লোডশেডিংয়ে ওষ্ঠাগত প্রাণ
০৫ জুন ২০২৩, ১১:২৩ পিএম | আপডেট: ০৬ জুন ২০২৩, ১২:০৩ এএম
বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি আরও শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। যখন তখন ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং চলছে। তার উপর অস্বাভাবিক অসহনীয় গরমে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। রাতে-দিনে লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন। শিশু এবং বৃদ্ধ ও অসুস্থদের অবস্থা কাহিল। বিদ্যুতের অভাবে এ অঞ্চলের ভারি, মাঝারি থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র শিল্পের উৎপাদনে ধস নেমেছে। বিকল্প উপায়ে কারখানার চাকা সচল রাখতে গিয়ে লোকসান গুণছেন শিল্প মালিকেরা। নজিরবিহীন বিদ্যুৎ সঙ্কটে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত চট্টগ্রামের সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি কার্যক্রম মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। স্থবির হয়ে পড়েছে মার্কেট, বিপণিকেন্দ্র, ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।
চট্টগ্রামে গত কয়েকদিনে চাহিদার এক তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎও মিলছে না। প্রচ- তাপপ্রবাহে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু পানি ও জ্বালানির অভাবে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় উৎপাদনও কমে গেছে। তাতে লোডশেডিং মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের ঘাটতি প্রতিদিনই রেকর্ড অতিক্রম করছে। চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১৬শ’ মেগাওয়াট। দিনের বেলায় এর বিপরীতে সরবরাহ মিলছে সর্বসাকুল্যে ৬০০ মেগাওয়াট। বিশেষ এলাকায় সরবরাহ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকছে তা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না।
পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, জ্বালানি সাশ্রয় করতে দিনের বেলা ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হচ্ছে। আর এ কারণে উৎপাদন ৬০০ মেগাওয়াটের নিচে নেমে এসেছে। ফলে দিনের বেলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এতে বেশি বিপাকে পড়েছে শিল্পাঞ্চলগুলো। একসময় ভারি শিল্প এলাকাগুলোকে লোডশেডিংয়ের আওতামুক্ত রাখা হতো। কিন্তু বর্তমানে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে শিল্পাঞ্চলগুলোতেও লোডশেডিং করতে হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় শিল্প কারখানার উৎপাদন মারাত্মক বিঘিœত হচ্ছে। জেনারেটর দিয়েও উৎপাদনের চাকা সচল রাখা যাচ্ছে না। ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। তাতে লোকসানের মুখে পড়েছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। অন্যদিকে বৈশি^ক মন্দার কারণে কাঁচামালের দাম বেড়েছে, বিদেশে রফতানিও কমে গেছে। তাতে দান-দেনা বাড়ছে শিল্প মালিকদের। বকেয়া পড়ছে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা। ফলে শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারি শিল্প কারখানার পাশাপাশি মাঝারি এবং ছোটখাটো কল-কারখানাগুলো অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে। বেশিরভাগ ছোট কারখানা সচল রাখার বিকল্প ব্যবস্থা নেই। ফলে বিদ্যুৎনির্ভর এসব কারখানায় রীতিমত ধস নেমেছে। নগরীর মার্কেট, বিপণিকেন্দ্রগুলোতে ক্রেতার হাহাকার চলছে। অসহনীয় গরম তার উপর তীব্র লোডশেডিংয়ে ক্রেতারা মার্কেটমুখি হচ্ছে না। বিদ্যুৎ নেই, তবুও ক্রেতার আশায় জেনারেটর চালিয়ে মার্কেট খোলা রাখছেন ব্যবসায়ীরা। কেনাকাটা নেই, উল্টো ডিজেলের খরচা গুণতে হচ্ছে তাদের। অনেকে পুঁজি ভেঙে খাচ্ছেন। বেকার হতে চলেছে দোকান কর্মচারীরা। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে পথে বসতে হবে ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও স্থবির হয়ে পড়েছে।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, জেনারেটর এবং আইপিএস দিয়েও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছে না। আইপিএস রিচার্জ হওয়ার মত বিদ্যুৎ সরবরাহ মিলছে না। এতে অনলাইন ব্যাংকিংসহ ব্যাংকের যাবতীয় কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে। তীব্র গরম সেইসাথে নজিরবিহীন লোডশেডিংয়ে শ্রমজীবী এবং কর্মজীবী মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। কাজ করতে গিয়ে গরমে হাঁপিয়ে উঠছেন। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। হাসপাতালগুলোতেও লোডশেডিং চলছে, তাতে রোগীদের অবস্থা আরও কাহিল হয়ে পড়ছে। বিদ্যুতের অভাবে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি শোধনাগারগুলোর উৎপাদনে ধস নেমেছে। চাহিদার অর্ধেকের কম পানি সরবরাহ করায় নগরজুড়ে রীতিমত হাহাকার চলছে। তীব্র গরম আর লোডশেডিংয়ের সাথে পানির কষ্ট মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় গোসলও সারতে পারছেন না অনেকে।
গতকাল সোমবার সকাল থেকে নগরীর সব এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং দেয়া হয়। কোন কোন এলাকায় টানা দেড় ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের পর আধা ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হয়। কোথাও আবার আধা ঘণ্টার বেশিও স্থায়ী হয়নি বিদ্যুৎ। তাতে মানুষের জীবন হাঁসফাঁস হয়ে উঠে। তীব্র গরমে নগরজুড়ে ছিল অসহনীয় যানজট। যানজটে আটকা পড়া লোকজনের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়। রাতের বেলায়ও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। প্রচ- গরমে ঘুমাতে পারছে না মানুষ। তাতে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রাতে ঘুম নেই, দিনে কর্মস্থলে গিয়ে গরমে হাঁসফাঁস। এমন দুর্বিষহ জীবন আগে কখনো দেখেনি এ অঞ্চলের মানুষ।
চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা দুই হাজার ৬০৫ মেগাওয়াট। এসব কেন্দ্রগুলো চালু রাখা গেলে দুই হাজার ৫৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যায়। কিন্তু নানা কারণে উৎপাদন ৮০০ থেকে ১২শ’ মেগাওয়াটের মধ্যে সীমিত থাকছে। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে দিনের বেলায় ৮৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। আর পিকআওয়ারে পাওয়া যায় এক হাজার ২৯৪ মেগাওয়াট। অনাবৃষ্টির কারণে কাপ্তাই লেকের পানি অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ মহাপ্রকল্পের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে চারটি বন্ধ হয়ে গেছে। একটি চালু আছে নামমাত্র। শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ। একই এলাকায় বন্ধ আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি ইউনিটও বন্ধ। ফার্নেস অয়েল ও গ্যাসচালিত কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য বন্ধ রাখা হচ্ছে।
ফলে এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। মহানগরীতে রাতে-দিনে ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেয়া যাচ্ছে না। জেলা-উপজেলায় পরিস্থিতি আরও শোচনীয়। গ্রামের মানুষ বলছে, বিদ্যুৎ এখন যায় না মাঝেমধ্যে আসে। বিগত দেড় দশকে বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে এ অঞ্চলে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। কিন্তু তার সুফল পাচ্ছে না গ্রাহকেরা। বিদ্যুৎ খাতে এ নাজুক অবস্থায় রীতিমত ক্ষুব্ধ, বিক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অফিস-আদালতের আড্ডায়, আলোচনায় মানুষ তাদের ক্ষোভ ঝাড়ছে। পরিস্থিতির উন্নতি কবে হবে তা খোদ পিডিবির কর্মকর্তারাও বলতে পারছেন না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শম্ভুর ধরা পড়ায় এলাকায় আনন্দের বন্যা
রাজবাড়ীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাচ্ছেনা আর্জেন্টিনা
খালাস পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস অপু
পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক তল্লাশি
আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ১৮.৪৬ বিলিয়ন ডলার
অফিস-আদালতসহ সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয় : রিজভী
পার্লামেন্টে ক্ষমা
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তায় নতুন প্রহরী: রোবট কুকুর!
লুকিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করায় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা থেকে বহিস্কার
মাকে হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ছেলে গ্রেফতার
সীমান্তে ৪ বাংলাদেশী নারী আটক
গুলি বর্ষণকারী ৭৪৭ পুলিশ শনাক্ত গ্রেফতারের উদ্যোগ নেই
সিলেটে মতবিনিময় সভা করলো নেজামে ইসলাম পার্টির
স্বামী স্ত্রীকে শর্ত লাগিয়ে তালাক দেওয়ার পর শর্ত উঠিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে।
আন্তঃনগর ট্রেনের সময় পরিবর্তন করুন
জনপ্রশাসনে মেধাশূন্যতা : কারণ ও প্রতিকার
ভারতীয় হেজিমনি ও আওয়ামী লীগের আত্মঘাতী রাজনীতি
বিতর্ক পরিহার করতে হবে