আল্লাহ চাইলেই সকল দম্ভ চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে পারেন
০৯ জুন ২০২৩, ১১:৪৯ পিএম | আপডেট: ১০ জুন ২০২৩, ১২:০২ এএম
মহাপরাক্রমশালীর অনুগ্রহ ব্যতীত মানুষের একটি নিঃশ্বাস নেয়াও অসম্ভব। অথচ তার দেয়া নেয়ামত, রিজিক, দৌলত, ক্ষমতা, প্রভাব, সম্পদের মোহে আমরা তারই ¯্রষ্টেত্বের কথা ভুলতে বসেছি। ভুলে গিয়েছি আল্লাহ চাইলেই মুহুর্তের মধ্যে আমাদের সকল দম্ভ চুর্ণবিচুর্ণ করে দিতে পারেন। আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন।
সমগ্র জাহানের ¯্রষ্টা রাব্বুল আলামীনের সীমাহীন ক্ষমতা কল্পনা করার মত চিন্তাশক্তি কারো নেই। তিনি যেমনিভাবে রহমত, বরকত, নাজাত দাতা ঠিক তেমনিভাবে তার ক্রধ ও পাকড়াও সকল কিছু ধ্বংশের জন্য যথেষ্ট। মহাপরাক্রমশালীর অনুগ্রহ ব্যতীত একটি নিঃশ্বাস নেয়াও অসম্ভব। অথচ তার দেয়া নেয়ামত, রিজিক, দৌলত, ক্ষমতা, প্রভাব, সম্পদের মোহে আমরা তারই ¯্রষ্টেত্বের কথা ভুলতে বসেছি। ভুলে গিয়েছি তিনি চাইলেই মুহুর্তের মধ্যে আমাদের সকল দম্ভ চুর্ণবিচুর্ণ করে দিতে পারেন। বর্তমানে পৃথিবীতে যেসকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ লক্ষ্য করছেন তা আল্লাহর ক্রধের বহিঃপ্রকাশ। গতকাল রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমের খতিব প্রিন্সিপাল মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে এসব কথা বলেন।
খতিব বলেন, ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যে বা যারা আল্লাহর সাথে নাফারমানি করা দুঃসাহস দেখিয়েছে তাদের পরিণতি কতটা ভয়াবহ ও লজ্জাস্কর হয়েছিল। ফেরআউনের মত ক্ষমতাধর কিভাবে পানির সাথে বিলিন হয়েছিল, নমরুদের মত প্রভাবশালী ব্যক্তির একটি মশার কাছে কতটা অসহায় বোধ করেছিল, হামান, কারুন, সাদ্দাদসহ সকল ¯্রষ্টাদ্রহীর ভয়াবহ ও করুণ পরিণতির ঘটনা সকলেরই জানা আছে। লূত (আঃ) এর কওমকে কিভাবে জমিনসহ উল্টে দেয়া হয়েছিল, নূহ (আঃ) এর সম্প্রদয়ের উপর নাযিলকৃত প্লাবনের ঘটনাও আল্লাহর পক্ষথেকে প্রেরিত গজবের দৃষ্টান্ত বহণ করে। আল্লাহ বড় কোন আজাব ও গজব প্রেরণের পূর্বে ছোট ছোট শাস্তি দিয়ে শতর্ক করেন, তাতেও যদি হেদায়েত না হয় তখন প্রেরণ করেন মহা আজাব যার দরুন একটি গোটা জাতি ধ্বংশ প্রাপ্ত হয়। মানুষ পাপ করতে করতে যখন পাপের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখনই আল্লাহর শাস্তি নাজিল হয়। বালা-মুসবিত মানুষের কৃতকর্মই আহ্বান করে থাকে, যেমনটা পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন- মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও জলে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। এর পরিণামে তিনি কর্মের শাস্তির স্বাদ তাদের ভোগ করাবেন, যাতে তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে (সূরা আর রুম : ৪১)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন ‘আর তোমাদের কৃতকর্মের কারণই তোমাদের ওপর বিপদ নেমে আসে। অথচ তিনি অনেক কিছুই উপেক্ষা করে থাকেন’ (সূরা আশ শুরা : ৩০)। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন সরকারি মালকে নিজের মাল মনে করা হয়, আমানতের মালকে নিজের মালের মতো ব্যবহার করা হয়, যাকাতকে জরিমানা মনে করা হয়, ইসলামী আক্বিদাবর্জিত বিদ্যা শিক্ষা করা হয়, পুরুষ স্ত্রীর অনুগত হয়, মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়, বন্ধুদের আপন মনে করা হয়, বাবাকে পর ভাবা হয়, মসজিদে শোরগোল করা হয়, পাপী লোক গোত্রের নেতা হয়, অসৎ ও নিকৃষ্ট লোক জাতির চালক হয়, ক্ষতির ভয়ে কোনো লোককে সম্মান করা হয়, গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন অধিক হয়, মদ্য পানের আধিক্য ঘটে, পরবর্তী সময় লোকেরা পূর্ববর্তী লোকদের বদনাম করে-তখন যেন তারা অপেক্ষা করে লু হাওয়া (গরম বাতাস), ভূমিকম্প, ভূমিধস, মানব আকৃতি বিকৃতি, শিলাবৃষ্টি, রক্তবৃষ্টি ইত্যাদি কঠিন আজাবের, যা একটার পর আরেকটা আসতে থাকবে, যেমন হারের সুতা ছিঁড়ে গেলে মুক্তার দানাগুলো একটার পর একটা পড়তে থাকে (তিরমিজি)।
খতিব বলেন, লক্ষ্য করলে দেখা যায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী নানাধরণের প্রাকৃতিক দূর্যোগে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। শক্তি ও ক্ষমতাধর রাষ্ট্রসমূহ কিভাবে ধরাসয়ী হচ্ছে তা পত্রপত্রিকা খুললেই দেখতে পাই। কানাডার মত সম্পদশালী রাষ্ট্র দাবানলের আগুনে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মত ক্ষমতাধর ও পারমানবিক প্রযুক্তিতে উন্নত দেশের বায়ুমন্ডল দূষিত হয়ে অক্সিজেনের মাত্র হ্রাস পাচ্ছে। প্রভাব ও ক্ষমতা দিয়ে তারা কিন্তু এসব প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রেহাই পায়নি। তাদের সকল অর্থ, প্রযুক্তি, বিশ্লেষণ আল্লাহর দেয়া দাবানলের নিকট কতটা অসহায় তা আমরা প্রত্যক্ষ করছি, পারেনি তারা তাদের ক্ষমতা দিয়ে বায়ুকে পরিশুদ্ধ করতে। করোনাভাইরাস সারাবিশ্বকে কিভাবে স্তব্ধ করে দিয়েছিল তা আমাদের সকলেরই জানা। তুরস্কের ভূমিকম্প, অস্ট্রেলিয়ার ভয়াবহ দাবানল বেশী দূরের কথা নয়। আমাদের দেশেসহ অনেক দেশেই তীব্র তাপদাহ, খড়ায় স্বাভাবিক জীবনধারা দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। একবারও কি ভেবেছেন এসব কার ইশারায় হচ্ছে? কেনইবা হচ্ছে? উত্তর একটিই- আল্লাহ তায়ালার ক্রোধের কারণে স্বয়ং তিনিই এসকল ছোটখাটো শাস্তি অবতীর্ণ করছেন আমাদের সংশোধনের জন্য। সময় থাকতে সংশোধন হতে হবে অন্যথায় ঐসকল জাতির মত আমাদের উপরও ধ্বংশযজ্ঞ প্রেরিত হবে। সমাজের যে দিকেই তাঁকাবেন আজ অপরাধে সয়লাব। প্রভাবশালী ব্যক্তিগণ দূর্বলদের সাথে ক্রমাগত অন্যায় জুলুম করেই যাচ্ছে, সাধারণ জনগণের অর্থ তথা রাষ্ট্রিয় সম্পদ ক্ষমতাসীনরা নিজ স্বার্থে ব্যবহার করছে অকাতরে। অন্যায়ভাবে মানুষ খুন, গুম, নির্যাতিত, অপমানিত হচ্ছে কেউ কেউ। সমাজে বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, সুদ, ঘুষ, যেনা, ব্যাভিচার, সমকামিতা, মাদকের ছড়াছড়ি। বড় বড় আলিসান মসজিদ নির্মিত হচ্ছে কিন্তু ক্রমশ মুসল্লি সংখ্যা কমছে। আল্লাহর ভয় ও রাসূল (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। সর্বপরি আল্লাহর নাফরমানি করাটাই যেন এখনকার ট্রাডিশন। এসকল অন্যায় অনৈতিক কর্মকান্ডই আমাদের ধ্বংশের দিকে ধাবিত করছে। মনে রাখবেন অন্যায় করে, আল্লাহর নাফরমানি করে, নিজ শক্তির বলে কখনই টিকে থাকতে পারবেন না। আল্লাহর পাকড়াও বড়ই ভয়ংকর। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলামের সুশিতল ছায়াতলে আশ্রয় প্রদান করুন। সকল ধরণের বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করুন। আমিন। মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, মুসলিম মিল্লাতের জন্য হজ আল্লাহ প্রেমের এক অপূর্ব নিদর্শন। প্রতি বছর অসংখ্য মুসলমানেরা তাদের মাতা পিতা, স্ত্রী পুত্র, ভাই বোন, আত্মীয় স্বজন ও ধন সম্পদ সব কিছু ছেড়ে আল্লাহর প্রেম নিবেদনে হজব্রত পালন করে থাকেন । আল্লাহ প্রেমে পাগলপারা হাজীগণ হজের সফরে, বাইতুল্লাহর তওয়াফ, সাফা মারওয়া সায়ী ও খাওয়া দাওয়া, আহার নিদ্রার যাবতীয় কষ্ট ক্লেশ সানন্দে বরন করে নেয়। আর মুখে উচ্চারণ করতে থাকে লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকালাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদ ওয়ান নিয়মাতা লাকা ওয়াল মূলক। এতো মহা প্রেমিক মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনের এক বে-নজির দৃষ্টান্ত। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য হজ ও উমরাহ পালন কর। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৭)। হাজীগণ মহান আল্লাহর এ নির্দেশ পালনে তারই সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে হজের নিয়মাবলী আদায় করতে গিয়ে স্বাভাবিক পোশাক পরিচ্ছেদ পরিহার করে খালি মাথায় মাওলার প্রেমে উন্মাদের মত কখনও বাইতুল্লাহর তওয়াফ, সাফা মারওয়ার সায়ী, আবার কখনও আরাফতের ময়দানে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান , আবার কখনও বিতাড়িত শয়তানের প্রতি পাথর নিক্ষেপের মত ইবাদাতে মশগুল থাকে। এ ভাবেই হাজী ছাহেবরা কঠিন সংযম, কঠোর সাধনা, অক্লান্ত পরিশ্রম ও ইবাদাতের মাধ্যমে প্রেম নিবেদনে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনে পরকালে জান্নাত লাভে ধন্য হতে চান। নবীজি সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী মাকবুল হজ ও চিরস্থায়ী জান্নাতের মাঝে পার্থক্য শুধু হাজীগণের মৃত্যু। (আল হাদিস)। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে পবিত্র হজ পালন করার তাওফিক দান করেন । আমিন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১৪ ফিলিস্তিনি
ঘণকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে- কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের নেতা ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ