
বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, ডুয়েল ফুয়েল, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পটুয়াখালি জেলার পায়রা, কক্সবাজার জেলার মহেশখালী ও মাতারবাড়ি এলাকায় নির্মিত পাওয়ার হাবসমূহে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে জীবাশ্ম এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন। আরও ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া, সরকার মোট ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পাশাপাশি আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক ক‚টনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমেও বিদ্যুৎ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে, বিদ্যুৎ আসবে নেপাল থেকেও। ভুটান হতে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশ, ভুটান এবং ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত পর্যায়ে স্বাক্ষরের অপেক্ষায় আছে। সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি। ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ আমরা পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হতে সংগ্রহ করতে চাই। উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিমি সঞ্চালন লাইন স্থাপন করেছি। এর ফলে, সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ বর্তমানে ১৪ হাজার ৬৪৪ কিমি এ উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও কমেছে সিস্টেম লস। জ্বালানি খাত সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। স¤প্রতি ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন উদ্বোধন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরের ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। ভারতের শিলিগুড়ি মার্কেটিং টার্মিনাল হতে বাংলাদেশের পার্বতীপুর ডিপো পর্যন্ত পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলছে। এর মাধ্যমে ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল স্বল্পসময়ে বাংলাদেশে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধনের ধারণ ক্ষমতা উন্নীত করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার, স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত রয়েছে।
তিনি বলেন, স¤প্রতি ভোলা জেলার ইলিশা গ্যাস ক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কার হয়েছে। তেল ও গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। দেশের একমাত্র তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। ডিসেম্বর ২০২৪ এর মধ্যে আরও ৪৬টি ক‚প খনন করা হবে। আশা করছি, এসব ক‚প খনন শেষে দৈনিক অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। সমুদ্র অঞ্চলেও তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ চলমান আছে। জ্বালানির বর্ধিত চাহিদা মেটানোর জন্য তরলীকরা প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি ও স্পট মার্কেট থেকে ক্রয় করা হচ্ছে। এছাড়া, কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। গ্যাসের পাইপলাইন বৃদ্ধির পাশাপাশিএর অপচয় রোধে প্রি- পেইড মিটার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। কয়লা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ৫টি কয়লা ক্ষেত্রের মজুদ করা কয়লার পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার ৮২৩ মিলিয়ন টন। এর মধ্যে কেবল বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করা হয়। খনিটির বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা বার্ষিক ৮ লক্ষ মে. টন। দেশের কয়লা ক্ষেত্রসমূহ হতে কয়লা সংগ্রহের কারিগিরি ও অন্যান্য সম্ভাবনা যাচাইয়ের কাজ চলছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মেসিকে নিয়ে বড় পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের
‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে তৈরি আছি: হাছান মাহমুদ
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে দলের কোনো নেতা-কর্মীকে ছাড় দেওয়া হবে না : যুবদল সভাপতি
ঢাকা মেডিকেলের সিসিইউতে ভর্তি শাজাহান খান
আলোকচিত্রশিল্পী ড. শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামা মাশায়েখ মহাসম্মেলন কাল
ব্র্যাক ব্যাংকের ৩০,০০০ কোটি টাকার রিটেইল ডিপোজিট মাইলফলক
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গবেষণায় জোর দিতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পরামর্শ
ব্রাহ্মণপাড়ায় জেলেকে পিটিয়ে হত্যা
কুয়াকাটায় দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
কলারোয়ায় হাজার হাজার ছাগলের মৃত্যু
হত্যা মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের ফাঁসানোর প্রতিবাদ
শিয়ালের কামড়ে নারী ও শিশুসহ আহত ৯
লোহাগাড়ায় ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
বন্দরগুলোর অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে : নৌপরিবহন উপদেষ্টা
পঞ্চগড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান
ধামরাইয়ে পুলিশ ক্যাম্পে ঝুলছে তালা
ভোগান্তির আরেক নাম আশাশুনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
যশোরে বিএনপি নেতার আদালতে আত্মসমর্পণ
যশোর শহরজুড়ে রাস্তার পাশে ময়লার ভাগাড়