কুমিল্লার খাদি বাঙালির ঐতিহ্য
০৮ জুন ২০২৩, ১১:২৭ পিএম | আপডেট: ০৯ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
রফতানি হতো যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও ইউরোপে
কুমিল্লার খাদি বাঙালি জাতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ শিল্পের সাথে জড়িয়ে রয়েছে উপমহাদেশের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস। শৈল্পিক ছোঁয়ায় দেশ-বিদেশে বেশ সমাদৃত এবং ভৌগোলিক নির্দেশক (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) আন্তর্জাতিক স্বীকৃত কুমিল্লার খাদি। শতবর্ষের পথ পরিক্রমায় এগিয়ে চলা কুমিল্লার খাদি বর্তমানে বাহারি রঙ ও নকশায় হাল ফ্যাশনে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। কিন্তু রফতানি বাণিজ্যের জায়গায় ফের ফিরিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না কুমিল্লার খাদির অপার সম্ভাবনাকে। খাদি শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিক প্রচারণার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজার তৈরি করা গেলে এখানকার খাদি পণ্যের ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠবে এবং কারিগরসহ এ পেশার সাথে জড়িতরা দেখবেন আলোর মুখ।
মহাত্মা গান্ধীর আহŸানে ১৯২১ সালে সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় তারই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কুমিল্লায় খদ্দরশিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধী কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় আসেন স্থানীয় তাঁতিদের অনুপ্রাণিত করার জন্য। ওই সময় ‘নিখিল ভারত তন্তুরাই সমিতি’র শাখা গঠন করা হয়। সমিতির এ শাখা কুমিল্লা জেলায় তৈরি খাদি রফতানিতে বিশেষ ভ‚মিকা পালন করেছিল। যার ফলে খাদির চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময়ে ওই সমিতি কুমিল্লা শাখা থেকে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাহার করলে খাদিশিল্পে নেমে আসে বিপর্যয়। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের পর সমবায় আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ড. আখতার হামিদ খানের সার্বিক চেষ্টায় এবং তৎকালীন গভর্নর ফিরোজ খান নুনের সহযোগিতায় কুমিল্লার অভয়াশ্রমে দি খাদি এন্ড কটেজ ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময় কুমিল্লার অভয়াশ্রম, চট্টগ্রামের প্রবর্তক সঙ্ঘ এবং নোয়াখালী গান্ধী আশ্রমে খাদি কাপড় বুনা হতো।
চান্দিনাতে ড. আখতার হামিদ খান প্রতিষ্ঠিত দ্য খাদি কো-অপারেটিভ এসোসিয়েশন লিমিটেডের হাল ধরেন চান্দিনার শৈলেন গুহ ও তার ছেলে বিজন গুহ। শৈলেন গুহের মৃত্যুর পরে ছেলেই খাদি শিল্পকে আঁকড়ে রেখেছেন। শুরুতে খাদি কাপড় ছিল মূলত সুতি। তবে দুই ধরনের খাদি কাপড় পাওয়া যায়। এরমধ্যে সুতি খাদি ও এন্ডিসি। এছাড়াও আরো দুই ধরনের খাদি তৈরি হয়ে থাকে। এর একটি পাতলা এবং অপরটি একটু মোটা। পাতলা খাদি কাপড় ব্যবহৃত হয় ফতুয়া, শার্ট, শাড়ি ইত্যাদি তৈরিতে আর মোটা খাদি কাপড় ব্যবহৃত হয় পাঞ্জাবি, রুমাল, পার্স, বেডকভার, শাল, পর্দা, ইত্যাদি তৈরিতে। একসময় খাদি কাপড় শুধু দুই রঙের তৈরি হতো। সাদা ও অফহোয়াইট বা ঘিয়ে রঙ। কিন্ত এখন সব রঙের খাদি কাপড় পাওয়া যায়। আধুনিক যুগে খাদিশিল্পে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক যেমন শাড়ি, পাঞ্জাবী, শাল, থ্রি-পিস, টু-পিস, কুর্তা, শার্ট, টপস ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে।
একসময় যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও ইউরোপের কয়েকটি দেশসহ প্রায় দশটি দেশে কুমিল্লার খাদি কাপড় রফতানি হতো। তবে তা ধরে রাখা যায়নি। এঅবস্থার জন্য সংশ্লিষ্টরা দায়ী করছেন সুতার সঙ্কট, ব্র্যান্ডিং ও বিপণন অবকাঠামোর অভাবকে। কুমিল্লা সদর, চান্দিনা, দেবিদ্বার ও মুরাদনগরে হাজার হাজার তাঁতি এ শিল্পের প্রসারে একসময় কাজ করলেও বর্তমানে হাজার খানেক তাঁতি কোনরকমে তাদের পেশা টিকিয়ে রেখেছে। একসময় দেবিদ্বারের বরকামতায় ৫০টির বেশি তাঁত ছিল। বর্তমানে প্রায় ২০টি তাঁত চালু রয়েছে।
কুমিল্লার খাদিশিল্পকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে যারা নিরলস পরিশ্রম করেছেন তাদের মধ্যে খাদি ঘরের তরণী মোহন রাহা, খাদি কুটির শিল্পের শংকর সাহা, খাদি ভবনের দীনেশ দাশ, বিশুদ্ধ খদ্দরের মনমোহন দত্ত, রাম নারায়ণ স্টোরের কৃষ্ণ সাহাসহ অনেকেই আজ বেঁচে নেই। আবার খাদি শিল্পায়ন, বঙ্গশ্রী খাদির মালিকেরা চলে গেছেন ভারতে। অন্যদিকে প্রবীণদের মধ্যে যারা বেঁচে রয়েছেন তারা কুমিল্লার খাদিশিল্প টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।
এসব প্রবীণ ও তাদের উত্তরসুরি ব্যবসায়িরা মনে করছেন সঠিকভাবে প্রচার করতে পারলে দেশ-বিদেশে কুমিল্লার খাদির ব্যাপক বাজার সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের সামনে কুমিল্লার ঐতিহ্যের খাদিকে উপস্থাপন করাতে হবে। সরকারিভাবে খাদি কাপড়ের তাঁতিদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। খাদিপণ্য নিয়ে মেলা, জাতীয় পর্যায়ে খাদির ব্যবহার নিয়ে সেমিনারের আয়োজন, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে খাদির প্রচারণা এবং প্রযুক্তির এই সময়ে খাদি নিয়ে ই-কর্মাস ক্লাবের কার্যক্রম ও কাস্টমার মিট-আপ উদ্যোগগুলো গ্রহণ করে প্রচারণা চালালে রফতানি বাণিজ্যসহ চাহিদা বৃদ্ধিতে কুমিল্লার খাদির অপার সম্ভাবনার দুয়ার আবার খুলে যাবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে