ইনকিলাব ৩৮ বছরে
০৪ জুন ২০২৩, ১২:৫৮ এএম | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩, ০১:০১ এএম
সময় ও নদীর ¯্রােত কারো জন্য অপেক্ষা করে না, প্রকৃতির নিয়ম এগিয়ে চলে। ৩৭ বছর ধরে ইনকিলাবও এগিয়ে চলছে। দীর্ঘ এই ৩৭ বছরে পৃথিবীতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ‘সময়’ পাল্টে গেছে, বদলে গেছে মানুষের জীবনধারা। মানুষের চিন্তা-চেতনা, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিতে ঘটেছে ব্যপক পরিবর্তন। ক্ষমতার রাজনীতিতে ঘটেছে অনেক পরিবর্তন। মানুষের রুচিবোধ, অর্থনীতি, সমাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বদলায়নি শুধু দৈনিক ইনকিলাব। প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আলহাজ মাওলানা এম এ মান্নান (রহ:) যে উদ্দেশ্য-চেতনা ও লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮৬ সালে ইনকিলাব প্রতিষ্ঠা করেছেন; এখনো সেই চেতনা ধরে রেখেছে ইনকিলাব। চলার পথে দীর্ঘ এই সময়ে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উৎরাই এসেছে, পথে পথে পাহাড়সহ বাঁধার প্রাচীর তৈরি হয়েছে, কিন্তু ইনকিলাব নীতি-আদর্শ এবং বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রচার থেকে একচুলও বিচ্যুত হয়নি। বরং দৈনিক ইনকিলাব হয়ে উঠেছে দেশের মা, মাটি ও মানুষের হৃদয়ের কণ্ঠস্বর। দেশের ওলামা-মাশায়েখ, মাদরাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও দৌহিদী জনতা যেমন ইনকিলাবকে ভ্যানগার্ড মনে করেন; তেমিন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তেমনি ইনকিলাবের খবরকে গুরুত্ব দেন, প্রতিদিন পড়েন ।
দেশে যখন সংস্কৃতির আগ্রাসনে, আকাশ সংস্কৃতির নামে বিজাতীয় সংস্কৃতির চারণভূমি বানানোর অপচেষ্টা চলছে; তখন পদ্মা-মেঘনা-যমুনা বিধৌত দেশজ সংস্কৃতি চর্চা ও মুসলিম সমাজের নিজস্ব জীবনাচার প্রতিষ্ঠার ভ্যানগার্ড হিসেবে সংবাদপত্র জগতে আবির্ভাব ঘটে ইনকিলাবের। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধকে সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে দেশের আলেম-ওলামাদের উদ্বুদ্ধ করেছে। ইনকিলাব প্রিন্ট ভার্সনের পাশাপাশি এখন ২৪ ঘন্টা অনলাইন ভার্সন প্রকাশিত হচ্ছে। দেশ-বিদেশের লাখ লাখ পাঠক পত্রিকা পড়ছেন।
ইনকিলাব অর্থ বিপ্লব। সত্যিই ইনকিলাব দেশের সংবাদপত্র শিল্পে ‘বিপ্লব’ ঘটিয়েছেন। বিজ্ঞানের কল্যাণে সারা বিশ্বের মিডিয়া জগতে প্রিন্ট মিডিয়া ছাড়াও টেলিভিশন, অনলাইনসহ নানাবিধ গণমাধ্যমের উদ্ভব ঘটেছে। সম্প্রতি সময়ে ফেসবুক, ব্লগ, টুইটারসহ অনেকগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। তখনো ইনকিলাবের সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতার ব্যত্যয় ঘটেনি। পাঠক বস্তুনিষ্ঠ তথ্যনির্ভর সংবাদ পেয়েছেন। রাজনৈতিক কারণে সংবাদপত্র শিল্পকে এখন গণমাধ্যম না বলে অনেকেই প্রচার মাধ্যম হয়ে গেছে। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, ‘আগে মানুষ মিথ্যা বলতেন, সংবাদপত্র সত্য খুঁজে বের করতো; এখন সংবাদপত্র মিথ্যা বলে, মানুষ সত্য খুঁজে বের করে’। দেশের সংবাদপত্র শিল্পের এই যখন অবস্থা তখন ইনকিলাব ন্যায়-সত্য খবর প্রচারে থেকেছে অবিচল। যার কারণে দীর্ঘ এই ৩৭ বছর ইনকিলাবের চলার পথ মোটেও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। পথের বাঁকে বাঁকে হোঁচট খেয়েছে। একাধিকবার পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে; প্রকাশনায় আঘাত এসেছে। কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পথে থেকে সঠিক খবর প্রকাশ করায় পাঠকদের ভালোবাসায় পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছে। দৈনিক ইনকিলাবের ৩৭ বছর পেরিয়ে ৩৮ বছরে পদাপর্ণের শুভক্ষণে সকল পাঠক, লেখক, উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় কার্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক-বিজ্ঞাপনদাতা-শুভানুধ্যায়ী সকলকেই অফুরন্ত শুভেচ্ছা।
অপ্রিয় হলে সত্য রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং দিল্লির দাসত্বের মানসিকতার কারণে প্রগতিশীলতার অজুহাতে ভিনদেশি টাকায় বল্গাহীন ঘোড়ার মতো দেশের মিডিয়া জগতে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন ইসলামবিদ্বেষী চেতনা। দাঁড়ি-টুপি দেখলেই খিস্তিখেউর, মাদরাসা শিক্ষা ও আলেম-ওলামাকে কোণঠাসা করে রাখা; অন্যদিকে আকাশ সংস্কৃতির নামে দেশকে বিজাতীয় সংস্কৃতিচর্চার উর্বর ভূমিতে পরিণত করার অপচেষ্টা চলছে। শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার নামে উলঙ্গ নৃত্যের তালে দেশের আলেম-ওলামা-মাদরাসা শিক্ষা, পীর-মশায়েখকে তুচ্ছজ্ঞান করা কিছু শিক্ষিত ব্যক্তির রেওয়াজ হয়ে গেছে। দেশের দায়িত্বশীল অধিকাংশ মিডিয়াও সেই স্রোতে গা ভাসিয়ে অপসংস্কৃতির নৃত্য করছে। কলকাতার হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতির দৌরাত্ম্যে দেশের আলেম সমাজের সম্মানবোধ নিয়ে বেঁচে থাকা যখন দূরূহ এবং দিশাহীন আলেম সমাজ নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ; তখন ইনকিলাব গর্জে উঠেছে বিজাতীয় সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। রুখে দিয়েছে অপসংস্কৃতির বাতাবারণ। ইনকিলাব শুধু বিজাতীয় সংস্কৃতির বিরুদ্ধে রুখেই দাঁড়ায়নি; দেশজ সংস্কৃতি চর্চায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে সুদীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে।
প্রিন্ট মিডিয়ায় ২৪ ঘন্টায় একবার ছাপা হয় আর অনলাইন ঘন্টায ঘন্টায় খবর আপডেট করে। টেলিভিশনেও ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে খবর প্রচার করা হয়। ফলে প্রিন্ট মিডিয়ায় পাঠক ধরে রাখা কঠিন। এমনিতেও বাংলাদেশের প্রিন্ট মিডিয়ার অবস্থা আরো খারাপ। একদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার ঝুঁকি; অন্যদিকে কর্পোরেট হাউজগুলোর গণমাধ্যম গড়ে তোলার প্রতিযোগিতা। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা নানা পন্থায় উপার্জিত অর্থ রক্ষা করা, সরকারকে কর ফাঁকি দেয়া, বৈধ-অবৈধ ব্যবসার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করে শত শত কোটি টাকা ঢালছে। সাংবাদিকদের উচ্চহারে বেতন দিয়ে কর্পোরেট হাউজের স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার অবাধ ব্যবসা তথা সি-িকেট তৈরি করে ব্যবসা চালিয়ে যেতে ‘সরকার তুষ্টনীতি’ গ্রহণ করে খবর প্রচার করছে। ফলে যেসব প্রিন্ট মিডিয়া নীতি-আদর্শ সততা-মূল্যবোধের চেতনা নিয়ে গণমানুষের সেবার মানসিকতায় গড়ে উঠেছে, সেগুলো টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। আবার সরকার প্রিন্ট মিডিয়াকে ‘বন্ধু মনে না করায়’ বিজ্ঞাপনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এ ছাড়াও কাগজ, কালিসহ প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যবহৃত সব পণ্যের মূল্য বেড়ে গেছে হু হু করে। প্রিন্ট মিডিয়াকে ঠিকে রাখতে প্রিন্ট মিডিয়া সংশ্লিষ্ট দ্রবাদি আমদানিতে ভ্যাট ট্রাক্স তুলে দেয়া বা কমানোর উদ্যোগ বাজেট দেখা যাচ্ছে না। অথচ এক সময় প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য ‘ছাপা কাগজের কোটা’ ছিল। পত্রিকাগুলোর নামে নামেমাত্র মূল্যে কাগজ বরাদ্দ দেয়া হতো। ছাপাখানার সংশ্লিষ্ট সবকিছুই দাম বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকিতে পড়ে গেছে প্রিন্ট মিডিয়া। এর মধ্যে আবার কর্পোরেট হাউজগুলো নিজেদের প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের পেছনে টাকা খরচ করে অন্য ব্যবসার মাধ্যমে তারা তা তুলে নিচ্ছেন। কর্পোরেট হাউজের মালিকানাধীন মিডিয়াগুলোয় কেউ কেউ ব্যবসায়িক বিরোধের হাতিয়ার হিসেবে একে অপরের বিরুদ্ধে ‘ফেইক নিউজ’ প্রচারের প্রতিযোগিতা করছেন। আবার সরকারপন্থী মানসিকতার লোক হওয়ায় বিজ্ঞাপন পাওয়া যাবে এমন চিন্তা থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকা বের করে কাটতি বাড়াতে ‘রমরমা’ খবর প্রচার করেন। সরকারের আনুকুল্য পাওয়ায় তাদের ঝকঝকে কাগজ, পরিচ্ছন্ন প্রিন্ট পাঠককে সহজেই আকৃষ্ট করে। এমন পরিস্থিতিতে ইনকিলাব প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছে। তবে খবর প্রচারের আগে খবরের বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত হয়ে এবং সুচারু সম্পাদনায় খবর প্রচার করায় পাঠকের চাহিদা এতটুকু কমেনি। পাঠক ধরতে ইনকিলাব গড্ডালিকায় গা ভাসায়নি; কাটতি বাড়াতে খবরে রঙ মেশায়নি, নীতির সঙ্গে আপোষ করেনি।
প্রিন্ট মিডিয়া তথা দৈনিক পত্রিকাগুলোকে প্রতিদিন পাঠকের কাছে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। খবরের সত্য-মিথ্যা-বস্তুনিষ্ঠতা পাঠকরা যাচাই করেন খবর পড়ে। এ পরীক্ষায় ইনকিলাব সফল হয়েছে। এ ৩৭ বছরে অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে; ইনকিলাবে সংবাদ ছাপানোর পর প্রশাসন সে খবরের সূত্র ধরে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। পক্ষ-প্রতিপক্ষকে খুশি করার পক্ষপাতিত্ব খবর ইনকিলাব কখনো প্রচার করেনি। ফলে দেশে অসংখ্য প্রিন্ট মিডিয়া, অর্ধশত টেলিভিশন, শত শত অনলাইন, অসংখ্য রেডিওতে খবর প্রচার হচ্ছে। তারপরও ৪/৫টি পত্রিকা পড়ার পরও ‘সংবাদের প্রকৃত তথ্য জানতে’ পাঠকদের অনেকেই ইনকিলাব পড়েন। ব্যা- শিল্পী জেমসের গান ‘পৃথিবী বদলে গেছে, বদলে গিয়েছো তুমি/বদলাইনি বদলাইনি শুধু আমি’। এই ৩৭ বছরে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত গেছে। চড়াই উৎরাই পেরুতে হয়েছে। প্রকাশনায় প্রতিবন্ধকতা এসেছে। কিন্তু যে উদ্দেশ্য ও চিন্তা-চেতনা ধারণ করে ‘শুধু দেশ ও জনগণের পক্ষে’ শ্লোগান নিয়ে ইনকিলাব প্রতিষ্ঠা হয়েছে; হাজারো ঝড়ঝাপটাও ইনকিলাব সেখান থেকে একচুলও নড়েনি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাঠক যেভাবে ইনকিলাবকে গ্রহণ করেছিল; এখনো হাজারো গণমাধ্যমের ভিড়ে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ট খবর জানতে পাঠক ইনকিলাবের ওপর নির্ভর করে। এখানেই ইনকিলাবের স্বার্থকতা। ##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাগুরায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই মোটর সাইকেল চালক নিহত
কুষ্টিয়ায় র্যাবের অভিযানে ইয়াবা সহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার
কুষ্টিয়ার আলফা মোড়ে সিএনজি স্ট্যান্ড’ নাম দিয়ে চাঁদাবাজি
জুলাই আগস্টে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলা : বহিস্কার হলেন শাবির ২৯ শিক্ষার্থী
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের মেয়াদ বাড়লো ১৬ দিন
সাতক্ষীরা সীমান্তে ধান চাষে বিএসএফের বাধা, পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের নায়কদের শাস্তি ও ৩ দফা দাবিতে পটুয়াখালীতে মানববন্ধন
ইরানের নতুন আত্মঘাতী ড্রোনে আতঙ্কে ইসরাইল!
চাকুরিচ্যুত বিডিআরদের চাকুরিতে পুনর্বহালের দাবি ডিসিকে স্মারক লিপি
গোপালগঞ্জে জেলা বিএনপি’র সংবাদ সম্মেলন
পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের আহবায়ক কমিটিকে “আমরা -৮৪”-বন্ধুদের পক্ষ থেকে ফুলের শুভেচ্ছা
বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সৌজন্যে সাক্ষাৎ
কেরানীগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবকদল সভাপতির বিরুদ্ধে মার্কেট দখলের অভিযোগ
সরকারী ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের সুবিধা নিচ্ছে বেসরকারি ট্রেন কোম্পানি
একযুগ পর জাপান প্রবাসী দূলাল চৌধুরীকে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করলো এলাকাবাসী
কিশোরগঞ্জে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নিহত আহত ৫
নতুন করে ভ্যাট আরোপ হবে সরকারের নির্দয় সিদ্ধান্ত : জিএম কাদের
সিকৃবির কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের নবীন বরণ সম্পন্ন
আশুলিয়া থানা জমিয়তের কমিটি গঠন
আশুলিয়া থানা জমিয়তের কমিটি গঠন