ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হারিকেনের প্রমোশন

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৯ জুন ২০২৩, ১১:৪৫ পিএম | আপডেট: ১০ জুন ২০২৩, ১২:০২ এএম

হারিকেন বা কুপিবাতি গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতীকগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। বিদ্যুৎবিহীন গ্রামে রাতে আলোর চাহিদা মিটানো বা অন্ধকার দূর কারার একমাত্র অবলম্বন ছিল হারিকেন বা কুপিবাতি। সেই হারিকেন বিলুপ্তি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কালের বিবর্তণে বর্তমানের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে সেই হারিকেনের কদর বেড়ে গেছে। গ্রামের মানুষ ছাড়া শহরের মানুষকেও এখন বিদ্যুৎবিহীন রাতে হারিকেন ব্যবহার করতে দেখা যায়। বলা যায় ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া হারিকেন প্রমোশন নিয়ে মহাসমারোহে মানুষ ঘরে ফিরে এসেছে।

রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই সব এলাকার গ্রামের ১৪ ঘন্টার মধ্যে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে মানুষকে রাতে গৃরস্থ পরিবারগুলোকে হারিকেন, কুপি’র আলোর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। রংপুরের পীরগাছা মহিলা কলেজের প্রফেসর আমিন উল্লাহ বলেন, বিদ্যুৎ কখন আসে আর কখন যায় বোঝা মুশকিল। সে জন্য গ্রামে মানুষ এখন পুরনো হারিকেন নামিয়েছেন। কেউ কেউ নতুন হারিকেন ক্রয় করে ব্যবহার করছেন। তিনি আরো জানান, মূলত গ্রাম থেকে হারিকেনের ব্যবহার উঠে গিয়েছিল। কিন্তু ভয়াবহ লোডশেডিং হারিকেন কুপি, ফিরিয়ে এনেছে। গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জের একটি রাজনৈতিক দলের নেতা রওশন আলী জানান, গ্রামে মোমবাতি কম। আর উপজেলা শহর ও গ্রামের হাটে মোমবাতি পাওয়া গেলেও দাম বেশি। তাছাড়া রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে সাধারণ মানুষের মোমবাতি দিয়ে দীর্ঘসময় ঘর আলোকিত করা সম্ভব নয়। ফলে মানুষ কুপি, হারিকেনের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

বাঙ্গালীর জীবনে রাতের অন্ধকার দূর করতে এক সময় দেশের গ্রামের মানুষের অন্যতম ভরসা ছিল হারিকেন, কুপি ও হ্যাজাক বাতি। যার অন্যতম জ্বালানি উপাদান ছিল কেরোসিন। আগের দিনে এসব জ্বালিয়ে গ্রামাঞ্চলে রাতে বিয়ে-সাদি যাত্রাগান, প্রেনিগান, মঞ্চ নাটক, ওয়াজ মাহফিল কিংবা বাড়িতে দোয়ার অনুষ্ঠান করা হতো। হারিকেন জ্বালিয়ে বাড়ির উঠানে কিংবা ঘরের বারান্দায় ভাই-বোন একসাথে পড়াশোনা করতো। হারিকেনের জ্বালানি উপাদান কেরোসিন আনার জন্য কাচের বোতল ছিল। যা রশি দিয়ে বেঁধে রান্না ঘরের কোন স্থানে ঝুলিয়ে রাখা হতো। সন্ধ্যার আগেই হারিকেনের কাছ মুছে তেল ভরে জ্বালানো হতো।

সমাজ পরিবর্তন, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামবাংলার সেই ঐতিহ্যবাহী হারিকেন বিলুপ্তি হয়ে গিয়েছিল। বৈদ্যুতিক বাতি, চার্জার ও সৌর বিদ্যুতের নানা ব্যবহারের ফলে হারিকেনের ব্যবহার এখন আর দেখা যেত না। উপজেলার গ্রামাঞ্চলে এখন হারিকেন যেমন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর তেমনি বিদ্যুৎ নেই এমন গ্রামও হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ লোডশেডিংয়ের যুগে সেই হারিকেন আবার প্রমোশন নিয়ে ফিরে এসেছে।
শতভাগ বিদ্যুতের দেশে এখন গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের ঘর আলোকিত করার অবলম্বন হয়ে গেছে হারিয়ে যাওয়া হারিকেন।

সম্প্রতি গ্রাম থেকে ঢাকার কর্মস্থলে ফিরে এসেছেন এমন একাধিক ব্যাক্তি জানান, তারা গ্রামে বিদ্যুৎ খুব কম সময় পেয়েছেন। তবে সব বাসায় সন্ধ্যা হলেই হারিকেন জ্বালানো হচ্ছে। কেউ কেউ কুপি জ্বালালেও হারিকেন জ্বালানো হয় বেশির ভাগ গৃহস্থ বাড়িতে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

চার বছরে মাধ্যমিকে ১০ লাখ শিক্ষার্থী কমেছে
ময়মনসিংহে বাসচাপায় নিহত হলো অটোরিকশার তিন যাত্রী
সারা দেশে আ.লীগের ২১ হাজার নেতা কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল: ওবায়দুল কাদের
আগেই সীমান্তে হত্যা বন্ধে অনুরোধ করা হয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এখন ভালো আছেন খালেদা জিয়া
আরও

আরও পড়ুন

কেজরিওয়াল গ্রেপ্তারসহ ভারত ইস্যু যুক্তরাষ্ট্রের নিবিড় পর্যবেক্ষণে

কেজরিওয়াল গ্রেপ্তারসহ ভারত ইস্যু যুক্তরাষ্ট্রের নিবিড় পর্যবেক্ষণে

কুবি প্রশাসনের সেচ্ছাচারীতার অভিযোগ এনে ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়কের পদত্যাগ

কুবি প্রশাসনের সেচ্ছাচারীতার অভিযোগ এনে ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়কের পদত্যাগ

ঈদে ১৫টি ফেরি ২০টি লঞ্চ চলবে ৭ দিন বন্ধ থাকবে ট্রাক পারাপার

ঈদে ১৫টি ফেরি ২০টি লঞ্চ চলবে ৭ দিন বন্ধ থাকবে ট্রাক পারাপার

ব্রাহ্মণপাড়ায় বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা, তীব্র যানজট

ব্রাহ্মণপাড়ায় বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা, তীব্র যানজট

আরও চার দিন বাড়ল কেজরিওয়ালের রিমান্ডের মেয়াদ

আরও চার দিন বাড়ল কেজরিওয়ালের রিমান্ডের মেয়াদ

প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনে ঐক্যবদ্ধ ভাবে বাতিলের মোকাবেলা করতে হবে

প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনে ঐক্যবদ্ধ ভাবে বাতিলের মোকাবেলা করতে হবে

ভুটানের রাজাকে বিদায় জানালেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী

ভুটানের রাজাকে বিদায় জানালেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী

উলিপুরে সরকারি খাদ্য গুদামে কর্মরত অবস্থায় কুলির মৃত্যু

উলিপুরে সরকারি খাদ্য গুদামে কর্মরত অবস্থায় কুলির মৃত্যু

মানুষের কষ্ট বাড়ানোর নতুন সংস্করণ ভারত বিরোধীতা : নাছিম

মানুষের কষ্ট বাড়ানোর নতুন সংস্করণ ভারত বিরোধীতা : নাছিম

মসজিদে নববীতে প্রতিদিন ৩০ টন সুগন্ধি ব্যবহৃত হয়

মসজিদে নববীতে প্রতিদিন ৩০ টন সুগন্ধি ব্যবহৃত হয়

‘দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে মহাপরিচালক করে পটিয়া মাদরাসাকে কলঙ্কিত করা হয়েছে’

‘দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে মহাপরিচালক করে পটিয়া মাদরাসাকে কলঙ্কিত করা হয়েছে’

চার বছরে মাধ্যমিকে ১০ লাখ শিক্ষার্থী কমেছে

চার বছরে মাধ্যমিকে ১০ লাখ শিক্ষার্থী কমেছে

মোরেলগঞ্জে গৃহিনীকে ফিল্মি স্টাইলে রাস্তায় ফেলে মারধরের ঘটনায় মসজিদের ঈমাম গ্রেফতার

মোরেলগঞ্জে গৃহিনীকে ফিল্মি স্টাইলে রাস্তায় ফেলে মারধরের ঘটনায় মসজিদের ঈমাম গ্রেফতার

ছিনতাই করতে এসে গ্রেফতার হওয়া দুই পুলিশ কনস্টেবলকে কারাগারে প্রেরণ

ছিনতাই করতে এসে গ্রেফতার হওয়া দুই পুলিশ কনস্টেবলকে কারাগারে প্রেরণ

যুক্তরাষ্ট্রে ছুরিকাঘাতে ৪ জন নিহত, আহত ৭

যুক্তরাষ্ট্রে ছুরিকাঘাতে ৪ জন নিহত, আহত ৭

ময়মনসিংহে বাসচাপায় নিহত হলো অটোরিকশার তিন যাত্রী

ময়মনসিংহে বাসচাপায় নিহত হলো অটোরিকশার তিন যাত্রী

সারা দেশে আ.লীগের ২১ হাজার নেতা কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল: ওবায়দুল কাদের

সারা দেশে আ.লীগের ২১ হাজার নেতা কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল: ওবায়দুল কাদের

আম্পায়ারদের এলিট প্যানেলে বাংলাদেশের প্রথম শরফুদ্দৌলা

আম্পায়ারদের এলিট প্যানেলে বাংলাদেশের প্রথম শরফুদ্দৌলা

আগেই সীমান্তে হত্যা বন্ধে অনুরোধ করা হয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আগেই সীমান্তে হত্যা বন্ধে অনুরোধ করা হয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কেন ফিরলেও নয়্যারকে নিয়ে শঙ্কা কাটেনি

কেন ফিরলেও নয়্যারকে নিয়ে শঙ্কা কাটেনি